জলে হিন্দু নিমজ্জিত, পানিতে মুসলমান নিমজ্জিত। এ বাক্যে কি বোঝা যায়? হিন্দু সাদা খনিজ একটি তরলে নিমজ্জিত। আর মুসলমান অন্য একটি তরল খনিজে নিমজ্জিত? দু-ধর্মীয় সম্প্রদায় একই তরল খনিজে নিমজ্জিত। অথচ – মুসলিম পরিবারে আপ্যায়নের সময় অপরিচিত কোন মানুষ যদি জল চায়। তাহলে পরিবারের সদস্যরা চোখ বড় বড় করে তাকাবে। তাতে ঐ পরিবারের কারো বয়স যদি নব্বইও হয়। আবার হিন্দু একটি পরিবারে অপরিচিত লোক আপ্যায়নের সময় যদি পানি চায়। একই ঘটনা ঘটবে। অন্য কোন কিছু হবার জো নেই। তাহলে – জল বা পানি শব্দটি বাংলা-হিন্দি না মুসলিম-হিন্দু কোনটা ? মাংসকে আরবি ভাষায় বলা হয় লহম, অগ্নি উপাসকদের পার্সি ভাষায় বলা হয় গোশত। যে শুধু বোকার রাজ্যে বসবাস করে তার পক্ষেই সম্ভব এটি ভাবা যে, বাংলা মাংসকে উচ্ছেদ করে অগ্নি উপাসকদের গোশত শব্দ বললে বিশ্ব স্রষ্টা খুব খুশি হবেন। আমাদের দেশে দীর্ঘ দিন ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি এদেশের মানুষগুলোকে নির্বোধিকরন করা হয়েছে। কে জানে এতে ইংরেজদের ভাগকর শাসনকর নীতির নিশ্বাস ছিল কিনা ?
ভাষার কোন ধর্মমত থাকতে পারে না। একজন আরব্য ভাষি খ্রিষ্ঠান বা ইহুদী হতে পারেন। একজন ইংরেজী ভাষি মানুষ মুসলিম হতে পারেন। একটি জনগোষ্ঠির ধর্ম আকস্মিক ভাবে পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। আমাদের রাষ্টীয় সত্তা গঠিত হয়েছে ভাষার ভিত্তিতে। সে কারনে এ মিশ্রন আমাদের রাষ্ট্রীয় সত্তাকে আঘাত হানে।বাংলা ভাষাকে মিশ্র ভাষা কোন ভাবেই বলতে পারেন না। বাংলা অভিধানে কতগুলো বাংলা শব্দ কতগুলো বিদেশী শব্দ আছে দেখলেই বোঝা যাবে এটি বাংলা অভিধান কিনা। এক বস্তা ধানের সাথে কয়েকটা ডাল, কয়েকটি শরীষা, কয়েকটি কুচিপাথর থাকলেও তাকে ধানই বলতে হবে। প্রসঙ্গক্রমে একটি কথা বলতে হচ্ছে – ইসলামের আর্বিভাবের অব্যবহিত পরে ইরান আরবের শাসনে এলে, ইরানীরা আরব শাসকদের জানান-তারা ইসলাম গ্রহন করতে চান। তবে – তারা ধর্মীয় বিষয়গুলোকে মাতৃভাষায় রুপান্তরিত করে ব্যবহার করতে চান। আরব শাসকগন তাদের অনুমতি দেন। ইরানীরা আল্লাহকে খোদা, আরবী শব্দ সালাতকে নামাজ, সিয়ামকে রোজা ইত্যাদি ধর্ম সম্পর্কিত আরবি শব্দকে ইরানী ভাষায় রুপান্তর করে ব্যবহার করেন। ইরানী ভাষার সাথে আমাদের ধর্মের আবেগ মিশ্রিত থাকার কথা নয়। অথচ- ধর্মীয় কারনে প্রচুর ইরানী শব্দ বাংলা ভাষায় ঢুকে অনেকদিন যাবত ব্যবহার হয়ে আসছে।
বাংলা ভাষায় অন্য ভাষার শব্দ মেশানোর অর্থ হলো বাংলা ভাষা অযোগ্য, এর শব্দ ভান্ডার দারিদ্রব্যঞ্জক, এ ভাষা অন্যের সাহায্য ছাড়া নিজে নিজে চলতে পারে না অথবা এ ভাষার ধর্ম আছে। ইসলাম ধর্মের কোথাও এমন কথা আছে যে, পারলৌকিক কল্যাণ চাইলে, নিজের ভাষা ত্যাগ করে অন্য ভাষি হতে হবে। এ ধরনের মনোভাব ইসলাম ধর্মালম্বী বাংলা ভাষাভাষিকে কোথায় দাঁড় করিয়েছে, আমরা কি খেয়াল করেছি। একটি কথা সমাজে প্রচলিত ইংরেজী ভাষা সবচেয়ে সমৃদ্ধ ভাষা। কথাটা মানি বা না মানি- এটাই সবাই জানে বা মানে। দুজন বাংলা ভাষী ইংরেজিতে কথা বলতে পেরে যে পরিমান আত্মতৃপ্ত হন আর কোন কিছুতেই হন না। আসলেই কি ইংরেজি সমৃদ্ধ ভাষা ? অন্যর ভাষা থেকে শব্দ ধার করে এ ভাষাটি সমৃদ্ধ হয়েছে। তাহলে আমাদেরকেও ধার করতে হবে ? নাহ। কারন – বাংলা একটি সমৃদ্ধ ও ধনবান ভাষা। ধনী কখনও ভিক্ষা চাইতে পারেন না। আরবী ভাষা অনুবাদে পারদর্শী কোন ব্যাক্তির কাছে যান তিনি বার বার অনুবাদ শব্দ না বলে তর্জমা শব্দের ব্যবহার করবেন। কারন – আরবী শব্দের সাথে তর্জমা শব্দ ধর্মীয় কারনে, কোন শুদ্ধতার কারনে নয়। ভাষা বা শব্দে এ কোন সাম্প্রদায়িকতা ? এরা কখনও ইরানী ভাষায় আশ্রয় নিয়েছেন, কখনও হিন্দুস্থানী ভাষায় আশ্রয় নিয়েছেন। এখন তাদের বোঝা উচিত আরব্য ভাষা ভিন্ন অন্ন্য ভাষায় যখন আশ্রয় নিতে পারে তখন বাংলা ভাষায়ও আশ্রয় নেয়া যাবে। তারা কি চোখ বন্ধ করে রাখবেন ? চোখ খুলে একবারও কি দেখবেন না ভট্রাচায্যদের সংস্কৃতের অতিকায় হাতিটি ক্ষুদে তেলাপোকা হয়ে পড়ে আছে।
কৈশরে একটা চ্যানেল ছিল। ঢাকায় থাকির মত নাটক হত ভিড় করে দেখতাম। এখন চব্বিশটা চ্যানেলে চব্বিশ হাজার জঘন্য সিরিয়াল হচ্ছে তাও দেখছি। আমরা জানি – বাংলা ভাষায় সাধু ও চলিত রীতি আছে। লিঙ্গ দু রকম। এখন ভোটার তালিকায় নাম উঠাতে লিঙ্গের জায়গায় তিনটি অপশন আছে, সেটা তৃতীয় লিঙ্গ। এই চব্বিশ হাজার জঘন্য সিরিয়ালে সাধু ও চলিত রীতির বাহিরে তৃতীয় একটি রীতির ভাষায় কথা বলা হয়। সেই তৃতীয় রীতিকে, রীতি বলা ঠিক্ না, একে তৃতীয় লিঙ্গের ভাষাই মনে হয় বলা সমীচিন।
আগে যে ভাবছে, যে ভাবুক, চিন্তক যে সিরিয়াস কথা বলে, তার প্রতি একটি সমীহ ছিল। আগে গৌরব করে বলতাম আমি একটি লিটল ম্যাগাজিন করি। সেখানে অন্যরকম সিরিয়াস প্রবন্ধ ছাপা হয়। তাদের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে গেছে। কারন-এখন সিরিয়াস কথা বললে চুরির দায়ে ধরা পড়ার মত কান্ড ঘটে। সাথে সাথে আতেল নামক শব্দটিও জুটে যায়। তাই এ পরযন্ত ক্ষান্ত দিলাম। কারন – আতেলরা আজ সমাজের নিগৃহিত একটি প্রাণী।
১৬টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসাধারণ একটি তথ্যসমৃদ্ধ পোস্ট পেলাম। ধর্মীয় গোঁড়ামির কারনে আমরা অনেক কিছু বুঝে ও বুঝিনা বা মানতে চাইনা। ভাষার মধ্যেও ধর্মীয় গোঁড়ামি বজায় রাখতে হয়। ধর্মের নামে জাতিতেও বিভেদ সৃষ্টি করে। আমাদের একটাই পরিচয় হওয়া উচিত তাহলো আমরা বাঙালি, বাংলাদেশী । বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, রাষ্ট্রভাষা। যে ভাষার জন্য ৫২ সৃষ্টি হয়েছিল। বাংলা ভাষা অনেক সমৃদ্ধ ও ধনবান এটা স্বীকার করতেই হবে। ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা রইলো
মামুন চৌধুরী
ধন্যবাদ আপা – আমার চেষ্টার প্রতি দৃষ্টি দেওয়ায়, উৎসাহ পেলাম। সময় করে পড়ার জন্য, শুভ কামনা রইল আপনার প্রতি।
সুপায়ন বড়ুয়া
জটিল বিষয়ের অবতারনা
নিত্যদিনের ঘটনা।
শব্দে ও মানুষ ধর্ম খোঁজে
মেনে নিই মুখবুঝে।
শুভ কামনা।
মামুন চৌধুরী
দাদা – ভালবাসা ও শ্রদ্ধা নিবেন। আমার লেখার মাঝে ভুল থাকলে শুদ্ধ করে দিবেন। আমি একেবারেই নতুন মানুষ। সংগত কারনে – ভাষাগত, বানানগত বিভিন্ন ভুল হতেই পারে। শুভ কামনা রইল।
ফয়জুল মহী
অজস্র ধন্যবাদ প্রিয়
মামুন চৌধুরী
আপনার প্রতিও রইল শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
সঞ্জয় মালাকার
অসাধারণ একটি তথ্যসমৃদ্ধ পোস্ট পেলাম। ধর্মীয় গোঁড়ামির কারনে আমরা অনেক কিছু বুঝে ও বুঝিনা বা মানতে চাইনা। ভাষার মধ্যেও ধর্মীয় গোঁড়ামি বজায় রাখতে হয়।
আর আমাদের একটাই পরিচয় হওয়া উচিত, আমরা বাঙালী, বাংলাদেশি, বাংলা আমাদে মাতৃভাষা, বাংলা আমাদের অহংকার।
ধন্যবাদ দাদা আপনার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।
মামুন চৌধুরী
দাদা – শুভেচ্ছা। আমার মত নতুন লেখকের লেখা কষ্ট করে পড়েছেন তাতেই আমার উৎসাহ বাড়িয়ে দিয়েছেন। শুভ কামনা রইল।
সাদিয়া শারমীন
দারুণ বলেছেন। খুব মনোযোগ দিয়ে পড়লাম লেখাটি।
debajyotikajal
ভাল লিখেছো । তবে তোমার কত % সংখ্যাগুরুরা ভাবে ? তুমি যখন অতিরিক্ত মাত্রায় অসাম্প্রদায়িক লেখা লিখবে তখনই তোমার জীবনে চরম শাস্তি নেমে আসবে । হয়তো চাপাতিরও কোপ খেতে লাগতে পারে । তা নাহলে তসলিমার মত দেশ ছাড়াতে পারে ।
ইকবাল কবীর
ভালো লিখেছেন। চালিয়ে যান।
সাবিনা ইয়াসমিন
ভাষাতেও ধর্ম! কথাটি নির্জলা সত্যি।
সাম্প্রদায়িকতা ঢুকে আছে আমাদের ধর্মে, মননে। এর থেকে সহজে নিস্তার নেই।
অনেকদিন পর ব্লগে এসেছেন। খুব সুন্দর লেখা দিয়েছেন। নিয়মিত লিখুন, আপনার লেখার হাত ভালো। সময় নিয়ে অন্যদের লেখা গুলোও কম/ বেশি পড়ার চেষ্টা করুন। এতে আপনার সহ অন্যদেরও ভালো লাগবে।
শুভ কামনা রইলো মামুন ভাই 🌹🌹
ইসিয়াক
অসাধারণ পোষ্ট
সুরাইয়া পারভীন
চমৎকার গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট। ধর্মীয় গোঁড়ামির যাঁতাকল থেকে বাদ পড়েনি ভাষাও।
জিসান শা ইকরাম
খুব ভালো একটি পোষ্ট দিলেন অনেক দিন পরে ফিরে এসে।
ধর্মের কারণে শব্দও আলাদা হয়ে গিয়েছে।
” একটি তরল খনিজে নিমজ্জিত? দু-ধর্মীয় সম্প্রদায় একই তরল খনিজে নিমজ্জিত। ” খনিজ না লিখে সুধু তরল পদার্থ লিখলে মনে হয় ভালো লাগতো বেশি। পানি বা জল কি খনিজ তরল? আমি ঠিক নিশ্চিত নই। ।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
ধর্ম আর ভাষা আলাদা হওয়াতেই তো সমস্যা। না পারলে ধর্মের দোহাই। তবে, সব ধর্মই একই কথা বলে। মিথ্যা বলা মহাপাপ। অন্যায় করোনা।
ভালো লাগলো আপনার লিখাটি।