গ্রামীন পরিবেশ,সেই পাখি ডাকা ভোরঁ হতেই কৃষঁকরা কাধে লাঙ্গল হাতে লাঠি গরু তাড়াতে তাড়াতে চলে যায় ক্ষেত জমিতে।ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা বেরিয়ে পড়ে মক্তব্যে আরবী পড়তে যা আমাদের বাংলাদেশের গ্রাম বাংলার অনুরূপ।রাখাইন গ্রামটি একটি অরক্ষিত মায়ানমার সেনা বাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রীত একটি গ্রাম।গ্রামের প্রায় সকল যুবক পুরুষ আরাকান রাজ্যের তথা কথিত সন্ত্রাসী গোষ্টি যা আরাকানে রাখাঈনদের মতে তারা স্ব-দেশকে মুক্ত করার জন্য স্বাধীনতার মুক্তি যোদ্ধা।দল বদ্ধ ভাবে একটি কিশোরের দল ভোরঁ সকালে মসজিঁদের মঁক্তবে যাচ্ছে আরবী পড়তে।খোলা সতেজ প্রভাতী হাওয়ায় চার দিক সবুজ অরণ্যের ডাল পালার চঞ্চলতায় কিশোর দল অতিক্রম করে বিলের দিকে সরু মেঠো  পথ ধরে নিকটতম মসজিদের দিকে এগুচ্ছে। এক জন কিশোর হঠাৎ থমকে দাড়ায়,ভয়ার্ত মনে সামনে পড়ে থাকা অস্পষ্ট পিতার রক্তাক্ত লাস দেখে কিশোর মৃদু পায়ে এগিয়ে যায়।নিজ জন্ম দাতাকে চিনতে পেরে দৌড়ে পিতার লাসের নিকট গিয়ে হাটু গেড়ে বসে পড়ে ডাকছে অবাক বিষ্ময়ে ডাকছে...বাবা ও বাবা।কিশোর ছেলেটি এত কিছু বুঝে উঠতে পারেনি।তার  বয়সের অপক্কতাই অবুঝ সে, জন্ম মৃত্যু পৃথিবী,পৃথিবীর নিঃসংশতা কিছুই সে বুঝে না তাই সে প্রথমে ভাবল  তার এ বাবা হয়তো এখানে শুয়ে ক্লান্ত দেহের একটু বিশ্রাম নিচ্ছেন,এর পূর্বে এমনটি হয়েছিল বহু বার।বিলে পিতার দুপুরের খাবার দিতে এসে ঘুম থেকে ডেকে তুলেছিল বহুবার।
সে আরবী বই আর রেহালাটা পাশে রেখে সে তার বাবাকে ডাকছে,ডেকেই যাচ্ছে অনবরত কিন্তু কোন সাড়া শব্দ নেই।হঠাৎ ছেলেটি লক্ষ্য করল কাত হয়ে শুয়ে থাকা পিতার পিঠের ক্ষত স্থান হতে অঝোরে রক্ত ঝড়ছে,মুখবয় পুরোটাই আঘাতের কারনে রক্তাক্ত হয়ে জায়গায় জায়গায় গায়ের মাংসসহ চামরা থেতলীয়ে গেছে যা দেখতে খুবই ভয়ংকর।তা দেখে সে চিৎকার দেয় কিন্তু কোন লোকই এগিয়ে আসল না তবে তার সঙ্গীরা তার কাছে এসে কেউ দুর্বা ঘাসে বসে আছে কেউ বা অবাক বিষ্ময় চোখে তাকিয়ে আছে লাশটির দিকে।লাশটির একটু দুরে একটি বিশাল উঠোনঁওয়ালা বাড়ী।সেখানকার সকল ঘর দুয়ারে দাউ দাউ করে জ্বলতে দেখা যাচ্ছে,কিশোর অশ্রু সিক্ত নয় তুলে সে দিকে তাকালে রাজ্যের সকল ভয় ভীতি এসে বাসা বাধে তার মনে।সে  দেখতে পেল আরো বেশ কয়েক জন নারী পুরুষ ও কয়েক জন শিশুর দেহ ক্ষত বিক্ষত লাশ।এরই মধ্যে ছেলেটির মা সহ বেশ কয়েক জন রোগা ক্লান্ত নারীরা এগিয়ে আসে,এগিয়ে আসে কিশোর ছেলেটির দাদা,সে পতিত লাশটির পিতা।কিশোরটির দাদা তার ছেলের লাশটি কাধে তুলে নিয়ে নিজ বাড়ীর আঙ্গিনায় নিয়ে আসেন।সময় অতিক্র্রমে আরো লোক জন জড়ো  হন সেখানে, তবে তাদের মধ্যে বেশীর ভাগ নারী শিশু ও বৃদ্ধ।নিহত লাশের পিতার আহাজাঁরিতে আকাশে মেঘের গর্জন,বৃক্ষে বৃক্ষে পাখিদের চেচামেচি,শিশু নারীদেের স্বজন হারানোর বেদনায় আর কান্নার শব্দে পরিবেশ এক ভয়ার্ত রাজ্যে পরিণত হয়।
-আল্লাহ গো এ কোন শাস্তি দিচ্ছো আমাগো!এ কোন সর্বনাশা খেলা খেলছো..বিধর্মী রাজ্যে তোমার প্রার্থণা করি বলে অত্যাচারের মাত্রা আরো বেড়ে যায়.এক মাত্র রোজগারী ছেলে আমার তারেও তুইল্লা নিলা।আমারতো সবই ছিলো বিঘা বিঘা জমি চৌচালা ঘর দুয়ার গুলা ভরা ধান সবিই ছিলো...এক এক করে সব তুমি কাইরা নিলা!সারা জাহানে হগলের সরকারী পরিচয় আছে কেবল আমাগো নাইকা,দেশ থাইক্কাও দেশ নাই;নাই সরকারে কোন সুযোগ সুবিদা!মনে হয় স্ব-দেশে থেকেও আমরা বহু কাল যাবৎ পর গাছা।আমাগো অপরাধ আমরা মুসলমান আর আমরা নাকি রিফুজি বাঙ্গালী।তুমি এর বিচার কইরো আল্লাহ!

রাখাইন শব্দটি এসেছে পালী শব্দ রাক্ষা পুরা থেকে,যার সংস্কৃত প্রতি শব্দ হলো রাক্ষস পুরা।অর্থাৎ যার অর্থ হলো রাক্ষসদের আবাস ভুমি।প্রাচীন হিন্দু ধর্মীয় শাস্ত্রাদিতে অস্ট্রিক (অষ্ট্রোলয়েড) মহাজাতিকে রাক্ষস জাতি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়াছিল।মজার বিষয় হলো মগ জাতির কিন্তু অষ্ট্রোলয়েড মহা জাতির সাথে কোন সম্পর্ক নেই,তারা মঙ্গোলয়েড মহা জাতি অন্তর্ভুক্ত একটি জাতি।

রোহিঙ্গা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে প্রচলিত একটি গল্প আছে... এভাবে সম্ভবতঃ সপ্তম শতাব্দীতে বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাওয়া একটি জাহাজ থেকে বেঁচে যাওয়া লোক জন উপকূলে আশ্রয় নিয়েই বললেন, আহ..আল্লাহর রহমে বেঁচে গেছি।এই 'রহম' থেকেই অনেকের মতে এসেছে রোহিঙ্গা নামটি।তবে,মধ্য যুগে ওখানকার রাজ সভার বাংলা সাহিত্যের লেখকরা ঐ রাজ্যকে রোসাং বা রোসাঙ্গ রাজ্য হিসাবে উল্লেখ করেছেন।রোসাঙ্গ রাজ্যের রাজ ভাষা ফার্সী ভাষার সাথে সাথে বাংলা ভাষাও রাজ সভায় তখন সমাদৃত ছিলো।ইতিহাস মতে,প্রায় ১৪৩০ থেকে ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত ২২ হাজার বর্গ মাইল আয়তনের রোহিঙ্গা সে সময় স্বাধীন রাজ্য ছিলো।যখন মিয়ানমারের রাজা বোদাওফায়া এ রাজ্য দখল করেন তখন হতেই চরম বৌদ্ধ আধিপত্য শুরু হয় সেখানে।তারা আদিবাসী জন গোষ্ঠী পশ্চিম মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি উলেখ যোগ্য নৃ-তাত্ত্বিক জন গোষ্ঠী।এখানে বেশীর ভাগই ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত।রোহিঙ্গাদের আলাদা ভাষা থাকলেও তা ছিল অলিখিত।মায়ানমারের আকিয়াব,রেথেডাং,বুথিডাং,মংডু,কিয়কতাও,মাম্ব্রা,পাত্তরকিল্লা,কাই উক পাইউ,পুন্যাগুন ও পাউকতাউ এলাকায় তাদের নিরঙ্কুশ বস বাস।এ ছাড়াও মিন বিয়া,মাই বন ও আন এলাকায় মিশ্র ভাবে বস বাস করে থাকেন।২০১২ সালে, প্রায় আট নয় লক্ষ রোহিঙ্গা মায়ানমারে বসবাস করেন।মায়ানমার ছাড়াও পাচ ছয় লক্ষের অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটে এবং প্রায় প্রায় পাচ লাখ সৌদি আরবে বাস করেন বলে ধারনা করা হয় যারা বিভিন্ন সময় বার্মা সরকারের নির্যাতনের কারণে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন।বিশ্ব জরিপে রোহিঙ্গারা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত ও রাষ্ট্র বিহীন বড়  জন গোষ্ঠী।এক সময় ব্রিটিশদের দখলে ছিলো এই ভূখণ্ডটি।তখন বড় ধরনের ভুল করে তারা এবং এটা ইচ্ছাকৃত কি না,সে প্রশ্ন এখন প্রমানীত।তারা মিয়ানমারের ১৩৯টি জাতি গোষ্ঠীর তালিকা প্রস্তুত করেন।কিন্তু তার মধ্যে রোহিঙ্গাদের নাম অন্তর্ভুক্ত ছিলো না।সে সময় এ ধরনের বহু ভূল করে গেছেন ব্রিটিশ শাসকরা যার খেশারত দিতে হচ্ছে আজ এমনি ভাবে মানবতাহীন এক অমানবিক পরিস্থিতিতে।
রোহিঙ্গা নির্যাতন শুরু...
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি মিয়ানমার স্বাধীনতা অর্জন করেন এবং বহু দলীয় গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু হয়।সে সময়ে পার্লামেন্টে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্বও ছিল।এ জন গোষ্ঠীর কয়েক জন উচ্চ পদস্থ সরকারি দায়িত্বও পালন করেন।কিন্তু বাক সাধে ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইন সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা যখন দখল করলেন তখন হতেই মিয়ানমারের যাত্রা পথ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে থাকে।রোহিঙ্গা জন গোষ্টির জন্য শুরু হয় দুর্ভোগের নতুন অধ্যায়।মায়ানমার সামরিক জান্তা তাদেরকে বিদেশি এবং মুসলমান হিসেবে চিহ্নিত করেন।তাদেরকে নাগরিকের সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়।এমন কি ভোটাধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়।মায়ানমার জান্তার সব চেয়ে বড় আঘাত আসে ধর্মীয় ভাবে।অথচ বৌদ্ধ ধর্মের মুল বাণী অহিংস পৃথিবী যা এখন মিথ্যেতে পরিনত হয়।এ ছাড়াও জোর করে কেড়ে নেওয়া হয় যে কোন উৎপাদিত ফসলাদি।বাধ্যতামূলক ভাবে শ্রমে নিয়োজিত করা হয় অথচ তাদের মজুরী নির্ধারীত কিংবা শিক্ষা-স্বাস্থ্য সেবার রাষ্ট্রীয় কোন সুযোগ সুবিদা নেই।তারা যে বিয়ে করবে তা করার অনুমতিও নেই।সন্তান হলে নিবন্ধন নেই।জাতি গত পরিচয় প্রকাশ করতে দেওয়া হয় না।সংখ্যা যাতে না বাড়ে,সে জন্য তাদের উপর আরোপিত হয় একের পর এক বিধি নিষেধ।
পূর্ব পরিচয়:
সম্ভবতঃ ১৫০০ বছর পূর্বে পূর্ব ভারত হতে অষ্ট্রিক জাতির একটি শাখা "কুরুখ"একটি নৃ-গোষ্ঠী প্রথমে বসতি স্থাপন করেন,পর্যায়ক্রমে তা বাঙালী হিন্দু পরবর্তীতে কিছু ভিন্ন ধর্ম থেকে মুসলমান হয়ে পার্সিয়ান,তুর্কি,মোগল,আরবীয় ও পাঠানরা বঙ্গোপসাগরের উপকূল অঞ্চল বরা বর বসতি স্থাপন করেন। এই সকল নৃ-গোষ্ঠীর শংকর জাত জনগোষ্ঠীই হলো এই রোহিঙ্গা জাতি।বিশেষ করে এ সব রোহিঙ্গাদের মুখের কথ্য ভাষায় চট্টগ্রামের স্থানীয় উচ্চারণের প্রভাব রয়েছে।এছাড়াও উর্দু,হিন্দি,আরবি শব্দও রয়েছে।সম্ভবতঃ ১০৪৪ খ্রিষ্টাব্দে আরাকান রাজ্য দখলদার কট্টর বৌদ্ধ বর্মী রাজা "আনাওহতা" মগদের বার্মা বা মায়ানমার থেকে দক্ষিণাঞ্চলে রোহিংগাদের বিতাড়িত করে বৌদ্ধ বসতি স্থাপন করেন।রাখাইনে দুটি সম্প্রদায়ের বসবাস দক্ষিণে বামার বংশোদ্ভুত ‘মগ’ ও উত্তরে ভারতীয় বংশোদ্ভুত ‘রোহিঙ্গা’।মগরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।
বর্তমান পরিস্থিতি:
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গটি আন্তজার্তিক ভাবে বহু বারই বিশ্ব বিবেকের নিকট বরাবর ছিলো আলোচনায়।১৯৭৮ সালে মায়ানমার সেনা বাহিনীর'নাগামান' ড্রাগন রাজা নামক অভিযানের ফলে প্রায় দুই লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে । সরকারিভাবে এই অভিযান ছিল প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং যে সব বিদেশী অবৈধভাবে মায়ানমারে বসবাস করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এই সেনা অভিযান সরাসরি বেসামরিক রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চলছিল এবং ফলে ব্যাপক হত্যার ঘটনা ঘটে।নির্যাতনের মাত্রা এতো বেশী যে পুরো বিশ্ব অবাক।
১৯৯১-৯২ সালে একটি নতুন দাঙ্গায় প্রায় আড়াই লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। ২০০৫ সালে,জাতি সংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন,কিন্তু রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বিভিন্ন ধরণের মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে এই উদ্যোগ ভেস্তে যায় বিশেষতঃ ২০১৫-বর্তমান সময়ে রোহিঙ্গাদের শরনার্থী হওয়ার বিষয়টি পুরো বিশ্ব্যে তোলপাড় করেছিল।তখন প্রায় তিন লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে শরনার্থী হয়েছিল।
বিডি২৪ এর ভাষ্য মতে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনে বস বাসরত ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে কেবল মাত্র ‘বাঙালি’ আখ্যা দিয়ে তাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করেন মিয়ানমার সকার। এ জন্য তাদের মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত করা হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে।এর জের ধরে বার বার সহিংসতা ছড়ালেও বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি কখনোই। এ নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষিতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে কফি আনানের নেতৃত্বে মিয়ানমারের ছয় জন এবং লেবানন ও নেদারল্যান্ডের দুই জন নাগরিককে ‘অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট’ শীর্ষক ঐ কমিশন মিয়ানমার ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে কম করে হলেও ১৫৫টি বৈঠক করে ১১০০ ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করে গত ২৪ আগস্ট অং সান সু চি’র হাতে ৮৮টি সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদনের একটি কপি তুলে দিলেন।এতে মোটা দাগে রাখাইনদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন,মানবিক সহায়তা,লোক জনের অবাধ চলাচল ও নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী রাখাইনের বাসিন্দাদের অধিকারের বিষয়টি সুরাহা করার বিষয়ে সেখানে সুপারিশ করা হয়েছে।

এরই মধ্যে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতিসংঘ অধিবেসনের ভাষনে মায়ানমারের প্রতি বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন তার মধ্যে.....
(y) কোনো শর্ত আরোপ ছাড়াই অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের ওপর সব ধরনের সহিংসতা ও জাতিগত নিধন স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে।
(y) জাতিসংঘ মহাসচিবের মাধ্যমে একটি অনুসন্ধানী কমিটি গঠন করতে হবে।
(y) জাতি ও ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত রাখাইনের সব নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিককে সুরক্ষা দিতে হবে।এ জন্য মিয়ানমারের ভেতরে নিরাপদ এলাকা তৈরি করা যেতে পারে।
(y) বল প্রয়োগের মাধ্যমে বাস্তুচ্যুত সব রোহিঙ্গা যেন নিরাপদ ও মর্যাদার সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে তাদের বাড়িতে ফিরতে পারে,সে ব্যবস্থা করা।
(y) রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে কফি আনান কমিশনের পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
অবাক বিষয় বিশ্বকে বৃদ্ধাঙ্গগুলী দেখিয়ে মায়ানমার সেনা বাহিনী তাদের বেশ কয়েকটি সীমান্ত মাইন বোমা বসিয়েছে যাতে ওরা আর মায়ানমারে ফেরত আসতে না পারে।মায়ানমার সরকার এমন দম্ভ আর ক্ষমতা দেখনোর একমাত্র কারন তার সাথে অস্ত্র বানিজ্য সহ অন্যান্য বানিজ্যের ঘাটি সৃষ্টিতে চীন রাশিয়া এবং ভারত সহযোগিতায় আছে।তাই তাদের নিকট মানবতা নয় মুখ্য নয়,মুখ্য হলো বানিজ্য যার কারনে ভারত তাদের পাশাপাশি রাষ্ট্র হওয়া সত্বেও এই বিপুল সংখ্যক নির্যাতীত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে ভারত প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকেন।কেবল আমরাই বিশ্বে একমাত্র মানবতার দিকটি বিবেচনা করে এই অসহায় নির্যাতীত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি।অবশ্য এর আরো একটি কারন থাকতে পারে,সরকার তখন বে-কায়দায় ছিল যখন হুর হুর করে হাজার হাজার রোহিঙ্গা এ দেশে প্রবেশ করছে তখনও সরকারের পক্ষ হতে কোন বাধা দেয়া হয়নি অথচ এক শ্রেনী অতি দেশ প্রেমিক এ দেশীয় জনতা মিছিল মিটিং শুরু করে দিয়েছিলো ওদেরকে আশ্রয় দিতে কেননা ওরা মুসলিম।যদি সরকার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে বাধা দিত তবে হয়তো এতো দিনে সরকারকে তারা টাইন্না ক্ষমতা হতে নামাইয়া ফেলত।
কফি আনান সুপারিশের সংক্ষিপ্ত রূপ:
(y) রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান এবং মিয়ানমার ও বাংলাদেশ মিলে যৌথ যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে তাদের নিরাপদে প্রত্যাবাসন করতে হবে।
(y) জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবার অবাধ চলাচলের সুযোগ দিতে হবে।
(y) রাখাইনে উন্নয়ন ও বিনিয়োগের পদক্ষেপ নিতে হবে,যাতে স্থানীয় জন গোষ্ঠীগুলোও উপকৃত হতে পারে।
(y) মিয়ানমারের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সব গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সদস্যদের সম্পৃক্ত করতে হবে।
(y) অভ্যন্তরীণ ভাবে বাস্তুহারা শিবিরগুলো বন্ধ করে সমাজেই তাদের সম্পৃক্ত করার নীতি নিতে হবে।
(y) সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে সু-সম্পর্ক সৃষ্টি এবং সমাজের সব সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
(y) সীমান্ত ইস্যু সহ অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সু-সম্পর্ক জোরদার করতে হবে।
(y) সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমারে কাঠামো সৃষ্টি এবং মন্ত্রী পর্যায়ের কাউকে দায়িত্ব দিতে হবে।
১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে।এরই মধ্যে নাগরিক হিসেবে যাচাই হওয়া ব্যক্তিদের সব ধরনের অধিকার ও স্বাধীনতা দিতে হবে।
(y) মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইনটি আন্তর্জাতিক রীতিনীতি,নাগরিকত্ব ও জাতি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে।
(y) যারা মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি তাদের ওই দেশটিতে অবস্থানের বিষয়টি হালনাগাদ করে ওই সমাজের অংশ করে নিতে হবে।

যে ভাবে মাদার তেরেশাঁ হয়ে আমাদের বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দেশের জনগণ মায়ানমার হতে আগত নির্যাতীত রোহিঙ্গাদের জামাই আদরে বরণ করছেন এ দেশের মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা, সহ মর্মিতা ও বন্ধুত্ব পূর্ণ আচরণে অনন্য দৃষ্টান্ত রেখেছে তা বিশ্ব প্রশংসনীয়।সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের দুই হাজার একর জায়গায় প্রত্যাবাসনের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে।মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হচ্ছে।চলছে তাদের নিবন্ধনও।নতুন নতুন টেলিফোন বুথ,মসজিদ,স্কুল হাট বাজার তৈরী হচ্ছে সরকার ও স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় যা বিশ্ব মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বাংলাদেশ তবে লাভের মধ্যে কেবল আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অর্জন মাদার অব হিউমিনিটি খেতাবটি। নির্যাতীত রোহিঙ্গাদের উপর মায়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক বিশ্ব মানবতার চরম বিপর্যয়ের কারনে শান্তিতে নোবেল পাওয়া অং সান সূচীর অক্সফোর্ড সেন্ট হাগ কলেজের কমন রুম হতে তার নামটি নিলেন কর্তৃপক্ষ।
এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলো:
(y) এ সব রোহিঙ্গা লালন পালনে বছরে প্রায় ব্যায় হবে চার হাজার কোটি টাকা যা লংটাইম যোগান দিতে বাংলাদেশের পক্ষে প্রায় অসম্ভব যদিও বৈদেশীক সাহায্য আসছে কিন্তু তা কত দিন?
(y) বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি পূর্ণ এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর অপূরনীয়।যে ভাবে পাহাড় গাছ পালা কেটে কেটে আশ্রয়স্থল তৈরী করছেন তাতে বাংলাদেশের পরিবেশ ও পর্যটন নগরীর জন্য মহা বিপদ সংকেত।
(y) বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশে মৌলবাদ শক্তি কাজ করে যাচ্ছে বহু বছর যাবৎ এবং তারা রোহিঙ্গাদেরকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন।বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে সরকরকে এ ব্যাপারে প্রশাসনিক ভাবে সতর্ক থাকতে হবে নতুবা এ দেশে জঙ্গি বা আই এস এর উদাহরণ টেনে বৈদেশীক হামলার ঘটনা ঘটতে পারে।
(y) ইয়াবা চোরা চালানে বেশ চিন্তার বিষয় ছিলো বহু পূর্ব হতেই তার উপর রোহিঙ্গা মানে ইয়াবা ব্যাবসায়ীরা এখন এ দেশের অভ্যান্তরই।এ ছাড়াও বাংলাদেশের অর্ধ কোটি নেশা গ্রস্তের অর্ধেকই ইয়াবায় আসক্ত এবং ইয়াবার মূল উৎস হচ্ছে মিয়ানমার। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মতে,রোহিঙ্গারা ইয়াবা চোরা চালানের ক্যারিয়ার বা বহনকারী হতে বাধ্য হচ্ছে।এর গুরুত্ব অনুধাবন করে ইয়াবা চোরা চালানের রোহিঙ্গাদের দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে নতুবা এর ফল হবে ভবিষৎ ভয়ংকর জাতীগত ধ্বংসের হাতিয়ার।
(y) বর্তমানে এ দেশে অবস্থিত রোহিঙ্গারা ক্রম বর্ধমান হারে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ মূলক কর্ম কাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন।এটি আমাদের সমাজে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করবে বা করছে।চুরি,ছিঁচকে চুরি থেকে ডাকাতি ও চোরা চালানের মতো মারাত্মক অপরাধের সঙ্গে রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়বে বা পড়ছে।যার ফলে সীমান্ত অঞ্চলে স্থানীয়দের মধ্যে রোহিঙ্গা সম্পর্কে ক্রমান্নয়ে বিরূপ ধারনা তৈরি হবে।
(y) রোহিঙ্গাদের এই বিপুল জনগোষ্টি ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ ব্যার্থ হলে এবং যদি এ সব রোহিঙ্গাদের এ দেশে অবস্থান দীর্ঘ হয় তবে তাদের মনে এক ধরনে ইগু কাজ করতে পারে এবং এদেশেই স্থায়ী ভাবে বসবাস ও রাষ্ট্রের সুযোগ সুবিদা পেতে গ্রুপ বা জঙ্গি গোষ্টি সৃষ্টি করতে পারে।
(y) জনসংখ্যার দিক দিয়ে আমরা বেশ সমস্যায় পড়ব কেননা ওদের গড়ে প্রতি ফ্যামিলিতে পাচ জন করে আন্ডা বাচ্চা আছে।

যাই হোক আরো ভয়ংকর কোন পরিস্থিতিতে পড়তে পারে এ দেশ এ দেশের জনগণ আমি আর সে দিকে না গিয়ে পরিসরে এইটুকুই বলবো বর্তমানে এই সমস্যাটি আমাদের দেশের জন্য সব চেয়ে বড় সমস্যা।এ সমস্যা কত দিন থাকবে?কখন?কি ভাবে?ফেরত যাবে,আদৌ ফেরত নিবে কি না মায়ানমার?ওরাও যাবে কি না এরকম অনেক সংসয়ে আছি আমরা তথা জনগণ।তবে এর জন্য সরকারী শক্তিশালী কুটনৈতীক তৎপরতা চালিয়ে ভারত চীন এবং রাশিয়াকে মায়ানমারের উপর চাপ দেয়ার আগ্রহ তৈরী করতে পরলেই হয়তো এ সংকটের সমাধান হতে পারে।তবুও ক্ষত কিছু থেকে যাবে।

সবাইকে ধন্যবাদ -{@ 

সহযোগিতায়:
উইকিপিয়া
বিভিন্ন অন লাইন পত্রিকা।

0 Shares

৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ