সড়কে প্রাণ হানির ঘটনাকে আমরা সাধারণতঃ নিছক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেই অথচ প্রান হারাচ্ছে হাজারো প্রতিভাবান ব্যাক্তি কিছুটা খবরের কাগজে আসে অধিকাংশ রয়ে যায় খবরের আড়ালে।সে দিন আমাদের দেশে ট্রাক ড্রাইভার এক দানবের রায়কে কেন্দ্র করে গুটি কয়েকজন ড্রাইবার সন্ত্রাসী দেশের যোগাযোগ ব্যাবস্থাকে জিম্মি রে ফেলে অবশ্য এর নাটের গুরু ছিলেন রাষ্ট্রের এক বিশিষ্ট সাংসদ নতুবা তার একটি কথাই তথা কথিত আন্দোলনকারীর আন্দোলন মুহুর্তেই থামিয়ে দিলেন।কিন্তু কেনো,ধবংষাত্বক আন্দোলনের আগে কেনো তা থামিয়ে দিলেন না?আমি বরাবর কয়েকটি কথা বলে থাকি তাহলো:এ দেশ থেকে যদি সকল ধরনের অপরাধ কমাতে চান তবে রাজনিতীতে স্বচ্ছতা আসতে হবে,রাজনিতীতে সৎ যোগ্য নেতার আর্বিভাব ঘটতে হবে যার নীতিতে থাকবে কেবলি দেশ প্রেম এখানে পাড়া প্রতিবেশী সজাগ থাকলেও কোন লাভ হবে না।দ্বিতীয়তঃ যদি দেশ থেকে মাদক সত্যিই আপনি নির্মুল করতে চান তবে এখানেও রাজনৈতিক স্বচ্ছতা প্রয়োজন।দেশের বড় বড় মাদকের চালানগুলো আসে কোন না কোন রাজনৈতিক নেতার মাধ্যমে তা  বেশীর ভাগ ব্যাবহত হয় তার দলীয় নেতা কর্মীর আন্দোলন নামক ধ্বংষাত্বক কার্যক্রম নির্বিগ্নে চালাতে।এবার আসা যাক মুল কথায়।
উন্নত বিশ্বে এখন আর ‘রোড এক্সিডেন্ট’ শব্দ বন্ধ ব্যবহার করেন না তারা এই ভয়ংকর ঘটনাটিকে ‘রোড ক্রাশ’ বলেন।যদি বলেন কেন?তবে এর উত্তরটা হচ্ছে, এক্সিডেন্টের সঙ্গে একটা দৈবিক বিষয়ের সম্পর্ক আছে আর এক্সিডেন্ট মানে কেউ এক জন আড়াল বা অদৃশ্য থেকে ঘটনাটি ঘটিায়।কিন্তু সড়কে যা ঘটছে তাকে কোনো ভাবেই দৈবিক ইশারায় ঘটমান বলে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে গা এলিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতের ভিত্তিতে,বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন প্রায় ১৮,০০০ মানুষ।সেই হিসাবে প্রতি দিন সড়কে প্রাণ হারাচ্ছেন ৪৯ জন।তাহলে এক মাসে এই সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১৪৭০ জন!।

 (y) কিছু বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন এবং উত্তর:
(y) প্রতিটি দুর্ঘটনার ঘটনা গুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে তার পেছনে কেউ না কেউ দায়ী আছেন।চালক ব্রেক ফেল করেছিল? খোজঁ নিলে জানা যাবে,সে ব্রেক চাপতে দেরি করেছিল অথবা তার ব্রেক সিস্টেমে ত্রুটি ছিল,পরীক্ষা না করেই রাস্তায় নামানো হয়েছিল গাড়ি অথবা গাড়িটারই জীবদ্দশা শেষ হয়ে গেছে অনেক আগে যা কর্তৃপক্ষের দূর্নিতীতে রাস্তায় চলমান থাকে।
(y) যদি বলেন যদি কেউ গাড়ীর সামনে এসে পড়েন তবে কর্তৃপক্ষ বা ড্রাইভারের কি দোষ তাও ঠিক আছে আবার ঠিক নেই ধরেন পথচারী অকস্মাৎ গাড়ির সামনে এসে পড়ল,তাকে বাঁচাতেই চালক গাড়ি খাদে নামিয়ে দিল প্রশ্ন হল পথ চারী কেন গাড়ির সামনে এসে পড়বেন?খোজঁ নিলে জানা যাবে,আসলে সে পথ চলার নিয়ম কানুনই জানেন না,কেন জানেন না?কার দায়িত্ব ছিল তাকে নিয়ম কানুন জানানোর? এই যে একজন মানুষকে বাঁচানোর জন্য চালক আরো বহু লোকের জীবন কেড়ে নিল,তার জন্য প্রকৃত অর্থে দায়ী কে?
(y) রাতে গাড়ি চালছেন, চালক চালাতে এক সময় তার চোখে ঘুম আসে?কিন্তু কেন তার চোখে ঘুমা আসবে?কারণ সে দুদিন একটানা গাড়ি চালাচ্ছে,তাকে কোনো বিশ্রাম না দিয়ে অতিরিক্ত আয়ের জন্য তার মালিক তাকে ওভারট্রিপ দিতে বাধ্য করেছেন। তাহলে এ ক্ষেত্রে দায়ী কে?
(y) আবার ধরুন চালক মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছেন? কী ভাবে সে গাড়ী চালাচ্ছেন?এ দেশেওতো নেশা-জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করে গাড়ি চালনো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।তা প্রয়োগের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতো রয়েছে। তাহলে মদ্যপ চালক দুর্ঘটনায় পতিত হলে সে দায় কার?
যদি আমরা ঘটনা গুলোকে এভাবে বিশ্লেষণ করি তবে দেখা যাবে সড়ক দুর্ঘটনা যা হচ্ছে তা কিছু দায়িত্ব হীনতা অবহেলা,কিছু বিকৃত অতি লোভ আর ভুলের মাসূল।তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায় এটা কোন দৈবিক ঘটনা নয়!এটা একটি মারাত্বক অপরাধ।

সুতরাং দূর্ঘটনা যদি কিছুটা এড়াতে চাই তবে প্রথমে আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি পাল্টাতে হবে মানতে হবে রোড ক্রাশ কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয় ।এটি একটি সংঘটিত অপরাধ তাই এটা কোন স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, এটাকে বলতে হবে হত্যা বা খুন।সুতরাং এর বিচারে কাউকে পক্ষ পাতিত্ব মানেই অন্যায় অপরাধকে মেনে নেয়া আর দেশ হতে বছরে হাজারো প্রতিভাকে অকালে বিদায় দেয়া।
আশ্চর্য হলেও সত্যি সে দিন আমাদের দেশে ঘটে গেল কর্ম বিরতি নামক  স্ব-ঘোষিত ড্রাইভার হেলপার ত্রাস। এ স্থান হতে আমাদের সচেতন হতে হবে।যাকে কেন্দ্র করে এ আন্দোলন সেই ড্রাইভার স্ব-ইচ্ছায় অনৈতিক কাজে বাধা দেয়ায় এক জনের উপর দিয়ে ট্রাক তুলে দিয়ে তাকে হত্যা করে।এর রায় হয় ২০০৩ সালের ২০ জুন সাভারের ঝাউচার এলাকায় ট্রাক চাপায় নিহত হন খোদেজা বেগম (৩৮)। এ ঘটনায় তাঁর স্বামী নুরু গাজী সাভার থানায় ট্রাক চালক মীর হোসেন ও তাঁর সহকারী ইনতাজ আলীর বিরুদ্ধে মামলা করেন।ট্রাক চালক মীর হোসেনের বাড়িও সাভারের ঝাউ চর এলাকায়। ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গতকাল ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রদীপ কুমার রায় চালক মীর হোসেনের মৃত্যুদণ্ড এবং তাঁর সহকারীকে খালাস দেন।এ হত্যার বিপরীতে যদি জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন হয়,দেশের পরিবহন খাতকে অচল করে জনগণকে জিম্বি করে রাখেন তবে আপনাকে কেমন দেশ ভক্ত বলবো?আবার দেখুন ছোঁ মন্তর ছোঁ এর যাদুর মতো মাননীয় মন্ত্রী সাহেব এলেন আর বললেন চিচিং বন্ ধ।থেমে গেলো সব আন্দোলনের আতসঁ বাতি ফুটানো।এ হলো আমার সোনার বাংলার অবস্থা।

যাক আসল কথায় ফিরি,জানা মতে সারা দেশে রেজি স্টার্ড গাড়ির সংখ্যা প্রায় বিশ লাখের বেশী।বি আর টি এর মতে, লাইসেন্স প্রাপ্ত চালকের সংখ্যা প্রায় এগারো লাখ।যদি বিশ লাখের সাথে বিয়োগ হয় এগারো লাখ তবে থাকে নয় লাখ।এই নয় লাখ ঘাতক সুযোগ খোজেঁ বেড়াচ্ছে,আপনাকে হত্যা করার জন্য।কারন তারা তো কেউ চালক নয়, কেউ হেলপার,কেউ কন্ডাক্টর কেউ বা শিখছেন মাত্র।
এই অজ্ঞদের হাতে যখন গাড়ির স্টিয়ারিং,পায়ের নীচে যখন  ব্রেক প্যাডেল তখনতো তারা বণে যান রাস্তার রাজা,বেপরোয়া চালক।যেহেতু তারা আইন-কানুন জানে না,তাই সেগুলো মান্য করার বাধ্য বাধকতা তাদের মাঝে নেই।সুতরাং আইনকে তাড়া বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখাইবেই আর তীব্র গতি যখন গাড়ী চলবে তখন তাদের মনে একটা রোমাঞ্চকর অনুভুতি আসবে তাতে ফলাফল আসবে আপনার নিশ্চিত মৃত্যু নিউজ।

আমাদের দেশে এই রোড ক্রাশ গুলো মারাত্বক হয় মহা সড়ক গুলোতে কারন কর্তৃ পক্ষের অবহেলায় নানা রকম দিক নির্দেশনা তেমন কোথাও দেওয়া নেই বা দেয়া থাকলেও ড্রাইভাররা ঐদিকে ফিরেও তাকায় না কারন এসব নিয়ম কানুুন মেনে চলার মাঝে প্রয়োগের কোন বাধ্য বাদকতা নেই।সিঙ্গাপুর দেখেছি রোড ক্লিয়ার ড্রাইভার তবুও গাড়ী থামিয়ে স্থির কারন সিগলান পড়েছে এই সিগনাল যদি সে না মানেন তবে কর্তৃপক্ষ তার জরিপানা করবেন তার আই সি'র  যত সুযোগ সুবিদা আছে তা থেকে পয়েন্ট কেটে দিয়ে তাকে সিগনাল দিবেন নিয়ম কানুন মেনে চলার।সে জন্য তারা কর্তৃপক্ষকে ভীষন ভয় পায়।সব কিছুতেই তাদের সাফল্য অনায়াসে কারন তাদের দেশের কর্তা কর্তীরা ভালোর ভালো,মন্দের জম।
এইতো কিছু দিন আগে কলকাতায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলেন কলকাতার দোহার ব্যান্ডের প্রতিষ্টাতা কালিকাপ্রসাদ হারিয়ে যাওয়া বাংলার বাউল লোকজ গানের সংগ্রাহক ছিলেন।আমাদের দেশ হতেই দুর্ঘটনায় অকালে প্রান হারিয়েছেন বহু প্রতিভা।মিশুক মুনীর,তারেক মাসুদের মতো আরও অনেক প্রতিভাবান ব্যাক্তিকে আমরা অকালেই হারাচ্ছি।
jlj4mukhomukhi1

রোড এ্যাকসিডেন্টের ভয়ংকর কিছু ভিডিও দেখুন

২০২০ সাল নাগাদ সড়ক দুর্ঘটনায় হতা হতের ঘটনা ৫০ শতাংশ হ্রাস এবং সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ৩০ শতাংশ হ্রাস করার যে লক্ষ্য সরকারের রয়েছে বলে জানা যায়,তা পূরণ করতে হলে ভাবনাটা কিন্তু ভাবতেই হবে।প্রথম ভাবনাটাই হলো মহা সড়ক নিয়ে মহা সড়ককে মহা সড়কের মতো হতে হবে।সে জন্য তাকে কিছু শর্ত তাকে পূরণ করতে হবে:

(y) এক দিকে দুই লেন ঐ দিকে দুই লেন মিলিয়ে কম পক্ষে চার লেন থাকতে হয়।
(y) স্বল্প গতির যানবাহন সেখানে চলাচল করতে পারবে না।
(y) মহা সড়কের মাঝ খানে যাতে কোন গরু-ছাগল চলে আসতে না পারে তার জন্য বেষ্টনি থাকতে হয়।
(y) স্পষ্ট ভাবে প্রয়োজনীয় সকল সড়ক চিহ্ন ও সংকেত থাকতে হয়।
(y) মহাসড়কে আইনের লঙ্ঘন থামাতে পর্যাপ্ত ফোর্স থাকতে হয়।
(y) হঠাৎ যদি দুর্ঘটনা ঘটে যায় সে সব ঝামেলা জন্য আলাদা স্থান মহা সড়কের পাশেই থাকতে হয় যাতে জ্যাম সৃষ্টি না হয়।
(y) এ্যাম্বুলেন্স,ফায়ার সার্ভিস এবং বিশেষ জরুরী মুহুর্তে গাড়ী চলাচলে নিদিষ্ট একটি লাইন থাকবে যে লাইনে ঐ সব নিদিষ্ট গাড়ী চলাচল ছাড়া অন্য গাড়ী চলাচলে নিষিদ্ধ থাকবে।
আরো অনেক নিয়ম আছে যা স্ব-পদে বহাল কর্ম কর্তারা ভাববেন কি ভাবে মহা সড়কগুলোকে উন্নত বিশ্বের মহা সড়কের আদলে সাজানোঁ যায়।আমরা কেবল আমাদের "স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই"
................................................................ধন্যবাদ....সুস্থ্য থাকুন-নিরাপদে পথ চলুন।

আইডিয়ায়:বিভিন্ন অন লাইন মাধ্যম।

0 Shares

৮টি মন্তব্য

  • মোঃ মজিবর রহমান

    মনির ভাই স্বাভাবিক মৃত্যুর কি? মরন মরনই। পৃথিবীর জন্ম হতেই চলছে, কে কি ভাবে মরবে তা আল্লাহ ঠিক করেই পাঠিয়েছেন।
    তাই আল্লাহর মাল আল্লাহই নিছে।
    দুঃখিত হবেন না। মেনে নেওয়ায় উচিত। আমি ক্ষমা প্রার্থী আপনার কাছে।

    • মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)

      ধর্ম মতে আপনার কথা সঠিক যদি মৃত্যুটি হয় রোগে সুখে তবেতো কথাই নেই-আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশীকে জানিয়ে দেখিয়ে সে বিদায় নিল চিরা চরিত নিয়মে কিন্তু হঠাৎ চলে যাওয়াটা যেন জীবন সংসারের জন্য অস্বাভাবিক-বেমানান তাই নয় কি? আল্লাহর মাল আল্লাহই নিছে এটাতো শান্তনার বাণী কেবল তা না হলে কেউ খুন হলেও একই কথা বলতেন আর খুনি হতো নিরাপরাধী।ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।এখানে অন্তত আমার কাছে কোন ক্ষমা চাওয়ার মতো কোন শব্দ ব্যাবহার করবেন কারন আমি আপনাকে অনেক অনেক ভালবাসি সন্মান করি।আমার ভুল হতে পারে তার জন্য সুধরে দেবার অধিকারতো আছেই শুধু শুধু ঐ শব্দটি লিখে আমায় লজ্জায় ফেললেন।যাক ভাল থাকবেন এই কামনা।

      • মোঃ মজিবর রহমান

        মনির ভাই, মানুষ আসলেই অসহায় আমাদের সৃষ্টি কর্তার দিক থেকেই কারন, আমরা পেয়ে, না পেয়ে, না পেলে কপালের দোষ আমরা একে অপরকে স্বান্তনা বাণী শুনাই বাঁ দিই যে ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।

        তবে হ্যা আমরা দেশের আইনের সঠিক ব্যাবহারের অভাবে আমরা নিষ্পেষিত, অত্যাচারিত, ের থেকে নিস্তার সহজেই হবে কিনা চাই না।

        ভাল থাকুন। -{@

  • নীহারিকা

    যে কোন মৃত্যুই কষ্টের। আর দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু একটি পরিবারকে কখনো কখনো শুধু আর্থিকভাবেই মেরে ফেলে না, মারে মানসিকভাবেও। আর যিনি মারা যান তার স্বপ্নের কথা বাদই দিলাম।
    এমন দুর্ঘটনাজনিত অস্বাভাবিক মৃত্যু চাই না আর।

  • নীলাঞ্জনা নীলা

    মরতে মরতে বেঁচে গেছি। কতো বড়ো এক্সিডেন্ট হয়েছিলো আমার, সত্যি বলতে গেলে আমি অসম্ভব শক্ত মনের মেয়ে, পজিটিভ বলেই এখনও ভেঙ্গে পড়িনি। কেউ কেউ আছেন যারা ভেঙ্গে পড়েছেন। ওয়াকার নিয়ে চলা কি স্বাভাবিক জীবনের আওতায় পড়ে? যে আমি পার্টি হলেই নেচে-দৌঁড়ে মজা করে ঘুরে বেড়াতাম, এখনও আনন্দ করি। কিন্তু আর কি সেভাবে নাচতে পারবো? দৌঁড় দিতে পারবো? ড্রাইভারের ভুলে আজ আমার জীবনের সবকিছুই বদলে গেছে। তাও ভাবি বিছানায় তো পড়ে নেই কিংবা হুইল চেয়ারে বসতে হচ্ছেনা। হাঁটতে তো পারছি, সেটাই কম কি!

    একটা দূর্ঘটনা বদলে দেয় নিজের জীবন। পরিবারেও আঘাত করে।

  • আমির ইশতিয়াক

    “স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই” শিরোনামে অনেকদিন আগেই আমি নিম্নের লেখাটি লিখেছিলাম। পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।

    ঘর থেকে বের হওয়ার সময় মা আমাদেরকে দোয়া করে বলেন, ‘বাবা ভালোভাবে ফিরে এসো।’ কিন্তু বর্তমান এই রাজনৈতিক অস্থিরতার যুগে কয়জন মায়ের সন্তান স্বাভাবিক ভাবে ফিরে আসতে পারে? বর্তমানে প্রিন্ট মিডিয়া বা ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়াগুলোতে চোখ রাখলে প্রতিদিন যেসব খরব শুনি তাহলো কোন না কোন দুর্ঘটনায় বা রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় মৃত্যু।
    আজ আমরা কোন মায়ের সন্তানই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নিয়ে ঘর থেকে বের হতে পারি না। আমরা সবাই যে জিনিসটিকে এক বাক্যে সত্য বলে মেনে নেয় তা হলো মৃত্যু। মৃত্যুর চেয়ে কঠিন সত্য পৃথিবীতে আর নেই। প্রত্যেক প্রাণীকেই একদিন মৃত্যু বরণ করতে হবে। একথা ধ্রুব সত্য। তাই বলে কি অস্বাভাবিক ভাবে যখন তখন কোন দুর্ঘটনায় বা রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় আমাদেরকে মৃত্যুবরণ করতে হবে?
    প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে। অকালে ঝড়ে পড়ছে অনেক মানুষের জীবন। আবার কেউ বা পঙ্গুত্ববরণ করে অভিশপ্ত জীবন নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। এই সড়ক দুর্ঘটনায় আমরা সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের মতো মানুষদেরকেও হারাতে হচ্ছে। হারাতে হচ্ছে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মিশুক মুনির ও তারেক মাসুদকে। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের ৪০ জন স্কুল ছাত্রের নিহতের কথাতো আমরা কেউ ভুলতে পারিনা। বর্ষা মৌসুম আসলেই লঞ্চ, নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটছে। অসংখ্য প্রাণ নিমিষেই পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। ট্রেন দুর্ঘটনা হচ্ছে। এতেও দেখা যাচ্ছে অনেক মানুষের প্রাণহানী হচ্ছে। কয়েক বছর আগে নরসিংদীতে ঘটে গেল বিরাট ট্রেন দুর্ঘটনা। কিছুদিন পর পর দেশের গামেন্টসসহ অসংখ্য দোকানপাটে আগুন লাগছে। কিছুদিন আগে তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেড গামেন্টেস এ আগুন লেগে শত শত প্রাণ পুড়ে ছাই হলো। ২০১০ সালে হামিম গামেন্টসসহ তিনটি গামেন্টেস এ অনেক মানুষের প্রাণ চলে যায়।
    তাছাড়া রাজৈনিক হামলার শিকার হয়ে গত বছর ৯ ডিসেম্বর বিরোধদলের অবরোধ চলাকালে ছাত্রলীগের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয় টেইলার্স কর্মী বিশ্বজিত। এইভাবেই বিরোধীদলের প্রতিটা কর্মসূচীতেই সরকারের রোষানলে পড়ছে সাধারণ মানুষের প্রাণ। আরেকটি অস্বাভাবিক ঘটনা ইদানিং এদেশে ঘটছে তা হলো গুম। ইলিয়াছ আলীর মতো বড় মাপের নেতা গুম হয়ে যায়। এদেশের সরকার ও আইন শৃংঙ্খলা বাহিনী এর কোন হদিস পায়না। গত কয়েকদিন আগে ৭/৮ জন লোক র্যাব পরিচয় দিয়ে বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মজুমদারকে ধরে নিয়ে যায়। পরে পুলিশের হাতকড়া অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়। প্রতি বছরই বোমা হামলায় শিকার হয়ে এ দেশে অসংখ্য প্রাণ দিতে হয়েছে। গত আওয়ামীলীগ সরকারের আমল থেকে আজ অবধি বোমা হামলা হয়েই যাচ্ছে। স্মরণ কালের ভয়াবহ বোমা হামলাটি হয়েছিল ২০০৪ সনে আওয়ামীলীগের সমাবেশে। এখানে অসংখ্য মানুষের প্রাণ চলে যায়। কিছুদিন যাবত যে ঘটনাটি ভারতসহ আমাদের দেশে খুবই আলোচিত হচ্ছে তা হলো ধর্ষণ। ধর্ষণ করে ধর্ষীতাকে হত্যা করছে কিছু মানুষ রূপী নরপশু।
    সম্প্রতি সেন্টার ফর মিডিয়া রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং (এমআরটি’র)- এর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে বর্তমান সরকারের আমলে রাজনৈতিক কারণে খুন হয়েছে ৭৯০ জন। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে প্রাণ হারাতে হয়েছে ৪৫৯ জন। গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে ৫৮৮ জন। উক্ত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ২০১২ সালে সর্বোচ্চ খুনের ঘটনা ঘটেছে। ওই বছর খুন হয়েছে ৪,৪১২ জন। সময়ের হিসাবে দেখা গেছে শুধু মাত্র ২০১২ সালে প্রতিদিন গড়ে ১২ জন মানুষকে খুন করা হয়েছে। আর প্রতি দুই ঘন্টায় খুন হয়েছে ১ জন।
    প্রতিদিন যেভাবে অস্বাভাবিকভাবে মানুষ মরছে তাতে করে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হচ্ছে। আসুন আমরা এ থেকে পরিত্রানে উপায় বের করি। সবাই এক সাথে বলি, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই। এই সব দুর্ঘটনা ও রাজনৈতিক বলির হাত থেকে আমাদের দেশ কি রেহায় পাবে না? এর কি কোন প্রতিকার নেই? অবশ্যই আছে। মুচি থেকে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপ্রতি পর্যন্ত সবাই যদি সচেতন হই তাহলেই অবশ্যই কিছুটা হলেও আমরা স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি পাব।
    চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াছ কাঞ্চন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন করছে। তাঁর স্ত্রীও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। আমরা কি পারি না তাঁর সেই আন্দোলনে শরীক হতে?

    সড়ক দুর্ঘটনা থেকে পরিত্রাণের উপায়ঃ
    সরকারকে যেসব পদেক্ষপগুলো নিতে হবেঃ পুরনো ট্রাফিক আইন বাতিল করে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করতে হবে। দুর্ঘটনার কারণ যাচাই করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দুই লাইনে রাস্তা তৈরি করতে হবে। পরীক্ষা ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া যাবে না। রাস্তা ঘাটের উন্নতি করতে হবে। জরাজীর্ণ ও ঝুকিপূর্ণ ওভার ব্রিজ গুলো সংস্কার করতে হবে। ফুটপাত থেকে অবৈধভাবে বসা হকারদেরকে উচ্ছেদ করতে হবে এবং তাদের পূর্ণবাসন করতে হবে। পথে পথে বাজার তৈরি করা বন্ধ করতে হবে। রাস্তায় যান চলাচলের বাধা সৃষ্টি করে সভা, মিটিং মিছিল বন্ধ করতে হবে। চালকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করতে হবে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবহনের গতি নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র লাগানো বাধ্যতামূলক করতে হবে। সিট বেল লাগানো বাধ্যতামূলক করতে হবে।
    আমরা যা করবঃ সবোর্চ্চ সর্তকতা অবলম্বন করে রাস্তা পার হবো। কখনো দৌঁড়ে রাস্তা পার হবো না। ওভার ব্রিজ অথবা জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হবো। রাস্তার ডান পাশ দিয়ে হাঁটবো। বাসে ঘুমাবো না। দ্রুত গাড়ি চালানোর জন্য চালককে চাপ দিব না। চালকের সাথে কথা বলব না। জানালার পাশে বসার সময় লক্ষ্য রাখব শরীরের কোন অঙ্গ প্রতঙ্গ যেন জানালার বাইরে না যায়। অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে যান বাহনে উঠব না। তাড়াহুড়া করে চলন্ত বাসে উঠার জন্য দৌঁড়ে উঠব না। মুঠো ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হবো না। রাস্তায় কোন কিছু শুকাতে দিব না।
    গাড়ীর মালিকরা যা করবেন নাঃ মেয়াদ উর্ত্তীণ গাড়ী রাস্তায় নামাবেন না। নির্দিষ্ট বেতন ছাড়া ড্রাইভার নিয়োগ দিবেন না। অদক্ষ ও লাইসেন্স বিহীন ড্রাইভার নিয়োগ দিবেন না। হেলপার দিয়ে গাড়ি চালাবেন না। কিশোরদেরকে দিয়ে গাড়ি চালাবেন না।
    চালকরা যা করবেন নাঃ নেশা যাতীয় কিছু খেয়ে গাড়ি চালাবেন না। চলন্ত অবস্থায় মুঠো ফোনে কথা বলবেন না। দ্রুত ওভারটেক করার চেষ্টা করবেন না। হাইওয়েতে কোন অবস্থায় ঘন্টায় ৮০ কিমি এর বেশি বেগে গাড়ি চালাবেন না। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে গাড়ি ছাড়বেন না। নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া যত্রতত্র গাড়ি দাড় করিয়ে যাত্রী উঠানামা করবেন না। যেখানে সেখানে ওভারটেকিং করবেন না। অযথা হাইওয়েতে গাড়ি দাড় করিয়ে রাখবে না।
    চালকদেরকে যা করতে হবেঃ ট্রাফিক আইন মেনে চলবেন। সিট বেল লাগাবেন। মোড়ে এসে অবশ্যই হুইসেল বাজাবেন। রাতে দুরপাল্লার বাস বা ট্রাক ছাড়ার আগে হেড লাইট গুলো চেক করে নিবেন।

    লঞ্চ ও নৌ দুর্ঘটনা থেকে পরিত্রানের উপায়ঃ
    সরকারকে যেসব পদপেগুলো নিতে হবেঃ এ ব্যপারে সরকারকে আইন করে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
    আমরা যা করবঃ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় লঞ্চে ও নৌকায় উঠার আগে একবার ভাবব, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশী।
    সারেং ও মাঝিরা যা করবেন নাঃ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় লঞ্চ ও নৌকা ছাড়বেন না। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝায় করে লঞ্চ ও নৌকা না ছাড়বেন না।

    ট্রেন দুঘর্টনা থেকে পরিত্রাণের উপায়ঃ
    সরকারকে যেসব পদেক্ষপগুলো নিতে হবেঃ রেলওয়ের প্রতিটি ক্রসিংগুলোতে গেট ব্যারিয়ার ও গেটম্যানের ব্যবস্থা করা।
    আমাদের যা করতে হবেঃ দ্রুত ট্রেনের উঠার চেষ্টা করব না এবং ট্রেন থেকে নামার সময় দ্রুত নামব না। ট্রেনের ছাদে উঠব না। ইঞ্জিন বা ট্রেনের বগির পেছনে উঠব না।

    আগুন থেকে পরিত্রাণের উপায়ঃ
    সরকারকে যেসব পদেক্ষপগুলো নিতে হবেঃ শ্রম আইনের বাস্তব প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিটা ইউনিয়ন পরিষদে একটি করে ফায়ার সার্ভিস চালু করতে হবে।
    আমরা যা করব নাঃ অকারণে একটা ম্যাচের কাঠি বাঁচানোর জন্য গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখব না। একান্ত বাধ্য না হলে গ্যাসের চুলায় জামা কাপড় শুকাবো না। ছোট ছেলে-মেয়েদেরকে আগুন নিয়ে খেলা করতে দিব না। মশারীর নিকট মোম বাতি বা কুপি রাখবো না।
    আমরা যা করবঃ যদি অতিরিক্ত শীত এবং রোদ না থাকলে বাধ্য হয়ে জামা কাপড় শুকাতে হয় তাহলে সর্তকতার সহিত শুকাবো। রাতে কয়েল ধরানোর সময় সর্তকতার সহিত ধরাবো এবং জিনিস পত্র থেকে একটু দুরে রাখব। বিদ্যুতের লাইন, সুইচ বোর্ড মাঝে মাঝে চেক করবো। আগুন লাগার সাথে সাথে নিকটস্থ ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিব এবং নিজেরা যতটুকু সাধ্য আছে তা দিয়ে আগুন নেবানোর চেষ্টা করব।
    গামেন্টস মালিকদেরকে যা করতে হবেঃ বিদ্যুতের লাইন মাঝে মাঝে চেক করার ব্যবস্থা করবেন। দুই লাইনের সিড়ির ব্যবস্থা রাখবেন যাতে আগুন লাগলে সবাই নিরাপদে বের হয়ে আসতে পারে। আগুন লাগার সাথে সাথে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিবেন। আগুন নেভানোর জন্য গামেন্টেসের কর্মীদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আগুন লাগলে মাইকিং করে সকল কর্মচারীদেরকে ফ্যাক্টরী থেকে বের হওয়ার জন্য বলবেন।

    রাজনৈতিক হত্যার থেকে পরিত্রাণের উপায়ঃ
    সরকারকে যেসব পদেক্ষপগুলো নিতে হবেঃ সবার আগে সরকারকে সহনশীল হতে হবে। বিরোধীদলের যৌক্তিক আন্দোলনে কোন বাধা দেয়া যাবে না। প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
    বিরোধীদল যা করবে নাঃ হরতালের নামে গাড়ী পোড়ানো যাবে না।

    পরিশেষে বলবো উপরোক্ত পরিত্রাণের উপায়গুলো সরকারের উচ্চ মহল থেকে শুরু করে আমি, আপনি সবাই যদি মেনে চলি এবং যার যার জায়গায় থেকে সচেতন হয় তাহলে অবশ্যই কিছুটা হলেও স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি পাবো।
    রচনাকালঃ ১২ জানুয়ারি ২০১৩ খ্রি:

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ