জন্ম ভুমি নিয়ে লিখছি বলে জন্মভুমির সৃষ্টির রহস্যটা লেখায় একটু না আনলে কি হয়।১৯৭১ সাল দীর্ঘ নয়টি মাসের সংগ্রামে রক্তে ভেজাঁ লাল সবুজের পতাকাটি বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পায় যার নেতৃত্বে তিনি ছিলেন বঙ্গ বন্ধু শেখ মজিবর রহমান।ত্রিশ লক্ষ তাজাঁ প্রানের বিনিয়ে প্রায় দশ লক্ষাধিক মা বোনদের ইজ্জত বিলিয়ে আসে কাঙ্খিত বিজয়।খুব সম্ভবত বিশ্বে সম্ভ্রমহানীর এমন নজির আর কোথাও নেই।আর এর নেপথ্যে ছিলো ধর্মীয় অনুভুতি।শহীদ রুমী স্কোয়াড Secret Diary লেখা এর কিঞ্চিৎ নমুনা তুলে ধরছি নতুবা এ প্রজন্ম বুঝবে না স্বাধীনতা অর্জনে কতটা ভয়বহতা ছিলো কতটা ছিলো ত্যাগের।

ধর্ষণে লিপ্ত এক পাকিস্তানী মেজর তার বন্ধুকে একটি চিঠি লিখেছিলেন;
(y) "আমাদের এ সব উশৃঙ্খল মেয়েদের পরিবর্তন করতে হবে যাতে এদের পরবর্তী প্রজন্মে পরিবর্তন আসে,তারা যেন হয়ে ওঠে ভালো মুসলিম এবং ভালো পাকিস্তানী"

(y) স্বাধীনতার পর ধর্ষিতা বাঙালী মহিলাদের চিকিৎসায় নিয়োজিত অষ্ট্রেলিয়ার ডাক্তার জেফ্রি ডেভিস গন ধর্ষনের ভয়াবহ মাত্রা দেখে হতবাক হয়ে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে আটক পাক অফিসারকে জেরা করেছিলেন যে তারা কি ভাবে এমন ঘৃণ্য কাজ-কারবার করেছিলো।অষ্ট্রেলিয় চিকিৎসক বিচলিত হলেও পাক অফিসারদের সাচ্চা ধার্মিক হৃদয়ে কোন রকম রেখা পাত ঘটেনি। তাদের সরল জবাব ছিল,

(y) "আমাদের কাছে টিক্কা খানের নির্দেশনা ছিলো যে এক জন ভালো মুসলমান কখনই তার বাবার সাথে যুদ্ধ করবে না। তাই আমাদের যত বেশী সম্ভব বাঙালী মেয়েদের গর্ভবতী করে যেতে হবে।"

(y) নিয়াজী ধর্ষণে তার সেনাদের এতই চাপ দিতেন যে তা সামলে উঠতে না পেরে এক বাঙালি সেনা অফিসার আত্মহত্যা করতে বসেন।

এমন হাজারো লক্ষ ভয়াবহতার মধ্য দিয়ে দেশের প্রতিটি জেলার ছোট বড় দামাল ছেলে মেয়েরা  মাত্র নয় মাসেই দেশকে স্বাধীন করেন।তাদের মনে ছিলো ক্ষোভ আর মাতৃভুমির প্রতি অপরিসীম টান ভালবাসার।তখন দেশের সব গুলো জেলার মতই নারায়ণগঞ্জ জেলা হতেও সে সময় যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন এ জেলার কৃতি সন্তানেরা।প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেলার উল্লেখযোগ্য কিছু যুদ্ধের স্মৃতি এবং যোদ্ধাদের কথা বলবো এবং এরপর আমার প্রিয় মাতৃভুমি জন্মস্থান সিদ্ধিরগঞ্জ এর মুক্তি যোদ্ধাদের কথা আমার সীমিত জ্ঞানে তুলে ধরার চেষ্টা করব।যদিও নারায়ণগঞ্জের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার লিষ্ট এখনো বিতর্কীত।
তথ্যসূত্র বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন ও বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যম।

প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জে জন্মেছে বহু জ্ঞানী গুণী আর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দান কারী দল আওয়ামীলীগের জন্ম এই নারায়ণগঞ্জে পাইক পাড়া নিউচুয়েল ক্লাব থেকে।শহীদ বাঙ্গালী,নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের কোষা ধ্যক্ষ মহিউদ্দিন আহমদ খোকা ভাই,আঃ রহমান এবং বিবিসির সাংবাদিক নিজামউদ্দিন নারায়ণগঞ্জ থেকে ২৮ শে মার্চের পলাতক জনতাকে আশ্রয় ও খাওয়ার সুবন্দোবস্ত এবং আগরতলায় যাবার জন্য সকল ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।বিবিসির রিপোর্টের পর শহীদ নিজামুদ্দিনকে তার বাড়ী থেকে ধরে এনে মেরে ফেলেন পাক বাহিনীরা।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখতে কারো পক্ষেই পরিপূর্ণ সঠিক ইতিহাস লেখা সম্ভব নয় কেননা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কয়েক কাল পেরিয়ে গেছে।রাজাকার ক্ষমা করে তাদের পূর্ণবাসনে কিছুটা সত্য কিছুটা মিথ্যের মাঝে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা অনেকেই বাদ পড়ে গেছেন জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের লিষ্ট হতে,অনেকে অবহেলায় অভিমানে দূরে সরে একাকী দিন কাটাচ্ছেন।তাই যতটুকু সম্ভব যাচাই বাচাইয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করছি শুধু নারায়ণগঞ্জ এবং এর নিবাসী সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলটির মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা।
নারায়ণগঞ্জের আরো যারা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা:
 -{@ বীর মুক্তিযোদ্ধাঃশহীদ লক্ষীনারায়ণগঞ্জ দেবনাথ, পিতা-ধীরেন্দ্র নাথ দেবনাথ,৮৬ মোবারক শাহ রোড,খান পুর,নারায়ণগঞ্জ।১২ ই জুলাই নারায়ণগঞ্জ শহরে গেরিলা অপারেশনে তিনি শহীদ হন।মোঃ গিয়াস উদ্দিন বীর প্রতীক,তল্লা, নারায়ণগঞ্জ তাকে সনাক্ত করেন।পাক বাহিনীদের হাত থেকে তার লাশ পাওয়া যায়নি।
-{@ বীরমুক্তিযোদ শহীদ আবুবকর ছিদ্দিক,পিতা- মরহুম আবদুল করিম বেপারী,মাতা-অছিয়া খাতুন,গ্রাম-আলী নগর,মদনগঞ্জ,বন্দর।তিনি ১৯৪৯ সালের ২১ শে জুলাই জম্ন গ্রহণ করেন।১৯ ৭১ সালে ভারত গিয়ে পূর্বাঞ্চলীয় হেডকোর্য়াটার মেলা ঘর ক্যাম্প নেভাল কার্যক্রমের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে সুইমিং প্লাটুনের অর্ন্তভূক্ত হন এবং বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করেন।কুমিল্লা জেলার দেবিদ্ধার উপজেলার কালী বাড়ীর সন্নিকটে নাপাকসেনা ও রাজাকারদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ কালে নাপাকবাহিনীর গুলিতে তিনি শহীদ হন।তাঁকে কুমিল্লার দেবিদ্বার এলাকাই সমাহিত করা হয়েছিলো।
-{@ বীর মুক্তি যোদ্ধা শহীদ মোঃ আওলাদ হোসেন খান,পিতা- মোঃ আলমাস উদ্দিন খান, গ্রাম-সোনাচরা ১ নং ঢাকেশ্বরী কটন মিলস,বন্দর,জেলা- নারায়ণগঞ্জ।১৯৭১ সালে মুক্তি পাগল সেনারা যখন চারি দিকে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে নাপাক সেনাদের একের পর এক পরাজয় করছিলো।ঠিক তখনি কুমিল্লার চৌদ্দ গ্রাম উপজেলায় বেতিয়ারা গ্রামের রনাঙ্গনে সম্মুখে যুদ্ধের সময় যুদ্ধাবস্থায় তিনি শহীদ হন।
-{@ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মোঃ মোশারফ হোসেন,পিতা মরহুম আবুল মাজন,মাতা-মাহমুদা বেগম,গ্রাম-আলী সাহারদী,মদনগঞ্জ,বন্দর,১৯৫০ সালে ১০ই নভেম্বর নিজ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন সেই সময় তিনি মেট্রিক পাশ ছিলেন।মুক্তি যুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য তিনি ১৯৭১ সালে এপ্রিল মাসে বাড়ী ত্যাগ করেন এবং ৬ নং সেক্টর কমান্ডের অধীনে মেজর নওয়াজেশের কমান্ডে উইং কমান্ডার ০১ বাশার বীর উত্তম এর অধীনে সক্রিয় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন যা ৭১ সালের ৯ ই ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের রেল ষ্টেশনে পাকহানাদারদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে তিনি শাহাদাৎ বরণ করেন। ঐ সময় যুদ্ধে পাক হানাদাররা সেখানে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়।
-{@ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আঃ রউফ (বাচ্চু মিয়া),পিতা-হাবিবুর রহমান,৯৬ ব্রাঞ্চ রোড,মজিদ খান পুর,নারায়ণগঞ্জ।তিনি সোনারগাঁও নাপাক বাহিনীর হাতে শহীদ হন।
-{@ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ কামাল উদ্দিন,পিতা- মরহুম মোঃ কালু সরকার,মাতা ফিরোজা বেগম ১৯৪৬ সালে নয়া পাড়া মদন গঞ্জ,বন্দরে জন্ম গ্রহণ করেন।যুদ্ধ করার জন্য প্রশিক্ষণ নিতে তিনি ৩ রা এপ্রিল ৭১ তিনি ভারতে চলে যান।ভারতের মেঘালয়ের ট্রেনিং ক্যাম্প হতে প্রশিক্ষণ নিয়ে বন্দর থানার সোনাকান্দা ইউনিয়নের বিভিন্ন পাড়ায় খন্ড খন্ড যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন।১৯৭১ সালের ২৪ শে ডিসেম্বর এলাকার উৎ পেতে থাকা আলবদর ও রাজাকারদের হাতে গুপ্ত হত্যার স্বীকার হন তিনি।
-{@ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মোঃ ওয়াহিদুর রহমান,পিতামৃত-মতিউর রহমান,মুক্তার কান্দি ডিক্রীর চর।২৯ শে নভেম্বর নাপাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন।কমান্ডার মোঃ সিরাজুল ইসলাম দেওভোগ,নারায়ণগঞ্জ তাকে সানাক্ত করেন।তাকে মুক্তার কান্দি কবর স্থানে দাফন করা হয়।
-{@ বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন বীর প্রতীক:
এই বীর গিয়াস উদ্দিনের পৈর্তিক বাড়ী নারায়ণগঞ্জ সিটি এলাকায়।তার পিতা ছামছুদ্দিন আহম্মেদ মাতা আম্বিয়া খাতুন।তার স্ত্রীর নাম খুরশিদা বেগম।তার দুই ছেলে এক মেয়ে।তিনি তখন ছাত্র ছিলেন।১৯৭১ এ ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে নাপাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেন তিনি।তার মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার হাউস ষ্টেসন,লাঙ্গলবন্দ সেতু,এবং ফতুল্লা আক্রমণ ছিলো তার উল্লেখ্যযোগ্য আক্রমন।
১৯৭১ এ ২৬ অক্টোবর তিনি খবর পান পাকবাহিনীর গানবোট আসছে নদী পথে।তখন তিনি নারায়ণগঞ্জের গেরিলা বাহিনীতে যুক্ত ছিলেন দলনেতা হিসাবে।এ দলটির অবস্থান ছিলো শীতলক্ষ্যা-মেঘনা মোহনায় কলাগাছিয়ায়।সে সময় পাক সেনাবাহিনীর গানবোট টহল দিতো নদীতে।২৫ অক্টোবর মাঝ রাতে প্রস্তুত ছিলেন আক্রমনে কিন্তু সে রাতে পাক গানবোট না আসায় ফিরে যান নিজ আস্তনায়।সকাল ১১টার দিকে এক কৃষক দৌড়ে এসে নিশ্চিত করে পাক গানবোট আসার।এর পর দ্রুত ত্রিশজন সহযোদ্ধা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন তাদের উপর।গিয়াস উদ্দিন আরআর গোলা ছুড়ে প্রথম পাক গানবোট ধ্বংস করে কিন্তু এ খবর পেয়ে মুন্সিগঞ্জ থেকে আরো গানবোট এসে পাল্টা আক্রমন করায় তারা পিছু নেয়।এর পর হতে লাঙ্গলবন্দ সেতুটিকে চারজন পাকিস্থানী দুজন বাঙালী ইপিআর দিয়ে পাহারা দিতেন পাকবাহিনীরা।সে এক গভীর রাতে ২২জনকে সাথে নিয়ে আক্রমন করেন সেখানে।আক্রমন পাল্টা আক্রমন অবশেষে পর পর তিন চারটি আরআর গোলা মেরে সেতুটিকে উড়িয়ে দেন।তিনি মৃত্যু বরণ করেন ২০০৪ সালে।

১৯৭১ এ মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাসে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর প্রথম নাপাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যে অঞ্চলের সাধারণ মানুষেরা প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন এবং নিহত হয়েছিলেন,সেটা ছিল নারায়ণগঞ্জ জেলা।২৫ শে মার্চ যাকে আমরা ভয়াল কালো রাত্রী বলি,সে রাতের হত্যাজ্ঞের পর ২৬ শে মার্চ নাপাক বাহিনী ঢাকার পাশে নারায়ণগঞ্জে হামলা বা প্রবেশে চেষ্টা করে কন্তু এর আগেই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কের পাগলা থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত পথে পথে ট্রেনের বগি,রেল নাইন বিচ্যুতি ও বড় বড় গাছ কেটে,টায়ার জ্বালিয়ে  রাস্তায় প্রবেশের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন।পরে নাপাক বাহিনী রাস্তার ব্যারিকেট সরিয়ে ফতুল্লা মাসদাইর আসতে পারলেও মাসদাইর পুলিশ লাইনে এসে তুমুল প্রতিরোধের মুখে পড়ে।এখানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তৎকালীন এম এল এ এ কে এম সামছুজ্জোহা ও আফজাল হোসেন গংদের নেতৃত্বে নাপাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হন।এখানেই নাপাক বাহিনীকে প্রায় ২৬টি ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রাখা হয়েছিলো।ক্রোধে নাপাক বাহিনী একে একে প্রায় ২৭ জনকে নির্মম ভাবে হত্যার করে পরের দিন ২৭ মার্চ দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরে তারা প্রবেশ করে।

বর্তমানে বিভিন্ন পত্রিকায় সে সময়ের ঘটনার একজন প্রত্যাক্ষ স্বাক্ষী মোহাম্মদ হোসেন যিনি নিজেও গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন সেই প্রতিরোধ যুদ্ধে।তিনি জানান শহরে প্রবেশ করতে সে সময় নাপাকিরা তার চাচা উত্তর মাসদাইর এর ব্যাবসায়ী শহীদ আব্দুস সাত্তার,তার গাড়ির চালক শহীদ নুর ইসলাম,শহীদ আশরাফুল ইসলাম,পূর্ব মাসদাইরের সাবেক মন্ত্রী মরহুম আব্দুস সাত্তারের ছেলে শহীদ  তৌফিক সাত্তার ও তার বন্ধু শহীদ জালাল,পশ্চিম মাসদাইরের ভাষা সৈনিক খাজা জহিরুল হকের বোন শহীদ হাসিনা হক,ভগ্নি পতি শহীদ জসিমুল হক সহ দারোয়ান ও দুই জন গৃহ কর্মী শহীদ করে।অতপর নাপাক বাহিনী মসজিদে ঢুকেও গুলি করে মারে সেই এলাকার সাচ্চু,জিন্নাহ ও আকবর নামে আরো তিন জনকে এবং গুল বদন নামে এক জন মহিলাকে পুড়িয়ে মারে।এছাড়াও ব্যাংকার আব্দুস সাত্তার,জনৈক আনিছুল ইসলামের দুই মেয়ে সহ সর্ব মোট প্রায় ২৭ জনকে নির্মম ভাবে হত্যা করে নাপাকিরা।

প্রত্যক্ষদর্শী গুলিবদ্ধ পঙ্গু মোহাম্মদ হোসেন এখন কেরানীগঞ্জের পানগাও এ বসবাস করছেন।তিনি সে সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে লাশের সাথে শুয়ে পড়েছিলেন বলে নাপাকি বাহিনী তাকে মৃত ভেবে চলে যায়।তিনি খুব আক্ষেপ করে বলেন, সেই সময় শহীদ হওয়া ছিলো তার জন্য উত্তম কেননা স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও মুক্তি যুদ্ধের কোন সুফল তিনি ভোগ করতে পারেননি।মুক্তিযোদ্ধার সরকারী সুযোগ-সুবিধা তো দুরের কথা কেউ এ পর্যন্ত মুক্তি যুদ্ধের সেই অবদানকে স্বরণ করে আমাদের স্বীকৃতি স্বরূপ সনদটুকুও দেননি এবং তেমন একটা স্বরণ করে ডাক খোজঁও কেউ করেননি।বরং তার অনেক সম্পত্তি বেদখলে চলে যায়।কেভল মাত্র মাসদাইর কবর স্থানের সামনে নিহত শহীদদের স্বরণে ২০০৩ সালে এর আনুষ্ঠানিক নির্মাণ কাজ শুরু হয় একটি স্মৃতিস্তম্ভ এবং নির্মাণ কাজ শেষও হয়।

নারায়ণগঞ্জে মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসে ১৯৭১ এ ২৯ নভেম্বর দিনটি নারায়ণগঞ্জ বাসীর জন্য বেদনা বিধুর একটি শোকাহত দিন।সেই দিন ফতুল্লা থানার দুর্গম চরাঞ্চল বুড়িগঙ্গা নদী বেষ্টিত বক্তাবলীতে হত্যাযজ্ঞ চালায় নাপাক হানাদার বাহিনী।স্বাধীনতা যুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে এক সাথে এত প্রাণের মৃত্যুর ঘটনা দ্বিতীয়টি আর নেই।স্বজন হারানো ব্যথা ও কষ্ট নিয়েও শ্রদ্ধার সাথে প্রতি বছরই পালিত হয় এই দিবসটি।

২৯ নভেম্বর সকালে মুক্তি যোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমনের মুখে নাপাক হানাদাররা পিছু হঠতে বাধ্য হয়।এ সময় তারা রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর পরামর্শে তারা ১৩৯ জন নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে ধরে এনে লাইন ধরিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে।তখন শহীদ হন নাম না জানা আরো অনেকের মধ্যে,শাহিদ,ফারুক,অহিদ,মনির,শাহ আলম,রহমত উল্লাহ,সামছুল, আলম,সালামত,খন্দকার,সুফিয়া,আম্বিয়া,খোদেজা সহ ১৩৯ জন মুক্তিকামী জনতা।পিছু হটার সময় হানাদার বাহিনী পেট্রোল ও গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিলো,বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী পাড়ের বক্তাবলী পরগনার,রাজাপুর ডিগ্রীর চর,মুক্তার কান্দি,গঙ্গা নগর,রাম নগর,গোপাল নগর,রাধা নগর সহ প্রায় ২২ টি গ্রাম।

এরপর মুক্তিযুদ্ধে স্বরণীয় নারায়ণগঞ্জের আরেকটি অঞ্চল হলো আড়াইহাজার।থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এমএ সামাদ আড়াইহাজার সদরে অবস্থিত ডাক বাংলোতে স্থাপিত নাপাক বাহিনীর ক্যাম্প দখল করে নেন।কমান্ডার আড়াইহাজার থানা এলাকাকে ২ ভাগে ভাগ করে যুদ্ধ পরিচালনা করেন।একটি পূর্ব অঞ্চল অপরটি পশ্চিম অঞ্চল। পূর্ব অঞ্চলে ছিল নদী পথ এবং পশ্চিম অঞ্চলে ছিল স্থল পথ  যেটা ঢাকা-সিলিট মহাসড়ক। স্থল পথের জন্য (পশ্চিম অঞ্চল) দায়িত্বে ছিলেন খালিকুজ্জামান মোল্লা। পূর্বে নদীপথে দায়িত্বে ছিলেন আহসান উদ্দিন মোল্লা।প্রায় চারশ মুক্তি যোদ্ধা জীবন বাজি রেখে পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চল রক্ষা করেছেন।আড়াইহাজারে পাচটি বড় ধরনের যুদ্ধের পাশা পাশি বেশ কিছু ছোট খাটো অপারেশনও হয়েছিলো।পাচটি বড় অপারেশনের মধ্যে স্থল পথে চারটি এবং নদী পথে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিলো।
নারায়ণগঞ্জের আরেক কৃতি সন্তান -{@  মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম সিরাজ।তিনি নারায়ণগঞ্জ ০৪ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।সে সময় আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো তার খুব কাছাকাছি যাবার।সে কোন স্থানে যে কোন মানুষের সাথে মিশতে,বসতে পারতেন,এ এক অমায়িক মানুষ, মানুষকে কনভেন্স করার মত মনে অপরিসীম ক্ষমতা ছিল তার।তার আমলে নারায়ণগঞ্জে অনেক উন্নয়ণ হয়েছিলো।তিনি মাসদাইর পুলিশ নাইনে সংঘটিত দেশের প্রথম নাপাকি বাহিনী প্রতিরোধে নেতৃত্বদানকারী উল্লেখ্যযোগ্য মহান নেতাদের মধ্যে তিনিও এক জন ছিলেন।
অত্যান্ত লজ্জাকর বিষয় এই কমান্ডের নামে নারায়ণগঞ্জে আজো কোন স্মৃতিময় স্মৃতি তৈরী হয়নি বরং নারায়ণগঞ্জের টানবাজারে মহীম গাঙ্গুলী সড়কটি তার নামে নাম করণে সিটি কর্পোরেসনে আবেদন করা হইলো আজো তা বাস্তবায়ণ হয়নি।তিনি মৃত্যু বরণ করেন ২০১২ সালের ২৩শে মার্চ মাসে।
চলবে.........
গত পর্বটি পড়তে ক্লিক

কৃতজ্ঞতায়:বিভিন্ন তথ্য ও ছবি
অনলাইন।সংগ্রীহিত

0 Shares

১১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ