নবী আ. দের উপর মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা নবুওয়াত ও রিসালাতের যে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন এবং যে নির্জলা সত্যগুলোর প্রতি দুনিয়াবাসীকে দাওয়াত দেয়ার যেই মহান কাজের জন্য তাঁরা আদিষ্ট হয়েছিলেন সেগুলো স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করাটা অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের দাওয়াতের জন্য অনেক সহায়ক হতো।

মানুষের সামনে সর্বশক্তি দিয়ে তাঁদের একথা বলার প্রয়োজন ছিলো যে, তোমরা তো নিছক আন্দাজ অনুমান করে বলছো, কিন্তু আমরা নিজেদের চর্মচক্ষে দেখা বিষয় তোমাদের বলছি। তোমাদের কাছে আছে আন্দাজ, অনুমান, ধারণা, কল্পনা কিন্তু আমাদের কাছে রয়েছে দৃঢ় বিশ্বাসের জ্ঞানভান্ডার। তোমরা অনেকে অন্ধ হলেও আমরা চক্ষুষ্মান।

এজন্যই নবীদের সামনে ফিরিশতারা আসতেন প্রকাশ্যে। তাদেরকে পৃথিবী ও আকাশের ব্যবস্থাপনা দেখানো হয়েছে। জান্নাত ও জাহান্নাম তাদেরকে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করানো হয়েছে। মৃত্যুর পরের জীবনের প্রদর্শনী করে তাঁদেরকে দেখানো হয়েছে নবীগণ নবুওয়াতের গুরুদায়িত্ব লাভ করার অনেক আগেই ঈমান বিল গায়বের পর্যায় অতিক্রম করে থাকেন। নবী হওবার পর তাঁদেরকে দান করা হয় ঈমান বিশ শাহাদাত বা চাক্ষুষ জ্ঞানলব্ধ বিশ্বাস এর নিয়ামত।

মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত ইব্রাহীম আ. এর এই নিয়ামত প্রাপ্তির কথাই বর্ণিত হয়েছে সূরায়ে বাকারার ২৬০ নং আয়াতে। মহান আল্লাহ যে মৃতদেরকে জীবিত করবেন সে ব্যাপারে হযরত ইবরাহীম আ. পরিপূর্ণ বিশ্বাস ছিলো। কিন্তু এরপরও এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর একটি কুদরত তিনি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করতে চাইলেন। তাই তিনি মহান আল্লাহর দরবারে আবেদন করলেন যে,

وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ أَرِنِي كَيْفَ تُحْيِي الْمَوْتَى قَالَ أَوَلَمْ تُؤْمِنْ قَالَ بَلَى وَلَكِنْ لِيَطْمَئِنَّ قَلْبِي قَالَ فَخُذْ أَرْبَعَةً مِنَ الطَّيْرِ فَصُرْهُنَّ إِلَيْكَ ثُمَّ اجْعَلْ عَلَى كُلِّ جَبَلٍ مِنْهُنَّ جُزْءًا ثُمَّ ادْعُهُنَّ يَأْتِينَكَ سَعْيًا وَاعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ.

“হে আমার রব! আপনি কিভাবে মৃতদেরকে জীবিত করবেন, তার একটি নিদর্শন আমাকে দেখান।”

মহান আল্লাহ তা‘আলা বললেন, “তুমি কি এ বিষয়টি বিশ্বাস করো না?” হযরত ইবরাহীম আ. বললেন, হ্যাঁ অবশ্যই বিশ্বাস করি। কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম একটি ঘটনা চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করতে। যাতে করে আমার অন্তর প্রশান্ত হয়।”

তখন মহান আল্লাহ বললেন, “তাহলে তুমি চারটি পাখি গ্রহণ করো। তারপর সেগুলোকে তোমার প্রতি পোষ মানাও। এরপর তুমি সেগুলোকে যবেহ করে তার গোশতগুলোকে একত্রে মিলিয়ে নাও। এরপরে বিভিন্ন পাহাড়ে সেই পাখির টুকরো টুকরো অংশ রেখে আসো। এরপর তুমি সেগুলোকে তার নাম ধরে ডাকো, দেখবে সেগুলো তোমার কাছে দৌঁড়ে আসবে। ”

মহান আল্লাহর নির্দেশনা অনুসারে হযরত ইবরাহীম আ. চারটি প্রজাতির পাখি আনলেন। মুফাসসিরীনে কিরাম বলেন এগুলো ছিলো কবুতর, মোরগ, ময়ূর ও কাক। এই পাখি গুলোকে হযরত ইবরাহীম আ. কিছুদিন লালন-পালন করে নিজের পোষ মানালেন। নিজের অনুগত করে নিলেন। এরপর একদিন তিনি এগুলোকে যবেহ করে সেগুলো টুকরো টুকরো করলেন। এবার সেই টুকরো গুলোকে একসাথে মিশিয়ে একাধিক পাহাড়ের উপর অল্প অল্প করে রেখে আসেন। কিন্তু পাখিগুলোর মাথা নিজের কাছেই রেখে দিলেন। এরপর তিনি মহান আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে পাখি গুলোকে ডাকতে লাগলেন। হযরত ইবরাহীম আ. যেই পাখির নাম ধরে ডাক দিতেন, সাথে সাথে তার ইতস্তত: বিক্ষিপ্ত পালক গুলো এদিক ওদিক হতে উড়ে এসে পরস্পরে একে অপরের সাথে মিলিত হতো। অনুরূপভাবে রক্ত রক্তের সাথে মিলে যেতো এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যা যেই যেই পাহাড়ে আছে সেখান থেকে উড়ে এসে জুড়ে যেতো। এভাবে পাখিটি একটি পূর্ণ রূপ লাভ করে হযরত ইবরাহীম আ. এর কাছে এসে উপস্থিত হতো। তিনি ওর উপর অন্য পাখির মাথা লাগালে সেটি লাগতো না। কিন্তু তার নিজের মাথা দিলে তা সংযুক্ত হয়ে যেতো। এভাবে চারটি পাখিই জীবিত হলো এবং মৃতকে জীবিত করার মহান আল্লাহর অলৌকিক ক্ষমতার এক ঝলক হযরত ইবরাহীম আ. প্রত্যক্ষ করলেন। এবার মহান আল্লাহ বললেন, “জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। কোনো কিছুই তার ক্ষমতার বাইরে নয়। এভাবেই তিনি মৃতদেরকে জীবিত করবেন।” এই ঘটনায় হযরত ইবরাহীম আ. আরো বেশি অভিজ্ঞতা লাভ করলেন। মহান আল্লাহর কুদরত এবং তার অসীম ক্ষমতা সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন। ফলে তিনি আল্লাহর আরো বেশি অনুগত হলেন, তাঁর ইবাদত করতে লাগলেন।

(তথ্যসূত্র: সূরা বাকারা ২, আয়াত ২৬০। তাফসীরে ইবনে কাসীর।)

0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন