রাত মধ্য-হলেই ধানসিঁড়ি নদীটি ডাকে, খুব করেই ডাকে, যাই, যাই-ও না,
রাত্তিরে যাই-ই-না, ডর লাগে, খু-উ-ব,
সকাল-দুপুর-বিকেলে-সন্ধ্যায় যাই, সন্ধ্যা-বসন্তেও, একাকী করে নিজেকে, চুপে,
খুব চুপে, না-শব্দে, কাঁদা মাখামাখি করি, পা-ভেজাই, ভিজি-ও।
ঠেস দেই, মোটাসোটা গাছ দেখে, বসি অজস্র পা-ছড়িয়ে, ঝুম-আনন্দে;
কথা হয়-না, তাকাতাকি হয়, হাসে, হাসি-না, ঝামেলা বাঁধার ভয়ে।
যথেষ্ট ঈর্ষা করার ভঙ্গিতে বড়-সাদা-বক এক-পা তুলে ধ্যান করে, অপলক চোখে,
পানির দিকে তাকিয়ে। কাছ-দূরের হঠাৎ বেজে ওঠা জাহাজীভেঁপুতে ধ্যানী বক দূরে-মিলায়।
মাছরাঙা, পানকৌড়ি, কাঠ-ঠোকরা, ঘুঘুরাও পলকহীন;
বাবুই-ছানা টুপ করে পড়ে ডুবে যায় বাতাসের ঝড়ো দোলায়,
সোয়ানা-বাবুই-স্বপ্নের অকস্মাৎ পতনে বাবুই-কান্নায় বাতাস গড়ায়,
দুঃখের বিষজর্জরতায়।
রাতের ধানসিঁড়ি,
যদিও আগের মত সুগঠনে নও, সারা-সীমান্ত-জুড়ে,
কলা-বিদ্যাতেও, তবুও দেখ, ক্ষীণ বাতাসে
লক্ষ্মীপেঁচার কর্কশ ধ্বনির ভ্রান্তি ঠেলে
ঠিক-ই জানান দিয়ে-না-দিয়ে-একদিন, ছিপ-ছিপে
জ্যোৎস্নার আঁধারে, ভারী বর্ষণ-মুখরতায়
ডুব দেব, ডুবে যাব, রাতসিঁড়িতে,
পতনের কীর্তি গড়ে,
তিল-তিল করে, তিলে তিলে;
কত-কত জল বয়ে যায়, বেলার অ-বেলায়,
ধানসিঁড়ির গহীন-জল, জলসিঁড়িতে হারায়;
৩২টি মন্তব্য
প্রহেলিকা
আহা শেষে এসে কি নিদারুণ এক আবহ সৃষ্টি করলেন। সময়কে সাক্ষী রেখে কালের গর্ভে হারানোর নির্মম ইতিহাস লিখে ফেললেন?
সনামধন্য এই ধানসিঁড়িকে দেখার খুব ইচ্ছে আছে। সুযোগ আসুক কখনো এটাই চাই।
সুখ, দুঃখ, বিরহ, সুসময়, অসময় সবকিছুতেই যে তার স্পর্শ লেগে আছে তা বুঝা যায় লেখায়। হয়তো ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন বলেই। এভাবে ফুটিয়ে তোলাটাও বেশ কঠিন যদিও জানি এই টান যতটুকু না ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তারচে বেশি রয়ে গেছে অপ্রকাশিতই।
আরো দীর্ঘ হলেও পড়তে খারাপ লাগতো না বরং ভালোই লাগতো।
ছাইরাছ হেলাল
এখন এই নদীটিকে দেখলে হতাশ হওয়া ছাড়া উপায় নেই, মরা খাল মাত্র,
যদিও এতে আমার কিছুই যায়-আসে না, নদীটি নাই হয়ে গেলেও একই ফলাফল।
সে আমার-ই থাকবে, প্রান-মনে-আসা-যাওয়ায়-ও!!
আসলে প্লান করে তো এটি লিখিনি, শ্রেফ মনকে মনের মত ভাবতে দিয়েছি, সময় লেগেছে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে।
যতটা লিখতে, তার থেকে বেশি সময়।
প্রকাশ সাধ্যাতীত, তা প্রমাণিত, তাবৎ বড় লিখিয়েরা পর্যন্ত।
প্রহেলিকা
অস্তিত্ব যে দখল নিয়ে বসে আছে তা কখনো হারায় না। অদৃশ্য থেকে উঠে আসাই যেন তার ধর্ম। মনের মত মন ভেবেছে, তা পরে আমাদেরও দেখার (পড়ার) সৌভাগ্য হয়েছে।
ছাইরাছ হেলাল
প্রকৃতি আমার পছন্দ, লেখায় ও ছবি তোলায়। (প্রমাণিত)
এক অদৃশ্য টান বহুবার আমায় টেনে নিয়ে গেছে, দেহে ও মনে।
অধম আর কতটুকুই-বা দেখানোর সাধ্য রাখে!!
প্রহেলিকা
প্রকৃতিকে আমি মনে করি স্বয়ংসিদ্ধ। যার বা যাদের লেখায় এই প্রকৃতির অভাব থাকে অধম আমি তাকেই বলি।
সবাই খাপ খাওয়াতে পারেও না। অন্তরে ধারণ করতে না পারলে খাপা খাওয়ানোর প্রশ্নও আসে না অবশ্য। এই প্রকৃতিই টানে খুব করে। এই যেমন আলোচ্য লেখায় টেনেছে।
ছাইরাছ হেলাল
ঝা চকচকে ইট-সভ্যতা টানে না, মন ছুটে যায় সবুজের কাছে, তা হতে পারে দেশে বা বিদেশে।
গাছেদের গায়ে হাত-বুলিয়ে অনেক সময় কাটিয়েছি।
আহা, সে এক অনাবিল আনন্দ।
নীলাঞ্জনা নীলা
মন খারাপ করিয়ে দিলেন। ধানসিঁড়ি বিলুপ্তির পথে…। কবিতাটি যতোবার পড়েছি, এই গানটা মনের ভেতর ঘোরপাক খাচ্ছিলো।
“শুধু দেখা পাওয়া, শুধু ছুঁয়ে যাওয়া,
শুধু দূরে যেতে যেতে কেঁদে চাওয়া,
শুধু নব দুরাশায় আগে চ’লে যায়–
শুধু পিছে ফেলে যায় মিছে আশা।।”
নাহ অন্যসময় কিছু বলবো হয়তো। কেমন জানি মন বিষণ্ণ লাগছে কবিতাটি পড়ে।
ছাইরাছ হেলাল
মরা খালের কাছে নিয়ে কোবতে শুনামুনে,
মন খারাপের কিচ্ছু নেই।
নীলাঞ্জনা নীলা
কোবতে শোনাবেন আপ্নে!!! 😮
আবৃত্তি করে নাকি এম্নে এম্নে?
ছাইরাছ হেলাল
সব আগে বলা ঠিক হবে না!!
মৌনতা রিতু
আমার নানাদের বাড়ির সাথেই একটা খাল ছিলো তার পাশেই ছিল বড় এক যায়গা জুড়ে গোলবন। তো আমার ছিল বই পড়ার নেশা। ঐ খাল দিয়ে বড় বড় নৌকাতে করে দূরের জমির ধান আনা হতো। তো একদিন বসে আছি খালের পাড়ে, হাতে বই। আমি তখন ঐ বাড়িতে এমন বয়সের যে, আমার বড়গুলো নয় দশ বছরের আর আমার ছোটগুলোও আমার বয়সের নয় দশ বছরের। একা একাই থাকতে হতো বাড়িতে গেলে। বই ছাড়া উপায়ও ছিল না। তো আমি তখন কলেজে পড়ি, একদিন খালপাড়ে বসে আছি, একজন এসে ঢিল ছুঁড়ছে, ভর সন্ধ্যা তখন। দেখতেও পাচ্ছি না কাউকে। এমন সব ভুতুড়ে আওয়াজ করছে ভয় না পেয়ে আমি হাতে লাঠি নিয়ে এদিক ওদিক দেখতে লাগলাম।
আমার খুব প্রিয় এক যায়গা ছিল ওটা। এখন সে খাল মরা খাল। টোটালে শুকনো এক রেখার দাগ টেনে গেছে।
আপনার লেখায় চলে গেলাম কিছু সময় সেখানে।
প্রকৃতি কুব টানে আমাকে।
ছাইরাছ হেলাল
কিছু খাল মরে না, এটিও আমার কাছে অত্যন্ত জীবন্ত।
লালান করি অন্তরে,
স্মৃতিময়তাই জীবন, তাই সুখ-স্মৃতি নিয়েই বাঁচুন।
মোঃ মজিবর রহমান
সৃতি রোমন্থন বেথা-বেদনা আঁকড়িয়ে থাকা বাঁ না থাকা কি বাঁ আসে যায়, প্রকৃতি আমাদের সেবা দেয় আর আমরা প্রকৃতি ধ্বংস্ব করি। কি নিদারুন কথা। আমাদের কি লজ্জা হবে!!! হবে না হয়তো।
কত-কত জল বয়ে যায়, বেলার অ-বেলায়,
ধানসিঁড়ির গহীন-জল, জলসিঁড়িতে হারায়;
ছাইরাছ হেলাল
নদীটি প্রাণে ধারণ করেই বাঁচবে।
ভালো থাকবেন।
মোঃ মজিবর রহমান
হ্যা ভাই, ভালবাসা ভালবাসার জায়গাতেই থাক, আপনি ভাল থাকুন।
ছাইরাছ হেলাল
সবাই ভাল থাকুক।
বাবু
প্রকৃতির রূপে-ই আমারা রূপবতী। প্রকৃতি-কে হারানো যাবেনা কখনো। প্রকৃতির মাঝেই আমরা যেমন: আছে ধানসিঁড়ি খালবিল নদনদী আরো কতো কী! ভালে লিখেছেন সত্যি অসাধারণ লেখা।
ভালো থাকবেন, লেখক-কে ধন্যবাদ।
ছাইরাছ হেলাল
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমরা প্রকৃতির মাঝে প্রকৃতি নিয়েই বাঁচার স্বপ্ন দেখি।
ব্লগার সজীব
এবার বুঝেছি কবিতা এত ভাল লেখার কারন। ধানসিঁড়ি ছুয়েছেন, কবিতা তো আসবেই। আমিও যাব ধানসিঁড়ির কাছে। শুধু ছোবো না এর জলও পান করবো, বোতলে নিয়ে আসব জল। লেখার আগে খেয়ে নেব এককাপ 🙂
ছাইরাছ হেলাল
মাত্র এক কাপ!!
কলসি গলায় বেঁধে বয়ে বেড়াতে হবে আর পানি খেতে থাকতে হবে,
তাহলেই কড়কড়ে লেখা হুরহুর করে ছড়িয়ে যাবে, আর নয় দেরি!!
ব্লগার সজীব
কলসি কেন ভাইয়া, লেখার জন্য আমি তো ড্রাম গলায় বেঁধে রাখতেও রাজি আছি 🙂
ছাইরাছ হেলাল
আর দেরি করা ঠিক না, খাল শুঁকিয়ে গেলে পানির আকাল পড়ে যাবে কিন্তু।
ইঞ্জা
অসাধারণ ভাবে ধানসিঁড়ির পারিপার্শ্বিকতা তুলে ধরলেন ভাইজান, জানি আপনার দেখার চোখ আছে, যার মাধ্যমেই ফুটে উঠলো সব চোখের সামনে, মুগ্ধতা নিন এই ভক্তের।
ছাইরাছ হেলাল
বুঝছি এবার, আপনাকেও সেখানে নিতে হবে।
তারপর আমার মুগ্ধতা শুরু হবে।
ইঞ্জা
অপেক্ষায় রইলাম ভাইজান।
ছাইরাছ হেলাল
আমিও অপেক্ষায়!!
নীহারিকা
কিভাবে একের পর এক নদীগুলো মরে যাচ্ছে। একসময় হয়তো কোন চিহ্নই আর থাকবে না।
ছাইরাছ হেলাল
নদী মরার বিষয় নয়,
প্রাণের ধানসিঁড়িটি বাঁচলেই বাঁচি।
শুন্য শুন্যালয়
পড়েছি আগেই। ভীষন সুন্দর কবিতাটা পড়ে মনের মধ্যে কিছু লেখা ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু এমন করে লিখতে না পারলে লিখে লাভ কী?
বাবুই এর অংশটুকু অসামান্য হয়েছে। বাবুই-কান্না পুরো লেখাতেই। জ্যোৎস্নারও আঁধার হয় তাহলে! 🙂
ছাইরাছ হেলাল
আপনি লিখলে এর থেকেও ভাল লিখতে পারবেন,
পাঠক-বঞ্চিতকরণ ঠিক-না।
শুধু জ্যোৎস্নার না, আঁধারের-ও আঁধার আছে।
পড়েছেন জেনে আনন্দিত, ভাইয়া।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
সবগুলো কবিতা কঠিন কঠিন না লিখে আমাদের জন্য কয়েকটা সহজ করে লিখিয়েন।
ভাঙ্গা দাঁত আর ভাঙ্গতে চাই না। ^:^
ছাইরাছ হেলাল
সব লেখাই আপনাদের জন্য।
দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ আমাদের নিতেই হয়।