অনেক সময় দেখা যায় একটা কুকুরের জলাতঙ্ক রোগ হলে, কুকুরটাকে পাড়া-মহল্লার রাস্তায় পড়ে থাকা আরও অন্যান্য কুকুরগুলো চেনে ফেলে। তখন পাড়া-মহল্লার রাস্তার কুকুরগুলো ঐ জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত কুকুরটাকে দেখে ঘেউ ঘেউ করতে করতে দৌড়ে পালায়। পাড়া-মহল্লার জলাতঙ্ক রোগ না হওয়া কুকুরের ওইরকম অবস্থা দেখে পাড়া-মহল্লার মানুষেও বুঝে ফেলে যে,  কুকুরটার জলাতঙ্ক রোগ হয়েছে।

তখন ঐ জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হওয়া কুকুরটাকে দেখে পাড়া-মহল্লায় থাকা মানুষগুলো খুব সাবধানে থাকে। যাতে ঐ কুকুরের আক্রমণ থেকে বাঁচা যায়। ওই কুকুরটাকে লোকে বলে পাগল কুকুর বা পাগলা কুত্তা। ওইসব পাগলা কুত্তা দেখে চেনার উপায় হলো, পাগলা কুত্তার মুখ দিয়ে সবসময় লালা বেরুতে থাকে। আর এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে এবং সামনে যাকে পায় তাকেই আক্রমণ করে। মানে কামড়ে দেয়। হোকনা সে তাঁর স্বজাতীয় কুকুর।

তাই পাড়া-মহল্লায় থাকা ওই পাগলা কুকুরটাকে দেখে নিজে বাঁচতে এবং পাড়া-মহল্লায় থাকা মানুষদের বাঁচাতে মহল্লার কুকুরগুলো ঘেউ ঘেউ করতে থাকে।

মানুষ একসময় ওই পাগল কুকুরটাকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। নাহয় সিটি করপোরেশন অথবা পৌরসভা থেকে ওইসব পাগলা কুত্তাগুলো নিধন করার সিদ্ধান্ত নেয়। একসময় জলাতঙ্ক রোগ বা পাগলা কুত্তাগুলো শেষ হয়ে যায়। জলাতঙ্ক রোগ থেকে মানুষ রাক্ষা পায়।

কিন্তু বর্তমানে সারাবিশ্বে দেখা দিয়েছে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস। এই করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল ছিল গণচীন। বর্তমানে এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস আমাদের দেশেও হানা দিয়েছে। এই প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়া কোনও রোগীকে চেনা যায় না। চেনার উপায়ও নেই। কারণ এই রোগের প্রথম লক্ষ্মণ হলো, সর্দি-কাশি ও জ্বর। এই ঠাণ্ডাজনিত সর্দি-কাশি-জ্বর আমাদের দেশে এর আগেও অনেকের হয়েছিল, এখনো হচ্ছে। তাহলে এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া মানুষটাকে চিনবো কী করে? চেনার উপায় শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরই! তাও বিজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামতের উপরই সবকিছু নির্ভর করে।

তাই সাধারণ মানুষের কাছে এই রোগ সবসময়ই থেকে যাচ্ছে অচেনা। যার কারণেই বিজ্ঞ চিকিৎসকগণ এই রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তারমধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং বাইরে ঘোরাফেরা না করে; নিজ ঘরে থাকা।

বিজ্ঞ চিকিৎসকদের দিকনির্দেশনার প্রতি সম্মান রেখে আমি বলতে চাই, শুধু সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে; আর ঘরে থেকেই এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস প্রতিহত করা যাবে না। এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস প্রতিহত করতে হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশা-পাশি শারীরিক সম্পর্ক এবং শারীরিক দূরত্বটাও বজায় রাখতে হবে।

যেমন:

১। নিজের সন্তানকেও অ-পরিস্কার হাতে স্পর্শ করবেন না।

২। কেউ কারোর সামনে ঘেঁষা-ঘেঁষি করে দাঁড়াতে পারবে না এবং কেউ কাউকে ছুঁতে পারবে না। এমনকি বর্তমানে কেউ কারোর সাথে গুরুতর অন্যায় অপরাধ করলেও, তাকে মারধরের মতন চড়থাপ্পড় মারবেন না।

৩। নিজের প্রিয় সহধর্মিণীর সাথেও এই সময়ে শারীরিক মেলামেশা করা যাবে না। মানে এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের আলামত শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রীর মধুর সম্পর্কের মেলামেশা থেকেও আপাতত বিরত থাকুন! এতে নিজ পরিবারের সকলের জন্যই নিরাপদে থাকার একটা কৌশল।

প্রিয় বন্ধুগণ, বর্তমানে আমাদের দেশ-সহ সারা বিশ্ববাসী বেঁচে আছি, মৃত্যুর খুব কাছা-কাছি। কারণ এই প্রাণঘাতী ছোঁয়াচে রোগ কখন যে কাকে আক্রমণ করে ফেলে, এবং  কার সংস্পর্শে কে কখন সংক্রামিত হয়; তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই এই সময়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশা-পাশি শারীরিক দূরত্ব এবং শারীরিক মেলামেশা থেকেও বিরত থাকুন।

মনে রাখবেন, জীবন বেঁচে থাকলে অনেক আনন্দ পূর্তি উপভোগ করা যাবে। একে অপরের সাথে মধুর সম্পর্ক গড়া যাবে। জীবন শেষ হয়ে গেলে সবই শেষ হয়ে যাবে। আগে এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস ধৈর্যসহকারে প্রতিহত করুন। নিজের জীবন এবং অপরকেও বাঁচান। তারপর সুন্দরভাবে জীবনযাপন করুন।

লেখাটি প্রথম প্রকাশ ফেসবুকে

0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ