জীবন যুদ্ধ ৮-ম পর্ব

রেজওয়ান ২৪ অক্টোবর ২০১৭, মঙ্গলবার, ০৮:২৯:৩৬পূর্বাহ্ন গল্প ১২ মন্তব্য

নাবিল চোখ খুলে দেখে চারপাশে অনেক আলো কিন্তু আসে পাশে কেউ নেই। নাবিল চশমা ছাড়া ভাল মত দেখে না বিছানার পাশে চশমা টা নেই। অপরিচিত লাগছে পরিবেশটা। চিন্তা করতেছিলো বাবা কবে বাসা পালটালো? এখানে তো আমি শুই নি। তাছাড়া ঘুমানোর আগে তো ফোন আর চশমা বালিশের পাশে রাখি তা ও নেই। কিচ্ছু চিন্তা করতে পারছে না নরতেও পারছে না পুরো শরীরে যে সেলাইন,অক্সিজেন মাস্ক সহ অনেক কিছু লাগানো। শরীর ও ভাল মত নাড়াতে পারছে না। হাত টা একটু একটু নাড়াচারা করতে পারছে কিন্তু পা নাড়াতে গেলে ব্যাথা হচ্ছে একটু একটু। কি হয়েছে এই নিয়ে চিন্তা করছে নাবিল এমন সময় রুমে নার্স এলে তাকে নাবিল জিজ্ঞাসা করলো...
- আপনি কে ? বিনা অনুমোতিতে আমার ঘরে আসলেন কেন?
- কিছু না বলে ও আল্লাহ্‌ বলে দৌরে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। কিছুক্ষণ পর দু’জন ডাক্তার ও সেই নার্স রুমে এলো।
ডাক্তারঃ কি খবর নাবিল সাহেব ঘুম ভাংলো?
- আপনি কে ভাই? আমি কোথায় ?
- ভয় বা চিন্তা করার কারণ নেই। আপনি সেভ জোনে আছেন এবং হসপিটালে আছেন। এমন সময় নাবিলের মা দৌরে রুমে এসে বললো বাবা তুই জেগেসিস! বলেই কান্নাশুরু করলো।
- কি হয়েছে মা বলবে তো? আমার সব কিছু ভালমত মনে পড়ছে না! মা ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে আবার নাবিলের দিকে ঘুরে বললো কিছু না বাবা আসতে আসতে সব বলবো। নে একটু রেষ্ট নে। ডাক্তার একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে রুটিন চেক করে সবাই চলে গেলো।
- এখন বল মা কি হয়েছে আমার? আমি হসপিটালে কেন? বাবা কোথায়?
মা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো এমন সময় এক নার্স এসে জানালো ডাক্তার ডাকছেন। আচ্ছা নাবিল তুই রেষ্ট নে আমি দেখা করে এসে সব বলছি। আচ্ছা আমার ফোন টা দিয়ে যাও। ফোন টা ড্রয়ার থেকে বের করে দিতে দিতে বললো অনেক কল ম্যাসেজ আসতো তাই অফ করে রাখছিলাম। দেখ চার্জ আছে কিনা না থাকলে দিয়ে নে মাথার কাছেই মাল্টি প্লাগ। আচ্ছা বলেই ফোন টা অন করে দেখলো এখনো ১৩% চার্জ আছে নোকিয়া ই-৯০ খুব শখের ফোন। হঠাত মন খারাপ হয়ে গেল ফোনের স্ক্রিন টা একটু ফাটা ও রক্তের ছোপ দেখে। বাসার কেউ খেয়াল করেনি হয়তো ভেতরের স্ক্রিনটা! ফোন চার্জে দিয়ে প্রথমেই অয়ন কে কল দিন লো দুই তিনটা রিং কতেই এক মহিলা কন্ঠ হ্যালো কে বলছেন?
- কপাল কুঁচকে অয়ন কোথায় ?
- আপনি কে ভাই ?
- নাম সেভ করা নেই?! যাই হোক আমি নাবিল। আপনি কে? অয়ন কোথায়?
- নাবিল ভাইয়া আমি পলি। অয়নের ওয়াইফ। বিয়ের পর দিন আপনাকে আমরা সবাই দেখে আসছি হাসপাতালে অজ্ঞ্যান ছিলেন।
- তো কবে বিয়ে করলা অয়ন কোথায়?
- অয়ন তো দুবাই গেছে প্রায় দুই মাস হতে চললো। যাওয়ার আগে আমাদের জন্য যতটুকু না কেঁদেছে আপনার হাত ধরে যে কি কান্না করেছে কি বলবো। যাওয়ার আগে দুই দিন আপনার সাথেই ছিলো।
- চোখ মুছে জিজ্ঞাসা করলো অয়নের নাম্বার টা দেও। নাম্বার নিয়ে বললো আজ রাখি পরে কথা হবে। ভাল থেকো। মা-বাবাকে আমার সালাম দিও। ফোন রেখেই বেশ কয়েকবার অয়নকে কল দিলো কিন্তু বিজি দেখাচ্ছে। দু’মিনিট পরেই নাবিলের ফোন বেজে উঠলে দেখলো অপিচিত নাম্বার। বুঝতে বাকি রইলো না কে কল দিয়েছে...
- কল রিসিভ করেই বললো কিরে অয়ইন্না কেমন আছিস?
- ক্যামনে বুঝলি রে পাগলা?
- হা হা হা বুঝছিলাম তুই ই কল দিবি। আমার কল কেটেই তোকে জানাবে জানতাম। তা ছাড়া ফোন বিজি পাচ্ছিলাম তো। তারপর কেমন আছিস? কবে গেলি দোস্ত?
- এইতো আসছি ২মাস হলো। তর অসুস্থতার কারনে ৩ মাস ফ্লাইট পিছাইছি এর বেশি পারি নাই রে দোস্ত আমাকে মাফ করে দিস বলেই ফুপিয়ে কান্না শুরু করলো অয়ন।
- দূর পাগল কান্না করছিস কেন আমি তো এখন ভাল আছি। আসলে আজকে ই জ্ঞ্যান ফিরছে আমার। ভাগ্য ভালযে স্মৃতি হারায় নাই।
- বাদ দে। নড়াচড়া করতে পারিস?
- হুম একটু একটু। আচ্ছা বল তো আমি কত দিন হসপিটালে?
- তিন মাসের মত। কেন মা বলে নাই কিছু?
- কিছুক্ষণ আগে আসলো এসেই ডাক্তারের সাথে দেখা করতে গেল। এসে সব বলবে।
- ও আচ্ছা।
- তারপর বল দিনকাল কেমন চলতেছে? কি করিস তুই ওখানে?
- এইতো চলে যাচ্ছে আর কি। পড়াশুনাটা ভাল মত করি নাই এখন বুঝি কি কষ্ট। একটা রেস্টুরেন্টে কাজ করিরে।
- ব্যাপার না! কাজ তো কাজ ই তাই না? মন খারাপ করে থাকিস না ভাই। সব সময় হাসিখুশি থাকবি ঠিক আছে? বাসার কথা একদম ই চিন্তা করবি না।
- আচ্ছা দোস্ত দোয়া করিস। আজ রাখি পরে আবার কল দিবো ঠিক আছে?
- আচ্ছা ভাল থাকিস। কথা হবে বলেই কল কেটে দিলো নাবিল। এই প্রথম চিন্তা হলো এস এস সি এর পর ছয় বছর কেটে গেলো নিমিষেই পড়াশুনার কথা মাথায় ই আসে নাই। স্কুল আর নোংরা রাজনীতি নিয়েই ছিলো এত দিন। এমন-টা আর হতে দেয়া যাবে না। পড়াশুনা করতে হবে। মা’ কে জানাতে হবে এইবারের এইচ এস সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চায়। কিন্তু সময় যে বেশি নেই, এপ্রিলেই তো পরীক্ষা হাতে মাত্র দুই মাস তার উপর সে অসুস্থ কি করবে ভেবে পায় না নাবিল। নিজের অজান্তেই চোখের কোণে পানি চলে আসে। এমন সময় নাবিলের মা রুমে এসে দেখে নাবিলের চোখে পানি!
- কি হয়েছে বাবা? কাঁদছিস কেন?
- মা আমি পড়াশুনা করতে চাই। যেভাবেই হোক এইবার এইচ এস সি পরীক্ষা দিতে চাই।
- সময় যে বেশি নেই রে বাবা। তারপর দৌড়াদৌরি করে কলেজে ভর্তি করাতে হবে। তর তো ১ম ইয়ারের ই কিছু পড়া নাই ২ বছরের পড়া কিভাবে শেষ করবি? কোথায় ভর্তি হবি? যদি পড়াশুনা করতেই চাস করবি সমস্যা নেই। সমনের বছর পরীক্ষা দিস বাবা।
- না মা পরীক্ষা আমি এ বছর ই দিবো যেভাবেই হোক। তুমি চিন্তা করো না মা সব ব্যাবস্থা আমি ই করবো। শুধু এক লাখ টাকা ব্যাবস্থা করে রাখো এই সপ্তাহের মধ্যেই। আর আমার ফোনে পাঁচ হাজার টাকা ফ্ল্যাক্সিলোড করে দিও আজকেই।
- আচ্ছা তা না হয় দিলাম। তো কি করতে চাস তুই আমাকে বল।
- বলবো তার আগে বলো কবে আমাকে রিলিজ করবে এখান থেকে?
- ডাক্তার তো বললো যা ভাবছিলো তার কিছুই হয়নি। তুই মোটামুটি সুস্থ আছিস কিন্তু বডি ফ্র্যাকচার গুলো সারতে মাস খানেক সময় লাগবে। চাইলে আগামী সপ্তাহেই বাসায় যেতে পারবি।
- আচ্ছা মা তাহলে আগামী সপ্তাহেই বাসায় যেতে চাই। পড়াশুনার জন্য রেডি হতে চাই। তুমি এখন বাসায় যাও মা রেষ্ট নাও। যাওার সময় ফ্ল্যাক্সি করতে ভুলো না কিন্তু মা। অনেক যায়গায় কল করতে হবে।
- আচ্ছা থাক থাহলে আমি বিকেলে আসবো তর বাবাকে নিয়ে।
মা চলে গেলেই নাবিল তাজ কে কল দিলো। দুটো রিং হতেই কল রিসিভ করে ভাই আপনি জাগছেন? আমি এক্ষনি আসতেছি হসপিটালে।
- কেমন আছিস তুই?
- ১০ মিনিটেই আমি আসতেছি। আগে আমি আপনাকে দেইখা নেই তারপর সব বলবো।
- আচ্ছা আয় বলেই কল কেটে দিলো। আনমনে ভাবছে ছেলেটা কত ভালবাসে আমাকে কিন্তু কিছুই করতে পারলাম না ওর জন্য।
হঠাৎ হুরমুর করে তাজ রুমে ঢুকলো। ভাআআই বলেই নাবিল কে জ্বরিয়ে ধরে কেঁদে দিলো তাজ।

গল্পের সকল স্থান, নাম ও চরিত্র কাল্পনিক কিন্তু গ্রাম-বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে অতি সাধারণ ঘটনা, কারো সাথে মিলে গেলে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন”
চলবে...

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ