কিছুদিন আগে এক সকালে আন্দরকিল্লায় একটি প্রাইভেট ব্যাংকে গিয়েছিলাম। একজন বাহক একটি চেক নিয়ে এসেছেন। উক্ত চেক প্রদানের সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জনৈক কর্মকর্তা বড় অংকের চেক বিধায় তা ক্যাশ কাউন্টারে বলে দিয়েছিলেন বাহককে টাকা প্রদানের জন্য। পরবর্তীতে ব্যাংক কর্মকর্তা একাউন্টে প্রবেশ করে দেখেন যে গ্রাহকের স্বাক্ষর মিলছে না। অপরদিকে বাহক টাকা ছাড়া কাউন্টার ছেড়ে যেতে চাইছে না । উপায়ন্তর না দেখে ব্যাংক কর্মকর্তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাকে মোবাইলের মাধ্যমে বুঝাতে সমক্ষ হন যদিও তিনি টাকা দিয়ে দেয়ার জন্য তদবির করেছিলেন। উক্ত ব্যাংক কর্মকর্তা বেশ উষ্মার সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নামে খেদোক্তি করতে থাকেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জনৈক কর্মকর্তার চেক বলে কি ছেড়ে দিতে হবে ? স্বাক্ষর না মিললে আমি টাকা দেই কিভাবে !
আমাদের দেশে তদবির একটা বড় সমস্যা কেননা এটি সমাজের সর্বত্র বিরাজমান। স্কুল কলেজে ভর্তি থেকে চাকুরী বাকুরী, টেন্ডার থেকে প্রমোশন, স্কুল কলেজ কমিটি থেকে মসজিদ কমিটি, খেলাধুলা থেকে পরীক্ষায় পাশ, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সচিবালয়, রাজনৈতিক দলগুলোর পদ পদবির জন্যেও চলে তদবির। বলা চলে সমাজের সর্বক্ষেত্রেই তদবির। তদবির এবং তদবির। সঠিক জায়গায় সঠিক মানুষের নিয়োগ বা মনোনয়নের জন্য তদবির হলে কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে অনুপযুক্ত মানুষ যদি উপযুক্ত মানুষের উপরে ঠাই পায় তাহলে অবস্থাটা কেমন ভয়াবহ তা একবার চিন্তা করে দেখুন। ওপেন সিক্রেট হচ্ছে খেলাধুলার ক্ষেত্রে জাতীয় টিমেও অনেক সময় তদবিরের কারণে যোগ্য খেলোয়াড়ের পরিবর্তে কম যোগ্য খেলোয়াড়ও সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে ।
যে যাই বুলুন না কেন তদবির স্বজনপ্রীতি আর দুর্নীতির পথকে প্রশস্ত করছে। সঠিক বা যোগ্য মানুষগুলো সঠিক, যোগ্য বা উপযুক্ত জায়গায় না বসলে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড ঠিক থাকবেনা। সৎ, যোগ্য, সাহসী নেতৃত্বের অভাবে সরকারি বা বেসরকারি যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি বা কাঠামো নড়বড়ে হয়ে উঠে । আর সেখান থেকে দেশ আর জনগণ ভালো কোন কাজ বা আর্থ সামাজিক উন্নতি আশা করতে পারেনা। ব্যাক্তি, দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে তদবির নামক সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অনৈতিক ব্যাধি থেকে আমাদের সবাইকে অবশ্যই মুক্ত হতে হবে ।
১৪টি মন্তব্য
ত্রিস্তান
এই তদবির প্রথার প্রচলন ঠিক কে কবে কোথায় প্রথম চালু করেছিলো সেটা খুব জানতে ইচ্ছে করছে। সরকারি চাকরির জন্যে এতগুলো আবেদন করে সকল প্রক্রিয়া সমপন্ন করার পরেও তখন আমার চাকরি হয়নি তখনি আমি তদবিরের গুরুত্ব টের পেয়েছিলাম। হায়রে স্বদেশ !!!
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আমাদের দেশের অগ্রগতি উন্নতির নানাবিধ অন্তরায় হচ্ছে তদবির রোগ। ধন্যবাদ আপানার চমৎকার মতামতের জন্য।
রোকসানা খন্দকার রুকু
তদবীর প্রথা আমাদেরই সৃষ্টি। যোগ্যতা না থাকা ব্যক্তিরা আজ উচ্চপদে বলেই তো দেশে এতো এতো সমস্যা। তবে ভালো যে নেই তাও নয়।
তদবীর প্রথা বন্ধের জন্য জনসচেতনতা জরুরী। ‘আমরা যদি হই সোচ্চার, তবেই দুর হবে অনাচার’।
এখন আপনি যে পোষ্ট বা পজিশনেই থাকুন না কেন? বিদ্রাহী হয়ে উঠুন!!!
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
গুরুত্বপূর্ণ মতামতের প্রতি সহমত পোষণ করছি আপু —“তদবীর প্রথা বন্ধের জন্য জনসচেতনতা জরুরী। ‘আমরা যদি হই সোচ্চার, তবেই দুর হবে অনাচার’।
এখন আপনি যে পোষ্ট বা পজিশনেই থাকুন না কেন? বিদ্রাহী হয়ে উঠুন”!!!
শুভ কামনা রইল।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
একদম অসামান্য!
আজ তদবীর-ই অরোধ্য গতিতে
করে চলেছে দূর্নীতির পথ প্রসস্থ।
চলমান সভ্যতার শরীরে এ এক জঘন্য ব্যাধির বাস।
আন্তরিক শুভ কামনা জানবেন সতত।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
চমৎকার মন্তব্য করেছেন ভাইয়া — “আজ তদবীর-ই অরোধ্য গতিতে
করে চলেছে দূর্নীতির পথ প্রসস্থ।
চলমান সভ্যতার শরীরে এ এক জঘন্য ব্যাধির বাস”।
শুভ কামনা রইলো।
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
সুন্দর একটা লেখা।
শুভকামনা রইল সতত
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকবনে।
হালিমা আক্তার
সরকারি-বেসরকারি সব স্থানে তদবির নামক সংক্রামক রোগে আমরা আক্রান্ত। সামান্য ব্যাপারে আমরা তদবিরের দ্বারস্থ হই। খুব গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। শুভ কামনা রইলো।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপু আপনার গুরুত্বপূর্ণ মতামতের জন্য অশেষ ধন্যবাদ। শুভ কামনা রইলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
জমি-জমা, বাড়ি-গাড়ি, চাকুরী, ব্যবসা, চিকিৎসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবখানেই আমরা তদবিরে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। নিজেদেরকেও মুল্যায়ন করতে হয় অন্যকারো তদবিরের উপর! রোগ সারাতে ওষুধের পাশাপাশি নিজের ইচ্ছাকে যেমন প্রাধান্য দিতে হয়, তেমনি সামাজিক ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে সমাজের সবাইকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
শুভ কামনা 🌹🌹
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপু আপনার গুরুত্বপূর্ণ মতামতের জন্য অশেষ ধন্যবাদ। শুভ কামনা রইলো।
আরজু মুক্তা
আহ্ তদবীর। শুনতে ভালো লাগে।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
ধন্যবাদ আপা।