খৃষ্টপূর্ব ৩২৯৮ সনে আমার বসবাস ছিল তাম্র যুগের ঘাজ্ঞার হারকা নদীর তীরবর্তী এক গ্রামে। বর্ষাকালীন এই নদীটি প্রবাহিত হত দুকূলের ফসলী জমিকে উর্বরতা দিয়ে। পেশায় আমি জেলে হলেও, বর্ষাকালে ফসল ফলাতাম মালিকহীন জমিতে। তখন অবশ্য জমির মালিকানা ধরনের কিছু ছিলনা। যার যতটুকু জমি প্রয়োজন সে তাতে চাষাবাদ করত। বাবা মা মারা যাবার পরে একাই ছিলাম ২৪ বছরের আমি। কালো কুচকুচে তৈলাক্ত শরীরে রোদ বৃষ্টি মাঝে একটানা বিরামহীন ভাবেই কাজ করতাম। ভালই ছিলাম আমি আর আমার এক পাখি নিয়ে। বনের মাঝে কাঠ কুড়াতে গিয়ে পাখিটি পাই আমি, ডানা ভাঙ্গা অবস্থায়। উড়তে পারছিল না। কাঠের পিলার দেয়া উচু ঘরে নিয়ে এসে তাকে কয়েকদিনের মধ্যেই সুস্থ্য করে ফেলি। সেই যে থেকে গেলো সে, আর যাবার নাম নেই। যেখানেই যাই পিছে পিছে উড়ে চলে, কখনোবা মাথায়, ঘাড়ের উপর বসে থাকে। তাকে বলি ‘এত হাঁটাহাটি করি, আমার কষ্ট দেখেও তুই আমার মাথায় বসে থাক, আমাকে তোর ডানায় নিয়ে উড়ে যেতে পারোনা? ‘পাখি ডাক দিয়ে ওঠে………… বুঝে যাই আমি সে বলে ‘একদিন ঠিকই তোমাকে আমার ডানায় নিয়ে উড়বো।’
সেদিন ছিল অমাবস্যার রাত। কোথা থেকে এক লাল চোখের কালো বিড়াল এসে উপস্থিত আমার ডেরায়। তাকে দেখেই আমার পাখি ভয় পাওয়া শব্দে ডাকাডাকি……… বলছে তাড়িয়ে দাও, তাড়িয়ে দাও একে।’ আমি পাখির কথাকে উপেক্ষা করে অমঙ্গলের প্রেতাত্মা কালো বিড়ালকে খাবার দেই, রাতে থাকতে দেই। ঘুমের মধ্যে হঠাৎ পাখির চেচামেচিতে জেগে উঠি। দেখি বিড়ালটা পাখির ঘাড় মটকে দিয়ে জানালা গলিয়ে চলে যায়। তীব্র যন্ত্রনায় বিদ্ধ পাখি একসময় মৃত্যু বরণ করে। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পূর্বে আমি পাখির চোখে আমার প্রতি ঘৃণা দেখি। সে চোখ বলছে ‘তুমি আমার হত্যাকারী, তোমাকে বারন করেছিলাম প্রেতাত্মা কে বাড়িতে আশ্রয় দিও না।
পাখি চলে যাবার দুই বছরের মধ্যেই আমি বিষধর ঘোরঘোর কামড়ে মৃত্যু বরণ করি।
********************************************************************************************
খৃষ্টপূর্ব ৩২৫০ সনে আমি আমি ছিলাম এক গণকের সন্তান। আবার বাবা বিভিন্ন মানুষের হাত এবং মুখ দেখে ভবিষ্যত বলে দিতেন। আমার বেলায় তার ভবিষ্যৎ বাণী ছিল এমন…… আমি ২০ বছর বয়সের সময় কোন এক নারী আততায়ীর হাতে খুন হব। সে আমার মাথা গলা থেকে আলাদা করে ফেলবে।’ এসব ভবিষ্যৎ বানী আমি বিশ্বাস করতাম না। তারপরেও আমার উনিশ বছরের সময় আমাকে একটি কক্ষে রেখে দেয়া হল। আমি সমস্তদিন ঐ কক্ষে থাকি। কিছুদিন যেতে না যেতেই খুব জ্বর হল আমার। লতাপাতা দিয়ে তৈরী সিরাপ আমাকে খেতে দেয়া হত। আমাকে দেখা শোনার জন্য দূর বর্তি এক অঞ্চল থেকে এক বৃদ্ধ নারীকে আনা হল। উনি প্রায় সারাক্ষণই আমার সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। একটি সময়ে আমার জ্বর কমে গেলোও আমার কথা বন্ধ হয়ে গেল এবং শরীর দুর্বল হয়ে চলাফেরায় অনুপযোগী হয়ে গেলাম। আমাকে সেবা করা নারীর মাঝে আমি মায়ের স্নেহ পেতাম। বাথরুম করা সহ খাইয়ে দেয়া, গোছল করিয়ে দেয়া উনি মাতৃ স্নেহে ই করতেন। আমি যে ওনার আপন ছেলে কেন হলাম না, এ নিয়ে উনি আক্ষেপও করতেন।
এক গভীর রাতে আমার মাতৃসম নারী হঠাৎ এসে আমাকে পাঁজা কোলা করে বাড়ির বাইরে নিয়ে নিয়ে অনেক দূর হেটে এলেন। তার মুখ অত্যন্ত ক্রুদ্ধ আর হিংস্র দেখাচ্ছিল। আমি ভীত হয়ে গেলাম তার এমন আচরণে। অবশেষে এক বনের মাঝে এনে আমাকে শুইয়ে দিয়ে কোমড় হতে একটি ছোট ছুরি বের করে আমার শরীর থেকে গলা আলাদা করে দিলেন। কিছুক্ষনের মধ্যেই আমি মরে গেলাম। মৃত্যুর পরে চোখ নাকি দেখতে পায় কিছুক্ষণ, এটি ঐ নারী জানতেন। আমার খণ্ডিত মাথার চুল ধরে উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন ‘ আমি তোর সেই পাখি, যাকে তুই প্রেতাত্মা দিয়ে মেরেছিস। কত অনুনয় বিনয় করেছি প্রেতাত্মা কে আশ্রয় দিস না ঘরে। তুই আমার খুনি। ‘
আমাকে কবর দেয়া হয় আমাদের বাড়ির উঠোনের মাঝে। এই বৃদ্ধ নারী প্রতিদিন ভোরে সবাই ঘুম থেকে জাগার আগেই আমার কবরের পাথার কাছে একগুচ্ছ সাদা ফুল দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো অনেকক্ষণ, চোখ থেকে নির্গত হত জল, যা তার গাল বেয়ে পড়তো আমার কবরের উপর।
**********************************************************************************************
***********************************************************************************************
২০১৩ খৃষ্টাব্দ এর ৩১ মে আমি জিসান হয়ে তার বন্ধু হই। পাখি হয়ে এসেছিল আমার প্রথম জনমে। এই জনমে তিনি একজন পাখি প্রেমিক। হাজার হাজার পাখির ফটো আছে তার। পাখি তার কোলে এসে বসে খাবার খায়। সে কেমন মানুষ তা আমি সহ আপনারা সবাইই জানেন। তার বন্ধু হয়ে এক জনম পার করে দেয়া যায় হাসি আনন্দে। শান্ত, উচ্ছল, আন্তরিক, জোছনার মত একজন মানুষ তিনি। এক হিংসুটে স্বার্থপরের মত তাকে লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে, তার বন্ধুত্ব কেবল আমিই নেব, অন্য কাউকে এর ভাগ দেব না এই ভাবনায়।
আজ তার জন্মদিন।
শুভ জন্মদিন শুন্য শুন্যালয়।
জগতের সমস্ত অকল্যাণ দূর হয়ে যাক তার কাছ হতে। সমস্ত কল্যাণের মাঝে থাকুক সে। সুন্দরেরা ঘুরে বেড়াক তার চতুর্দিকে।
২৪টি মন্তব্য
ইঞ্জা
অনন্য এক লেখা পড়লাম আজ, সাথে পাখি আপুর জম্মদিন, কি বলে শুভেচ্ছা জানাই এই প্রিয় বোনকে, আসলে আপু, আপনারা না থাকলে হয়ত এই ব্লগ আমার ভালো লাগতোনা, যখন শুনলাম আপনাকে সোনেলার এডমিন করা হয়েছে, সেদিন খুব খুশি হয়েছিলাম।
শুভ জম্মদিন @শুন্য শুন্যালয় আপু, ভাইয়ের ভালোবাসা ও দোয়া জানবেন। -{@ -{@
জিসান শা ইকরাম
আপনার পাখি আপু এই ব্লগের এডমিন নাকি! বলেন কি!
তাইলে তো দুইটা খাওয়া পাওনা আপনার পাখি আপুর কাছে। একটা জন্মদিনের অন্যটা এডমিন হবার।
আজ থেকেই উপোস করা আরম্ভ করলাম, কবে খাওয়াবেন? পেট খালি রাখতে হবে তো 🙂
ইঞ্জা
পাখি আপু দেশে আসলেই আমার বাসায় দাওয়াত রেডি থাকবে ভাইজান। 😀
জিসান শা ইকরাম
আচ্ছা দাওয়াত দিতে ভুল কইর্যেননা আবার।
ইঞ্জা
ভাইজান, ভাবিদের নিয়ে একদিন চলে আসুন, খুব খুশি হবো।
শুন্য শুন্যালয়
ইঞ্জা ভাইয়া, দাওয়াতের সাথে আসা যাওয়ার টিকেট দিলে এক্ষুনি রওনা দিমু 😀
অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ভাইয়া। এডমিন কী জিনিস? ;?
ইঞ্জা
টিকেট একটা বিষয় হলো নাকি, আমার বোনের জন্য সব কিছুই করতে পারি, চলে আসুন। 😀
মিষ্টি জিন
খুব সুন্দর গল্পের মাধ্যমে আপনার আর শূন্যর বন্ধুত্বের কথা বুঝিয়ে দিলেন। এর আগেও এক পোষ্টে শারমিন (শূন্য)আর আপনার বন্ধুত্বের গভীরতার কথা ,আস্হার কথা বলেছেন। তবে এবারের একান্তঅনুভূতির গল্প আগের সব ছাডিয়ে গিয়েছে। আগের জন্মের মানে আপনার কল্পনার বন্ধুকে এই জন্মে পেয়েছেন । অত্যান্ত ভাগ্যবান আপনি। তার বন্ধুত্ব আপনি লুকিয়ে রাখুন একান্ত করে কাউকে ভাগ দেয়ার দরকার নাই।আপনাদের জন্ম জন্মান্তরের বন্ধুত্ব অটুট থাক।
শুভ জন্মদিন শূন্য। ভাল থাক সুস্হ থাক আনন্দে থাক ।
শুভ কামনা দুজনের জন্য।
জিসান শা ইকরাম
লেখার প্রায় প্রতিটি অংশ সোনেলায় পূর্বে প্রকাশিত হয়েছে। জোরা দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা পোস্টে আনলাম।
জন্মান্তর হলে ভালই হতো, তাকে সব জনমেই বন্ধু হিসেবে চাইতাম আমি। বন্ধু হিসেবে অনন্যা সে।
শুভেচ্ছা আপনাকেও।
শুন্য শুন্যালয়
বন্ধুত্ব ভাগাভাগি না হইলে চলে? কএকজন মিলে গোল হয়ে ঘাসের উপর শুয়ে সার্কেল তৈরি করা, বন্ধুত্ব শুনলেই এমনটা চোখে ভাসে।
আপু জিসান ভাইরে আগের জন্মের ভূতে পাইছে ম্যালাদিন ধইরা। আমিতো কিছুই মনে করতে পারিনা, সকালের কথা দুপুরে ভুইল্যা যাই, এই মানুষটা এত্তোদিন ধইরা ক্যাম্নে সব মনে রাখছে কে জানে!! 🙂
তোমাকেও অনেক শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা আপু। -{@
মোঃ মজিবর রহমান
শুভজন্মদিন শুন্যয়াপু।
পরে মন্তব্য দিব। এখন শুধুই শুভেচ্ছা। রইল।
জিসান শা ইকরাম
আপনার জন্যও শুভেচ্ছা ভাই।
শুন্য শুন্যালয়
আপনাকেও অনেক শুভেচ্ছা মজিবর ভাইয়া। -{@
আগুন রঙের শিমুল
শুভ জন্মদিন শুন্য শুন্যালয়
জিসান শা ইকরাম
জন্মদিনের শুভেচ্ছা তাকে।
শুভেচ্ছা আপনাকেও।
শুন্য শুন্যালয়
থ্যাংকস শিমুল ভাইয়া।
ছাইরাছ হেলাল
আচ্ছা কাহিনী তাহলে এই।
অবশ্যই তাঁকে এদিনে আমাদের সোনেলার পক্ষ থেকে অনেক অনেক জন্ম-শুভেচ্ছা।
জিসান শা ইকরাম
জন্মান্তর সত্যি হলে ভালই হত,
আমি আমার বর্তমানের সব বন্ধুদের সব জন্মেই চাই।
শুন্য শুন্যালয়
কাহিনী তো ম্যালাগুলা পড়লাম, এইটাই মনেহয় কাহিনী।
আপনাকে ও সোনেলাকে অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা দিতেও এত্তো কিপ্টামি ঠিক না কিন্তু। 🙂
ছাইরাছ হেলাল
উহ্!! কিপ্টেমি আপনার সাথে হতেই পারে না।
আবার পড়ুন, উড়া-ধুড়া না হয়ে।
সঞ্জয় কুমার
অসাধারণ মামা !!!! বন্ধুত্ব অমর হোক ।
সত্যিই যদি পূর্ণজন্ম থাকত !!!
প্রতি জন্মে আবার ফিরে পাওয়া যেত বন্ধুদের
শুন্য শুন্যালয়
জিসান ভাইয়ের গল্প পড়েতো মনে হচ্ছে সত্যি সত্যিই পূনর্জন্ম আছে 😀
ধন্যবাদ সঞ্জয় দা।
শুন্য শুন্যালয়
পাঁকা লিখিয়ে এমন অসাধারন করেই বুঝি গল্প লেখে!! রাশিয়ান টাচ, সাইকো, ফিউশন, ফ্যান্টাসি সব ধরনের গল্পই তো দেখছি ভালো লিখছেন, কাহিনী কী?
বন্ধুত্ব পাওয়ার চাইতে তাকে রক্ষা করা কঠিন, মহান ব্যক্তিবর্গ অনেক আগেই ইহা বলিয়া গেছেন। আমি সৌভাগ্যবান আপনাকে বন্ধু পেয়ে, সেটা জনম জনম না হলেও, এক জীবনের শেষটা পর্যন্ত ধরে রাখতে চাই।
এমন পোস্ট দিয়ে আমাকে লজ্জা দেয়া ঠিক না। পাওনার চাইতেও বেশি প্রাপ্তি আপনার এ লেখা। টাচড্।
ভালো থাকুন জন্মান্তরের বন্ধু 🙂 -{@
মোঃ মজিবর রহমান
আপনার সুন্দর উপস্থাপনা আপনাকে অমর করেই রাখবে। এত সুন্দর লেখেন । আপনাদের সকল লেখায় মুগ্ধ না হয়ে পারিনা। শুরু হতে শেষ পর্যন্ত টান টান লেখা হৃদয় ছুয়ে যায়।
আমার কেন আবেগ গাঢ় হয় না বুঝিনা। আল্লাহ আমাকে অনেক দিয়েছে বুঝার অন্তরঙ্গটুকু দেয় নাই আপসোস লাগে। আমি কেনো প্রকৃতি থেকে ভাবতে পারিনা। কেনো অন্যদের মত আকর্ষণীয় কথা বলে মন ভুলাতে পারিনা। কেন অন্তরের অন্তস্থল থেকে উপলধ্বী লরতে পারিনা। নিজেকে মাঝে মাঝে খুব ছোট লাগে। মাঝে মাঝে ঝিনুকের মত নিজেকে গুছিয়ে রাখি আবার তাও পারিনা। ভাবতে পারিনা।
যাক সুন্দর লেখার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। ভাল থগাকুন।