অসহায় প্রেম আমার!

বাপ্পি মজুমদার ইউনুস ১৬ জানুয়ারি ২০১৫, শুক্রবার, ০৪:১৩:২২অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি, গল্প ১৪ মন্তব্য

অসহায় প্রেমো মায়া, যদি...!!

সুন্দর ভাবেই চলছে আমার সময়গুলো। পড়াশুনা চাকরী লেখালেখি সব। হঠাৎ নেমে আসলো জীবনের এক ভিবিষিকাময় জ্বাতনার দহন-যা আমাকে তিলে তিলে অসহায় করে তুলছে। আমি কেমন ছিলাম আর কেমন চলছে আমার দিনগুলি।

মাঝরাত পেরিয়ে গেছে অনেকণ। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি কিন্তু ঘুম আর আসছে না। কি করে আসবে? আমার মত অবস্থায় পড়লে এ পৃথিবীর সবচেয়ে পাথর-হৃদয় মানুষেরও নির্ঘুম রাত কাটাবার কথা। আর আমি তো সে তুলনায় নিতান্তই সাদাসিধে একজন মানুষ। যার হৃদয় গ্রীক প্রেম-দেবতা জন্য নির্ধারিত। সেই বুঝতে শেখার পর থেকে আমি শুধু মার একটি কথা মাথা রেখে চলছি পথ। মার ইচ্ছার বাহিরে কারো সাথে সর্ম্পক করা যাবে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আগে যে- আমি প্রেমে পড়লাম তা মাকে বুঝতে দিইনি প্রথমে,সবাইতো প্রেম করছে স্কুল বন্ধু বান্ধবরা,আর আমিতো ফাস্টবয় হয়েও যদি প্রেম না করতে পারি সেটা কেমন দেখায়। মাকে আমি আমার সব কথাই বলি,আমার জীবনের সব কথা। সত্যি করে বলতে কি একজন মা যে আমার এতো বড় ফ্যান হবে তা আমি কখনো বুঝতে পারিনি। পৃথিবীতে একজন মানুষ শুধু আমাকে বুঝে সে হলো আমার মা!

প্রেমের বয়স যখন তিন মাস তখন মা আমার বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পারে যে আমি পাশের পাড়ার একজন মেয়ের সাথে সর্ম্পকে জড়ালাম। অবশেষে মা আমাকে জানতে চাইলো বিষয়টি-মিথ্যা বলতে পারলাম না,সব কথা খুলে বললাম আর বললাম, মা আমি ওকে ভালোবাসি। মা বললো কাল ওকে আমাদের বাড়ীতে নিয়ে আসবি। স্কুল শেষে আমি তাকে নিয়ে আমাদের বাড়ীতে আসি আর মার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। মা আমাদের দুজনকে অনেক বুঝালেন যে আমার এখনো এ সব করার সময় আসেনি। আর মা তার পছন্দের মেয়ের সাথেই এ সব সর্ম্পক করতে আমাকে দিবে তবে অন্য কোথাও না। মা শপথ করালেন যে আর যেন এই বিষয়ে তিনি আর কিছু না শুনেন। তারপর আর মেয়েটির সাথে যোগাযোগ হয়নি আমার। মাঝে মাঝে মনে পড়ে যায় সব। কেন এমনটা করলাম মাকে না জানিয়ে।
অবশেষে তিন মাস পর মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেলো। আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি মা তা বুঝতে পারলো। আর আমাকে বললো, আমার শেষ ভরসা তুই। আর তোর জীবনে যাতে করে কোনো কষ্ট না আসে সে জন্য আমি দেখে শুনে তোর জন্য মেয়ে ঠিক করবো। আর আমি এই সিদ্ধান্তের পর মাকে সব সময় জানতে চাইতাম। আর কত দিন আমাকে এভাবে থাকতে হবে মা, এইভাবে চলতে চলতে শেষ করলাম জীবনের পাঁচটি বছর!

২০০৮ সাল থেকে মাকে আমি এই বিষয়ে জানতে চাইতাম। বছরের শেষ সময় মা আমাকে বললো তোমার একজন কাজিন আছে -ঈদে দেশের বাড়ীতে আসবে তাকে দেখার জন্য! আমি কাজিনদের বাড়ীতে গেলাম, আর আমি কজিনদের বাড়ীতে তেমন একটা যাইনা। আর আমি ভাবতে লাগলাম তারা কেউ কি আমাকে চিনতে পারবে। আর প্রতিদিন আমি ভাবতে থাকি কেমন হবে মেয়েটি। মার পছন্দ হয়তো অনেক সুন্দর হবে। আর সে যেমনি হোক না কেন সে যেন ভালো মানের একজন মানুষ ও মনের অধিকারীনী হয়। আর আল্লাহর কাছে সব সময় আমার এই প্রার্থনা ছিলো।
প্রতি বছর ঈদ আসে আর আমি কাজিনদের বাড়ীতে যাই তবে তাকে দেখতে পাইনা। বাড়ীতে মন খারাপ করে এসে মার পাশে বসি আর সব বলি। আর মা আমাকে বলে কোনো সমস্যা নাই তুই পড়াশুনা শেষ কর মেয়ে বড় হোক। আর সবার সাথে আমি তোদের ব্যাপারে কথা বলে রেখেছি। এই ভাবে পার করলাম ৮টা ঈদ। অতঃপর ২০১২ সাথে রোজার ঈদে তাকে দেখতে পাই তাও আবার তার পিছনের দিকটা। দেখতে কেমন তাও জানি না। কথা হয়নি, বলাও হয়নি আমার মনের ভাবনাগুলো। বিষন্ন মন নিয়ে ফিরে আসলাম। এভাবে পার করলাম আরো দুটি ঈদ। ০৯-০৮-২০১৩ সালে রোজার ঈদে সে, এমন কি সব কাজিনেরা আমাদের বাড়ীতে আসে!
রিক্সা থেকে নেমে আমাকে সালাম দিলো ঈদের শুভেচ্ছা আদান প্রদান হলো,হাত মিলানোর পর জানতে চাইলাম যে ও-কে, অতপর জানতে পারলাম আমার দীর্ষ দিনের অপোর সে নীলকন্ঠ শ্রাবন! যার অপোয় কাটালাম আমি হাজারো দিন মাস,বসন্ত। যাকে পাওয়ার জন্য অপো করতে হয়েছে অনেকটি বছর! তাকে প্রথম দেখাতেই আমি ভালোবেসে ফেলেছি। জানিনা সে আমাকে নিয়ে কিছু ভাবছে কিনা। নাকি তার জীবনের সাথে কেউ জড়িয়ে আছে। সব ভাবনা আমাকে পাগল করে তুললো। আমি আমার মনের উত্তালকে থামাতে পারলাম।

বাড়ীতে সবাই এক সাথ হলাম আর এরি মধ্যে নামাজের সময় হয়ে আসলো! নামাজ পড়তে গেলাম। শ্রাবনের হাতে আমার ক্যামেরা দিলাম আর বললাম তোমরা সবাই ছবি তোলো আমি নামাজ পড়ে আসি!
নামাজ শেষে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে আমি আমার মায়ের জন্য দোয়া করি তিনি আমার জীবনের শেষ্ঠ জিনিসটি সঠিক ভাবে বাছাই করেছেন। আর এটাই যেন আমার জীবনের প্রথম এবং শেষ ঠিকানা হয়। বাসায় এসে মাকে ছড়িয়ে ধরলাম আর বললাম মা তুমি সত্যিই....।
সবাই খেতে বসলাম! সবাই মিলে মজা হচ্ছে অনেক! শ্রাবন আমাকে জানতে চাইলো আমার লেখাপড়া ব্লগিং লেখালেখি কেমন চলছে! আমি অবাক হলাম তার মুখে আমার সর্ম্পকে জেনে। তুমি কি জানো আমি কি করি? হ্যাঁ জানিতো সবইতো জানি, তার প্রতি আমার আর্কষন আরো বেড়ে চলছে। খাওয়া শেষে আমরা সবাই বের হলাম ঘুরতে। এক সাথে ছবি তোলা, কথা বলা,আড্ডা দেওয়া, সব কিছু মিলিয়ে আমাকে অনেকটা মাতাল করে দিলো সব। রাতে বাসায় ফিরলাম আর মাকে সব খুলে বললাম, মাতো আমার মুখের তার পছন্দের মেয়ের গুন শুনে আরো খুশি। আমাকে ভরসা দিলো সবার সাথে আমার কথা হয়ে আছে, তোরা দুজন দুজনের সর্ম্পকে যান,কথা বল,বাকীটা আমি দেখতেছি।

ঈদের পরের দিন সে আমাকে ফোন করলো আমি বিশ্বাস করতে পারলাম না। আকাশ ভরা বৃষ্টি মৃদু হাওয়া সব কিছু মিলিয়ে......। আমাকে দাওয়াত করলো তাদের বাসায় যাওয়ার জন্য, সবাই মিলে পিকনিক করবো, আমি তো মহা খুশি। ফ্রেশ হয়ে আমি চললাম তাদের বাসার উদ্দেশ্য। পথি মধ্যে অনেক ভাবনা। বাসায় পৌছে সবার সাথে কথা হলো কিন্তু তাকে খুজে পাচ্ছিনা। বসে রইলাম। একটু পরে দেখতে পেলাম সে বৃষ্টি বিজতেছে আর অনেক মজা করছে। অপলক দৃষ্টিতে ছেয়ে আছি তার প্রানে,সারা শরীর ভিজে একাকার। তখন মনে বাধঁলো আমিও ভিজবো তার সাথে তবে কি ভাবে এমনটা সম্ভব। মনের আকাশে ইচ্ছা জাগলো তাকে বলবো সে যেন আর কোনো দিন বৃষ্টিতে না ভিজে। আর আমরা দুজন এক সাথে ভিজবো এই আশায়। দুপুরের খাবার খেলাম বাসায় ফিরলাম আবার সে কাহিনী মায়ের সাথে।

এভাবে চলতে থাকে অনেক দিন মাঝে মাঝে সে আমাকে ফোন করে কথা হয়। এক দিন আমি আমার মনের সব কথা তাকে জানাই। সেও অনেক হাসি মুখের আমার সাখে একমত হলো। আর বললো এতে তার কোনো অদ্বিতীয় চিন্তা নাই। পার হতে লাগলো মাসের পর মাস! আমার জীবনে এমন একজন শ্রাবন আসবে তাও আবার আমার যত কিছু পছন্দের সব কিছু তার মধ্যে ্আছে! আমি কেমন খেতে ভালোবাসি,কেমন পড়তে ভালোবাসি,ঘুমাতে যাওয়া সব,সব কিছু আমার মত করে সেও করে!আমার হাসিগুলো তার হাসি!
একটা মজার বিষয় হচ্ছে যে আমিও ফ্যামিলির ছোট সেও ছোট। সব বন্ধুদের সাথে শেয়ার করা আমার সর্ম্পকে সবাই অবাক আমাকে নিয়ে আমি কেন এমন কেন অন্যেদের মত না। একদিন মা সহ তাদের বাসায় যাই। পরের দিন মাকে ডাক্তার দেখাতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ যাই। তারপর বাসায় আসি, শ্রাবন তার সব বন্ধুদের তার বাসায় নিয়ে আসলো। আর আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। সবাই আমাকে প্রশ্ন করে আমি কেন তাকে ভালোবাসি,কি দেখে পছন্দ করি,আমি তাকে কষ্ট দিবো নাতো এভাবে হাজারটা প্রশ্নের জবাব খুজতে থাকে তারা আমার কাজ থেকে। আমি শ্রাবন কে জীবনের প্রথম একটি চিঠি দিই আর সে চিঠি তার সব বন্ধুদের কে দেখায়। বর্ষা,মেঘ,আরো নাম না জানা অনেককেই আমাকে দেখার ইচ্চা প্রকাশ করে। আর শ্রাবন সব সময় তাদের সর্ম্পকে আমাকে বলে।

অতপর নেমে আসলো বৈশাখী ঝড়। তাকে আমার থেকে কেড়ে নেওয়ার সব যন্ত্র আবিস্কার হচ্ছে একের পর এক। অর্থের কাছে আজ আমার লালিত প্রেম হেরে যাচ্ছে!
যেখানে সবাই রাজি সেখানে এক অদ্ভত মানবের আর্ভিবাব ঘটলো আর সব এলোমোলো করে দিলো। তবে কেন এমন আচরণ?।

তাদের আশা উচ্চাকাঙ্খা এভারেস্ট শৃঙ্গের চেয়েও উঁচু। তারা আমার মত মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলের সাথে দু বছর প্রেম করলেও ঘর বাঁধতে দিবে না। যার জন্য,যাকে শুধুমাত্র দেখতে আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে পাঁচটি বছর। যাকে পাবো বলে জীবনের সকল চাহিদা বাদ দিয়ে বসে ছিলাম তার অপেক্ষায়। আজ কেমন করে আমার এই লালিত প্রেমকে গলা টিপে আমি ভুলে যাবো?। বিপত্তি বাঁধলো এক বছর এর মাঝে। একটা সম্পর্ক এতো দূর এগিয়ে গিয়ে কি করে ভাঙতে পারে তা আমার মাথায় কিছুতেই আসে না। রাতের পর রাত নির্ঘুম কেটে যাচ্ছে। আমার বন্ধুর মত মা, আমার বোনেরা, আমার এমন বিস্রস্ত অবস্থা দেখে হাজারটা প্রশ্ন করছে। কিন্ত আমি তাদের প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারিনি। এতে আমার বা আমার পরিবারের কি বা করা আছে? অর্থের পায়ে যখন ভালোবাসা শিখল দিয়ে বাধাঁ তখন আমার মত অসহায় প্রেমিকের আবেক তাদের কাছে কি? কিন্তু শ্রাবন আমাকে ভালোবাসে আমি শ্রাবনকে ভালোবাসি এর চেয়ে বড় পাওয়া, চাওয়ার আর কিবা আছে।

মাঝে মাঝে ভাবি তাকে না ফেলে আমি জীবন আর রাখবো না। আবার ভাবি যে শ্রাবন আমাকে এতো ভালোবাসে তাকে রেখে কিভাবে আমি মরে যাবো তাকে আমার মত কে এমনটা ভালোবাসবে। আমার জীবনে সে প্রথম ও শেষ। আামার জীবনে আর কোনো নারীর জন্ম হবে না। এটাই আমার প্রথম এবং শেষ কথা। আমি যে কারনে তার জন্য সারা জীবন অপোয় থাকবো। আর আমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয় তাহলে আমি তাকে পাবোই। যদি তাকে অন্যথায় বিয়ে দিয়ে দেয়। কোনো দিন যদি সে একা হয়ে যায়। তার স্বামী যদি মরে যায়। কোনো দিন যদি আমাকে তার প্রয়োজন হয়। তার বিপদে যদি পাশে দাড়ানোর কেউ না থাকে তখনো আমি হবো তার জীবনের শেষ আশা এবং ভরসা। আমার ভালোবাসা এতো সহজে হারিয়ে যাবে জীবনের অতল গহিনে। আমি তা কখনো হতে দিতে পারি না আর পারবোও না। মৃতে্যুতো জীবনে আসবেই আর এই মৃত্যুটা তার জন্য রেখে দিলাম। আমার বিশ্বাস সে আমাকে কখনো ভুলতে পারবে না। এমনকি ভুলতে পারবে না আমার সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো।

আমরা দুজন শপথ করলাম যে আমরা কখনো কাউকে ভুলে যাবো না,কষ্ট দিবো না,আর আজ পযর্ন্ত আমরা সে শপথের মধ্যেই আছি।
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃরে ডাল।
আমার মনের ব্যাপারগুলো কেউ দেখতে পায় না!
থাকতে যদি না পাই তোমায়, চাইনা মরিলে-
ভালোবাসি বলেরে বন্ধু আমায় কাঁদালে!!

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুলে
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে,আমিতো আছিই তোমার অপোয়,সাজাবো তোমার জীবনময় সব।

যদি হারিয়ে যাও আমাকে রেখে-
সে দিন আমার দু'চোখে গড়িয়ে পড়ে না অশ্রুজল
ঝরবে না বৃষ্টি, আকাশ বেদনায় নীল,
শ্রাবন, তোমার বিরহের উত্তাপে
শুকিয়ে যাবে নোনা জল।
আমার হৃদয় নদীতে ভীষণ খরা
বৃষ্টি ঝড়বে কী তোমার স্পর্শ ছাড়া।
অসহায় প্রেমো মায়া
যদি হারিয়ে ফেলি তোমায়।

বাপ্পি মজুমদার ইউনুস
সম্পাদক- আমাদের নাঙ্গলকোট ডটকম ( http://www.amadernangalkot.com )
সভাপতি- সবুজ দিগন্ত
কুমিল্লা,নাঙ্গলকোট,বাংলাদেশ

0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ লেখা

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ