জীবন যুদ্ধ ৩য় পর্ব

রেজওয়ান ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, সোমবার, ১০:৪৫:৪৮পূর্বাহ্ন গল্প ২ মন্তব্য

ইফতার এবং নামাজ শেষে তিন জনে বের হয় শপিং এর জন্য। স্কুলের বাচ্চা আছে ৭০ জন এদের জন্য রান্না করা, ঘর গুছানো এবং জন্য আছে চার জন আয়া পড়ানোর জন্য আছে দু জন ম্যাডাম। ২৪ ঘন্টা পাহারা দেবার জন্য আছে দু জন দারয়ান ও এক জন কের টেকার। সব ছেলেদের জন্য শার্ট প্যান্ট, মেয়েদের জন্য থ্রি-পিস, ম্যাডাম দের জন্য শাড়ি কেয়ারটেকার ও দারোয়ান্দের জন্য ফতুয়া ও প্যান্ট কেনা হলো। সকল কিছু সতের হাজার আট শ (১৭,৮০০) টাকার মধ্যেই শপিং হয়ে গেল। বাকি টাকা টা এবার অয়ন নাবিলের হাতে দিয়ে বললো এটা তোর কাছে রাখ পরে লাগবে। টাকা টা হাতে নিয়ে নাবিল দারিয়ে আছে আর ভাবছে কাল তো বাড়ি যাচ্ছি বাবা-মা’য়ের জন্য কিছু নেয়া দরকার। এমন সময় অয়ন ধাক্কা দিয়ে বললো কিরে কি ভাবছিস ? তাজ বলে উঠলো ভাবা-ভাবির কিছু নাই কিনা ফালান খুশি ই হইবো। নাবিল চমকে উঠে জিজ্ঞাসা করলো কি বলিস তুই? তাজ বললো আংকেল-আন্টির জন্য কিছু কেনা দরকার ভাবতেছিলেন তাই না? এই জন্য বলছি ভাবা-ভাবির কিছু নাই কিনে ফেলেন।
নাবিলের চোখ ধুসর হয়ে আসে এদের ছেড়ে সে গিয়েছিলো হারামী হীরার কাছে? নিজের প্রতি ঘিন্যা আসে বিড়বিড় করে বলে উঠে ছিঃ…
মা’য়ের জন্য একটা নীল শাড়ি আর বাবার জন্য একটা সাদা পাঞ্জাবী নিয়ে বাসায় চলে এলো সবাই। রাত দুইটা বাজে, অয়ন-তাজ আজ নাবিলের সাথে আছে। সেহেরীর জন্য খিচুড়ি বসিয়ে তাজ বললো এখন ঘুমআইলে উঠা যাবে না চলেন মুভি দেখি বলেই ল্যাপটপ অন করে “দ্য মামি” মুভিটা ছেড়ে দিল যদিও প্রত্যেকেই বেশ কয়েকবার দেখেছে তারপরেও ভাল লাগে ওদের তাই আবার ছাড়া।
মুভি শেষে সেহেরী করে সবাই নামাজের জন্য মসজিদে গেল। নামাজ শেষে সবাই বেরিয়ে যাচ্ছিলো নাবিল অয়ন আর তাজ কে বললো একটু বোস কথা আছে...
অয়নঃ কি কথা?
তাজঃ বলেন ভাই কি বলবেন!
নাবিলঃ আজকে ২৫ রমজান, আসরের পরে বাসার দিকে রওনা দিবো ইচ্ছা আছে। ২৭ রমজানে নামাজের জন্য বের হবো, এর আগে বের হবার ইচ্ছা নাই, এদিকে সব কিছু তোরা দেখবি অয়ন তো ঈদের পরেই চলে যাচ্ছে, তাজ তোর ই সবকিছু দেখতে হবে।
ওমনই তাজ বলে উঠলো না ভাই এত বড় দায়িত্ব আমি নিতে পারবো না তবে প্রতিদিন কি হচ্ছে সব আপনাকে জানাতে পাড়ি এবং আপনি গাইড করলে কিছুদিনের জন্য সামাল দিতে পাড়ি কিন্তু পার্মানেন্ট কোনো দায়িত্ব আমি নিতে পারবো না ভাই।
আচ্ছা চল বাসায় গিয়ে সব আলাদা-আলাদা প্যাকেট করে স্কুলে যাবো ১ টার দিকে।
বাসায় এসে গুছিয়ে মোবাইলে অ্যালার্ম দিয়ে অয়ন-তাজ ঘুমালো কিন্তু নাবিল ঘুতা পারছে না, এপিঠ-ওপিঠ করছে শুধু, বুঝতে পারছে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। স্কুল টার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে কোনো এক অজানা কারণে…
একটার দিকে অয়ন উঠে দেখে নাবিল বসে বসে ছবি আঁকছে, নাবিল খুব ভাল ছবি আকে অয়ন মুগ্ধ হয়ে দেখলো অপরূপ এক বাচ্চার ছবি! পেছন থেকে অয়ন জিজ্ঞেস করলো
-কার বাচ্চারে?
-আঁতকে উঠে বললো উঠে গেছিস?
-হুম কিন্তু বল আগে বাচ্চাটা কে?
-মনে নেই ওই দিন রাস্তার ধারে ঠোঙা কুরাচ্ছিলো সেই বাচ্চাটাকেই আঁকার চেষ্টা করছিলাম।
-Yaa Yah now I remember! Why you are wasting your time? Sometime really, I feel worry for you please do something different!
-I am trying to do something different but people does not let me to do হা হা হা…
-বাদ দে দোস্ত চল তাজকে উঠিয়ে গোসল করে নামাজ পরে আসি আজ তো বাড়ি জাবি ভাবতেই ভাল লাগছে চল চল চল…
-তাজ ওঠ ফ্রেশ হ নামাজে যাবো।
নাবিল এক ডাক দিতেই তাজ উঠে গেলো সোজা ওয়াশরুমে। নাবিল চিন্তা করছে ছেলেটা কত মানে, ভালবাসে আমাকে।
সবাই গোসল-অযু করে নামাজের জন্য মসজিদে গেল। নামাজ শেষে নাবিল ইমামকে ২০০০ টাকা দিয়ে বললো হুজুর এবার ঈদে তেমন কিছু দিতে পারলাম না মাদ্রাসার বাচ্চাদের ঈদের সকালে সেমাই খাওয়াবেন। হুজুর নাবিলের মাহায় হাত রেখে বললো বাবা এই মারা-মারি ছেড়ে দে না, কি লাভ এগুলো করে? সবাই তোকে যেমন ভালবাসে কিছু মানুষ তোকে অনেক ভয় পায় তারা অভিশাপ দেয়, তুই এগুলো ছেড়ে দে বাবা। নাবিল মুচকি হেসে বললো জি হুজুর ছেড়ে দেব সব শুধু স্কুলটা ছাড়া। আজ আসি হুজুর সালাম দিয়েই মসজিদ থেকে বেরিয়ে এলো।
সবাই বাসায় এশে ব্যাগ নিয়ে দুইটা বাইক নিয়ে তিন জনে চলে গেলো স্কুলে। সবাই আছে স্কুলে, সবার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে টিচার্স রুমে চলে গেলো তিন জনেই, দু জন ম্যাডাম দেখে খুশি হলো অয়ন বললো ম্যাডাম আপনাদের সবার জন্য ঈদের জামা-কাপড় নিয়ে এসেছি দেখেন বলেই সব প্যাকেট বের করতে লাগলো তাজ ও কাজে হাত দিলো। মুচকি হেসে নাবিল বাহিরে বারান্দায় দাঁড়াতেই সকল বাচ্চারা নাবিল কে ঘিরে ধরলো নাবিল ও সবাইকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞাসা করলো কেমন আছিস সবাই? এক সুরে উত্তর দিলো ভাল। আচ্ছা তোরা খেল আমি একটু ম্যাডামদের সাথে কথা বলি। সবাই বললো আচ্ছা ভাইয়া…
দরজায় নক করে নাবিস টিচার্স রুমে ঢুকতেই দুই ম্যাডাম ই নাবিলে কাছে এলো চোখে জ্বল নিয়ে। নাবিল জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে…
ছোট ম্যাডাম কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলো বড় ম্যাডাম থামিয়ে দিয়ে বললো এবার আমরা সবাই চিন্তায় ছিলাম কিভাবে সব কিছু ম্যানেজ হবে!! কিন্তু শেষ মিনিটে তুমি সব নর্মাল করে দিলে বাবা বলেই জড়িয়ে ধরলো বড় ম্যাডাম।
ম্যাম কিছু কথা বলবো মনযোগ দিয়ে শুনবেন এবং সেভাবে কাজ করবেন। আপনাদের ভালবাসি, বিশ্বাস করি এবং ভরসা পাই তাই বলছি…
“ আজ আমি বাড়ি যাচ্ছি ৫ বছর পর,অয়ন ও ঈদের পরে দেশের বাহিরে চলে যাচ্ছে। স্কুলে আমি একটু কম আসবো হয়তো সপ্তাহে এক বার বা মাসে ২/৩ বার, সব কিছু যেভাবে চলতেছে আমার অবর্তমানেও যাতে সেভাবেই চলে। কোনো কিছু প্রয়োজন হলে তাজ কে জানাবেন খুব বেশি প্রয়োজন হলে আমাকে ফোন দিবেন। যত বাধা-ই আসুক না কেন স্কুলের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় বাচ্চাদের যাতে কোনোকিছুর কমতি না হয়। আপনারাই এই স্কুলের প্রধান। আপনারা হয়তো ভুলেন নাই কোথা থেকে আপানাদের নিয়ে এসেছি। আমি আসলে এমন কাউকে খুজছিলাম যারা আমার অবর্তমানে দায়িত্ব নিতে পারে, বাচ্চাদের সাথে সব সময় থাকতে পারে আর তাই তো বৃদ্ধাশ্রম থেকে নিয়ে এসেছিলাম মনে আছে?
-হ্যা বাবা মনে আছে। আর তোমার জন্যই এত সম্মানের থেকে খেয়ে বেচে আছি। তোমার কথা আমরা অক্ষরে-অক্ষরে মেনে চলবো, যত কষ্টই হোক না কেন আগলে রাখবো সকল বাচ্চাদের তুমি চিন্তা করো না বাবা। বাসায় সময় দেও।
-দোয়া করবেন আমাদের জন্য ম্যাম। ভাল থাকবেন বলেই নাবিল বাহিরে বেরিয়ে এসেই সানগ্লাস টা চোখে দিলো কারণ নাবিলের চোখ ধুসর হয়ে আসছিলো। পিছু পিছু সবাই বেরিয়ে এলে বাচ্চারা ও আমার জড়ো হলো নাবিলের সামনে। নাবিল ওর ব্যাগ থেকে বেশ কিছু চকলেট বের করে সবাইকে দিলো। চকলেট দেয়া শেষ হলে তাজ বললো তোদের সবার ঈদের জামাকাপড় ম্যাডামের কাচগে দিয়ে গেলাম। ঠিক মত পড়াশুনা করলে কাল রাতে সবাইকে নতুন জামাকাপড় দিবে বুঝলি?
সবাই এক সুরে বলে উঠলো জি ভাইয়া। শুধু এক জন বললো আজকে দিবে না ভাইয়া? বাচ্চার কথা শুনেই সবাই এক সাথে হা হা শব্দে হেসে উঠলো।

“গল্পের সকল স্থান, নাম ও চরিত্র কাল্পনিক কিন্তু গ্রাম-বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে অতি সাধারণ ঘটনা, কারো সাথে মিলে গেলে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন”
to be continued...

0 Shares

২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ