দুধ পোড়া ঘ্রাণ

মুহম্মদ মাসুদ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, রবিবার, ১১:১৩:৪৭অপরাহ্ন অণুগল্প ১৪ মন্তব্য
ঘুম ভাঙলো ; কান্না কান্না চোখের ঘুম ভাঙলো। যে ঘুমের রাত্রিযাপন শুধু হাহাকারের। শুধু বিষাক্ত বিষাদ বিবাদের। যার ঔষধ নেই। দাওয়াই নেই। আত্মতৃপ্তি নেই। শুধু স্মৃতিচিহ্ন আছে। প্রতিচ্ছবি আছে। কিছু মনভোলানো কথা আছে। হারিয়ে ফেলার আর্তনাদও আছে।
কতদিন পুষে কাঁদিনি। কতদিন স্মৃতিচিহ্ন বুকে বিঁধল। কাঁটা গেঁথে রইল। তবুও স্মরণ করিনি। আসলে স্মৃতিচিহ্ন বিক্রি করেছি কর্মের জাতাঁকলে। পরিবারের ভরণপোষণে। আয় রোজগারের তাগিদে। আহারে! বুকের পর্দাগুলো হাউমাউ করে কাঁদ। প্রিয় শব্দটিও ভুলে গেলাম।
মনে পড়ে- সেই ছোট্ট কালে মায়ে রানতেছিল। আর আমি! আমি কুয়ার কাছে গিয়া খেলচিলাম। আর একটু, একটু হলেই কুয়ার মধ্যে গিয়া পড়ি। ঠিক তহনই মায়ে দৌড়ে আইয়া বুকে তুইল্লা লয়। চুমো খাই। বাজান কইয়া কইয়া কাঁদতে থাকে। মায়ের অশ্রু ফোঁটা গড়িয়ে আমার বুকে। আমি বলি- মা, ও মা আমি ভিজে গেলাম। মায়ে শাড়ির আঁচলে আমার গা মুছে দেয়। কিন্তু ওদিকে হেঁসেলের দুধ পুড়ে ঘ্রাণ ছড়িয়েছে। তবুও মায়ের কোন চিন্তা নেই। আর সেই মায়েরেই...। হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলাম।
বউয়ে কি হয়েছে কি হয়েছে বলে চিৎকার করে উঠলো। আমি তখনও কাঁদছি। স্বভাবতই পুরুষেরা কাঁদতে পারে না। কিন্তু আমিতো সে রাতে পুরুষ ছিলাম না। সন্তান ছিলাম। আর সন্তানেরা হাউমাউ করে কাঁদতে জানে।
বউয়ে তখনও জিজ্ঞেস করলো- কি হয়েছে? কোন খারাপ স্বপ্ন দেখেছ?
না, খারাপ স্বপ্ন না। মায়রে স্বপ্ন দেখেছি। অনেক দিন পর কলিজা ভরে মায়রে দেখলাম। সেই পরিচিত গ্যাদা ডাক শুনলাম। পরিচিত দুধ পোড়া ঘ্রাণের গন্ধ শুঁকে বিমুগ্ধ হলাম।
মধ্যরাত। এখনো ফজরের আজান হয়নি। বউ বললো, চলো ওজু করে নামাজ পড়ি। মা-বাবার জন্য দুজনেই দোয়া করবো।
0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ