কদাচিৎ কাতরতা

হিপনোটক্সিক ইরেকটাস ৯ এপ্রিল ২০১৪, বুধবার, ০৯:৩১:৪৪পূর্বাহ্ন বিবিধ ৬ মন্তব্য

জীবনের প্রথম স্কুল থেকে ক্লাস করে বাসায় ফিরল সায়েম ৷ বাসায় ফিরতেই মায়ের প্রশ্ন :

-বাবা আজ স্কুল কেমন লাগলো ?

-অনেক ভালো মা ৷

-সবচেয়ে ভালো কি লাগছে বাবা ?

-ছুটির ঘন্টা ৷

এটাই হয়তোবা বাস্তবতা ৷ হাঁপ ছেড়ে বাচার মাঝেই মানব সন্তান খুঁজে ফিরে তার জীবনের সার্থকতা। আর সময়ের সাথে সাথে খারাপ লাগাগুলোও আস্তে আস্তে কমতে থাকে, হয়তোবা গা সওয়া হয়ে যায় ৷

মেয়েটার নামটাই কেমন যেনো - "বৈশাখী চৌধুরী বৃষ্টি"!

বৃষ্টি আর কালবৈশাখী দুটি একসাথে হলে সায়েমের মামা বাড়ির কথা মনে পড়ে যায় ৷ মনে পড়ে যায় ঝড়-বৃষ্টিতে আম কুঁড়ানোর কথা ৷ নাটক সিনেমায় হলে হয়তোবা এই বয়সেই প্রেমপর্ব শুরু হয়ে যেতো। কিন্তু ক্লাস ফোরের বাচ্চার কাছে বৈশাখ মানেই আম  কুঁড়ানোর সরলতা , কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলা ।

বৃষ্টি সায়েমের ক্লাসমেট । সায়েমের পোষা খরগোশটার বাসার উল্টাপাশে বৃষ্টির বাসা। সেই খরগোশ থেকে শুরু, একই স্যারের কাছে পড়া সুত্রে বন্ধুত্ব অনেক বেশি গভীর হয় মেয়েটির সাথে ৷

বয়স যখন তের এর কোটায় সায়েম প্রথম লক্ষ্য করে বৃষ্টি দেখতে ঠিক দোকানের সাজিয়ে রাখা পুতুলগুলোর মত , একটু চুপ-চাপ প্রকৃতির ,শো কেসে আগলে রাখার মতো । বয়ঃসন্ধি কালের চিরন্তনতা মেনে এক অজানা টানে  কোনো কারণ ছাড়াই সায়েম মেয়েটির পিছু লেগে থাকে ৷ আজ টিফিন খেয়ে ফেলছে তো কাল কলম চুরি করছে পরশু চুল ধরে টান মারছে ৷ বৃষ্টিও কম যায়না কখনো হাতে কামড় বসিয়ে দেয় কিংবা শার্টে কার্টুনের ছবি আকে নয়তোবা বাসায় গিয়ে সায়েমের সাইকেলের হাওয়া ছেড়ে দেয় ৷

এক দিকে সায়েমের দুর্নিবার টান , আর অন্যদিকে বৃষ্টির সরলতা - দেখতে দেখতে সময় কেটে যায়,দুরন্ত শৈশব পেরিয়ে কৈশোরের ভরা যৌবনে পা  রাখা দুজনের মাঝে সমাজের বাধা-ধরা নিয়মের জন্য সম্পর্কের ভাটা পরতে শুরু করে । দৈহিক গঢ়ন আর আর্কষন বাড়লেও দুরত্বও বাড়তে  থাকে ৷

ক্লাস টেন ! বৃষ্টিদের বাসা একটু দুরে নিয়ে যাওয়া হয় । আগের মতো বেলকনিতে দেখা হয় না বলে বৃষ্টিদের বাসার আশে-পাশে প্রায়ই ঘুরাফেরা করে সায়েম , কেউ দেখে ফেলার আগেই সরে যায় সেখান থেকে । কিন্তু একদিন ধরা পরে যায় বৃষ্টির চোখে ৷

বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি ডাকে সায়েমকে-  “এই বান্দর এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বাসায় আস , মা পিঠা বানাইছে ! পিঠা খাবি ৷”

- “এখন যাই,অন্যসময় আসবো ৷”

দৌড়ে পালায় বৃষ্টির বাসার সামনে থেকে,সায়েম খুঁজে পায়না এই পালিয়ে বেড়াবার কারণ ৷ খুঁজে পায়না লুকিয়ে দেখার কি সুখ? কেনইবা এতটা বদলে গেছে সে,বৃষ্টিও কি বদলে গেছে ?

এইচ এস সি পাশ করার পর পরিবার সহ ডিভি পেয়ে আমেরিকারে চলে যায় বৃষ্টিরা ৷ শেষবারের মত করে " তোকে মিস করব" কথাটি বলা হয়নি সায়েমের লজ্জা কিংবা সংকোচে নয়তোবা কোনো পিছুটানের ভয়ে ৷সেদিন শুধু পথ চেয়ে নোনা জল ফেলেছিল ।

২০ বছর পর ৷ কোনো এক বিকেলে বাসার  বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে সায়েম ৷ একটা বাচ্চা ছেলের চিৎকার কানে আসে সায়েমের -

- “এই আমার বাইক ছাড় , না হয় আন্টির কাছে বিচার দিব ৷”

- “বিচার দে যা , বলছিনা আমাকে বাইক দিতে ? আমি চালাব ৷”

বাচ্চাটা বাইক দেয়না,মেয়েটা বাইকের হাওয়া ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে পালায় আর ছেলেটা দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে ৷ এক নিমিষেই সায়েম হারিয়ে যায় সোনালী শৈশবে । সায়েম কাদছে আর বৃষ্টি পালিয়ে যাচ্ছে,হারিয়ে যাচ্ছে সায়েমের জীবন থেকে । চলে যাচ্ছে সুদূর আমেরিকায় । হায়রে দুরন্ত শৈশব !

- “ এই তোমার চা  ঠান্ডা হয়ে ‍গেলো তো ....  ”

সম্বিত ফিরে পায় সায়েম ।

অপলক তাকিয়ে থাকে । ১০ বছর ধরে এভাবেই দেখতে অভ্যস্হ সে ।  বৃষ্টিকে চুল খোলা অবস্হায় দারুন দেখাচ্ছে ....

0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ