অধ্যাপক জাফর ইকবাল স্যারের ঘটনায় শাহাবাগ আবারো উত্তাল হল।হাজারো জনতার সম্মেলিত মোম বাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদী মিছিল মিটিং।এ দিকে সূর্যরা শাহবাগে কিছুক্ষণ অবস্থান করে চলে গেলেন তাদের কার্যক্রম অফিসে।অফিসের সামনে অনেক লোকজনের ভিড় দেখে কাছে যেতেই দেখেন অফিসের বিল্ডিংটির মুল গেইটে তালা মেরে বেশ কয়েকজন পুলিশ সে স্থানে পাহারা রত।লোকজনের নিকট হতে জানতে পারলেন বিন্ডিংটি অনেক দিন ধরেই প্রশাসনিক নজরে ছিলো।তাদের ধারনা বিন্ডিংটিতে জঙ্গিদের অবস্থানের ইনফরমেসনস আছে কিন্তু পুরো বিন্ডিং সার্চ করে প্রশাসন তার কোন হদিসই পাননি।তবুও অগত্যা বিন্ডিংটিকে পুলিশ ঘিরে রেখেছেন।আমাদের দেশে এমনি হয় ভুয়া সংবাদে দেশে তুলকালাম লেগে যায়।হুজুগে বাঙ্গালীর পরিচয় বহন করাটা যেন আমাদের এক প্রকার স্বভাবে পরিণত হয়েছে।বিশেষ করে উঠতি তথ্যপ্রযুক্তির এদেশে এইতো সে দিন ঘটনা ঘটেছে ভারতে সেই সংবাদকে ফেবুকে পোষ্ট করে চালিয়ে দিল “বাংলাদেশে এক ম্যাজিষ্ট্রেট তার বৃদ্ধ মাকে রেল স্ট্যাসনে ফেলে গেছেন”এমন সংবাদের বিপরীতে এ দেশের জাতীয় সংবাদ মাধ্যমেও নিউজ আসে।যে কথা বলছিলাম যে কারনে প্রশাসনের পাওয়া অনেক ইনফ্রম মিথ্যে বা ভুয়া হওয়ার কারনের মধ্যে মুল কারন হলো এ দেশের পুলিশের ইনফরমার হন তথাকথিত এক সময়কার অথবা চলমান কোন এক অপরাধ জগতের অপরাধীরা।এ সব ইনফরমাদের সাথে অপরাধী যাদের সখ্যতা বেশী তারা পার পেয়ে যায় ইনফরম করে কোন মালদার নিরীহ লোকের উপর।তাতে ইনফরমার এবং প্রশাসন উভয় মালের দিক দিয়ে মালদার হন।সে রকম কোন এক ঝামেলায়ই পড়েছেন সূর্যদের অফিসের বিল্ডিংয়র মালিক।তাই সূর্যরা আজ আর অফিসে না ঢুকে চলে গেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাবলিক লাইব্রেরীর চত্বরে।লাইব্রেরীর বাহিরেও চলছিল বিভিন্ন ইস্যুতে সভা সমাবেশ এর মধ্যে সদ্য ঘটে যাওয়া বিউটি ধর্ষনের প্রতিবাদ সভায় এক রঙ্গা এক ঘুরির মৌন প্রতিবাদ ও সভা চলছে।সেই সভায় সূর্যদের যোগ দেয়ার কথা মত তারা ক্রমশত দল ভারী করে যোগ দিলেন নীল সাদুর আহবানে এক রঙ্গা এক ঘুরির ব্যানারে বিউটি ধর্ষন হত্যার প্রতিবাদে।

প্রতিবাদ সভায় উঠে এসেছে দেশে পাইকারী হারে ধর্ষনের বিষয়টি যা হতে আজ শিশুরাও নিরাপত নয়।সূর্যের ভাষ্য মতে,আমি একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ধর্ষনের একটি রিপোর্ট দেখে অবাক হলাম! এ কি করে হয়?আমরা কি মানুষ?মুক্তিযুদ্ধে এতো প্রানের আত্মত্যাগের বিনিময়ে কি আমরা এই রকম একটা ধর্ষনের রাজ্য তৈরী করেছি?প্রায়  ১৪টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে করা "বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের" পরিসংখ্যান বলছেন, ২০০৮ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত আট বছরে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন প্রায় ৪ হাজার ৩০৪ জন।এর মধ্যে ৭৪০ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
বছর ভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী যদি বলি তবে....
(y) ধরেন ২০০৮ সালে ধর্ষণের শিকার ৩০৭ জনের মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ১১৪ জনকে।
(y) ২০০৯ সালে ধর্ষণের শিকার ৩৯৩ জনের মধ্যে ১৩০ জনকে হত্যা করে,
(y) ২০১০ সালে ধর্ষণের শিকার ৫৯৩ জনের মধ্যে ৬৬ জনকে হত্যা করে,
(y) ২০১১ সালে ধর্ষণের শিকার ৬৩৫ জনের মধ্যে ৯৬ জনকে হত্যা করে,
(y) ২০১২ সালে ধর্ষণের শিকার ৫০৮ জনের মধ্যে ১০৬ জনকে হত্যা করে,
(y)  ২০১৩ সালে ধর্ষণের শিকার ৫১৬ জনের মধ্যে ৬৪ জনকে হত্যা করে,
(y) ২০১৪ সালে ধর্ষণের শিকার ৫৪৪ জনের মধ্যে ৭৮ জনকে হত্যা করে,
এবং ২০১৫ সালে ধর্ষণের শিকার ৮০৮ জনের মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৮৫ জনকে।২০১৬ সালে প্রায় ১০৫০ জন আর ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটেছে। আর ধর্ষণের ঘটনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় প্রায় চার হাজার মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অথাৎ এ যেনো ধর্ষনের রাজ্যে বসবাস করছি আমরা।আমার অবাক লাগে আমি লজ্জিত এই বলে যে আমি পুরুষ।এই আমি আমরা জন্মেছি ধর্ষনের শিকার নারী জাতের উদরে।এ লজ্জা সমগ্র পুরুষ জাতের।আমি আশা করব আমরা আমাদের নারীদের যেখানে যে অবস্থায় তাকে সেই অবস্থায় সন্মান দিবো এবং কূরুচি পুরুষদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হব।সর্বোপরি নারীদের প্রতি আমাদের রুচিবোধ পাল্ল্টাতে হবে,নারী মানে কোন অবলা নয় কোন ভোগ্য পণ্য নয়..নারী কখনো মা কখনো বোন কখনো কন্যা কখনো বা প্রতিবেশী সন্মানীত অতিথি।কথাগুলো বলতে বলতে সূর্যের মুখ দিয়ে এক সময় শব্দরা বের হতে চাইলো না।আবেগে মন গুমরিয়ে কেদেঁ উঠে... সবাইকে ধন্যবাদ বলে পিছন ফিরে রুমালে চোখের জল মুছেন।

এর পর অভি সমর বক্তিতা দেন।অভির মতে...
-সূর্য যা বলে গেল এর পর বলার আর কিছুই নেই তবে আমি অবাক হই আমাদের রুচিবোধ আমাদের কান্ডজ্ঞানহীন নিয়ে।এ সব ধর্ষনের বেশীর ভাগই শিশু প্রায় ৬৪ শতাংশ শিশুই এ কেমন মন মানষিকতা ওয়ালা পুরুষ আমরা! যৌন ক্ষুদা আছে বলে এতোটা নীচে নামতে পারি আমরা?
বক্তব্য শুধু মিছিল মিটিংয়েই কাজ হবে না।১৯৭১ এ মুক্তি যুদ্ধের মতো এ দেশের নারী পুরুষ উভয় ধর্ষকদের বিরুদ্ধে পাড়ায় মহল্লায় গ্রামে গঞ্জে গর্জে উঠতে হবে।আমাদের ডিজিটাল যুগে এ ব্যাপারে ফেবুকে কিছু পোষ্ট চোখে পড়েছে আমার।কয়েক জন তার পোষ্টে ধর্ষনের ব্যাপারে কিছু বক্তব্য তুলে ধরেছেন সরকারের প্রতি,,.আমি সেই বক্তব্যগুলো তুলে ধরছি আপনাদের জ্ঞাতার্থে,সরকারের নজর কাটতে,,,,,,আমাদের পারিবারিক লেখা লেখির উঠোন সোনেলা ব্লগের প্রিয় দুই মুখ বন্দনা কবীরপ্রিয় ইঞ্জা ভাই।তাদের ফেবুকের পাতায় পোষ্ট করা বক্তব্যগুলো হলো,,,,
(y) ধর্ষকেরা জেল খাটবেনা। ধর্ষনের শাস্তি সর্বনিম্ন মৃত্যুদন্ড করতে হবে। ধর্ষকের সহযোগিদের ক্ষেত্রেও আইন সমান হবে।
(y) ধর্ষকের পক্ষে মামলা চালানোর জন্য কোনও আইনজীবী দাঁড়াতে পারবে না। দাঁড়ালে তার লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
(y) দ্রুত বিচার আইনের মাধ্যমে অতি দ্রুত বিচার আচার শেষ করে শাস্তি কার্যকর করতে হবে।
(y) শিশু ধর্ষনের জন্য অভিযুক্তকে সরাসরি মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে হবে। কোনও বিচার আচার আইন জ্ঞাইন মানা হবেনা।
(y) ধর্ষকের পরিবারকেও বহুমুখি শাস্তি ভোগ করতে হবে। যেমন, ধর্ষকের পরিবারের কেউ সরকারি চাকরি পাবেনা বা সরকারি চাকরিতে যুক্ত থাকলে তাকে চাকরিচ্যুত করা হবে... ইত্যাদি।
(y) সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শক্ত করে ধর্ষনের বিপক্ষে প্রজ্ঞাপণ জারি করে অতি দ্রুত এই বিষয়ক আইন বদল করা হোক।
আমার আর কিছু বলার নেই,,,,,জয় হোক মানুষের,জয় হোক মানবতার।
প্রতিবাদ সভায় এক এক করে বক্তারা বক্তিতা দিতে থাকেন।তাদের প্রত্যাকের বক্তব্যের মুল সারমর্ম হলো "সবার আগে আমাদের রুচিবোধকে কন্ট্রোল করতে হবে।ধর্ষন বা ইভ টিজিং কোন পোষাক কারন হতে পারে না।এর একটি নমুনা বলবো তা হল আমাদের আগের যুগের মা চাচী দাদী নানী খালা ফুপিরাতো অনেক অঞ্চলে ব্লাউজই পড়তেন না,তাই বলে সে সময়তো এতো ধর্ষনের মহামারি ছিলো না বা শুনিনি।তাছাড়া এখনো আমাদের পাহাড়ী অঞ্চলের অনেক উপ জাতির মেয়েয়া অনেকটা অর্ধ উলঙ্গই থাকেন যা তাদের সামাজিক রীতিনিতী কৈ সেখানার পরিস্থিতিতো এতো ধর্ষনের ইঙ্গিতই দেয় না।তাহলে ধর্ষন পোষাকে নয়,ধর্ষনকে ঠেকাতে হলে কু-মনকে ঠেকাতে হবে,নিজেকে একজন সুদ্ধ পুরুষ মানুষ হিসাবে গড়তে হবে।
পাশা পাশি আরেকটি কাজ করতে হবে তা হলো নারীকে সাহসী হতে হবে "মরবো নতুবা লড়বো"।দু চারটা কূরুচিপূর্ণ পুরুষদের তাদের রুচির পরিবর্তন করাতে পারলেই বাকীগুলো সাবধান হয়ে যাবে।এ প্রসঙ্গে ভারতের শিল্পী ডোনা গুপ্ত তাঁর এক গানে বলেছেন, ‘চিৎকার করো মেয়ে, দেখি যত দূর গলা যায়, ,,,,।

চলবে

৩৯তম পর্ব এখানে

0 Shares

৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ