ঠিক কোন বাক্যটি দিয়ে গল্পটি শুরু করবেন ঠিক বুঝে উঠে পারছেন না নাছির সাহেব।প্রায় মাস খানেক কেবল শুরু করতেই লেখা, নিজের মন মত না হওয়ায় একের পর এক কাগজের পৃষ্টা ছিড়ে ডাষ্টবিনের খোরাক বানাচ্ছেন।নাছির সাহেব পাঞ্জেয়ানা মুসলিম যাকে বলে গাল ভরাট দাড়ি,মাথায় টুয়েন্টি ফোর আওয়ারস টুপি,পায়জামা-ঝুব্বা সব সময় ইসলামী মাইন্ডেট থাকেন।ঘরে তার বৃদ্ধ পেরালাইসেস মা।মাকে সেবা করতে সেখানে লোকের অভাব নেই তারপরও নাছির সাহেব তার সহধর্মীনিকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তার মায়ের যাতে, সে কোন অমর্যাদা না করেন।দীর্ঘ দুই বছরের উপরে হবে তার মা অসুস্হ হয়ে ঘরে এক বিছানায় শুয়ে আছেন।তার মলমূত্র ত্যাগে এক জন কাজের মেয়ে রেখে দিয়েছেন। যদিও নাছির সাহেব একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তবুও অতিরিক্ত ব্যায়ের কথা চিন্তা না করে মায়ের শরীর এবং মনের দিকে সে বেশ সজাগ।এক বার মা শুধু ইশারায় প্যারালাইসের কারনে সে তেমন স্পষ্ট করে কথা বলতে পারেন না কিন্তু নাছির সাহেব মা হা করলেই বুঝতে পারেন মা কি বলতে চাইছেন তো একবার বলেছিলেন…বাবারে আমার আর সহ্য হয় না এবার কোন মতে পৃথিবী ত্যাগ করতে পারলেই বেচে যাই…বাস এইটুকুই মায়ের মুখ থেকে বের হওয়া সাথে সাথে নাছির সাহেব বাড়ীর চৌদ্দ গোষ্টি এক করে ফেলেছেন।তার অন্য আরো দুই জন বড় এবং ছোট ভাই,ভাইয়ের বউ,ছেলে মেয়ে,নিজের ওয়াইফ,ছেলে মেয়ে ডেকে এক করে মায়ের সামনে হাজির করলেন।মা তো অবাক ছেলে আমার একি করছে!নাছির সাহেব সবাইকে নিয়ে মায়ের কাছে ভারাক্রান্ত নয়নে মায়ের পায়ের বরাবর বসে মায়ের পা দুটি ধরে রেখেছেন।

-মা,তোমার সামনে সবাইকে দাড় করিয়েছি এবার বলো কে তোমাকে দুঃখ দিয়েছে….বলো মা, তুমি বলো তুমি না বললে যে আমি শান্তি পাব না।

ছেলের কান্ড দেখে মা মিটমিট করে হাসছে।নাছির সাহেব মাকে মিটমিট করে হাসতে দেখেও বুঝতে পারছেন না, মা মনে হয় কিছু লোকাচ্ছেন ঐ হাসির আড়ালে অনেক মায়েরা এমনই করেন শত কষ্ট হলেও ছেলেকে কিছুই বলেননা।তাই আবারও সে বলছেন।

-মা,এই মা তুমি আমার কাছে কিছু লোকাবে না তুমি সত্যি করে বলো কে তোমাকে ব্যাথা দিয়েছে,বলো মা বলো।

ছেলের পাগলামী যেন থামছে না তাই দেখে আবারও মিটমিট করে হাসছেন মা ঐ দিকে নূরের ফেরেস্তারাও তা দেখে মায়ের সাথে সাথে হাসছেন।নাছির সাহেবের এবার রাগ হলো মায়ের পায়ের কাছ থেকে উঠে দাড় করানো বাড়ীর লোকদের কাছে যাবে জিজ্ঞাসা করবে কে মাকে দুঃখ দিয়েছে।নাছির সাহেব বসা থেকে উঠতে যেয়ে আর উঠতে পারেননি হঠাং মা নাছির সাহেবের পাঞ্জাবী ধরে ফেলেন ইশারা দেন মায়ের মুখ বরাবর যেতে।নাছির সাহেব মায়ের মুখ বরাবর মুগবয় দেন মা তার কপালে আর্শীবাদের চুমো এটে দিলেন এবং নাছির সাহেবকে বুঝাতে সক্ষম হন এখানে কেউ তাকে অবহেলা করছেন না সবাই তার খোজঁ খবর রাখেন।অতিরিক্ত সুখেও মানুষ যেমন কেদেঁ ফেলেন তেমনি মা সে দিন তার আর এক বন্ধবীর কষ্টের কথা শুনে নিজেকে অন্যের উপর বোঝা ভেবে মনের অজান্তেই কথাগুলো বলে ফেলে ছিলেন কিন্তু মা বুঝতে পারেননি মা পাগল ছেলে তার এত দরদ তার মায়ের প্রতি।মা নাছির সাহেবের বউকেও কাছে ডেকে কপালে চুমু দেন আর ছেলেকে শাষন করে ইশারায় বলেন….আমার দিব্যি লাগে তুমি বউমাকে কখনও কষ্ট দিবে না।ছেলে তাতে মাথাটি নাড়ায়ে সায় দেন।

মায়ের প্রতি ছেলের এমন ভালবাসা স্বার্থপর পৃথিবীতে কমই দেখা যায়।তেমনি আমার দৃষ্টিতে বাস্তব দেখা দেয় এমনি একটি উচ্চ শিক্ষিত এবং ধনাঢ্য পরিবারের মায়ের প্রতি অমর্যাদা আর অবহেলার বাস্তব রূপ।মা বাবার প্রতি ছেলে মেয়েরা যখন অবিচার করেন স্রষ্টা হয়তো ভাবেন পৃথিবীর সৃষ্টিতে সে ভূল করেছিল।আমার খুব নিকটের লোক আমারি স্কুল কালের বন্ধু আমার পাশা পাশি বাড়ী।এমন একটি বাস্তব কাহিনী লেখবার ইচ্ছে আমার ছিল না কিন্তু একান্ত দায় মুক্তির খাতিরে কিছু লেখার ব্যার্থ প্রয়াস মাত্র।কেননা উঠতি জীবনে আমার অনেক গুলো রাত অনেকগুলো দিন বন্ধুর মায়ের কাছাকাছি থেকেছিলাম একটু হলেও মায়ের পরশ পেয়েছিলাম তার কাছ থেকে।আমরা যখন তার কাছে যেতাম সে আমাদের জন্যে অনেক কিছু করত, নিজে কাঠের চুলোয় বিভিন্ন শীতের পিঠা কিংবা ঝাল মুড়ি বানিয়ে রাখত যখন আমরা যাব তখন খেতে দিবে বলে।যখন তখন যে কোন ছেলের বায়না বা আবদার পুরণে বিন্দুমাত্র কার্পুণ্য করেননি।সেই মায়ের প্রতি অবহেলা,বঞ্চনা দেয়া খোদার আরশ সহ কেপে উঠত।
চলবে....

0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ