Black fungus সম্পর্কে জানুন

তৌহিদুল ইসলাম ২৫ মে ২০২১, মঙ্গলবার, ১০:২৯:৫৪অপরাহ্ন সমসাময়িক ২৫ মন্তব্য

সম্প্রতি আমাদের দেশেও ব্লাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়েছে এবং ধারনা করা হচ্ছে এখুনি সচেতন না হলে এই রোগে সংক্রামণ বেড়ে যেতে পারে। যেকোন রোগের উপসর্গ দেখা দিলে দায়িত্ববান মানুষ হিসেবে আমাদের উচিত সে সম্পর্কে জানা এবং জনসাধারণকে সচেতন করা। আশাকরি লেখাটি পড়লে ব্লাক ফাঙ্গাস সম্পর্কে আপনাদের কিছুটা ধারণা হবে।

👉 'ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’! কেন এই রোগ হচ্ছে?

বিরল এই ছত্রাকের সংক্রমণ খুবই মারাত্মক যা নাক, চোখ এবং কখনও কখনও মস্তিষ্কেও আক্রমণ করে। কোভিড ভাইরাসের হানায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলেছে ফুসফুস, মস্তিষ্কও। এরই মধ্যে শরীরে ঢুকে পড়ছে এক ধরনের ছত্রাক। সম্প্রতি দিল্লির একটি হাসপাতালে কিছু করোনা রোগীর মধ্যে মারাত্মক ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ছত্রাকের সংক্রমণের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। চিকিৎসকরা দাবি করেছেন যে, রোগীদের করোনার কারণে এই সংক্রমণ ঘটছে।

👉 কী এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস?

বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় যার নাম- ‘মিউকোরমাইকোসিস’ (mucormycosis)। চলতি ভাষায় এটি ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ (Black fungus) নামে পরিচিত। বিরল এই ছত্রাকের সংক্রমণ খুবই মারাত্মক যা নাক, চোখ এবং কখনও কখনও মস্তিষ্কেও আক্রমণ করে। এই ছত্রাক ইনফেকশন থেকে অন্ধত্ব, জটিল অসুখ এবং মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

👉 কী কী উপসর্গ থাকলে বোঝা যাবে?

গুরুতর লক্ষণগুলি হল- বন্ধ নাক, জল পড়া নাক দিয়ে, গালে হাড়ে ব্যথা, মুখে ফোলাভাব, শুকনো কাশি, দাঁতে ব্যথা, ফুসকুড়ি, চোখে ঝাপসা দেখা, বুকে ব্যাথা। মৃদু লক্ষণ চোখ এবং নাকের চারপাশে ব্যথা এবং লালভাব, জ্বর, মাথা ব্যথা, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বমি।

👉 মিউকোরমাইকোসিস কী ধরনের সংক্রমণ?

মিউকোরমাইকোসিস খুবই বিরল একটা সংক্রমণ। মিউকোর নামে একটি ছত্রাকের সংস্পর্শে এলে এই সংক্রমণ হয়। সাধারণত এই ছত্রাক পাওয়া যায় মাটি, গাছপালা, সার এবং পচন ধরা ফল ও সবজিতে। এটা মাটি এবং বাতাসে এমনিতেই থাকে। এই ছত্রাক সাইনাস, মস্তিষ্ক এবং ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। ডায়াবেটিস, ক্যান্সার বা এইচআইভি/এইডস যাদের আছে, কিংবা কোন রোগের কারণে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম এই মিউকোর থেকে তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তবে চিকিৎসকদের কথায় মিউকোরমাইকোসিস থেকে মৃত্যুর আশংকা ৫০%। তাদের ধারণা স্টেরয়েডের ব্যবহার থেকে এই সংক্রমণ শুরু হতে পারে।

👉 কোভিডের ক্ষেত্রে রোগীদের কেন এই রোগ হচ্ছে?

কোভিড-১৯ গুরুতরভাবে আক্রান্তদের চিকিৎসায় তাদের জীবন বাঁচাতে এখন স্টেরয়েড দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে স্টেরয়েড ওষুধ দিতেই হচ্ছে। স্টেরয়েডের ব্যবহার স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়। ফলে সেক্ষেত্রে এই রোগ চলে আসছে অজান্তেই।

👉 কাদের এই ছত্রাক ইনফেকশনের ঝুঁকি বেশি?

যাঁদের করোনা চিকিৎসায় স্টেরয়েড দেওয়া হচ্ছে তাদের মধ্যে এই ইনফেকশনের সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবিটিস যাদের তাঁদেরও সচেতন থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। বহুদিন ধরে যাঁরা আইসিইউ-তে থেকেছেন বা কো-মর্বিডিটি রয়েছে তাঁদের এই ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

👉 এই ছত্রাকে আক্রান্ত হলে কী কী করবেন?

➡ ধুলোবালি রয়েছে এমন জায়গায় গেলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন।

➡ চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিফাংগাল বা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ শুরু করা।

➡ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

➡ সঠিক পরিমাণে স্টেরয়েডের ব্যবহার
উপসর্গ দেখলেই সাবধান হতে হবে।

➡ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

👉 কখন সতর্ক হবেন:

১. সাইনাসাইটিস – নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া বা নাকে সর্দি জমা, নাক দিয়ে সর্দি বের হওয়া (কালচে/রক্তসহ), চোয়ালের হাড়ে ব্যথা।

২. মুখের এক দিকে ব্যথা, অসাড় হয়ে আসা বা জ্বালা করা।

৩. নাকের আগায় বা চার পাশে কালচে হয়ে গিয়ে ত্বকের রং বদলে যাওয়া।

৪. দাঁতে ব্যথা, দাঁত আলগা হয়ে আসা, চোয়াল আটকে যাওয়া।

৫. চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া বা দু’টো করে দেখা ও চোখে ব্যথা, জ্বর, ত্বকে জ্বালা, থ্রম্বোসিস ও নেক্রোসিস।

৬. বুকে ব্যথা, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা বাড়তে থাকা।

👉 কী করতে হবে:

১. হাইপারগ্লাইসেমিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

২.কোভিডের চিকিৎসার পর ছাড়া পেয়ে ও ডায়াবেটিসে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দেখে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

৩. সঠিক ভাবে স্টেরয়েড ব্যবহার করতে হবে – সঠিক সময়, সঠিক ডোজ ও কোর্স পূর্ণ করতে হবে।

৪. অক্সিজেন থেরাপির সময় পরিস্কার ও ফোটানো জল ব্যবহার করা।

৫. সঠিক ভাবে জেনে ছত্রাক সংক্রমণ প্রতিরোধকারী/অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেতে হবে।

👉 কী করবেন না:

১. এই সংক্রমণের উপসর্গ অবহেলা করবেন না।

২. নাক বন্ধ হওয়ার ঘটনাকে ব্যাকটেরিয়াজনিত সাইনোসাইটিস বলে অবহেলা করবেন না, বিশেষত যেখানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।

৩. ছত্রাক সংক্রমণ হচ্ছে কি না, জানতে বিশদে পরীক্ষা করাতে দ্বিধা করবেন না (কেওএইচ স্টেইনিং ও মাইক্রোস্কোপি, কালচার, এমএএলডিআইটিওএফ)।

৪. মিউকরমাইকোসিসের চিকিৎসা শুরু করার ক্ষেত্রে একটুও সময় নষ্ট করবেন না।

👉 কীভাবে সামলাবেন:

১. ডায়াবেটিস ও ডায়াবেটিক কেটোঅ্যাসিডোসিস নিয়ন্ত্রণ করুন।

২. স্টেরয়েডের ব্যবহার কমান।

৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে এমন ওষুধ বন্ধ করুন।

৪. নেক্রোটিক উপাদান বাদ দেওয়ার জন্য অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হলে তা অবশ্যই করান।

৫. কোনও রকম অ্যান্টি-ফাংগাল প্রফিল্যাক্সিস নয়।

👉 চিকিৎসার উপায়?

➡ ক্যাথিটার লাগানো (পিআইসিসি লাইন)। শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।

➡ অন্তত ৪-৬ সপ্তাহ সাধারণ স্যালাইন চালু রাখা, অ্যান্টিফাঙ্গাল থেরাপিতে অ্যাম্ফোটেরিসিন বি চালু করার আগে।

[মূল লেখাটি  Dr. Subrato Ghosh এর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া এবং সামান্য পরিমার্জিত।] 

আমার কথাঃ 

বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত তথ্য ঘেটে দেখলাম, এই সংক্রমণে কোনও লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত এর চিকিৎসা করা হলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যারা মূলত বিভিন্ন শারীরিক কারণে দূর্বল এবং রোগ প্রতিরোধ শক্তি কম যাদের তাদের অনেকে করোনা সংক্রমিত হওয়ার পর মিউক্রোমাইকোসিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। ভারতীয় বিভিন্ন মাধ্যমেও এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

মিউক্রোমাইকোসিসে আক্রান্তের ক্ষেত্রে মূলত চোখ লাল হয়ে আসা, মাথা যন্ত্রনা, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, রক্ত বমি, কাশির মতো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। যেহেতু বাংলাদেশেও এই সংক্রমণ দেখা দিয়েছে তাই কারো মাঝে এ সমস্ত লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা গেলে অবহেলা না করে, দ্রুত নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Black fungus এর সচেতনতামূলক নির্দেশিকা

সকলে নিরাপদে থাকুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

References-

1. Mucormycosis: The 'black fungus' maiming Covid patients in India

2. ICMR releases diagnosis and management guidelines for COVID-19-associated Mucormycosis

0 Shares

২৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ