জীবন যুদ্ধ ১১-তম পর্ব

রেজওয়ান ১৪ নভেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ০৬:০৪:০২অপরাহ্ন গল্প ৫ মন্তব্য


দিন দুইয়ের মধ্যেই নাবিলকে রিলিজ দিয়ে দিলো। ডাক্তার বলে দিয়েছে ঠিক মত ওষুধ খেলে মাস খানেকের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাবে। বাসায় এসে নাবিলের মনে হলো অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। কিন্তু এগুলো নিয়ে নাবিলের চিন্তা হলো না তেমন এখন শুধু একটাই চিন্তা এইচ এস সি পরীক্ষা। রুমটা নিজের মত করে একটু গুছিয়ে নিয়ে পণ্ডিত স্যারকে ফোন দিলো। কয়েকটা রিং হতেই স্যারের স্ত্রী রিসিভ করে বললো
- কিরে তুই আছিস না কেন ইদানিং? ভুলে গেছিস আমাদের?
- না বুবাই ভুলবো কিভাবে বলো? আসলে আমি অনেক অসুস্থ ছিলাম।
- আচ্ছা বলতো আমায় কেন বুবাই বলিস? বুবাই মানে কি?
- আপনি তো সম্পর্কে স্যারের স্ত্রী, পিসি বলেই ডাকা উচিৎ কিন্তু মাসি-পিসি আমার ভাল লাগে না...
- একিরে তুই আমাকে আপনি আপনি করছিস কেন? থাপ্পর একটা ও মাটিতে পরবে নারে নাবিল বাসায় আয় তখন দেখবি।
- আমি বুবাইকে ই তুমি বলবো, মাসি-পিসিকে না।
- হা হা যেভাবে যা ইচ্ছা হয় ডাকিস, অনেকদিন তোকে দেখি না কবে আসবি তুই? তোর স্যার বলছিলো তুই পরীক্ষা দিতে চাচ্ছিস সত্যি?
- হ্যা বুবাই এজন্যই ফোন দিয়েছিলাম। স্যার কোথায়?
- তোর স্যার মন্দিরে গেছে তোর নামে পুজো করতে।
- আচ্ছা তাহলে পরে ফোন দিচ্ছি কেমন?
- কেন রে আমার সাথে কথা বললে মুখ ব্যাথা করে?
- হা হা হা কি-যে বল না বুবাই!! আচ্ছা শোন থাহলে সব তোমাকেই বলছি স্যার এলে তুমি ই বলে দিও কেমন?
- আচ্ছা বল।
- আগামীকাল বিকেলের দিকে আমি আসবো। ডিসেম্বর, জানুয়ারি ফেব্রুআরি তোমাদের সাথে থাকবো। পড়াশুনা তোমার বাসাতেই। মার্চের শেষের দিকে পরীক্ষা। পরীক্ষায় ঠিক ১৩ দিন আগে বাসায় আসবো। ফোন করেছিলাম কালকে আসছি সেটা জানানোর জন্য। এখন হ্যাপিতো?
- কালকে তুই আসবি আর এখন জানাচ্ছিস? আমি কিচ্ছু রেডি করিনি আর তুই এখন জানাচ্ছিস? আয় তারপর দেখবি কত ধানে কত চাল।
- আমিতো বেড়াতে আসছি না বুবাই পড়াশুনা করতে আসছি। ও আরেকটা কথা তোমার মনে আছে হৃদিতার কথা?
- হুম আছে যাকে তুই মনে মনে ভালবাসতি।
- কি যে বল না তুমি? মুখে কিচ্ছু আটকায় না। ও এখন একাউন্টিংয়ে মাস্টার্স করছে আর আমি এইচ এস সি পরীক্ষা দিবো বুবাই।
- তাতে কি বয়সেতো তুই ওই মেয়ের চেয়ে দেড় বছরের বড় তাই না?
- সব ঠিক আছে কিন্তু বুবাই হৃদির একটা মেয়ে আছে দুই বছরের। হাসবেন্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো তোমার বাসায় এসে আমাকে পড়াবে সপ্তাহে চার দিন। আর এজন্যই সব কিছু বলা, তুমি কিন্তু ঘুণাক্ষরেও এই ধরনের ফালতু প্রসঙ্গ তুলবে না হুম্মম্ম।
- ভাগ্যিস বলে দিলি না গলে সাড়ে সর্বনাশ হয়ে যেতোরে।
- জানি তো তাই বলেদিলাম। আমার চিন্তা এখন অনেক বড় হওয়া, আইনে পড়াশুনা করবো। বড় উকিল হবো দোয়া করো বুবাই।
- দোয়া আছে তোর জন্য। অনেক বড় হ। আমাদের মুখ উজ্জ্বল কর এই একটা ই দোয়া সব সময়।
- আচ্ছা বুবাই রাখছি কাল বিকেলে দেখা হচ্ছে, স্যার কে জানিয়ে রেখো।
- আচ্ছা ভাল থাকিস।
নাবিল ফোন কল কেটে আয়নার সামনে দাঁড়ালো কি অবস্থা করেছে নাবলকে মেরে! নাকের নিচে ঠোটের মাঝখানে সেলাই, পেটে সেলাই। বাম পা-টা মচকানো! ভাবা যায় যাকে নাবিল এতটুকু যায়গা দিয়েছে সে ই কিনা মেরেদিলো এভাবে? ভাবতেই চোখ ভিজে গেল নাবিলের। এমন সময় মা’কে আসতে দেখে
তাড়াতাড়ি চোখ মুছে নিয়ে খাটে এসে বসলো।
- কি মা কিছু বলবে?
- না এমনেই দেখতে এলাম আর ওষুধ নিয়ে এলাম।
- আসো মা বসো আমার কাছে। তোমার কোলে মাথাটা রাখি।
- বাব তুই বলেছিলি পরীক্ষা দিবি তর বাবা তেমন কোনো ব্যাবস্থা করতে পারেনি।
- মা তুমি এইগুলা নিয়ে চিন্তা করছো কেন? আমি তো সব ব্যবস্থা করে ফেলেছি। মোহাম্মদপুরের একটা কলেজ থেকে পরীক্ষা দিবো। মা কালকে
আমি পণ্ডিত স্যারের বাসায় যাচ্ছি ওখানেই পড়াশুনা করবো। আসবো পরীক্ষার ঠিক তেরদিন আগে। আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না মা, আমি ঠিক আছি।
- আচ্ছা তোর প্ল্যান কি? কি করবি ভবষ্যতে? এর চেয়ে ভাল মেয়ে দেখি বিয়ে করে সংসারি হ।
- মা আজকের পর যেন বিয়ের কথা না শুনি। বিয়ের আগে অনেক কাজ করার আছে আমার। তাছাড়া সময় হলে আমিই খুজে নেবো। তোমরা শুধু দোয়া করে দিও।
- আচ্ছা যা ভাল বুঝিস কর, আমার দোয়া ও সাপোর্ট সব সময় আছে তোর সাথে।
- ক্রিমিনাল ল’তে পড়ার ইচ্ছা আছে মা। এজন্য যা করালাগে যে পরিশম করা লাগে করবো তুমি শুধু দোয়া করো।
- আচ্ছা দেখা যাক, তুই ওষুধ খেয়ে রেষ্ট নে কিছুক্ষণ। তোর বাবার আসার সময় হলো আমিও যাই রাতের রান্না বসাই বলে মা চলে গেল।
পরদিন নাবিল,বাবা-মা ও হৃদিতা সহ পণ্ডিত স্যারের বাসায় এসে দেখলো বুবাই নাবিলের জন্য খুব সুন্দর একটা রুম সাজিয়ে রেখেছে। টেবিলে নাবিলের সব পছন্দের খাবার!
- আজব বুবাই, আমি কি মেহমান? কি করেছো এইগুলা? একা একা তোমার কষ্ট হয় না?
- কিছুই তো করিনি গড গিফটেড ছেলে এসেছে আমার এইটুকুন কি করবো না? যা তুই ভেতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। আপা-ভাই আপনারা ও ফ্রেশ হয়ে নিন। কিরে হৃদিতা তোকে কি আলাদা করে বলতে হবে?
- না পিসি যাচ্ছি।
- হুম যা ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি আয় আমাকে সাহায্য কর টেবিলে খাবার দিতে হবে।
- আচ্ছা আসছি বলে সবাই ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
সবাই ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসলো। খাওয়া-দাওয়া শেষে পণ্ডিত স্যার সবাইকে নিয়ে নাবিলে রুমে গেল কিছুক্ষন কথা বলার জন্য। নাবিলের বাবা-মা’কে উদ্দেশ্য করে পণ্ডিত স্যার বললেন আপনারা মনেহয় ভয় পাচ্ছেন নাবিলকে এখানে রেখে যেতে। আসলে আমাদের কোনো সন্তান নেই।আমরা দু’জনেই নাবিলকে সন্তানের মত দেখি।
- না ভয় পাবো কেন? আপনাদের কথা অনেক শুনেছি নাবিলের কাছে। শুধু চিন্তা হচ্ছে ওষুধ ঠিক মত খাবে নাকি নাবিলের মা বললো।
- চিন্তা করবেন না ওর বুবাই ই সব ঠিকমত মনে করিয়ে খাওয়াবে।
- আচ্ছা অনেক রাত হতে চললো আজ আসি ভাই নাবিনের বাবা বললেন।
- আজ থেকে কাল সকালে গেলে ভাল হতো না ভাই?
- না আজ না অন্যদিন এসে থাকবো, আজ বিদায় দেন। হৃদিতা মামণী যাবে এখন?
- জি আংকেল চলেন আমিও দেরি করবো না আজকে, মেয়েকে তার নানুর কাছে রেখে আসছি। নাবিল কাল থেকে সকাল এগারো টার মধ্যে পড়াতে আসবো। সব রেডি রেখো কেমন?
- আচ্ছা সব রেডি রাখবো। চলে আসিস সময় মত।
সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেলে নাবিল সব বই, নোট, খাতা-কলম বের করে টেবিলে গুছিয়ে রাখলো।
গল্পের সকল স্থান, নাম ও চরিত্র কাল্পনিক কিন্তু গ্রাম-বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে অতি সাধারণ ঘটনা, কারো সাথে মিলে গেলে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন”
চলবে...

0 Shares

৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ