মাকে মনে পড়ে—

অরুণিমা মন্ডল দাস ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫, রবিবার, ০৮:৩৮:২৯পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি, কবিতা ১৫ মন্তব্য


ছেঁড়া কাপড় পরা ,পেরেক বের হয়ে থাকা পিঁড়িতে বসা খুকখুক করে কাসি দেওয়া রুগ্ন মা আমার!

তুই  আমাকে ভুলতেই পারিস না?

প্ল্যাটফর্মে কলার ছালের পাশে শুয়ে শুকনো পাউরুটি চোখের জলের সংগে ভিজিয়ে মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে খাইয়ে দিতিস !

আলুসিদ্ধ ডাল দিয়ে ভাত খাওয়াতে খাওয়াতে রাজপুত্তুরের গল্প শোনাতিস!

লোকের বাড়িতে কাজ সারাদিন করে সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরে কোলে নিয়ে খেলা করতিস

 

তোর ভিখারী দাঁত ফোকলা হাসির উদারতা বড়লোক মায়েরা কি বুঝবে?

পাশ কাটিয়ে মুখ ঢাকিয়ে চলা ধনী রমনীরা?

রোগের ভয়ে দূর দিয়ে হাঁটছে ?

ছোটলোক বলে কালো স্ট্যাম্প সেঁটে পায়ের উপর লাথি মেরে চোখ রাঙায় ?

মহিলা কামরার বগিতে ভিড়ের সময় ছোটলোক ,বড়লোক মায়েদের কাপড়, জামা, অন্তর্বাস ছেঁড়া ছেঁড়ির দৃশ্যে পটুতার প্রবৃত্তিতে

মার্কেট বিখ্যাত হলিউডি সিন হতে পারে?

 

মা তোকে আমার খুব মনে পড়ে!

কোন এক চাষীর বৌ হয়ে আমাকে পেটে ধরতিস!

দিনে ওরাতে তিনবার ভাত রান্না করে বাপের লাথি ,মারধর  খেয়ে রাগ করে মা মেয়েতে ধানের মাচাতে ঘুমিয়ে পড়তাম!

জানিস মা ধানের সেঁদো গন্ধে আর তোর কাটা জায়গায় মলম লাগাতে লাগাতে ঠিক ঘুমিয়ে পড়তাম?

স্বপ্নেতে সারা কষ্ট দূর করে দিতাম ?

তুই কেন আমাকে জাগিয়ে দিলি?

 

ধর মা তুই কোন মাতালের বৌ!

দিন রাত মার খেয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতিস?

দুইহাতে জড়িয়ে তোকে আদর করতাম!

তবু তুই আমার কাছে থাকতিস?

 

পঙ্গু হয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতিস!

আমি তোর সব কাজ করে দিতাম মা!

মুখের হাসি দেখেই !

তুই নাকি মা?

জ্বরের সময় কেন ওষুধ খাওয়াতে আসিস না?

বিনাদোষে সবাই মারে বকে গালি দে কেন মা ?

আমার হয়ে কেন বলতে এলি না?

তোর পেটে জন্ম হওয়াটাই কি দোষের মা

বল মা ?

তোর কত টাকার দরকার ছিল !

চুড়ি ,ম্যাক আপ বক্স, শাড়ি‘ ‘বন্ধু ,গহনা সব কিনে দিতাম আমি মা!

আমার দুটো কিডনি বিক্রি করে!

ছেড়ে চলে গেলি কেন?

রক্ত দিয়ে গড়েছিলি ই যখন গলায় কলশী বেঁধে সাগরে ফেলে দিয়ে যেতে পারতিস?

কষ্ট কম হত আমার!

পরের জন্মে কোন

ভিখারী মায়ের আদরের মেয়ে হতাম!?

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ