নব নির্বাচিত মেয়র জনাব রেজাউল করিম চৌধুরীকে অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা। আগামী পাঁচটা বছর তিনি দল মতের উর্ধ্বে উঠে নগরের অভিভাবক হিসেবে কাজ করে যাবেন এটাই জনগণের প্রত্যাশা। নির্বাচনের পূর্বে প্রার্থীরা অনেক ধরনের অংগীকার, আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি, ওয়াদা দিয়ে থাকেন। পরবর্তীকালে তাঁদের অনেকের পক্ষে সেসব আশ্বাস অংগীকার প্রতিশ্রুতি ওয়াদা রক্ষা করা সম্ভব হয়ে উঠে না। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী সিটি মেয়রের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পাশাপাশি ওয়াসা, পিডিবি, টি এন্ড টি সহ প্রায় ২০/২২ টি সরকারি সংস্থা আছে যারা নিজেদের নিয়ম নীতি আর বাজেট অনুযায়ী নিজেদের কাজ পরিচালনা করায় সারা বছর জুড়ে নগরের সড়কে এবং অলি গলিতে খোঁড়াখুঁড়ি লেগেই থাকে। এখানে সিটি কর্পোরেশনের অসহায়ের মতো তাকিয়ে ছাড়া যেন আর কিছুই করার নেই। তাই এখন সময় এসেছে নগরের সকল ধরণের উন্নয়ন, মেরামতসহ বিভিন্ন কাজকর্ম এক ছাতার নীচে তথা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অধীনে এবং তত্ত্ববধানে করার ব্যবস্থা নেয়ার। আশা করি নব নির্বাচিত মেয়র এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আসলে একজন মানুষ যদি তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব আন্তরিকতা, সৎতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, নৈতিকতা, মানবিকতা, স্বদিচ্ছা, জনস্বার্থ বিবেচনায় রেখে সর্বোপরি দেশপ্রেম আর জনগণের সেবা করার মন-মানসিকতা নিয়ে পালন করে থাকেন তাহলে সেখানে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে কাজ করে যাওয়ায় কোনো অন্তরায় হতে পারেনা।
চসিক নির্বাচনের প্রাক্কালে এবং পরে নতুন মেয়রের কাছে সবাই প্রত্যাশার ঢালি খুলে বসেছে যেন। আসলে আকাশচুম্বী প্রত্যাশা পূরণ করা কখনোই মেয়রের পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের নাগরিক চাওয়া-পাওয়া, আশা-প্রত্যাশা খুব বেশি নয়, গুটিকয়েক মাত্র। আমরা অবৈধ হকার ও বাজার মুক্ত পথচারীদের নির্বিঘ্ন নিরাপদ চলাচলের জন্য ফুটপাত চাই। চাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শহর এবং নালা নর্দমা। কার্যকরী এবং ভেজাল মুক্ত মশার ঔষধ ছিটানো সব সময় কার্যকর দেখতে চাই। অবৈধ পাহাড় কাটা, বৃক্ষ নিধন বন্ধ রোধ করে সবুজ নগরী চাই। অবৈধ ভ্যানগাড়ি, যত্রতত্র বাস টেম্পু ট্যাক্সি, রিক্সা স্ট্যান্ড বন্ধ করে নির্দিষ্ট স্থানে যাত্রী উঠানামা করা এবং যাত্রী ছাউনির ব্যবস্থা করে যানজট মুক্ত নাগরিক পরিবেশ চাই। পাশাপাশি গরীব দুঃখী অসহায় হকারদের পুনর্বাসন এবং নগরের কিছু সুনির্দিষ্ট স্থানে হকারদের বসার স্থান করে দেয়ার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যকরী পদক্ষেপ চাই। মাদক এবং চাঁদাবাজি বন্ধ করার জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলিরদের মাধ্যমে স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে এলাকাভিত্তিক শান্তি শৃঙ্খলা কমিটি করে দেয়া উচিৎ বলে আমাদের বিশ্বাস। শহরের শব্দ সন্ত্রাস বন্ধে বিশেষ করেহাসপাতাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধর্মীয় স্থানসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে গাড়ির উচ্চস্বরে হর্ন বাজানো নিষদ্ধকরণ এবং আবাসিক এলাকায় পুরানো বিকট শব্দের জেনেরেটর বন্ধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের দাবী। বায়ু দূষণরোধে নগরে ফিটনেসবিহীন এবং কালো ধুঁয়া নির্গমনকারী গাড়ি চলাচল, বায়ু দূষণকারী পুরানো জরাজীর্ণ জেনারেটর চালানো নিষিদ্ধ করাও আবশ্যক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার চট্টগ্রামবাসীর বহুল প্রত্যাশিত জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প অতি দ্রুত বাস্তবায়নের পাশাপাশি আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নগরীর জলজট বা জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে নব নির্বাচিত মেয়েরকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। তাছাড়া নালা নর্দমার প্ল্যাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য অপসারণে বলিষ্ট এবং কার্যকরী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বর্ষাকালে এ বিষয়ে যথেষ্ট সজাগ দৃষ্টি, সতর্কতা, নজরদারী, তদারকি রাখার ব্যাপারে মেয়রকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। নগরে সুপেয় পানি সরবরাহে যথাযথ এবং কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে যাতে গ্রীষ্মকালে জনজীবন দুঃখ কষ্ট দুর্ভোগ আর দুর্দশায় না পড়ে। পাশাপাশি প্রান্তিক এবং সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য, মাতৃসেবা সেবা সহজে এবং সুলভ মূল্যে নিশ্চিত করে মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে। মানুষের প্রাণভরে স্বাস্থ্যকর সতেজ ফুরফুরে নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য নির্মল, বিশুদ্ধ এবং দূষণমুক্ত বাতাস চাই। সত্যিকার অর্থে একটি পরিচ্ছন্ন, সুন্দর, সবুজ, সুস্বাস্থ্যের উপযোগী প্রাচ্যের রাণী, সৌন্দর্যের লীলাভূমি পাহাড় পর্বত সাগর নদী পরিবেষ্টিত প্রাকৃতিক, দৃষ্টিন্দন সুন্দর চট্টগ্রামের প্রত্যাশা করছি নতুন মেয়রের কাছে। আপনারা নির্বাচনের প্রাক্কালে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন সে তুলনায় আমাদের চাওয়াটা কিন্তু আকাশচুম্বী নয় মোটেও। পাশাপাশি বিভিন্ন আয় বর্ধক পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে হোল্ডিং ট্যাক্স নগরবাসীর আয়ত্বের মধ্যে রাখার বিষয়ে সচেষ্ট হওয়ার বিনয় অনুরোধ রাখছি। মেয়র সাহেবের সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু কামনা করছি। প্রত্যাশা করছি মেয়র সাহেব আমাদেরকে চট্টগ্রামের হারানো গৌরব, ঐতিহ্য, জৌলুস পুনরুদ্ধারে নিজের সাধ্য অনুযায়ী কাজ করে যাবেন। এবং কর্মগুণে সাবেক সফল এবং প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন সে প্রত্যাশাও রইলো। শুভ কামনা নব নির্বাচিত মেয়র সাহেব।
১২টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন গণমানুষের নেতা, তিনি জনগনের হৃদয় জয় করে নিয়েছিলেন।
চট্টগ্রামের নতুন মেয়রের কাছে জনগনের ন্যূন্যতম প্রত্যাশা পূরন হোক এই কামনা করছি।
আপনার জন্য শুভ কামনা।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
হ্যাঁ ভাই, মহিউদ্দিন চৌধুরী আসলেই গণমানুষের নেতা ছিলেন। আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামতের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চাওয়া গুলো যৌক্তিক । আশা করি নতুন মেয়র প্রত্যাশা পূরণে আন্তরিক হবেন। আপনার জন্য শুভকামনা ও শুভেচ্ছা রইল। শুভ রাত্রি
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
জ্বি দিদি সঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ একাত্মতা প্রকাশ করার জন্য।
আরজু মুক্তা
সবাই এক। আগে নিজের আখের গোছায়।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
তবুও আশায় বুক বাঁধি।
রোকসানা খন্দকার রুকু
নিজে বাঁচলে বাপের নাম॥ তারপরও আপনার আমার চাওয়াগুলো পুরন করুক নেতারা এটাই কাম্য। শুভ কামনা রইলো ভাইয়া॥🌹🌹
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
মন্দ বলেননি। ধন্যবাদ।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
মানবিক ভাবনায় অনন্য নিবেদন।
মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ হোক সকলেই চাওয়া।
কিন্তু ক্ষমতায় গেলে যে কেউ নিচের দিকে তাকায় না এটাই বড় দুঃখ।
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানবেন সতত।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
তৌহিদ
মহিউদ্দিন গণমানুষের জন্য একজন ত্যাগী নেতা ছিলেন। আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ। বর্তমান মেয়র যাতে জনগণের কাতারে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হতে পারেন এটাই কাম্য।
আসলে সেই চেয়ারটাতে বসলে হাত পা বাঁধা হয় অনেকাংশেই। শুভকামনা ভাই।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপনার এবং আমাদের সকলের প্রত্যাশা পূরণ হোক। ধন্যবাদ ভাইয়া।