মুক্তিযুদ্ধের সময় খান সেনারা আমার বাবাকে ধরার জন্য যখন এলাকায় এসেছিলো বাবা সেদিন জেলে সেজে তাদের ফাঁকি দিয়েছিলেন। তার ব্যবহৃত অস্ত্রটি তিস্তার চরের বালুতে লুকিয়ে রেখে মাছ ধরার জাল দিয়ে আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে জীবন বাঁচাতে সাহায্য করা সেই ভ্যানওয়ালা চাচার সাথে ঘটনাচক্রে একদিন দেখা হয়েছিলো আমার। পরিচয় জানতে পেরে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন - বাপই ক্যামন আছেন?

আমি টলটল চোখে ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলাম, কোন উত্তর দিতে পারিনি। আব্বা বেঁচে নেই, বেঁচে আছেন মুক্তিযোদ্ধাকে নতুন জীবন দেয়া আরেকজন বাবা। মুখনিঃসৃত ধ্বনিতে আসলে সবসময় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যায়না। সেদিনও কিছু বলতে পারিনি আমি।

এররকম হাজারো অপ্রকাশিত ঘটনা আড়ালেই থেকে গিয়েছে। প্রজন্মান্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষণ করা ও জানা সকলের দায়িত্ব। তাদের ঋন জীবন দিয়েও শোধ করার সামর্থ্য আমাদের নেই।

স্বাধীনতার ৪৯ বছর পার করে এসে এই রক্তার্জিত বিজয়ের শুভেচ্ছা আজ কাকে জানাবো? সেই সব মুক্তিযোদ্ধাদের-- যারা দেশ স্বাধীন করেও আজ আক্ষেপে কুড়ে মরছে?

স্বাধীনতার স্বপক্ষের দলকে-- যাদের আজ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে সমঝোতায় বসতে হয়?

নাকি সেইসব মানুষকে-- যারা দেশের পতাকা খুবলে খাওয়া পুরাতন শকুনদের মিষ্টি কথায় নিজের বাঙালি জাতিসত্তাকে ভুলে যেতে বসেছে? এমন বিজয়, এমন স্বাধীনতা কি আমরা চেয়েছিলাম? এ বিজয় আমাদের গৌরবের, এ স্বাধীনতা আমাদের বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাকে লালন করার তা ভুলে গেলে চলবেনা।

মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, রক্তাক্ত বিসর্জন, বিজয়, স্বাধীনতা এসব শব্দে যদি আমাদের শিহরণ না জাগে তাহলে লজ্জিত হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকবেনা। লক্ষ দেশপ্রেমিকের আত্মত্যাগে এদেশের রক্তার্জিত স্বাধীনতাকে রক্ষা করাই হোক আমাদের অঙ্গীকার। হৃদয়ে লাল-সবুজের পতাকা হোক আমাদের অহংকার।

সবাইকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।

0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ