একজন কবি তার বিখ্যাত কবিতাটা লেখার পূর্বে ছন্দগুলিকে মনে মনে সাজাতে থাকে, তারপর সেই ছন্দ কবির আঙ্গুল ছুঁয়ে কলমের কালি রূপে কাগজের পাতায় স্থান নেয়। ঠিক এই একই ব্যাপার ঘটে গল্পকারের বেলাতে। সেও তার গল্পটাকে প্রথমে মনের মধ্যে গুছিয়ে নেয়, আর তারপর সেটাকে শব্দের গাঁথুনিতে ধীরে ধীরে ঘটনার রূপে আমাদের সামনে নিয়ে আসে। এই একই সূত্র সুরকার, গায়ক, নৃত্যশিল্পী, চিত্রশিল্পীর ব্যাপারেও ঘটে।
চিত্রশিল্পী হাজার হাজার দৃশ্য থেকে মনের ক্যানভাসে প্রথমে তার চিত্রটার লাইনগুলিকে ফুটিয়ে তোলে। তারপর ধীরে ধীরে রঙ গুলিকে সেই চিত্রটাতে ছড়িয়ে দিয়ে মৌলিক অংশটাকে পূর্ণ করে। তারপর সত্যি সত্যি হাতে তুলে নেয় রঙ-তুলি। ক্যানভাসে দ্রুত হাতে একটা রঙের পর আরেকটা রঙ ফেলে ফেলে মনের সেই চিত্রটার মত করে রূপদানে লেগে পড়ে। সৃষ্টি করে তার অসামান্য শিল্পকর্ম। মানুষ মুগ্ধ নয়নে সেই সৃষ্টিকর্মকে উপভোগ করতে থাকে। মুখে মুখে তার প্রশংসার স্থান নেয়। মাঝে মাঝে সময়ের শ্রেষ্ঠ চিত্র হিসেবে খেতাব পেয়ে যায়। তাতেও সেই শিল্পটির সঠিক মূল্যায়ন না হলে সময় একে এতটাই মূল্যবান করে দেয় যে শত সহস্র বছর পার করলেও সেই চিত্রটি অন্য সবার থেকে আলাদা ভাবে মূল্যায়িত হয় সকলের কাছে।
কিন্তু একবারও কি কেউ ভেবে দেখেছেন?
যে চিত্রটি শিল্পী এত সময় নিয়ে, এত শ্রম দিয়ে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলল, সেটা তার মনের ক্যানভাসে থাকা চিত্রটার অবিকল রূপ পেয়েছে কি না? যে রঙ আর যেই অভিব্যক্তিটি শিল্পী মনে নিয়ে আঁকতে শুরু করেছিল তা পরি-পূর্ণরূপে কাগজের ঐ ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে কিনা?
হয়তো কেউ কেউ সত্যি সত্যি মনের ক্যানভাসের অবিকল রূপটা কাগজের ক্যানভাসে তুলতে পারেন। কিন্তু যেই শিল্পকর্মটিতে তার ১ শতাংশ পরিমাণ অমিল থেকে যায়! সেই ১শতাংশ পরিমাণ পূর্ণতা পেলে এই অমূল্য শিল্পটা আরও কত বেশি পরিমাণে আকর্ষণীয় হতো সে হিসেব কি কেউ কখনো লাগাতে পারবেন? কেউ কি পারবেন ঐ ১ শতাংশ ঘাটতির প্রশংসা করতে কোনদিন??
সত্যিই পারে কি কেউ মনের গহীনে সৃষ্ট সুর, ছন্দ, শব্দ আর রঙ গুলিকে শতভাগ বাস্তবে রূপ দিতে ?
সব শেষেও সেই বিখ্যাত শিল্পকর্মটার সৃষ্টির পরে কোন শিল্পীর কখনোই কি কোন আক্ষেপ থেকে যায় না ??
২১টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
শতভাগ বাস্তবে রূপ দেয়া আসলেই সম্ভব বলে মনে হয়না। আপনার ভাবনাগুলো হিজিবিজি হলেও ভাবতে শেখায়। আক্ষেপ থেকেই যায় হয়তো। ১% এর গুরুত্ব কতোখানি তা শুধু হিজিবিজি মানুষগুলো বেশি বুঝতে পারে। তবে এমনও হতে পারে, কোন কোন সৃস্টি তার কল্পনার সৌন্দর্যকেও ছাড়িয়ে যায়।
অলিভার
হতেই পারে আপু, নিশ্চিত করে কোনটাই বলা সম্ভব না। আমি শুধুমাত্র একটা সম্ভাবনার কথা বলেছি। কেন জানি আমার কাছে মনে হয় শিল্পীর বিখ্যাত শিল্পকর্ম তৈরির শেষেও মনে কিছুটা আক্ষেপ থাকে তাদের ঐ ১ শতাংশের জন্যে।
ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার জন্যে 🙂
শুন্য শুন্যালয়
আপনার ১% এর কথা শুনে একটা অপ্রাসংগিক কথা মনে পরে গেলো। এস,এস,সি পরীক্ষার রেজাল্ট দেবে কাল। সবাই বলছে দেবে, ঘোষণাও হয়েছে। আমি বললাম কেনো জানি মনে হচ্ছে কাল দেবেনা। আমার এক বন্ধু বললো ৯৯% সম্ভাবনা, দেবেই। বললাম, ঠিক আছে দেখি আমার ১% জয়ী হয় কিনা। ১% জিতে গিয়েছিল।
অলিভার
হা হা হা হা
সত্যিই মাঝে মাঝে ঐ ১ শতাংশ জিতে যায় কোন না কোন ভাবে। বিশ্বাস জিনিষটা তখন আরও দৃঢ় হয়।
মামুন
সত্যিই পারে কি কেউ মনের গহীনে সৃষ্ট সুর, ছন্দ, শব্দ আর রঙ গুলিকে শতভাগ বাস্তবে রূপ দিতে ?
সব শেষেও সেই বিখ্যাত শিল্পকর্মটার সৃষ্টির পরে কোন শিল্পীর কখনোই কি কোন আক্ষেপ থেকে যায় না ?? – খুবই জটিল প্রশ্ন অলিভার ভাই।
তবে প্রথমটির ক্ষেত্রে শতভাগ বাসতবতায় রূপ মনে হয় দেয়া যায় না।
আর শিল্পীর সৃষ্টিশীলতা যতই রূপ পাক না কেন, তার হৃদয়ে কিছু আক্ষেপ থেকেই যায়।
সুন্দর লিখাটিতে ভালোলাগা রেখে সাথেই রইলাম।
শুভসকাল। -{@
অলিভার
প্রথমত দেরি করেই স্বাগতম জানাতে হচ্ছে সোনেলা ব্লগে আসার জন্যে মামুন ভাই। ভালো লাগলো পরিচিত সবাইকে একটা ছাদের নিচে দেখতে পেয়ে 🙂
হিজিবিজি ভাবে মাঝেমধ্যে কিছু চিন্তা চলে আসে। এইটাও সেইরকম একটা চিন্তার বহিঃপ্রকাশ।
সময় নিয়ে লেখাটা পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ। শুভ কামনা জানবেন ভাইয়া -{@
রিমি রুম্মান
এমন করে তো ভাবিনি কখনো ! ভালোলাগা রইলো ।
অলিভার
ধন্যবাদ আপু সময় নিয়ে পড়ার জন্যে 🙂
শুভ কামনা জানবেন
মোঃ মজিবর রহমান
সুন্দর বলেছেন অলিভার ভাই,
সব ভাবনায় যদি কাগজে কলমে রুপ দেয়া জেত তাহলে আর স্বারথক হত হইত সাহিত্যিকের কর্ম।
ধন্যবাদ আপনাকে, ভাবনাই আনার জন্য।
অলিভার
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, সময় নিয়ে লেখাটা পড়ার জন্যে 🙂
শুভ কামনা জানবেন -{@
মরুভূমির জলদস্যু
আমার বাসায় একটা ছবি আছে, সেটার দিকে তাকিয়ে আমি মাঝে মাঝে ভাবি, ছবিটা আকার সময় আঁকিয়ের মনে কি চিন্তা ছিলো?
অলিভার
বাসায় থাকা কোন ছবি থেকে না আসলেও অনলাইনে দেখা একটি ছবি দেখেই এই চিন্তাটা মাথায় এসেছিল ভাইয়া। চিত্রকর্মটি সত্যিই অসাধারণ ছিল। কিন্তু যেই চিত্র শিল্পী মনে ভেবে নিয়ে তারপর ক্যানভাসে ফুটিয়েছেন সেটা কি আদৌ মনে থাকা ঐ শিল্পকর্মের কাছাকাছি যেতে পেরেছিল? এটা নিয়েই ভাবনাটা মনে চলে এসেছিল।
ধন্যবাদ সময় নিয়ে লেখাটা পড়ার জন্যে 🙂
শিশির কনা
শিল্পী নিজে ব্যাতীত অন্য কেউ বলতে পারবেন না এটিতে কোন অপুর্নতা আছে কিনা।
অলিভার
এটা ঠিক বলেছেন, একমাত্র শিল্পী নিজে ব্যতীত এই ব্যাপারটা নিয়ে কখনোই কেউ বলতে পারবে না। আবার মাঝে মাঝে হয়তো এমনও হতে পারে যে শিল্পী নিজেও সেই অপূর্ণতার ক্ষোভ বুঝতে পারেন না। কারণ যেটা ভেবে শুরু করেছিলেন শেষটা হয়তো তার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপ হয়েছে। তাই সরাসরি তুলনা করে আক্ষেপ বা অপূর্ণতা বুঝে উঠা সম্ভব হবে না।
ধন্যবাদ সময় নিয়ে লেখাটা পড়ার জন্যে 🙂
হৃদয়ের স্পন্দন
চিন্তা করি ফ্রান্স অথবা জাপান ঘুম ভাংলেই দেখি হিন্দুস্থান মনের কথা বলেছেন
হৃদয়ের স্পন্দন
আক্ষেপ হয়তো থেকে যায়, আক্ষেপ না থাকার কোনো কারণ নাই, তবে আমি একটু ব্যাতিক্রম। কখনোই চিন্তা ভাবনা করে কোনো কিছু লেখা হয়নি, লেখা গুলো সাজানো হয়নি মনের মানসপটে, এ জন্য হয়তো আমার কিছু একটা ভালো করা হলোনা
খেয়ালী মেয়ে
মনের ক্যানভাসে সবকিছু যত সহজে সাজিয়ে নেওয়া যায়, বাস্তবে সেটা তত সহজে পারা যায় না..
সঞ্জয় কুমার
মানস পটের কল্পনা । কাগজে সম্পূর্ণ ফুটিয়ে তোলা যথেষ্ট সৃষ্টিশীল এবং সৃজনশীলতার ব্যাপার । অথচ একজন শিল্পী নিখুঁত ভাবে সেই কাজটাই করার চেষ্টা করেন । একটু খুঁত সব কিছুতেই আছে । চাঁদেও কলঙ্ক আছে । ।
সাইদ মিলটন
শতভাগ কখনোই হয়না, এই অপূর্ণতা এই আক্ষেপই সৃষ্টিশীল মানুষদের বাচায়া রাখে
জিসান শা ইকরাম
অপ্রকাশিত অংশের প্রশংসা কখনোই কেউ করবেনা।
কারন সেটি তো আমরা দেখিনা।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
শত ভাগ কেউ পারেনি কেননা ভিন্ন জনের ভিন্ন মত।