“পাহাড় ধস কারন ও প্রতিরোধ”

মনির হোসেন মমি ১৫ জুন ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ০৯:৪৯:৪০অপরাহ্ন বিবিধ, সমসাময়িক ৯ মন্তব্য

আবেগী আহলাদী জিদ্দি নিয়মাবর্তী সৎ আবার এর উল্টো পিঠ যেমন নিষ্ঠুর অমানুষ অবহেলা অনিয়মাবর্তী অসৎ এ রকম রূপগুলো মানুষের মাঝে দেখা যায়।দুদিনের দুনিয়ায় অঢেল,যে ভাবে হোক সম্পদ বানায়।একটুও ভাবেন না এতো সম্পদ দিয়ে তার নিজের কি লাভ হবে।আজরাইল(আঃ) যখন জান কবজ করতে আসবে তখন কি সে ধনপতি ভেবে একটু ছাড় দিবে?নাকি পাহাড় পরিমান পাপের কামাই সম্পদ সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবেন?যে জাতের শেষ সম্বল যদি হয় সাড়ে তিন হাত মাটির ঘরে শুধুই কাফনের কাপড় সে জাতের এতো দম্ভ অহমিকা আর অবৈধ অর্থ আহরণের নেশা কিসের জন্য?
উপরের বক্তব্য বলার একটাই কারন বেশ কয়েক বছর যাবৎ প্রাকৃতিক দূর্যোগে কখনো লঞ্চ ষ্টিমার ডুবে কখনো রোড এ্যাকসিডেন্ট কখনো বা মাটি চাপা পরে মৃ্ত্যু বরণ করছেন অসংখ্য মানুষ তার মধ্যে এবারের ভুমিধস ছিল গত যে কোন সালের চেয়ে ভয়ংকর।লেখাটি লেখা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১৪৫ জন।তার মধ্যে এক জন মেজর বেশ কয়েকজন সেনা সদস্যও রয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী পাহাড় ধসে গত দশ বছরে ছয় সেনা সদস্য সহ তিন শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷পাহাড় ধসের এই ঘটনা ঘটতে শুরু করে ২০০০ সালের পর ধেকে৷পাহাড় ধসের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি প্রথম ঘটে ২০০৭ সালের ১১ জুন৷টানা বর্ষণে ফলে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের হাট হাজারী,পাহাড় তলি,বায়েজিদ বোস্তামি,খুলশী এলাকায় পাহাড় ধসে ১২৭ জন নিহত এবং ২ শতাধিক মানুষ আহত হন৷পরের বছর,অর্থাৎ ২০০৮ ইং সালে বান্দর বান শহরের বালুচরা এলাকায় পাহাড় ধসে কম পক্ষে ১৩০ জনের প্রাণহানি ঘটে৷

প্রতি বছর ঘটছে এমন সব ঘটনা যার স্থায়ী সমাধান না সরকার দেন,না স্থানীয় জনতার বোধগম্য হয়।পাহাড় ধস কেনো হয় এ সম্পর্কে যত টুকু জানা যায় তা হলো আমাদের পাহাড়ি অঞ্চলের উপরের দিকের মাটিতে কঠিন শিলার উপস্থিতি নেই বলা চলে।যার কারনে আমাদের পাহাড় ধসের আশঙ্কা এমনিতেই বেশি। তা ছাড়া  এসব স্থানে বস বাস ও চাষাবাদের জন্য পাহাড়ের উপরের দিকের শক্ত মাটির স্তরও কেটে ফেলেন বসবাস কারীরা।আরো একটি কারন হলো চোরা কারবারী কিংবা বস বাসের প্রয়োজনে বড় বড় গাছ পালা কেটে ফেলায়,ভারি বৃষ্টি পাত হলেই পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে।এ ছড়া বিভিন্ন গবেষনায় দেখা যায় পাহাড়ের ঢাল যদি এমন হয় যে ঢালের কোনো অংশে বেশি গর্ত থাকে।তখন অতি বৃষ্টিতে ভূমি ধস হতে পারে।আমাদের পাহাড় গুলোতে কোন কঠিন শিলা তেমন একটা থাকে না তাই বৃষ্টি হলে এ ধরনের মাটি পানি শুষে ফুলতে থাকে এবং মাটি গুলো নরম ও পিচ্ছিল হয়ে যায়।যার কারনে অতি ভারি বর্ষণের জলের ঝর্ণা ধারার সাথে সাথে মাটি ভেঙ্গে পড়ে।মুলতঃ এমন সব কারনগুলোই আমাদের দেশের পাহাড় ধসের মুল কারন।
২০০৭ সালের পাহাড় ধসে শতাদিক মানুষের মুত্যুর ঘটনার পর তখন ছিলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার সে সময়কার সরকার পাহাড় ধসের কারণ ও প্রতিকার জানতে  ১১ সদস্যের একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করেছিলেন,সেই কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিলেও কমিটির সুপারিশে যা বলা হয়েছিল তা পরবর্তী সময় আর কাজে লাগানো হয়নি৷এভাবে রাষ্ট্রীয় অবহেলা আর ক্ষমতাসীনরা লিজ নিয়ে পাহাড় কেটে কেটে বানিজ্যি ভাবনা রাবার উৎপাদন কারনে পাহাড় ধস হচ্ছে সৃষ্টি করা, আমরা দেখেছি,পাহাড় ধসের কারণ প্রাকৃতিকের চেয়ে মানুষেরই সৃষ্টি বেশি৷পাহাড় কেটে ফেলা,গাছ পালা কেটে ফেলা,পাহাড় লিজ দেয়া,পাহাড়ে সেটেলারদের বসতি,পাহাড়কে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবাহার করা অন্যতম কারণ৷
প্রতিরোধ কি ভাবে সম্ভব।মোটেই অসম্ভব নয় কেবল সরকারে সংশলিষ্ট উচ্চ পদস্থ কর্ম কর্তাদের সজাগ দৃষ্টি আর সদিচ্ছা।

এ ছাড়াও...
(y) পাহাড়ের বানিজ্যিক বন্ধ করতে হবে।
(y) পাহাড় কেটে হাউজিং,শিল্প কারখানা স্থাপন বন্ধ করতে হবে।
(y) পাহাড়ে যে সকল অবশিষ্ট গাছ পালা আছে তা রক্ষা করা সহ নতুন নতুন প্রচুর বৃক্ষ রোপন করে দ্রুত বনায়ন সৃষ্টি করতে হবে।
(y) পাহাড়ের পাদ দেশে বসতি বা ভাড়াটিয়া ঘর বাড়ী তৈরী বন্ধ করতে হবে।
(y) অবৈধ ভাবে পাহাড় কেটে কঠিন শিলা মাটির পরিমান হ্রাস করা বন্ধ করতে হবে।
(y) পাহাড় ধস বার বার না হওয়ার স্বার্থে প্রশাসনের সততার সহিত তা রক্ষনা বেক্ষনে সচেষ্ট থাকতে হবে যাতে বসতি ঘর বাড়ী উচ্ছেদের পর ফের যেন বসতি স্থাপন করতে না পারেন।
(y) উন্নত বিশ্বের মতো পাহাড়গুলোতে জলের ধারা প্রবাহের নিদিষ্ট গতি পথ সিমেন্টের ঢালাইয়ে তৈরী করতে হবে।
(y) সর্বোপরি এ বিষয় সংশ্লিষ্ট সকল প্রকার দুর্নিতী আর ক্ষমতার অপব্যাবহার বন্ধ করতে হবে।

যত আইন যত পদ্ধতিই গ্রহন করি সব চেয়ে বেশী প্রয়োজন সাধারন জনগনের সচেনতা আর মৃত্যুর ভয় থাকতে হবে।যে কোন সময় পাহাড় ধসে আমাদের জীনব বিপন্ন হত পারে জেনেও আমরা কেনো পাহাড়ের পাদ দেশে বসতি স্থাপনা বানাবো।আর এ সম্পর্কে স্থানীয় প্রশাসন সহ সরকারি কর্ম কর্তাদের আইন প্রয়োগে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে।ভাবতে হবে এটা তাদের নৈতিক দায়ীত্ব।
সিঙ্গাপুর যখন ছিলাম তখন দেখেছি সেখানে বৃষ্টি এলে ঝুম বৃষ্টি প্রায় ঘন্টা খানেক এক নাগারে আসে।তখন মনে হয় এতো জল এই বুঝি সিঙ্গাপুর শহর ডুবে যাবে কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্যি যে বৃষ্টি থামার সাথে সাথে জলগুলো যেনো কোথাও হারিয়ে যায় নিমিশেই।পাহাড় পর্বতে ঘেরা সিঙ্গাপুর যার চার দিক প্রশান্ত মহা সাগর সেই সাগরেই TOAS নামক একটি বিশাল এড়িয়া যা বালু দিয়ে ভরাট করে সৃষ্টি করেন।সেখানকার সাগরের সাইট দিয়ে এমন ভাবে বাধ দিয়েছেন যে অশান্ত ঢেউয়েও স্থানটির কোন ক্ষতি করতে পারে না।এ কাজে ব্যাবহৃত হয়েছে বিশ্বের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।সারা পৃথিবীর জলবায়ু ক্রমশতঃ উৎতপ্ত হয়ে উঠছে।তাপ মাত্রার এমন বৈরি প্রভাবের মুল কারন ইচ্ছে মত বৃক্ষরাজি কর্তন।আশ্চর্য হলেও সত্য যার কারনে এই শতকেই ডুবে যেতে পারে প্রচুর উপকলবর্তী অঞ্চল ।তাই বেশী করে গাছ লাগান নিজে বাচুন পরিবেশের বৈরি প্রভাব প্রতিরোধে নামুন।

ছবিওতথ্য:অনলাইন

0 Shares

৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ