জীবন যুদ্ধ ৯-ম পর্ব

রেজওয়ান ৩১ অক্টোবর ২০১৭, মঙ্গলবার, ০৯:৩৪:১০পূর্বাহ্ন গল্প ৬ মন্তব্য


- ওই কান্নাকাটি করার জন্য আসছিস এখানে? কি করিস তুই এখন বল?
- ভাই গতবার এইচ এস সি পাশ করার পরে তো আর পড়াশুনা করি নাই। কিছুদিন আগে বাবা মারা গেলো আপনি জানেন না। মা-রে নিয়া ই আছি ঈদের আগে আপনি আমাকে কিছু টাকা দিছিলেন মনে আছে? সাথে কিছু মিলায়া আমাদের স্কুলের পাশে একটা ষ্টেশনারী দোকান দিছি।
- বেশ ভাল করছিস আমাদের স্ট্রিট লাইট কেমন চলে রে?
- আর বইলেন না ভাই। হীরা অর পোলাপাইন নিয়া সারাদিন আড্ডা দেয় জুয়া খেলে। ম্যাডাম কয়েকদিন আগে বললো মাঝে মাঝে নেশার আড্ডাও হয়।
- পুলিশ কিছু বলে না?
- মাঝে মাঝে আসে রুটিন চেক করে। হাতেনাতে তো আর ধরতে পারে না। সব সেটআপ ভাই। আপনে নাই স্কুল ও নাই।
- চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।
- কিছুই ঠিক হবে না ভাই। সব ওলট-পালট হয়ে গেল ভাই।
- ভাগ্য ভাল বেশিরভাগ ছেলে-মেয়েরা ই ক্লাশ ফাইভে উঠে যাবে। প্রাইমারী স্কুলে চলে গেলেই আর ঝামেলা হবে না। আমি আপাতত এটা নিয়ে এগুতে চাচ্ছি না। আচ্ছা বাদ দে, কিছু কথা জানার জন্য কল দিছিলাম। অনেক কথা জানার আছে কিন্তু নতুন করে কি হচ্ছে তা জানার ইচ্ছা নাই এখন। একটু নিজেকে নিয়ে ভাবতে চাই।
- জি ভাই এটাই ভাল। দুনিয়ায় কেউ কারো জন্য না।
- বল সেদিন কি হয়েছিলো। আমি জানি তুই বসে নেই। সব খোজ নিয়েছিস। মা কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম কিচ্ছু বলে নাই। বলবে বলেও মনে হচ্ছে না।
- ভাই সেদিন নামাজের পর আমি চলে গেলাম আর আপনিও বললেন ২০ রাকাত নফল নামাজ পরে চলে যাবেন মনে আছে?
- হুম তারপর বল যাওয়ার সময় কিছু আন্দাজ করতে পারছিলি? কাউকে দেখছিলি?
- জি ভাই কাঞ্চনরে দেখছিলাম হীরা আর সোহেলের সাথে দাড়ায়া সিগারেট খাইতে একটু পরেই চারটা বাইক আসছিলো ওখানে। অন্ধকারে যতটুকু বুঝছি প্রতিটা বাইকেই ৩/৪ জন করে ছিলো ভাই। আমাকে দেখে সোহেল বলে ওইযে চামচায় যায়। আর হীরা বলে যাইতে দে দেখমু আজকে অর কোন বাপে বাঁচায়।
- হুম তারপর?
- তারপরে আমি চইলা গেছি ওরাও কিছু বলে নাই। কিন্তু বাস স্ট্যান্ডে ১৫/২০ জনের মত পোলাপাইন দেখছিলাম কিরিচ/চাপাটি নিয়া ঘুরাঘুরি করতে। এলাকার মুরুব্বিরা ও দেখছে পরে এক পকেট মাইররে কই থিকা জানি ধইরা আনছে সবাই ওরে মারতাছিলো।
- হুম বুঝছি সবার ফোকাস যাতে ওই দিকে থাকে এই ব্যবস্থা করা হইছিলো। ব্যাপার না আমি মরি নাই ওদের মিশন সাকসেস হয় নাই হা হা হা...
- একবার ভাল হন ভাই এক একটারে যদি না বানাইছি আমার নাম তাজ না।
- ওই তর সমস্যা কি? তোকে না কতবার বলছি ভাষা ঠিক করতে?
- ভাই আমি সবই পারুম মাগার ভাষা ডা ঠিক করতে পারুম না। যাই কন ভাই অগো বাটি চালান দেওনই লাগবো। সব খবর লইয়া লইছি ভাই। কে কে সাথে ছিলো। এইখানে সাবেক এমপির ও হাত আছে শেলটার তো হ্যয় ই দিছে।
- আমাদের এমপি সাহেব কিছু বলে নাই?
- উনি বেশ কয়েকবার গেছিলো আপনের বাসায় আংকেল কেস করে নাই। আপনাকেও দেইখা যাইতো এইখানে আইসা।
- বাবা কেস না করে খুব ভাল করছে।
- আপনে একবার ভাল হন তারপর দ্যাখেন কি করি!
- ওরা যদি শুনে না আপনের জ্ঞ্যান ফিরছে প্যান্ট খাকি হইয়া যাইবো এক একটার।
- আসলে তোর ক্ষোভ বা জিদ থাকতেই পারে এটাই স্বাভাবিক...
- খালি আমি না ভাই গ্রুপের প্রায় সবাই আপনার সাথে আছে। যারা টাকার ধান্দায় আছে ওইগুলা ছাড়া। আপনি চইলা আসার পরে কত্ত যে কাহিনী হইছে ওই দিন রুবেল বলতেছিলো। ভাই আপনি একবারে সুস্থ হন তারপর দেখেন কি করি। সবগুলার নলি কাইটা হাতে ধরায়া দিমু।
- নাহ্‌রে এইগুলা কিছুই করবো বা তোকেও করতে দিবো না। আসলে এই মারামারি করে লাভ কি দেখলি তো তেমন কিছু না করেও মাইর খাইলাম। বাদ দে তোর সাথে আমার কিছু জরুরী কথা আছে তাই কল দিছিলাম। এপ্রিলে তো এইচ এস সি পরীক্ষা। আমি পরীক্ষা দিতে চাই। ব্যবস্থা কর।
- ভাই আপনি পরীক্ষা দিবেন? মনে করেন সব রেডি এই সপ্তাহের মধ্যে সব রেডি কইরালামু চুন্তা কইরেন না। শুধু দরকার আপনার জন্য একাউন্টিং টিচার, ইংলিশ বা অন্যান্য সাব্জেক্টে তো সমস্যা নাই তাই না?
- হুম সমস্যা হবে না কভার দিতে পারবো তবে বাংলা দ্বিতীয় পত্রে সমস্যা হতে পারে। বাংলার একজন স্যার আছেন আমার পরিচিত। ঢাকা কলেজের শিক্ষক ছিলেন। আমি পণ্ডিত স্যার বলে ডাকতাম মনে আছে? এখনও ঢাকাতেই থাকেন মনে হয়।
- জি ভাই মনে থাকবে না মানে? কতবার আমাকে নিয়ে গেছেন স্যারকে দেখতে। এইতো কিছুদিন আগে রিটায়ার্ড করছেন।
- হুম কথা বলে নিবো আমি স্যারের সাথে সামনের মাস থেকে আমি যাবো স্যারের বাসায় সপ্তাহে ২ দিন। তুই একটা গাড়ির ব্যবস্থা করবি। আর এই সপ্তাহের মধ্যে ভর্তির সব কিছু শেষ করবি ঠিক আছে?
- জি ভাই কোনও চিন্তা কইরেন না আপনার নাম শুনলেই যে কোনো কলেজে ভর্তি কইরা নিবো সমস্যা নাই। আর রাত্রে আইসা আমি কিছু বই দিয়া যামুনে চোখ বুলাইয়েন।
- আচ্ছা দিয়ে যাইস। দোকান কি বন্ধ করে আসছিস নাকি?
- না ভাই কর্মচারী আছে এক জন। আমার সাথেই থাকে। একদিন এলাকায় চুরি করে যাইয়া ধরা খাইছে পোলাপাইন শেই মাইর দিছিলো পরে পুলিশে দিতে চাইছে, আমি ই ঠেকাইছিলাম পোলাপাইনগো যাতে পুলিশে না দেয়। পরে ওই পোলায় কইছে কোনো কাজ পাইলে, বিশ্বাস কইরা আমার দোকানেই রাইখা দিছি ভাই।
- খুব ভাল করছিসরে কিন্তু সাবধানে থাকিস।
- জি ভাই দোয়া করবেন। আজ যাই তাইলে সব কিছু খোজ নিয়া রাতরে আসুমনে।
- চলে যাবি! আচ্ছা যা তাইলে। সব কিছু সাবধানে করিস। কেউ যাতে না জানে।
- না ভাই কাক-পক্ষীও টের পাইবো না। হসপিটালে আসার সময় ই আপনার ইনচার্জ, ডাক্তার নার্স সবাইরে এইটা ই বইলা আসছি আমি। উঠলাম তাইলে ভাই। রেষ্ট নেন বলেই চলে গেল।

তাজ চলে গেলে নাবিল পণ্ডিত স্যারকে কল দিলো কয়েকটা রিং হতেই
- কি হে নাবিল কেমন আছিস? অনেক দিন পর! সেই রোজার ঈদের দুই দিন আগে কল দিলি তারপরে আর কোনো খবর নেই, আজ মনে পড়লো আমায়? প্রতি কোরবানির ঈদে আছিস বিগত ১০ বছরে একবার ও মিস করিস নি এইবার কি হলো তোর এলি না যে? তোর আন্টি অনেকবার কল দিয়েছে তোকে। ফোন অফ ছিলো...
- আচ্ছালামুয়ালাইকুম স্যার। অনেক প্রশ্ন করে ফেললেন স্যার সব উত্তর পরে দিবো আগে বলেন আপনি ভাল আছেন?
- একটু অসুস্থ ছিলাম তাই আরকি, আপনার সাথে কথা আছে আমার অনেক অনেক কথা। দেখা করতে চাই স্যার।
- ওই তোর কি হয়েছে? হঠাৎ অনুমতি নেয়া শুরু করছিস। কোনোদিন তো নেস নি। বাসায় এসেছিস জতদিন ইচ্ছা থেকেছিস চলে গেছিস। সব ঠিক আছে তো? তুই ঠিক আছিসতো?
- জি স্যার আমি ঠিক আছি সামনের সপ্তাহে আসছি বাসায়।
- সমস্যা নেই আছিস যখন ইচ্ছা তখন, আমি তো সারাদিন ফ্রি ই থাকি রিটায়ার্ড করলামতো কিছুনদিন আগে।
- আচ্ছা স্যা তাহলে আগামি সপ্তাহে এসে কথা বলবো। ভাল থাকবেন স্যার আজ রাখি।
- আচ্ছা তুই ও ভাল থাকিস।

গল্পের সকল স্থান, নাম ও চরিত্র কাল্পনিক কিন্তু গ্রাম-বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে অতি সাধারণ ঘটনা, কারো সাথে মিলে গেলে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন”

চলবে...

0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ