হায়রে
শোন মোদের ছাত্রসেনা শোন দিয়া মন
বুকে জমা কত কষ্ট করিবো বর্ণন
সুখ ছিলো শান্তি ছিল একাত্তরের আগে
সেই কথা মনে এলে কি বেদনা লাগে।
হায়রে
একটা ছিল বড় শয়তান শেখ মজিবর নাম
কথায় কথায় ধমক দিতো এইডা ছিলো কাম
(আমরা ভয় পাইতাম)
সাথে ছিল চাইর খলিফা শয়তানেরও ভাই
পাক স্থান পাকিস্তানের শত্রু সবাই।
(আহা শত্রু সবাই)
হায়রে
২৫ তারিখ রাইতের বেলা আল্লাহর ইশারায়
উলু ধ্বনি বন্ধ করতে মাঠে নাইমা যাই
(বল সুবহানাল্লাহ ভাই)
ঢাকা শহর রক্তের বন্যায় পবিত্র হইলো
আল্লাহতালা আমগো দিকে মুখ ফিরা চাইলো
(আহা মুখ ফিরা চাইলো)
হায়রে
পাক সেনারা আল্লাহর অলি আল্লাহর ঘরে বাস
বাংলাদেশের ঘরে ঘরে সুন্দর নারী খাস
(বুকে আজো উঠে নাচ)
খান সেনাদের ছোঁয়া পেলে বাচ্চা হবে বেশ
সাচ্চা মুসলিম ভরে যাবে আমার সোনার দেশ।
(আহা আমার সোনার দেশ)
হায়রে
আমরা থাকি অপেক্ষাতে যদি যুযোগ পাই
পাকসেনা গো আইটা মাল চাইটা খাইতে চাই
(ফিলিংস আজো কাটে নাই)
একের ঝুটা অন্যের সেফা কোন চিন্তা নাই
যুদ্ধক্ষেত্রে ধর্ষণ করা জায়েজ আছে ভাই।
(আহা জায়েজ আছে ভাই )
হায়রে
হত্যা করো বাড়ী পুড়াও ধর্মে আছে ঠিক
মাওলানা পীর এক হইয়া দেখাইয়াছে দিক
(পারলে হিসাব নিক)
মুক্তিরা কয় স্বাধীনতা করবো নাকি আজ
আল্লাহর গজব আইতে আছে পড়বো মাথায় বাজ।
(আহা পড়বো মাথায় বাজ)
হায়রে
নবী করছে বদর যুদ্ধ আমরা বাহিনী
মুখের কথায় শেষ হবে না সেই কাহিনী
(তুমরা এইডা জানো নি)
রায়ের বাজার বদ্ধভুমি আমগো প্রিয় স্থান
বুদ্ধিজীবি হত্যা করছি বাজি রাইখা জান।
(আহা বাজি রাইখা জান)
হায়রে
তিরিশ লক্ষ বিনাশ হইলো তবু থামে না
লক্ষ লক্ষ ধর্ষণ করলাম হিসাব জানি না
(কিছু ভাল লাগে না)
ঢাকা শহর মুক্ত কইরা স্বাধীন করলো দেশ
আল্লাহর ঘর পাকিস্তান ভাইঙ্গা হইলো শেষ।
(হু হু হইয়া গেল শেষ)
(ডায়লগ/ সেমি ছন্দ)
তো আমার প্রিয় ছাত্রসেনারা,
আল্লাহর ঘর পাকিস্তান আর আল্লাহর ধর্ম ইসলাম….. বাঁচাইতে আমরা যা করলাম……
আমাগো লাইগা তো জান্নাত ফ্রি….!!!
এইবার তুমাগো পালা…।
আজ নয়তো কাইল, যতই পারুক গাইল
গড়বো মোরা পাকিস্তান, হামারা পেয়ারা পাকিস্তান।
ঈমানী শপথে গড়া, আমার প্রিয় ছাত্রসেনারা…..
যারা এখনি জান্নাতের টিকিট চাও, জঙ্গির খাতায় নাম লেখাও।
আর যারা মুক্ত বিবেক মারতে চাও…. স্কুল কলেজ ভার্সিটি চইলা যাও।
বল….
নারায়ে তাকবির
আল্লাহু আকবার।
প্রেক্ষাপট:
২০০৫ সালে রচিত একটি পুথিঁ। যেখানে জামাত-শিবিরের বাৎসরিক (স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার পর) মগজধোলাই কার্যক্রম হয় এক সপ্তাহের জন্য। শিশুদের পিকনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা আসে এবং বাচ্চাদের নিয়ে বক্তৃতা এবং সেমিনার হয়। তারপর সেখান থেকে যারা টিকে যায় বা যাদের পছন্দ হয় তাদের কর্মী বাহিনীতে যুক্ত করা হয়। একই কার্যক্রম কলেজ-ভার্সিটিতেও চলে।
এই লেখাটি (প্রতিকীভাবে) মূলত একজন জামাত নেতার বক্তৃতা। যা সে সামনের শিশুদের কাছে ছন্দে ছন্দে জানাচ্ছে তাদের অর্জনের গল্প। আসলে তারা নবীনদের আকৃষ্ট করতে কোন ইতিহাস বলবে বা কোন অর্জনের কথা বলবে! কি আছে তাদের! ফলে আমার মনে হয়েছিল, তারা হয়ত এমন কিছুই বলে সেখানে।
আর পুথিঁর শেষ বাক্যটা একটু খেয়াল করবেন। ১৭ বছর আগে লিখেছিলাম। আজ কিন্তু সেটাই হচ্ছে। প্রতিটি স্কুল কলেজে বিজ্ঞান শিক্ষক (হিন্দু)দের অসম্মান, অপমান এবং আক্রমণ করা হচ্ছে।
বি.দ্র.: রাজনৈতিক/দেশ সম্পর্কিত প্রতিটি কবিতার ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা থাকবে।
১০টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
পুথি আজকালের প্রজন্ম জানেই না। ১৯৭১ এ নানা বাড়িতে পালিয়ে ছিলাম আমরা সবাই। রাতে খাবার পরে নানা পুথি পড়তেন। আমি শেষ লাইনে কোরাস ধরতাম। মনে পড়ে গেলো সব।
১৯৭১ এর ২৫ মার্চের পরে রাজাকার এন্ড কোং ধর্মের নামেই সব কিছু জায়েজ করেছে। হিন্দু নারীরা ছিলো গনিমত এর মাল। ধর্মকে হাতিয়ার বানিয়েছে বলেই তারা পরাজিত হয়েছে।
জামাতরা মগজ ধোলাই ভালোভাবেই সম্পন্ন করেছিল।
অত্যন্ত চমৎকার ভাবে জামায়াত রাজাকারদের ঐ সময়ের মনোভাব ফুটিয়ে তুলেছে। মুগ্ধ হলাম।
লেখা পড়ে সৃতিকাতর হলাম। একযুগ আগে আমরা একসাথে একটি ব্লগে ছিলাম। এমন পোস্টে ছাগুদের জ্বলুনি ছিলো দেখার মত। আমি আপনার কয়েকটি কবিতা আমার ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করেছিলাম। লিংক গুলো পরবর্তী মন্তব্যে দিয়ে দেবো ইনশাআল্লাহ ।
রাজাকার বিরোধী এমন পোস্ট আরো চাই।
শুভ কামনা, শুভ ব্লগিং
তির্থক আহসান রুবেল
ধন্যবাদ ভাই। এক সময় পাগলা ছিলাম। বসলেই আগুন আর গালি বের হতো। এখন আগুন জ্বলে কম। গালিটা বেশী চলে
বন্যা লিপি
প্রেক্ষাপটে আপনার স্বগোতক্তি না থাকলে গেছিলেন আর কি!!! কারন সাধারনতঃ এখনকার সহজ খোঁজা পাঠকের মগজে ধোলাইটা ঠিকঠাক মত বসতে চায়না।
আমি যখন লেখাটা পড়লাম! প্রথমাংশে বুঝতে সমস্যা হচ্ছিল… পরের সবটুকু আমি মনে মনে ঠিক পুঁথি পড়ার স্টাইলেই পড়লাম….
এবং বলতে চাই- ছন্দে কিছুটা হোঁচট খেলেও ভালো লেগেছে।
জারি রাখুন আপনার দ্রোহের কবিতা।
তির্থক আহসান রুবেল
পুথির কয়েক রকম সুর আছে। এটা একদম গ্রামীণ আদি সুরে পড়লেই তাল মিলে যাবে।
নার্গিস রশিদ
পুথি আমার খুব ভালো লাগার বিষয়।
তির্থক আহসান রুবেল
আমি আসলে একটা সিরিজ লেখার চেষ্টা করি ২০০৪ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত সময়ে। ৩০ টার মতো কবিতা, ছড়া, কথন লিখি। সেখানে একদিন মনে হলো চেষ্টা করে দেখি পুঁথি হয় কি না। সেভাবেই চলে এসেছে লেখাটা
সাবিনা ইয়াসমিন
রুবেল ভাই, আপনাকে বলা হয়নি। আপনার যতগুলো লেখা পড়েছি তারমধ্য এই লেখাটি সেরা এবং রাজাকারের উদ্যেশ্য লেখা যার যত কবিতা পড়েছি, কোন কবিতাই পড়ে এত ভালো লাগেনি। এই পোস্ট আমার প্রিয়তে নিলাম। সময়ে অসময়ে পড়বো,শেয়ার করবো সম-মনাদের সাথে।
শুভেচ্ছা 🌹🌹
তির্থক আহসান রুবেল
ধন্যবাদ। সামনে প্রচুর গালিগালাজ সহ এটম বোমাগুলোও প্রকাশ করার চেষ্টা করবো, যদি আপনারা পর্যবেক্ষণ থেকে এপ্রুভে রাখেন আর কি!
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা বাপরে বাপ। টাস খাইয়া গেলাম ভাই। প্রতিবাদ কোনায় কোনায়🌹
তির্থক আহসান রুবেল
হাহাহা …. একটু চেষ্টা করলাম আর কি তাদের কষ্টটা অনুভব করতে