যদি একটি দেশকে ধ্বংস করতে ইচ্ছে হয় তাহলে সবার আগে জাতিকে ধ্বংস করতে হবে।আর জাতিকে ধ্বংস করার একমাত্র অস্ত্র দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে পঙ্গু করা।যে দেশ যত বেশী সুশিক্ষিত সে দেশ ততবেশী উন্নত।সুতরাং দেশ গঠন এবং উন্নয়ণে শিক্ষার বিকল্প নেই।

এ সম্পর্কে চীনের একটি যুগান্তকারীর ইতিহাস রয়েছে৴তা হলো।বিপ্লবের পর চীনের শিক্ষাখাতের অবস্থা অনেকটা হুমকির মুখে ছিলো।বিশেষ করে দেশের শিক্ষিত বিশাল জনগোষ্ঠি বেকার ছিলো।রাষ্ট্রের মাথায় দুশ্চিন্তা ভর করল- এতো এতো শিক্ষিত বেকারকে তারা কোথায় চাকুরী দিবেন? তখকার চীনে আজকের মত এতো এতো কলকারখানা তখন ছিলো না যে তাদের চাকুরীর দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারবেন।শিক্ষিত বেকার সংখ্যা এতো বেশী হয়ে গিয়েছিলো যে যুগ যুগ অপেক্ষা করলেও এর সমাধান আসবে না।তাই তারা সিদ্ধান্ত নিলেন ১২ বছর তাদের বিশ্ব বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।এই সময়টায় ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে কী করেছিলেন চীন? বসিয়ে বসিয়ে বেকার ভাতা দিয়েছিলো? নাকি উড়নচন্ডি হয়ে ঘুরার সুযোগ দিয়েছিলো? এ সব কিছুই করেনি চীন সরকার।ঐ সময়টাতে সরকার ছাত্রছাত্রীদের আধুনিক প্রশিক্ষণ দিলেন।নিজের পায়ে দাড়াবার সুযোগ করে দিলেন।চীন সরকার তখন নানান ধরণের ট্রেড কোর্স মানে কারিগরি শিক্ষা চালু করলেন।যার যেমন জ্ঞান তাকে সেখানেই প্রশিক্ষণ দিলেন।ছাত্রছাত্রীরা অল্প সময়ের ট্রেড কোর্স শিখে তারা নিজেরা স্বাবলম্ভী হয়ে গেলেন।তারা প্রায় প্রত্যকেই কারিগরি শিক্ষা নিয়ে ছোট ছোট পরিসরে ব্যাবসা শুরু করেন।প্রতিটি বাড়ীতেই গড়ে উঠলো দুএকটি করে ছোট ছোট কারখানা।পরিবারের সবাই সেখানে কাজ করেন।উৎপাদনের পরিমান বেড়ে গিয়ে এক সময় পন্যের দাম নেমে পড়ে।বড় বড় কারখানা না করে ছোট ছোট কারখানা করে যতটুকু সম্ভব সর্টকাট অল্প খরচে পন্য উৎপাদন করাতে বিক্রির পরিমান বেড়ে যায়।আজকে যে চীনকে আমরা দেখছি বানিজ্যিক বিশ্বে বেশ দাপটের সহিত চলছে তা সেদিনকার ফলাফল।সবচেয়ে সস্তা পন্য উৎপাদন এবং বিক্রিতে বিশ্বের আর কেউ তাদের ধারে কাছেও নেই।এখন বিশ্বের প্রায় সবগুলো রাস্ট্রেই চায়না পন্য পাওয়া যায়।উপযুক্ত মুল্য পেলে তারা এমন বস্তু বানিয়ে দিবে যা আপনি ১০০ বছরের গ্যারান্টি চাইলেও পাইবেন।

আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা দেখলে মনে কান্দন আইলেও কিছুই করার নেই।মান্দাতার আমলে আমার বাপ দাদারা যে ব্যবস্থায় লেখা পড়া করে গেছেন সে ব্যবস্থার পরিবর্তন করা যেন পাপ।শুধু পুথিগত বিদ্যা দিয়ে জানার তৃষ্ণা মেটানো যায় কিন্তু পেটের ক্ষুধা নিভানো অনেকাংশেই কষ্টকর।আপনার আমার সন্তানদের যদি না- ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ানিং কিংবা এমবিএ বিবিএ কিংবা বিভাগীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে না পারি তবে পুঁথিগত বিদ্যার এ দেশে কোন মুল্য নেই।শুধু পুঁথিগত বিদ্যায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাশকৃত অধিকাংশই এখন বেকার ভবঘুরে।পেশার পরিবর্তন করে কোন রকম ভাবে জীবন চালাচ্ছেন।

টেকনিক্যাল দুনিয়ায় টেকনিক্যাল বিষয়ে লেখাপড়া করে একজন যে পরিমান বেতন পাবেন সেই একই পরিমান বেতন তুলতে একজন ননটেকনিক্যাল লোককে অনেক কাঠখর পোড়াতে হয়।তাই পড়ালেখা শুরুটা টেকনিক্যাল হওয়া ছাড়া জীবন চাহিদায় আর কোন বিকল্প নেই।তাই এ দেশের শিক্ষিত অসংখ্য বেকার যুবকদের জন্য ইউরোপ আমেরিকার সাথে তাল রেখে তাদের উন্নত ভবিষৎ গড়ার জন্য কারিগরি শিক্ষাকে প্রধান্য দেয়াটা এখন বেশী জরুরি হয়ে পড়েছে,প্রয়োজনে সরকারী ভাবে বিশেষ বোর্ড গঠন করা যেতে পারে।

আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যাবস্থার আমুল পরিবর্তন আনাটা এখন অনেকটা জরুরী হয়ে পড়েছে।অসংখ্য শিক্ষিত বেকারের ভীরে চাকুরীর বাজার বহুকাল ধরেই শুন্যের কোটায়।তাছাড়া চাকুরী করে দেশ উন্নয়ণ করা যায়না।দেশ উন্নয়ণে প্রয়োজন বেশী উদ্দ্যেক্তা সৃস্টি করা।আর উদ্দ্যেক্তা বা কারিগরি কর্মসংস্কান সৃস্টিতে প্রয়োজন হয় মেবাধী মুখ।তার জন্য প্রয়োজন শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা।এক সময়কার বিশ্বের অক্সফোর্টখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন অন্ধকারে উত্তাপহীন আলোর জ্ঞানদান করার বৃথা চেষ্টা চলছে।বিশ্ব বিদ্যালয়গুলোর মতই স্কুল কলেজগুলোতেও রাজনৈতীক দলাদলি ঢুকে গেছে যা বিশ্বের অন্য উন্নত দেশগুলো চিন্তাই করতে পারেনা।লেখাপড়া বা জ্ঞানার্জনের মাঝে রাজনিতী কেন আসবে বা আনতে হবে?এ পাঠককের কাছে রেখে গেলাম।

যে দেশের শিক্ষার মান যত বেশী ভালো সে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ততবেশী উন্নত।আমেরিকার এক গবেষনায় দেখা গেছে মান সম্মত শিক্ষার প্রায় ২০ শতাংশই নির্ভর করে শিক্ষার অনুকুল পরিবেশ অবকাঠামোর সুযোগ সুবিধায় তবে ৮০% নির্ভর করে যোগ্য শিক্ষকের শিক্ষাদানের উপর।আমাদের দেশে শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও শিক্ষার অন্যান্য আনুসঙ্গিক বাজেট দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সব চেয়ে বেশী নিন্ম যা সর্বো প্রথম শিক্ষার মান উন্ধয়ণের অন্তরায়।আন্তর্জাতিক মান দন্ডে ভারত ও শ্রীলঙ্কার শিক্ষার মান ২০.৮০ এমনকি পাকিস্থানের শিক্ষার মান ১১.০৩ শতাংশ অথচ সেই তুলনায় বাংলাদেশের শিক্ষার মান মাত্র ২.৮ শতাংশ।মেধাবী মানুষদের মেধা বিকাশে যে ধরনের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা সরকারের কর্মপ্লানে থাকা উচিত ছিলো তা আপাতত দেখছি না তাই দেখা যায় এদেশের মেধাবী ছেলে মেয়েরা বিদেশে গিয়ে তাদের মেধার বিকাশ ঘটান কারন ওরা মেধাবীদের মেধার প্রকৃত মুল্য দিতে জানে।আমরা সাধারনতঃ তেলের মাথায় তেল দেই আর রডের বদলে বাশঁ দেই তাতে আমরাও খুশি নেতারাও খুশি মাঝে কিছুটা টুপাইস কামাইও হয়।এ যদি হয় আমাদের নৈতীক চরিত্র তাহলে অদূর ভবিষৎ প্রজন্মের জীবন হবে অন্ধকারে নিমজ্জিত।

সবার আগে প্রয়োজন এ দেশের ভালো শিক্ষকদের পুরষ্কীত এবং রাস্ট্রীয় ভাবে কিছু সুবিদা প্রদান করা সহ রাস্ট্রীয় ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত তাদের গ্রেড এর মান পরিবর্তন করা।রাস্ট্রের অন্যান্য চাকুরীর ক্ষেত্রে তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেনীর চাকুরী এমনিতেই লোকের কাছে নিন্মমান অনেকটা অপমানজনক মনে হয় সেখানে একটা সেবামুলক, দেশ গড়ার কারিগরকে সু-শিক্ষিত ভাবে গড়ে তুলার সেই শিক্ষকদের চাকুরীর গ্রেড তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারী কতটা মানান সই!আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার ক্ষেত্রে তাদের উচ্চতর শিক্ষার জন্য পিএইচডি করতে হয় নিজ যোগ্যতায় নিজ খরচ সহ অনেক কাঠখর পুড়িয়ে তারপরও যদি তাদের বেতন একজন একজন সাধারন মাষ্টার্স সরকারী কর্মকর্তার নিচে হয় তাহলে আপনি আমি কি ভাবে আশা করতে পারি তাদের শিক্ষায় উন্নত ভালো একটি জাতিগোষ্টি তৈরী হবে!আবার অন্য দিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বেতন লক্ষাধিক।একই রাস্ট্রে শিক্ষকদের নিয়ে এমন দুচোখা মনোভাব নিশ্চয় একজন ভালো অধ্যাপক গবেষক হওয়ার অন্তরায়।শিক্ষকদের এমন অপমানজনক অবস্থানে রেখে কি করে শিক্ষার ভালো মান আমরা আশা করব।প্রশ্ন পাঠকদের কাছে রেখে গেলাম।

এখনি ভাবতে হবে জাতি উন্নয়ণে জীবন ঘনিষ্ট বাস্তব সম্মত শিক্ষা ব্যবস্থপনা এবং শিক্ষকদের জীবন মান উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়া।চীনের মত করে না হয় চীনকে ফলো করে কারিগরি শিক্ষার বাধ্যতামুলক করা।বাংলাদেশের সিমফনি ওয়ালটন চীনকে ফলো করে এ দেশে যেমন তারা ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছে তেমনি দেশ উন্নয়ণে শিক্ষিত বেকার সমস্যা লাগবসহ দেশের অর্থনীতির চাকাও শক্তিশালী হচ্ছে। তাই প্রয়োজন কর্মমুখী শিক্ষা যে শিক্ষায় আগামী প্রজন্ম বাচার মত বাচবতে পারবে দেশ উন্নয়ণে স্বাক্ষীও হবে।আমাদের রাস্ট্রে যারা শিক্ষা মন্ত্রলয়টা চালায় বা চালাচ্ছেন তাদের বুঝতে হবে শিক্ষা এবং প্রতিক্ষন দুটো ভিন্ন ভিন্ন বিষয়।শিক্ষা হয় পূথিগত আর নিদিষ্ট পূথিগত শিক্ষাকে একাডেমিক ভাবে প্রসারিত করা।আমাদের দেশের মন্ত্রনালয় এই দুটোকে একই মনে করে বসে আছেন।

এ বিষয়ে কিছু সুপারিশ যদি বাস্তবায়িত হয় তবে শিক্ষিত বেকার যুবক এবং উন্নত দেশ জাতি গঠনে বেশ সহজ হবে।

৴কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষাকে জাতীয় শিক্ষার মুল ধারায় অন্তভুক্ত করে প্রধান শিক্ষা হিসাবে প্রধান্য দিতে হবে।

৴বিদেশ হতে আসা শিক্ষিত অশিক্ষিত দক্ষ অদক্ষদের যুবকদের প্রয়োনদনা সহ তাদের কারিগরি শিক্ষায় দক্ষতা বৃদ্ধি করাতে হবে।

৴তরুনদের মন মানষিকতায় কারিগরি ও বৃত্তিমুলক শিক্ষাটাকে জনপ্রিয় করে তুলতে হবে।

৴শিল্প কলকারখানা ও শিক্ষার মাঝে একটা মিল বন্ধনে রাখতে হবে।শিক্ষাগত যোগ্য এক রকম আর কর্মক্ষেত্রের কর্ম আরেক রকম তাই যেন না হয়।

৴স্নাতক বা গ্রাজুয়েটদের জন্য শিক্ষানবিশ কারিগরি কর্ম ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।কারন তাদের গ্রাজুয়েসন নিতে শিল্প কলকারখনার কোন কিছুই স্পর্শ করে না।

৴গুরুত্বের সাথে কারিগরি ও বৃত্তিমুলক শিক্ষাকে আধুনিকায়ন করে বাজার চাহিদায় তরুনদের গড়ে তুলতে হবে।

৴সরকারী বেসরকারী যৌথভাবে অন্তত শিক্ষা ক্ষেত্রে অনলাইনের খরচ সাশ্রয়ী মুল্যে রাখতে হবে।এ ক্ষে্ত্রে তাদের সামাজিক দায় বদ্ধতাই যথেষ্ট।

৴বিপুল সংখ্যক নারী শিক্ষিত বেকারদের কারিগরি শিক্ষায় অনুপ্রানীত করতে হবে।সামাজিক সাংস্কৃতিক ভাবে তাদেরকে কাউন্সিলিং করতে হবে।

৴সাধারন শিক্ষার আসন কোথাও খালি থাকে না প্রতি বছর বৃদ্ধি পায় কিন্তু কারিগরি স্কুল কলেজগুলোতে অসংখ্য আসন ফাকা থাকে তাই এ শিক্ষাটাকে সাধারন শিক্ষার ন্যায় সরকারী ভাবে পৃষ্ঠোষকতা করা জরুরী।সেই সাথে সরকারী চাকুরী ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত যুবককে একজন সাধারন শিক্ষার শিক্ষিত যুবকের ন্যায় সমান ভাবে প্রবেশ করতে পারে সেই ব্যবস্থার সংযুক্ত করা।

পরিশেষে বলবো এ দেশে এ বিষয়ে হয়তো আইন করা আছে,কিংবা হচ্ছে,হবে তারপরও কথা থাকে,মুখ থুবরে পরে থাকা অসংখ্য আইনের বাস্তবায়ণ করতে হবে।একটি বৃক্ষ তা থেকে ফল পেতে হলে প্রথমে প্রয়োজন উর্বর মাটি,এরপর বীজ,পানি আলো বাতাস আর সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন তার পরিচর্যা।তবে না বীজ গাছ হবে গাছে ফল আসবে।

সবাইকে ধন্যবাদ।

---------------------------------

তথ্য আইডিয়া বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যম
এবং ফেবুক বিভিন্ন টাইম লাইন।

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ