আমরা জাতিগতভাবে সবকিছুতেই অতি উৎসুক কেন! রাস্তায় একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে দুর্ঘটনা কবলিত মানুষদেরকে কোথায় অতি দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাবে তা না। সবাই তাঁদের ঘিরে ধরে আর তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে কী ঘটেছে। ধীরে ধীরে জটলা বাড়তে থাকে। পাশাপাশি দুঃখজনক হলেও সত্য কেউ কেউ মোবাইলে ভিডিও করতে থাকে। আবার কেউবা সেলফি তোলায় থাকে ব্যস্ত। তাঁদের উদ্ধার করতে যাওয়া যে দু’চার জন মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন ব্যাক্তি আছে তাঁরা এত লোকের ভিড় ঠেলে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে হিমশিম খেয়ে যায়। অতি উৎসুক জনতার ভিড়ের কারণে উদ্ধার তৎপরতা বিলম্বিত হয় এবং এতে প্রাণহানি বা অঙ্গাহানির আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেয়া যায়না। উড়িয়ে দেয়া যায়না ব্যক্তি বা রাষ্ট্রীয় সম্পদহানীর আশঙ্কাও। আমাদের দেশে একটি অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে যদি কোন স্থানে আগুন লাগে তাহলে অতি উৎসুক জনতার ভিড়ের জন্য দমকল বাহিনী এবং এ্যাম্বুলেন্স সহ প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থার লোকজন প্রবেশ করতে পারেনা। এতে উদ্ধার তৎপরতায় বিঘ্ন ঘটে এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানি বৃদ্ধি পায়। এই সত্য কথাটা উপলব্ধি করার জ্ঞানটুকু পর্যন্ত যেন আমাদের কারো নেই।
সম্প্রতি একজন মৃত ব্যাক্তির গোসল করানোর সময় আশে পাশের বিল্ডিং থেকে অতি উৎসুক মানুষকে দেখলাম উঁকিঝুঁকি মারতে। বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও তাঁরা সরে দাঁড়াতে চাইছিল না। আবার অনেককে দেখলাম ঘেরা দেয়া গোসলের জায়গায়ও ঢুকে যেতে। শুধু তাই নয় গোসল শেষে কাফন পরানোর সময়ও ঘরের দরজা বন্ধ রাখা যাচ্ছিল না এবং কাঁচের জানালা দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখার সেকি অতি উৎসুক্য এবং উৎসাহ। আমরা প্রায়শ বিভিন্ন স্থানে দেখি কবরে মৃত ব্যাক্তিকে শোয়ানোর সময়ও অতি উৎসুক মানুষের ভীড় যাতে কবরের পাড় পর্যন্ত ভেঙ্গে যায়। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় মহিলাদের দাফনে পর্যন্ত আপনজন ছাড়া অতি উৎসুক মানুষের ভিড় ঠেকানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। একজন মহিলাকে দাফন কাজে বিঘ্ন ঘটানোর কোন মানে হয়! তাতেও কারো কোন ভ্রূক্ষেপ নেই বা কোন মানবিক এবং ধর্মীয় অনুভূতিও যেন কাজ করেনা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় আর কয়দিন পর কিছু অতি উৎসাহী মানুষ জীবিত কবরেই ঢুকে যাবে সেখানে কি হয় দেখার জন্য। মোবাইলে ছবি বা সেলফি তোলার জন্য।
উৎসুক্যতা বা সজাগ থাকা ভালো কিন্তু অতি উৎসুক্যের কারণে যে মানুষের জানমালের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, দেশের বা জনগণের সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে বিবেকবান মানুষ হিসেবে তা অবশ্যই আমাদেরকে বিবেচনায় রাখতে হবে। আমাদের অতি উৎসুক্যতার কারণে যেন কোন মানুষের বিপদ না হয় বা তাঁর দুর্ভোগ দুর্দশা না বাড়ে সে ব্যাপারেও আমাদেরকে সজাগ এবং সচেতন থাকতে হবে, অবশ্যই চিন্তা ভাবনা করতে হবে। সব বিষয়েই হুজুগী হওয়া উচিৎ নয় বরং হুজুগি কর্মকাণ্ড পরিহার করে মানুষের কল্যাণের কথা সবার আগে আমাদেরকে ভাবতে হবে। প্রমাণ করতে হবে মানুষ মানুষের জন্য। মানুষের কল্যাণের জন্য।
১০টি মন্তব্য
ত্রিস্তান
মানুষের কমন সেন্স কম হলে যা হয় আর কি?
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আসলেই আমাদের যদি বিবেক বিচার বুদ্ধি না থাকে তাহলে করার কইবা আছে। ধন্যবাদ।
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
অনেক সুন্দর লেখা
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
ধন্যবাদ ভাইয়া।
রোকসানা খন্দকার রুকু
বাঙালি বলে কথা। আমরাও এমন করি কি হলো, কি হলো ভাব থাকেই।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
হ্যাঁ আপু , বাঙ্গালী বলে আমাদের মন মানসিকতা এমন। ধন্যবাদ।
হালিমা আক্তার
সমাজের এ বিষয়টি খুব পীড়া দেয়। এদের বোধদয় কবে হবে। শুভ কামনা রইলো।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
হ্যাঁ আপা এবিষয় অবশ্যই মর্মপীড়াদায়ক। শুভ কামনা রইলো।
সৌবর্ণ বাঁধন
ব্যক্তি অধিকারের ধারণা সমাজে বিকশিত না হলে এই সমস্যার সমাধান কঠিন। মানুষ বোঝেনা কোনটা তার নিজস্ব গন্ডি, কোনটা অপরের।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
ভাইয়া আপনার চমৎকার মতামতের অশেষ ধন্যবাদ। ঠিকই বলেছেন — “মানুষ বোঝেনা কোনটা তার নিজস্ব গন্ডি, কোনটা অপরের”।
সুস্থ আর ভালো থাকবেন।