বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন অসাম্প্রদায়িক চেতনাধারী অসাধারণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর জাতীয় সংসদে ধর্ম নিরপেক্ষতা নিয়ে মূল যে কথাগুলো বলেছিলেন-
"ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের বাধা দেওয়ার ক্ষমতা এই রাষ্ট্রের কারও নেই। হিন্দু তাদের ধর্ম পালন করবে, কারও বাধা দেওয়া ক্ষমতা নেই। বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের কেউ বাধাদান করতে পারবে না। খ্রিস্টানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, কেউ তাদের বাধা দিতে পারবে না।"
"আমাদের শুধু আপত্তি হলো এই যে, পবিত্র ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। ২৫ বছর আমরা দেখেছি— ধর্মের নামে কী জুয়োচুরি, ধর্মের নামে শোষণ, ধর্মের নামে বেইমানি, ধর্মের নামে অত্যাচার, ধর্মের নামে খুন, ধর্মের নামে ব্যাভিচার এই বাংলার মাটিতে চলেছে। ধর্ম পবিত্র। পবিত্র স্থানে রাখতে দেন। একে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না। এখানে যদি কেউ আমাদের বলেন, আমরা অধিকার খর্ব করেছি, অধিকার খর্ব করি নাই। সাড়ে সাত কোটি মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য এই অধিকারটুকু আমাদের খর্ব করতে হয়েছে।" [বাংলা ট্রিবিউন]
এদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ, সকল স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধাদের দেশ। যারা বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্বকে কোনদিনও মেনে নিতে পারেনি তাদের আস্তিনে রেখে আশ্রয় দিলে ফণা তুলে ফোঁসফোঁস করবে এটাই স্বাভাবিক। সেই প্রেক্ষাপটেরই কুফল হলো তারা আজ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে মূর্তি বলার দুঃসাহস করে!
পৃথিবীর অনেক দেশেই মুসলিম স্কলারদের ভাস্কর্য রয়েছে। সেদেশের মুসলিমরা কি তাদের পুজা করে? মোটেই না। পৃথিবীর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন সেসব স্কলার ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানতে পারে সে কারনেই ভাস্কর্যগুলো তৈরী করে সংরক্ষণ করা হয়।
এদেশের উগ্র মৌলবাদীরা এর সবকিছুই জানে। সেগুলোতে তাদের মাথাব্যথা নেই। কারন তাদের মূল সমস্যাতো আসলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে, তার আদর্শকে এদেশ থেকে বিলীন না করা পর্যন্ত এদের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে।
কথার সত্যতা- মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত। আমাদের কাঠ মোল্লাদের অবস্থা হচ্ছে এরকম। তাদের জ্ঞানহীন, মূর্খ বললে খুব বেশি অত্যুক্তি করা হবে কি? ২০২০ সালকে আমরা যখন বঙ্গবন্ধুর জন্মশবার্ষিকী পালন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি তারা তখন বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্বকেই অস্বীকার করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে কিভাবে?
বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু এবং এদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে আমি সহ্য করতে পারিনা। যারা পারেন তারা সুবিধাবাদী চেতনার অধিকারী। তাদের মুখে একদলা থুথু ছিটিয়ে গেলাম।
এখানে মুসলিম ভাস্কর্যের কিছু ছবি নামসহ দিলাম। এরকম শতশত ভাস্কর্য অন্যান্য মুসলিম দেশেও রয়েছে। চাইলে গুগোল সার্চ করতে পারেন।
মসজিদের সম্মুখে স্থাপিত কিছু ভাস্কর্য -
এছাড়াও মুসলিম দেশে মুসলমান মনিষীদের বিখ্যাত কিছু ভাস্কর্য দেখুন-
সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
---------------------------
তথ্যসূত্র- বাংলা ট্রিবিউন অনলাইন থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি কপিকৃত।
ছবি- গুগোল, ফেসবুক।
১৮টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
ভাস্কর্য আর মুর্তিকে যারা এক করে ফেলে তাদের জন্য আসলে বেশি কিছু বলার নেই। এরা সেইসব মানুষ যারা ঘরে টিভি রাখাকে গুনাহ ভাবেন আর ট্যাব হাতে নিয়ে ওয়াজ মাহফিলে বকৃতা দেন। আর তাদের অনুসারীরা ইউটিউব ঘেঁটে সেগুলো বারবার শুনে নাকের পানি চোখের পানিতে দিনে দশবার গোসল করেন।
তৌহিদ
একদম ঠিক। এরা ধর্মকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে আসলে।
ধন্যবাদ আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
মুঘল সম্রাট আকবরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি যোধাকে কেন বিয়ে করলেন? তাতে কি ইসলাম ধর্মের ক্ষতি হবে না?
তার উত্তর- আমি ধর্ম বিয়ে করিনি॥ পরবর্তীতে যোধার অসামান্য বুদ্ধিমত্তায় জনগন মুগ্ধ ছিল। বিচক্ষনতা এবং যদ্ধবিরতির জন্যই যোধাকে বিয়ে করেন আকবর।
সেই সব মুসলিম এখন আর নেই। তাদের মন মানসিকতা, শাষক হিসেবে যোগ্যতা অন্যরকম ছিল বলেই ধর্ম নিয়ে সেসময় বাড়াবাড়ি কম ছিল।
এখনকার ধর্ম পতিরা সবসময়ই ধর্মকে পুঁজি বানিয়ে চলে। কারন এটা ছাড়া তাদের আর সম্বল নেই। জনগনকে ধর্মের ভয় দেখিয়ে ফায়দা হাসিল করার চেষ্টা করে। বোকা ধর্মভীরু আমরা সেটাকে সাপোর্ট করি॥ ভাষ্কর্য হল সম্মান। সেটা যারই হোক।
শুভ কামনা ভাই।
তৌহিদ
মন্তব্যে প্রীত হলাম। আল্লাহ আমাদের বোঝার তৌফিক দিন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ভাই দিন দিন যে অবস্থা দেখছি এদেশের মানুষের ,তাতে করে কখন কিসে যে হুজুগে মাতে আর কার কিসে যে চুলকানি উঠে বুঝা দায়। ইদানিং ধর্মকে সবখানেই জুড়ানো হচ্ছে এটা কিন্তু সত্যি ই ভয়াবহ ইঙ্গিত দিচ্ছে। ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে আর কিছু বাকী আছে দেখার? ভাস্কর্য যে মূর্তির সাথে তুলনা করে কিন্তু বিধর্মীদের হেয় করা হচ্ছে, তাদের ধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। মূর্তি আর ভাস্কর্য কিভাবে এক হয়? চারুকলায় যারা ভাস্কর্য তৈরি করে তাদের কিন্তু অনেক মুসলিম পরিবার ভালো চোখে দেখে না। তাই এই ধারণা কিন্তু অনেক আগে থেকেই চলছে। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
তৌহিদ
ধর্ম নিয়ে সবাই একটু হুজুগেই মাতছে যা মোটেই উচিত নয়। ভালো থাকুন দিদিভাই।
মনির হোসেন মমি
আমি নিঃসন্দেহে বলব যারা মুর্তি আর ভাষ্কর্যের বুঝেও না বুঝার ভান করে- এরা পাকিদের দোসর যারা শান্ত সুন্দর অসাম্প্রদায়ীক দেশটাকে অস্থিতিশীীল করতে চায়।
সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট।ফেবুকে দেখে বলতে চেয়েছিলাম ব্লগেও দিন।দিয়ে দিলেন সে জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
তৌহিদ
আসলেও তাই, এরা বঙ্গবন্ধুকে এদেশের স্বাধীনতাকে মন থেকে আজও মেনে নিতে পারেনি ভাই।
ধন্যবাদ অশেষ
জিসান শা ইকরাম
প্রশ্রয় পেতে পেতে এরা মাথায় উঠে গিয়েছে। এদের সাথে আপোষ করা বোকামি।
এদের যতই প্রশ্রয়, সুযোগ সুবিধা দেয়া হোক, এরা কখনো লীগকে পছন্দ করবে না। যারা এদের আপন করে নেয়ার বুদ্ধি সরকারকে দিয়েছে, তারা ভুল পথে পরিচালিত করছে সরকারকে।
এরা অসন্তুষ্ট হতে পারে একারনে সংসদে জাতির পিতার ভাষন কিছু অংশ বাদ দিয়ে প্রচার করা হয়েছে। চরম নিন্দনীয় একটি কাজ করেছে সরকার। মাননীয় স্পীকার এর দায় চাপিয়েছেন রেডিও বাংলাদেশের উপর। অথচ এর কোনো ব্যাখ্যা চাওয়া হয়নি রেডিও বাংলাদেশ এর কাছে। এতে বুঝা যায়, সরকারের ইঙ্গিতেই এটি করা হয়েছে।
এরা আস্কারা পেয়ে জাতির পিতার ভাস্কর্যকে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়েছ। এমনটাই প্রত্যাশিত ছিলো। একদিন দেখা যাবে বঙ্গবন্ধুর সমস্ত ভাস্কর্য এরা ভেঙ্গে ফেলা আরম্ভ করেছে।
কঠিন হাতে এই সব উগ্র সাম্প্রদায়িক দলকে দমন না করলে খবর আছে দেশের।
পোষ্টের সাথে সহমত পোষন করছি।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
এদেশে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। লীগ সমর্থিত অনেক মানুষও খুব সূক্ষ্মভাবে আওয়ামী লীগের বেশ ধরে ধর্মান্ধতাকে কাজে লাগিয়ে জামাত-শিবির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে সমর্থন করছে বলেই প্রতীয়মান হয়। এদের কঠোর হস্তে প্রতিরোধ করা না গেলে সামনে অন্ধকার দিন আসছে। চমৎকার মন্তব্য প্রীত হলাম ভাই।
ভাল থাকুন সবসময়
সুপায়ন বড়ুয়া
যে জাতি বীরদের সম্মান করতে জানে না
সে জাতির কপালে দু:খ থাকে
ধর্মের আড়ালে সাম্প্রদায়িতা উস্কে দিয়ে
রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায়।
তারা ইতিহাসের ডাস্টবিনে নিক্ষেপ হবে।
পৃথিবীর সব দেশে ভাস্কর্য্যগুলি আপন মহিমায় উদ্ভাষিত।
সুন্দর পোষ্ট। শুভ কামনা।
তৌহিদ
এদেশের স্বাধীনতা এবং বঙ্গবন্ধু এসব যারা কখনো সমর্থন করতে পারেনি তারা এসব প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। এদের কঠোর হস্তে দমন করা উচিত।
ভালো থাকুন দাদা।
আলমগীর সরকার লিটন
বড় দুঃখজনক
তৌহিদ
জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে আসবে এমনটা চলতে থাকলে। ভাল থাকুন ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
এখন ও যেখান থেকে প্রতিবাদ হওয়ার কথা সেখানে তো প্রায় স্পিকটি নট।
আর যারা মূর্তি মূর্তি বলে একটু চিল্লাপাল্লা করেছে তারা মোটেই পৃথিবীর খোঁজ না জানা পাবলিক না।
কাজেই ভাবতে হবে, ক্যামনে কী !!
তৌহিদ
সেটাই, দায়িত্বশীলরা কেন কোন রকম প্রতিবাদ করলেন না এটাই এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
ভালো থাকুন ভাইজান।
আরজু মুক্তা
দেশটা যে কোনদিকে যাচ্ছে?
তৌহিদ
তারা আবারও পাকিস্তানি প্রোপাগান্ডা বাস্তবায়ন করার মত্ত।
ভালো থাকুন অপু।