অক্টোবর মাস আসলেই শোনা যায়, শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের কথা। জানা যায় দেশের সবকয়টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার খবর পড়ে। আর টেলিভিশনের খবর শুনে। এই পুরস্কারটি নাকি পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার। পুরস্কারটি ঘোষণা করা হয়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে। দেওয়া হয়, মোট ছয়টি বিষয়ে। তা হলো পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, বিশ্ব শান্তি,  চিকিৎসায় এবং অর্থনীতিতে। পুরস্কারটি হলো, মানবজাতির জন্য অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ। পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়েছিল, ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে। পুরস্কার ঘোষণা এবং দেওয়া হয়, সুইডেন, নরওয়ে থেকে। পুরস্কার দাতা, সুইডিশ বিজ্ঞান একাডেমি, নোবেল কমিটি অফ কারোলিন্সকা ইনষ্টি্টিউট। নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি। আশা করা যায় পৃথিবীতে মানবজাতির বসবাস যতদিন থাকবে, ততদিন পর্যন্ত এই পুরস্কার দেওয়া হবেই।

এপর্যন্ত অনেক জ্ঞানীগুণীজন এই সম্মানজনক পুরস্কারটি পেয়েছেন। স্বীকার করি যেসব জ্ঞানীগুণীজন এপর্যন্ত শান্তিতে নোবেল পুরস্কারটি পেয়েছেন, সেসব গুণীজন অবশ্যই মানবজাতির জন্য অনেককিছু করেছেন। যদি কিছু নাইবা করতেন, তাহলে আর এই সম্মানজনক পুরস্কারটি তারা পেতেন না। মানবতার জন্য বিশেষ অবদান রেখেছেন বলেই, তারা পেয়েছেন; শান্তিতে নোবেল পুরস্কার। আর নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটিও একজন সম্মানী ব্যক্তির সর্বদিক যাচাইবাছাইয়ের পর, এই সম্মানজনক পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে থাকেন। স্বীকার করা যায়, এই যাচাইবাছাইয়ে নোবেল কমিটি কারোর পক্ষপাত করেন না। যেই সম্মানী ব্যক্তি এই সম্মানজনক পুরস্কার পাবার যোগ্য, ঠিক সেই ব্যক্তিই এই পুরস্কারটি পেয়ে থাকেন।

যাই হোক বলতে চাচ্ছি, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ও ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গের কথা। মনে হয় মার্ক জুকারবার্গ মানবাতার জন্য চিকিৎসায় অবদান রেখতে পারেনি। পারেনি পদার্থবিজ্ঞানে অবদান রাখতে। অবদান রাখতে পারেনি রসায়নে, সাহিত্যে আর অর্থনীতিতে। তাই হয়তে সম্মানিত মার্ক জুকারবার্গ এই সম্মানজনক পুরস্কারটির ধারেকাছেও যেতে পায়নি। আর নোবেল কমিটি অফ কারোলিন্সকা ইনষ্টি্টিউট। নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটিও, মার্ক জুকারবার্গকে বিজয়ী ঘোষণা করেনি। কিন্তু মার্ক জুকারবার্গ যে এই দুনিয়ায় আরেকটি দুনিয়া সৃষ্টি করে ফেলেছেন, সেটা কি কারোর অজানা? মোটেও অজানা নয়। আর এটি তৈরি করেছেন, এই দুনিয়ার মানুষের জন্যই। যার নাম, ফেসবুক দুনিয়া। এটি একপ্রকার ইন্টারনেটভিত্তিক সস্তা দরে সামাজিক যোগাযোগব্যবস্থা। সৃষ্টিকারী বা প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ।

যদিও তিনি শান্তিতে নোবেল পাবার ছয়টি বিষয়ের মধ্যে, একটিতেও অবদান রেখতে পারেনি। তবুও তার সৃষ্টি করা ফেসবুক দুনিয়ায় ওইসব বিষয় নিয়ে বিস্তর লেখালিখি, আলোচনা সমালোচনাও হয়ে থাকে। শুধু পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, মানবতা, চিকিৎসায় এবং অর্থনীতিতে কেন? এই ফেসবুকে বর্তমানে মানবজাতির কল্যাণকর সকল বিষয়ে নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়। সময়সময় যেকোনো একটি বিষয় নিয়ে এমন ঝড় ওঠে যে, সারা দুনিয়া কাঁপিয়ে তোলে। তখন এই ঝড়ের কবলে পড়ে, অনেক দেশের রাষ্ট্রনায়কদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নড়বড় হয়ে পড়ে। আরও অনেক তেলেছমাতি খেলা চলে, মার্ক জুকারবার্গ নির্মিত এই ফেসবুক দুনিয়ায়।

আগেকার সময়ে দেখা যেতো, দেশবিদেশে থাকা আত্মীয়স্বজনের একটা চিঠি হাতে পাবার জন্য, বসে থাকতে হতো ডাকপিয়নের আশায়। ধরনা দিতে হতো টেলিফোন এক্সেচেঞ্জে। প্রিয়জনের মনোভাব প্রকাশ পেতো চিঠির ভাষায়। আর বিনা তারের টেলিফোনের কথার মাধ্যমে। এখন মার্ক জুকারবার্গের এই বিশেষ অবদানের পর থেকে, ডাকপিয়নের আশায় কাউকে আর বসে থাকতে হয় না। ধরনা দিতে হয় না টেলিফোন এক্সচেঞ্জে। এখন খুব কম সময়ের মধ্যে, বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে আত্মীয়স্বজনের সাথে মুহূর্তেই যোগাযোগ হয়ে যাচ্ছে। তাই আজকের মানুষ প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই, আগে চুপি দেয় ফেসবুকে। ফেসবুকে লগইন করেই, প্রথমেই সবাইকে জানিয়ে দেয় সুপ্রভাতের শুভেচ্ছা বার্তা।

এই বার্তা মুহূর্তেই পৌঁছে যায়, সারা দুনিয়ার সকল ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছে। ফেসবুকে চুপি না দিলে সবার কাছে মনে হয়, সারাদিনের কর্মপরিকল্পনার মধ্যে; কি যেন একটা বাকি থেকে গেল। যারা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করে থাকেন, তাদের বেলাও একই অবস্থা। যারা এপর্যন্ত শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের বেলায়ও একইরকম অবস্থা হতে পারে। কারণ, তারাও হয়ত মার্ক জুকারবার্গ নির্মিত ফেসবুক ব্যবহার করে থাকেন। এ এক অসাধারণ সামাজিক যোগাযোগব্যবস্থা। যিনি এই অসাধারণ যোগাযোগব্যবস্থা সৃষ্টি করেছেন, তিনি হলেন, মার্ক জুকারবার্গ। তা কি মানবতার জন্য কিছুই নয়? নিশ্চয় এটা মানবতার জন্য এক বিশাল অবদান।

পৃথিবীতে মোট ১৯৬টি দেশ আছে। এই দেশগুলোর মধ্যে সব দেশের জনগণই ফেসবুক ব্যবহার করে। জনসংখ্যা প্রায় ৬৮০ কোটি। এরমধ্যে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৭৯ কোটি। দিন যতো যাচ্ছে, ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ততো বাড়ছেই। এর সাথে তাল মিলিয়ে মানুষের জন্য বাড়ছে ফেসবুকের পরিসেবা। যাতে মানুষের কোনও সমস্যা না হয়, সেদিকে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট মনোযোগী। মানুষের চাহিদা মেটানোর জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। তাই বর্তমানে বেশিভাগ মানুষই ফেসবুকের ভক্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে এই ফেসবুক ছাড়া মানুষের জীবনটাই কেমনযেন অন্ধকারাচ্ছন

ফেসবুক ব্যবহার করে না, পৃথিবীতে এমন মানুষ খুব কম। রাজা-প্রজা, ধনী-গরিব, বাদশাহ, ফকির। বর্তমানে সবাই এই ফেসবুক নিয়েই সদা ব্যস্ত থাকে। ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত থাকে দেশের খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, সাহিত্যিক, কলামিস্ট, কবি, গুণীজনেরাও। এমন কি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুকিশোর হতে শুরু করে, ৮০বছরের বুড়োরা পর্যন্ত ফেসবুকের ভক্ত। শুধু তা-ই নয়, সারাবিশ্বের বেশিরভাগ মানুষের বন্ধুত্বের বাঁধন এই ফেসবুক। যার সৃষ্টিকর্তা হলেন, সম্মানিত মার্ক জুকারবার্গ।

মনে পড়ে সেসময়ের কথা। যেসময় বাংলাদেশ সরকার একবার ফেসবুক বন্ধ করে দিয়েছিল। সময়টা ছিল ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ। তখন যেকোনো এক কারণে বাংলাদেশে মাত্র, ২২ দিন ফেসবুক বন্ধ ছিল। সেকারণে সরকার অনেক সমালোচনার মুখেও পড়েছিল। দেশের যুবসমাজ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমেছিল, ফেসবুক চালু করার জন্য। ফেসবুক ব্যবহারকারী অনেক মানুষ আন্দোলনও করেছিল। সেসময় রাস্তাঘাট, হাট-বাজারে, শহরে-বন্দরে দেখা গেছে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আন্দোলন। আর মিছিল, মিটিং, সভা, আলোচনা ও সরকারের সমালোচনা।

যেদিন থেকে সরকার আবার ফেসবুক চালু করে দিয়েছিল, সেদিন থেকে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মাথা ঠাণ্ডা হয়েছিল। রাস্তাঘাটে আনন্দ মিছিলও বের হয়েছিল। যদি কোনদিন এমনভাবে ফেসবুক চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে কী হবে? তাহলে মনে হয়, সারা দুনিয়ার মানুষ ফেসবুকের শোকে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়বে। কেন বলছি? বলছি এজন্য যে, 'আমাদের দেশে মাত্র ২২দিন, ফেসবুক বন্ধ ছিল। তাতেই দুনিয়ার মানুষে জেনে গিয়েছিল যে, বাংলাদেশে ফেসবুক বন্ধ। তা দেখে বিশ্বের মানুষ, নিজ নিজ দেশের সরকারের অবস্থানের দিকে নজর রেখেছিল। কখন যেন সরকার বাংলাদেশের মতন ফেসবুক বন্ধ করে দেয়। সেসময় সারাবিশ্বের মানুষ ছিল ফেসবুক বন্ধ আতঙ্কে।' বলছিলাম, এই কারণেই।

মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সৃষ্টি করে এই পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। কেউ থাকি আমেরিকা, কেউ থাকি লন্ডন। কেউ বা বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে। এক মহল্লার মনুষ আরেক মহল্লার মানুষকে চেনে না। তাহলে ভিনদেশের একজন মানুষকে চিনবে কী করে? অথচ এই ফেসবুকের মাধ্যমে সবাই সবার সাথে চেনাজানা। সবাই সাবার প্রিয়জন। একে অপরের সাথে আলাপসালাপ, ভাব বিনিময় সহ কতরকমের আন্তরিকতা। মার্ক জুকারবার্গের এই দুনিয়া বেশিরভাগ মানুষকে ভালোবাসার বাঁধনে বেঁধে ফেলেছে। এই ফেসবুকের কারণে দেখা যায়, একে অপরের যেন কতো আপনজন, আর কতো চেনাজানা মনের মানুষ।

ফেসবুকে বন্ধুত্ব, তারপর ভালোবাসা। সেই ভালোবার টানে সাতসমুদ্র পাড়ি দিয়ে চলে আসে এক অচিন দেশে। পৃথিবীর অনেক দেশের মেয়েরা ফেসবুকের ভালোবাসার টানে, আমাদের দেশেও অনেক আসেছে। তা জানা যায়, পত্রপত্রিকার খবর পড়ে। ভাবতে গেলে অসম্ভব ব্যাপারস্যাপার। কিন্তু এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে, সম্মানিত মার্ক জুকারবার্গ। মা যেমন দশটা সন্তানকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারে, ফেসবুকও পৃথিবীর অনেক মানুষকে মায়ের মমতায় আঁকড়ে ধরে রেখেছে। মোট কথা বলা যায়, বর্তমান যুগের এই ফেসবুক একটা পৃথিবী বা ফেসবুক দুনিয়া।

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়েছিল, ১৯০১ খ্রিস্টাব্দ থেকে। সেসময় থেকে আজ পর্যন্ত অনেক সম্মানী ব্যক্তিকে এই মহা সম্মান দেওয়া হয়েছে। তারা মানবতার জন্য অনেককিছু করেছেন। যা ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সাইট ঘাঁটলে পাওয়া যায়। ইতিহাস ঘাঁটলে মার্ক জুকারবার্গেরও ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি মানবতার জন্য এক সুবিশাল দুনিয়া সৃষ্টি করে রেখেছেন। অথচ এখনো সম্মানিত মার্ক জুকারবার্গ শান্তিতে নোবেল পায়নি বা পাবে বলে ঘোষণাও করা হয়নি। কিন্ত_তিনি যে মানুষের জন্য সস্তা দরে একটা যোগাযোগেব্যবস্থা তৈরি করেছে, এটা কিন্তু সবাই জানে। যার বিশেষ অবদানের জন্য, আজ আমরা দূর-দূরান্ত থেকে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হচ্ছি। ভাব বিনিময় আদানপ্রদান করতে পারছি। এমনকি, ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে সামনাসামনি, দেখাদেখি কথাও বলতে পারছি। এসবের কৃতিত্ব শুধু ফেসবুক জন্মদাতা মার্ক জুকারবার্গ।

তাহলে যারা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করে, তারা কি ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গকে চোখে দেখে না? তারা কি মার্ক জুকারবার্গের ফেসবুক ব্যবহার করে না? এই ফেসবুক যে বর্তমান বিশ্বের মানুষের কতরকম উপকারে আসে, তা কি তারা বোঝে না? যদি বুঝে থাকে, আর যদি এই পুরস্কারটি সত্যি সত্যি মানবজাতির অনবদ্য অবদানের জন্য স্বীকৃতিস্বরূপ হয়ে থাকে; তাহলে সম্মানিত মার্ক জুকারবার্গকে এই সম্মানজনক পুরস্কার দেওয়া বা ঘোষণা করা হয় না কেন? তিনি কি মানবজাতির জন্য কম করেছে? এটা কি সারাবিশ্বের মানুষের জন্য কম কিছু? মানব কল্যাণে সর্বদা নিয়োজিত থাকা ফেসবুক যদি মনবতার কাজ করে থাকে, তাহলে ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ এই সম্মানজনক পুরস্কারটি পাবে না কেন?

তাই নোবেল কমিটির কাছে দাবি। আগামীতে যদি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয়, তাহলে সম্মানিত মার্ক জুকারবার্গের নাম ঘোষণা করুন। সারাবিশ্বের মানুষের মনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে, ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করুন। সারাবিশ্বের ফেসবুক ও মার্ক জুকারবার্গের ভক্তগণ তাকিয়ে আছে আপনাদের ঘোষণার দিকে। আপনাদের সুদৃষ্টি ও ঘোষিত ঘোষণায়, আগামীতে মার্ক জুকারবার্গ হতে পারে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী। জয় হোক ফেসবুকের, জয় হোক মার্ক জুকারবার্গের। জয় হোক বিশ্ব মানবতার।

প্রথম প্রকাশ: জার্মান বাংলা নিউজ

0 Shares

৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ