বিজয় দিবসের অনুভূতি

তৌহিদুল ইসলাম ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, সোমবার, ০১:২৮:২৪পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৭ মন্তব্য

মোনালিসা(ছদ্মনাম) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। বিজয় দিবসের ছুটিতে বাড়িতে এসেছে। এসেই বাবার কাছে আবদার করেছে একটি সেলফি স্টিক কিনে দেয়ার জন্য। তার বাবা যিনি একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, মেয়ের আবদার ফেলতে পারেননি। অতি আদরের মেয়ের জন্য অনেক খুঁজে সেলফি স্টিক কিনে এনেছেন।

পরদিন (আজ) বিজয় দিবসে মোনালিসা লাল সবুজ শাড়ি পরে শহীদ মিনারে তার বন্ধুদের সাথে সারাদিন অনেক ছবি তুলেছে। রাতে বাসায় ফিরে যখন সে তার বাবাকে ছবিগুলো দেখাতে যায়, বাবার চোখ তখন কান্নায় ভিজে আসে নিজের অজান্তেই।

অতি আদরের মেয়েকে তিনি তার চোখের নোনা পানি দেখতে দেননি। শুধু মেয়েকে বলেছেন- মারে তুমি একজন মুক্তিযোদ্ধা বাবার সন্তান হয়ে, একজন বাংলাদেশী হয়ে কিভাবে পারলে জুতা পায়ে শহীদ মিনারে উঠতে?

ত্রিশলক্ষ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা আজ যে স্বাধীনতা পেয়েছি, যে জায়গায় তাদের স্বরণ করার জন্য লক্ষ কোটি বাঙালী আজ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছে; সেই স্মৃতিস্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে সেলফি স্টিক দিয়ে ছবি তুলেছো। হাজার টাকার সেলফি স্টিকের চেয়ে তোমার কি দশটি টাকাও ছিলোনা একটি ফুল কিনে তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করার?

শুধু এতটুকু বলেই বাবা ঘর থেকে বেড়িয়ে যান। আর মোনালিসা বসে বসে ভাবতে থাকে- আজ বিজয় দিবসে সবাই সেলফি স্টিক দিয়ে ছবি তুলছে, তাহলে তার অন্যায়টা কোথায়?

এই গল্প অবতারণার উদ্দেশ্য হচ্ছে- আজকে আমি যখন শহীদ মিনারে গিয়েছি তখন অনেক তরুণীকেই দেখলাম অতিমাত্রায় সাজুগুজু করে শহীদ মিনারে এসেছেন শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে। যাকে বলে পার্লার থেকে সেজে এসেছেন লাল টুকটুকে শাড়ী পরে। তারা শহীদ মিনারে অতি সাধের সেলফি স্টিকের সাহায্যে মোবাইল দিয়ে বন্ধুদের সাথে ছবি তোলার নামে পায়ে জুতা-স্যান্ডেল নিয়ে শহীদ মিনারের বেদীর ফুল মাড়িয়ে যে মচ্ছব করলেন তা দেখে বিজয়ের ভাবগাম্ভীর্যতা আমরা কতটুকু ধারণ করতে পেরেছি সেটাই আমার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ রয়ে যায়।

স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেড়িয়ে এসে এখনও আমরা জানিনা কার জন্য, কিসের বিনিময়ে, কাদের আত্মত্যাগের ফলে আমরা এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি। পরাধীনতার শেকলে আবদ্ধ থাকলে আজ আমরা কি পারতাম হাসিমুখে নিজের সন্তানকে কোলে নিতে? পারতাম বাংলায় কথা বলতে? পারতাম নিজেদের স্বাধীনচেতা মতামত প্রকাশ করতে?

লজ্জায় অবনত মস্তকে আমি নীরবে দাঁড়িয়ে আছি শহীদ মিনারের সামনে। কনকনে বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দে কারা যেন কানে কানে বলে যাচ্ছে- নিজেদের রক্তের বিনিময়ে তোমায় যে স্বাধীনতা দিলাম, আমাদের প্রাপ্য সম্মান তোমরা ফিরিয়ে দাও হে পথিক!

আমি এখনো নিরুত্তরভাবে দাড়িয়ে মোবাইলে টাইপ করেই যাচ্ছি....

0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ