কতটুকু আশা পুরন করলো শাকিবের “শিকারি”

সনেট ৮ জুলাই ২০১৬, শুক্রবার, ১০:৫৯:৫৫পূর্বাহ্ন মুভি রিভিউ ৩ মন্তব্য

shakib-khan

বাইকে ঈদ মোবারক। আশা করি ঈদের লম্বা ছুটিতে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ভালোই কাটাচ্ছেন দিন। ঈদের আনন্দ বাড়াতে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে সিনেমা দেখতে যাওয়া এক সময়কার ট্রেন্ড ছিলো। মাঝখানে বেশ কিছুদিন বিভিন্ন কারনে সেই ট্রেন্ড টা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। সেটাই আবার ফিরে এসেছে তা বুঝতে আর বাকি রইলোনা। যারা কাল সিনেমা কিংবা তার আশেপাশেও গেছেন তারাই জানেন কি পরিমাণ ভিড় ছিলো প্রতিটি সিনেমা হলে। ঈদের ৪টি মুভিই বেশ জমজমাট চলছে। বিশেষ করে শিকারি। শিকারি মুভি দেখতে গেলে আপনি বুঝতে পারবেন শাকিবের নতুন লুক নিয়ে মানুষের আগ্রহ কত। চরম ভিড় ঠেলে টিকিট পেয়ে সবাই আনন্দে হলে ঢুকেছে। কিন্তু শিকারি কি দর্শকের সে আশা পুরন করতে পেরেছে??
.
শিকারি মুভিটি একটি ইন্দো-বাংলাদেশ যৌথ মুভি যেখানে শাকিব খান এবং অমিত হাসান বাদে সবই কোলকাতার অভিনেতা। অমিত হাসানও নাম মাত্র অভিনেতা। কারন তার জন্য কয়েক মিনিটেরই দৃশ্যায়ন করা হয়েছে। কিন্তু সিনেমার প্রেক্ষাপট হিসাবে তা ঠিকই আছে। যেহেতু মুভিটির প্রেক্ষাপট কোলকাতা, সেহেতু ব্যপারটা এক্সেপ্টেবল।
.
মুভির গল্পটা ভিষণই সাদামা
টা। ট্রেইলারে যা দেখেছেন আর কি। হাই প্রোফাইল আইনজীবী রুদ্র চৌধুরী কে খুন করতে বাংলাদেশ থেকে ভাড়া করা হয় সুলতান(শাকিব খান) কে। তারপর শাকিব খানের চেষ্টা চলতে থাকে। প্রথমে শাকিব ওপেন প্লেসে গুলি করতে গিয়ে ফেইল্ড হয়ে যায়। তাই সে সরাসরি রুদ্র চৌধুরীর বাড়িতে ঢুকে তাকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেয়। রুদ্র চৌধুরীর বাসার কাজের লোক তিনকড়ি বাবুকে জিম্মি করে সে প্রবেশ করে রুদ্র চৌধুরীর বাড়িতে। ঢুকেই চোখে পড়ে শ্রাবন্তিকে। তারপর শুরু হয় খুনের চেষ্টা। চেষ্টা করতে থাকে শাকিব কিন্তু তার চেষ্টা বার বারই বিফল হয়ে যায়। এরপর কিছু ফ্যামিলি ড্রামা এবং কিছু হালকা পাতলা টুইস্ট......
মুভির স্টোরিটা প্রচণ্ড সাদামাটা। একটা রুটিন মেনে চলা কোলকাতা ফ্যামিলি মুভিতে যা যা ঘটে এই মুভিও তার ব্যতিক্রম না। খুনের চেষ্টা করতে করতেই প্রথম অর্ধেক শেষ করে ফেলে শাকিবা। দর্শকরা বোর হতে থাকে। সেকেন্ড হাফে স্টোরিতে কিছুটা টার্ন আসলেও সেটা ছিলো
খুবই নগণ্য যা দর্শকের ইন্টারেস্ট জাগানোর মত পর্যাপ্ত না। স্টোরিতে আরেকটু এলিমেন্ট, টুইস্ট, টার্ন থাকলে দর্শকরা অনেক বেশি এঞ্জয় করত মুভিটা।
.
শাকিব খানকে নিয়ে কিছু বলার নেই। এ এক নতুন শাকিব। যে শাকিব কে দেখে এসেছি, ট্রল, গালাগালি করে এসেছি সেই শাকিব আর এই শাকিব এক নয়। শাকিবকে দেখার জন্য হলেও আপনাকে মুভিখানা দেখতে হবে। টোটালি ম্যানলি, অভিনয়ে পাকা একজন শাকিব। আমি শিওর মেয়েরা ক্রাশ খেয়ে যাবেন। শাকিবের লুক থেকে শুরু করে ড্রেসআপ সবই ছিলো অনবদ্য। শাকিবের এন্ট্রি থেকে ডায়লগ, একশন সবকিছুতেই দর্শক হই করেছে। খুব তাড়াতাড়ি শাকিব দেব কিংবা জিৎ এর সাথে টক্কর দিয়ে মুভি করতে তা বুঝতে আর বাকি রইলোনা।
কিন্তু রুটিন তামিল/কোলকাতা কমার্শিয়াল মুভির মত এই মুভিতেও নায়িকা শ্রাবন্তি ছিলো জাস্ট একটা শোপিস। পুরো মুভিতে কয়েকটা ডায়লগ ছাড়া শ্রাবন্তির কোনই রোল নেই। শ্রাবন্তি এমনিই অনেক মিষ্টি মেয়ে। এই মুভিতে তো আরো মিষ্টি লেগেছে। মম চিত্তে গানের মাধ্যমে শ্রাবন্তির এন্ট্রিতে দর্শকদের হই পরে গেছে।
বাকি সবাই ঠিকঠাক অভিনয় করেছেন। তিনকড়ির কমেডিতে হো হো করে না হাসলেও মজা পাওয়া যায়।
.
কেন দেখবেন শিকারি - মুভি
টি একটা ছন্দে চলেছে এবং প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ছন্দটা ধরে রেখেছে। কোথাও স্টোরি টেলিংএ ড্রপ হয়ে যায়নি। খুবই নিট & ক্লিন মুভি। যারা এরকম পরিচ্ছন্ন মুভি পছন্দ করেন তাদের অবশ্যই ভালো লাগবে। শাকিবেএ নতুন লুক, নতুন অভিনয় ভালো লাগবে সবার। মুভির গানগুলো মোটামুটি মানের হলেও অনেকে পছন্দ করবেন। সর্বোপরি ঝকঝকে, কালারফুল, নিট & ক্লিন স্ক্রিনপ্লে, ভালো ডিরেকশন, ভালো অভিনয় দেখার জন্য মুভিটি দেখতে পারেন। মুভিটির কোন জিনিসই অতিরঞ্জিত করা হয়নি যা আমরা নরমালি বাংলা মুভিতে সাধারণ দেখি। কমেডির নামে কাতুকুতু কিংবা অভিনয়ের নামে অতি অভিনয় পাবেন না মুভিতে। নির্মাণকৌশলের দিক থেকে মুভিটি বেশ ভালোই বলা চলে।
.
দুর্বলতা - প্রথমত মুভিটির দর্শক টার্গেটে মেকার রা বেফল হয়েছেন। মুভিটি কি মাসালা বানিয়েছেন নাকি ক্লাস?? আসলে মুভিটি মাসালা এবং ক্লাসের মাঝামাঝি
একটা জায়গায় ঝুলে আছে। নরমালি ট্রেইলার দেখে মানুষ মাসালাই মনে করবে এবং মাসালা দেখার মেজাজ নিয়ে গিয়ে হতাশ হবে। মুভিটি আসলে একটি ফ্যামিলি ড্রামা।
মুভিটির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা এটার স্টোরি। এত সাদামাটা স্টোরিতে অনেকেই বোর হয়ে যাবে। ইন্টারভাল পর্যন্ত খুনের চেষ্টা এবং কোন ইন্টারেস্টিং ব্যপার না পেয়ে দর্শক আগ্রহ হারাবে। সেকেন্ড হাফেও মুভিটি জাম্প করে উপরে উঠবেনা। একিরমকভাবে চলতে থাকবে...... এবং ক্লাইম্যাক্স পর্যন্ত সেভাবেই চলতে থাকবে।
একটা ঈদের মুভির ভেতর মানুষ কি চায়??
ভালো একটা স্টোরি, টুইস্ট, টার্ন, ভালো কয়েকটা গান, ঝাকিমারা গান, রোমান্স, ড্রামা, একশন।
এ মুভিতে কিছুই পাবেন না। না আছে
রোমান্স না একশন। পুরো মুভিতে প্রথমের কিছুক্ষণের দৌড়াদৌড়ি আর লাস্টের ক্লাইম্যাক্সে বিলো এভারেজ ফাইট সিন ছাড়া কোনই একশন নেই। প্রথম এবং লাস্টের একশনটুকুও আহামরি কিছু না........
আপনার বোরনেস কমানোর জন্য কোন ঝাকিমারা গানও আসবেনা। যে গানগুলো আছেও সেগুলোও তেমন আহামরি কিছু না। বার বার শোনার মতও না।
সর্বোপরি মুভির স্টোরি মুভিকে বেশ বোরিং করে ফেলেছে। তিনকড়িকে নেশা করিয়ে জিম্মি করার দৃশ্য শুধুশুধু লম্বা করে ফেলেছে। মুভিটার স্টোরি যতটুকু তাতে মুভিটা যদি দেড় থেকে পনে ২ঘন্টা হত তবে ঠিক ছিলো। কিন্তু মুভি টেনে বেশ লম্বা করে ফেলেছে।
মুভিতে শাকিব একি মানুষদের সামনে কখনো বাঙ্গাল কখনো বা বাংলা ভাষায় কথা বলছে অথচ কেউ সন্দেহ করছেনা। শাকিব-শ্রাবন্তি কাজিন তা জানা সত্তেও শ্রাবন্তি শাকিবকে নিয়ে ভালোবাসা অনুভব করে অথচ আমরা জানি হিন্দুদের নিয়ম অনুযায়ী কাজিনদের মধ্যে ভালোবাসা কিংবা বিয়ে সম্ভব না। এরকম ছোট খাট ভুলও সহজে ধরা পরবে।
.
সব মিলিয়ে যদি ঈদের আনন্দ করতে মুভি দেখতে যেতে চান তবেই যাবেন। আর নরমাল মুভি লাভার হলে বেশ ভালো লাগবে। তবে যদি আপনি পাকা মুভিখোর হন সেক্ষেত্রে মুভিটা ইন্টারেস্টিং নাও লাগতে পারে। স্টোরিটাই মুভির মূল দুর্বলতা। স্টোরি আর একটু বেটার হলে চো
খ বন্ধ করে ৭-৮ দেওয়া যেত। কিন্তু স্টোরিকে নজর আন্দাজ না করে আমি মুভিকে দেবো ৫.৫/১০

0 Shares

৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ