নীল শালুক

মাসুদ চয়ন ১০ আগস্ট ২০১৯, শনিবার, ০১:৪৩:৪২অপরাহ্ন গল্প ৮ মন্তব্য

#ছোটগল্পঃ-নীল শালুক//
আজ অসংখ্য মানুষ জীবনের ঝুকি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরবে।ওরা সবাই মিরপুর ১৩ নম্বর সেক্টরে ট্রাকের ছাদে গিজগিজ করা কোলাহলে ঝাক বেঁধে উঠে পড়েছে। পুরুষ মহিলা শিশু বৃদ্ধ কেউ বাদ যায়নি।প্রচন্ড চাপাচাপির মধ্যেও মুখের কোনে হাসির আভা বিরাজ করছে।বহুদিন পর স্বপ্ন যাত্রার উদ্দেশ্য এসেছে হাতের মুঠোয়।
এই মানুষগুলোকে এভাবে হাসতে দেখা যায়না খুব একটা।বছরের ৩৬০ দিনই কাজের পরিমণ্ডলে প্রচন্ড চাপে নিমগ্ন থাকে,
শরীরের ঘাম,চোখের কোণে জমে থাকা আবছা অদৃশ্য জল দেখা যায় নিয়মিত,হাসি যেনো আমাবস্যা উপলক্ষ তাঁদের জন্য।
..
কিন্তু-এই মুহুর্ত!যে মুহুর্ত দেখার জন্য বারবার শহরের ফাঁকা রাজপথে চলে আসি।ঈদের দু'তিন আগেই শুরু হয় যেই প্রহর।এই হাসি ঈদের আনন্দের চেয়েও অনেক বেশি আনন্দের উপলব্ধি নিয়ে আসে আমার হৃদয়ে।আহা!কত্তো আনন্দ কত্তো উচ্ছ্বাস!
কখনোই মিস করিনা এমন মানবিক স্পর্শ ঘন আয়েশ।
ব্যস্ত জীবন সংগ্রামের যন্ত্রনাময় প্রহরগুলো দূরে সরে যাচ্ছে বহুদিন পর।তাইতো অসীম আনন্দ উচ্ছ্বাস বইছে আজ।
তাই নির্মল হাসির পুস্প শুভ্র রেণু চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে।বেশ উপভোগ করছি।
..
খানিকক্ষণ পর দূরের এক ট্রাক থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে।কাল ক্ষেপন না করে সেদিকে ছুটে যাই।একদল পুলিশ ট্রাকের উপরে উঠে মানুষগুলোকে অমানবিক ভাবে পেটাচ্ছে।এই মানুষগুলো গার্মেন্টস ওয়ার্কার।ঈদের আগে পুরো বেতন পরিশোধ না করায়,ফ্যাক্টরিতে অবরোধ করেছিলো ঘন্টা দুয়েক আগে।প্রত্যেকের কাছে অর্ধ বেতন এবং বোনাস মিলিয়ে ৭/৮ হাজার করে টাকা আছে।এলোপাতাড়ি পেটানোর পর তিন চারজনকে টেনে হিঁছড়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।বাকিরা কম বেশি আহত অবস্থায় কাতরাচ্ছে ট্রাকের পাটাতনে,ওরা বাঁধা দিতে গিয়ে বেধড়ক পিটুনি খেয়েছে।
এলাকার লোকজন ধরাধরি করে পাশের ঔষধ ফার্মায় নিয়ে যাচ্ছেন আহত মানুষগুলোকে।আমিও সেই সহায়তাকারীর একজন হয়ে গেলাম।এক মহিলার মাথা অনেক খানি কেটে গেছে।মহিলাটি কান্না জড়িত কন্ঠে বলছেন,মোটেই সাত হাজার টাকা আছে।চিকিৎসা করাইম না বাড়ির জন্যে কেনাকাটা করিম।বাচ্চাগুলা নয়া পোশাক না পাইলে কান্দিবে,ঈদের দিন গোস্ত সেমাই পোলাও খাওয়ার ইচ্ছা আছিলো বুড়া বুড়িক।এখন তো বিছানাত পড়ি থাকিম।আন্দিবারো(রান্না)পাইম না।
আমি ওনার কপালটা শক্ত করে চেঁপে ধরে রেখেছি।প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ডাক্তার ব্যান্ডেজের কাজ শুরু করলেন।কম বয়সী মহিলা।বিয়ের ছ'বছর হয়েছে।স্বামী ছেড়ে দিয়েছে।দুই শিশুকে বাবার বাড়িতে লালন পালনের দায়িত্ব দিয়েছেন।ওনারাও গরীব মানুষ।গার্মেন্টসে জব করা মেয়ে গ্রামে ফিরে আসবে এক বছর পর।অনেক উপহার সামগ্রী খাদ্য উপটৌক নিয়ে আসবে তাদের জন্য।শুধুই অপেক্ষার প্রহর!
..
মিনিট ২০ এর মধ্যে ডাক্তারের কাজ শেষ হলে-কয়েক পদের ওষধ হাতে ধরিয়ে দিলেন।একটু রাগী স্বরে বললেন,এখন ছিট ছেড়ে দিন।আশেপাশে ভিড় জমেছে। বিল এক হাজার টাকা।মহিলাটি অশ্রুসিক্ত চোখে পার্স থেকে টাকা বের করে দিলেন।একটু আগেই ওনাকে উজ্জ্বল আভার মুগ্ধকরা হাসির ঝিলিক চারদিকে ছড়িয়ে দিতে দেখেছিলাম।অথচ এখন বেদনার নীল রঙ ছড়িয়ে যাচ্ছে।দুচোখে অজস্র নীল শালুক ভেসে বেড়াচ্ছে।জলের শালুক স্থলে সমাবেশ সাজিয়েছে।কয়েকশ মানুষের ভিড় ঠেলে নীল শালুকেরা এগিয়ে যাচ্ছে।
(মাসুদ চয়ন)

0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ