আমি তাঁকে জানতাম বদরাগী, স্বল্পভাষী, খটমটে, ধানি মরিচ হিসেবে। কলেজে অল্পসময় পেয়েছি, যে কটা ক্লাস নিয়েছেন অসম্ভব ভালো পড়াতেন, ফাঁকি দিতেন না। হল ডিউটিতে নকল, ‘কাভি নেহি’!

অনেকবারই আমাকে ম্যাসেন্জারে নক দেন ‘ রুকু দেখা করো।’

শুধু বলি, জ্বী আচ্ছা! পেছনে বলি, ও মাই গড ছোট্ট একটা নুক্কি-পুক্কি জীবন আমার। একদিন কেউ বকা দিলে খেতে পারিনা, একমাস ঘুম হয় না। তার এত বড় সর্বোনাশ আমি করতেই পারিনা, নেভার! আমাকে কি বলবে আমি কি উত্তর দিবো। পরে সব বন্ধ হয়ে যাবে, তার চেয়ে থাক!

বিকেলের কফিটা মাত্র হাতে নিয়েছি রেজওয়ানা কবির( দিপ্তীর) ফোন।

-হ্যাঁ রে, বল?

-আরজু আপু দেখা করতে চায়। আমি হ্যাঁ বলে দিয়েছি।তুমি তারাতারী এসো কিন্তু?

আমার আর কফি খাওয়া হলো না। কালো মুখ আরও কালা ছাই!

মা গজর গজর করছে, ‘ কতোবার বলেছি খাবার সময় ফোন ধরিস না। কি যে হয় আর তিনদিন খেতে পারে না!’

রুমে গিয়ে ভাবছি, বিশ বছর আগের মানুষটা কেমন হবে। ব্লগে খটমটে, কাটকাট জবাব দেয়, দূর্দান্ত লেখে, ক্লাসেও তো রাগী ছিলো। কি বলবে, আমি কি উত্তর দিবো। যদি ভুল-ভাল হয়।

রেজোয়ানাকে ফোন দিয়ে দিলাম বকা- “ তোকে কে বলেছে তাঁর ফ্রেন্ড হতে। আর আমার কথা কেন বললি? একা যেতে পারিস না, যততোসব। আর শোন খাবার সময় দুই হাতে খাবি না। দুজনে পাশাপাশি বসবো। আমি দুইহাতে খেতে গেলে পায়ে পাড়া দিবি। কথা বেশি বলা যাবে না। আর সেই রেস্টুরেন্টের ফাটা হাসি একদমই না। ওকে!”

-আপু কিছুই হবে না। টেনশান নিও না। খালি যথা সময়ে এসো।

সন্ধ্যা প্রায় ছুঁইছুই। দিপ্তী বারবার ফোন দিচ্ছে আর আমি বসে বসে ঘামছি। পনের বছর আগে ডেটে কথা মনে পরে গেল। এতটা ভয় বোধহয় সেদিনও পাইনি! যদিও তিনিও শিক্ষক ছিলেন তবুও।

কলেজ মোড থেকে ফুল নিলাম। আমিই সবার আগে পৌছে গেছি, অপেক্ষা!!

হাসিমুখ, অতি সহজ হাটুনিতে, একেবারেই আপন ভঙ্গিতে আরজু মুক্তা ম্যাম এলেন। মুহুর্তেই ভয় উধাও। এ দেখি বাচ্চাই রয়ে গেছে। বসেই শুরু হয়ে গেল তাঁর গল্প। আমরা দুবোন দর্শক হয়ে কেবল শুনছি। আমি ভাবছি, মানুষ কতো বদলায়! সেই রাগী মানুষটা আমাদের পেয়েই কি এতো বকর বকর করছেন? নাকি সত্যি সত্যি বদলে গেছেন।

আমার কলেজ, ভার্সিটি কেটেছে অত্যন্ত অস্থির ভাবে। তখন ভাবতাম আমি কোনদিন কি শান্ত হবো? এখন আমি অনেক চুপচাপ। আর শান্ত মানুষটা কেবল বলেই যাচ্ছেন। তাঁর সোনেলা ব্লগে আসার গল্প, লেখার গল্প, কিভাবে লেখা ভালো করা যায় তার গল্প ইত্যাদি। কতোটা ভালবাসেন সোনেলাকে যে তার সোনেলার গল্প শুনেই আমাদের সময় শেষ!

দিপ্তী বললো, ‘ হলো তো এখন? তোমার ম্যাম কতো মজার, হাসিখুশি, গল্প করেন। দেখা না হলে কতকিছু মিস করতাম। অসাধারণ মানুষ।’

আর আমি প্রমিস করেছিলাম হাসবো না। দুহাতে খাবো না। বাকি কিছুই ছিলো না, সব হয়ে গেল। দিপ্তী চিরাচরিত হাত না ধুয়েই খেয়ে ফেললো।

এবার ফটোসেশনের পালা। আমি গিয়ে পেছনে বসলাম কিন্তু পোজ দিতে পারি না। আর তারা দুজন সমানে স্টাইলে পোজ দিয়েই যাচ্ছেন। টপাটপ ছবি তোলা হলো। মোটামুটি তিনজন ধারকরা ফটো গ্রাফার আমাদের দূর্দান্ত মূহুর্তের সব ছবি তুলে দিলেন।

কখন যে নয়টা পার হয়ে গেলো আমাদের ‘সোনেলার সোনালী গল্পে-আড্ডায়’ খেয়ালই নেই। সোনেলার প্রথম স্বপ্ন লিখতে গিয়ে আমরা প্রায় সবাই একসাথে হবার, আড্ডা দেবার স্বপ্ন দেখতাম। আজ তিনজন একসাথে হয়েই যে অবস্থা, বাকিরা একসাথে হলে দুনিয়া উজার হবার সম্ভাবনা খুউব বেশি।

ফেসবুক কোনকালেই আমার মজা লাগতো না। এখন লাগে, সময় পেলে সারাক্ষনই লাইনে থাকি। বিভিন্ন পোষ্ট আর কমেন্টে এতো মজা হয়। হবেই বা না কেন? আমরা কেউ কাউকে দেখিনি অথচ হরিহর আত্না। কি টান! অন্য কারণও আছে। সোনেলার মানুষগুলো সব বোধহয় একই টাইপের। যেমন- কালকের জিসান দাদার প্রজাপতি দেখে নায়ক নায়িকার বাসর পোষ্টে অর্ধেক রাত হেসেছি। মাঝে মাঝে আমার হাসিতে আশেপাশের মানুষ চমকে ওঠে! ভাবে, পাগল ফোনে এত কি পায়! কিভাবে সহজ করে আমরা সব বলতে পারি, মেনেও নেই, হেসে হেসে কুটিকুটি হই!

আমাদের আড্ডা নিয়ে আরজু ম্যাম পোষ্ট দেবার পর থেকে অসংখ্য ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট, ম্যাসেজ আসা শুরু হলো। মানে আমার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেডে গিয়েছে। কজনকে একসেপ্টও করলাম। প্রায় অর্ধেক রাত পর্যন্ত একজনের আকুতি ছিলো-‘ Tumi Amr bodu hoba.’ কি আকুতি! আরজু ম্যাম তো হ্যাঁ বলে দিয়েছেন। আর আমি বেচারাকে না পারছি ফেলতে, না পারছি নিতে। কিছুক্ষণ আগেও লিখেছে, ‘কই কিছু তো বললে না।’ আহারে!

আরজু ম্যামকে গেটে নামিয়ে দেবার পর খুব খারাপ লেগেছিলো। অনুভূতি ছিলো, ‘আরো কিছুক্ষণ না হয় রহিতে পাশে’!

করোনা যাক, আমরা সবাই জাঁকজমক ডেটের প্রস্তুতি নেই। কারন সাহিত্যপ্রেমী মানুষদের আসর হলো পৃথিবীর সর্বোচ্চ জমজমাট আসর। এমন একটি ডেটের প্রত্যাশা রইলো। শুভ রাত্রি!!!!

(কিছুসময়ের জন্য সোনেলা ব্লগ যেন কুড়িগ্রাম এ চলে এসেছিলো। আরজু ম্যাম ফেসবুকে পোষ্ট দেবার পর আমাদের এক তরুন, নবীন ব্লগার ‘স্বপ্নীল মেঘ’ আফসোস করেছিলো সে কেনো নেই? মেঘের জন্য আরও একবার আমরা কুড়িগ্রাম এ আসর বসাবো(ইনশাআল্লাহ।)

ছবি- আমার

৭৮১জন ৫৩৩জন
0 Shares

২৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ