কিছুদিন আগে উকিল অশোক কুমার কর্তৃক উচ্চ আদালতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের দাবীতে করা রিটটি তিনি নিজেই তুলে নেয়ার আবেদন করেছিলেন বলে শুনেছিলাম। যার ফলে ঘটনা সেখানেই থেমে গিয়ে পানি আর বেশিদূর গড়ায়নি। এ নিয়ে কয়েকদিন সোশ্যাল মিডিয়াও দারুণ সরগরম ছিলো। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই ঘটনার দ্বারা অন্য ঘটনাপ্রবাহকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করেছিলেন।

এবারে একটু অন্যপ্রসঙ্গে আসি-

আমার আয়োজন করে ঘুমানো ছাড়া দেহমনে শান্তি আসেনা। চুপচাপ, নিরিবিলি, আধোআলো অন্ধকার ঘরের নরম বিছানায় জোরে ফ্যান ছেড়ে হালকা চাদর গায়ে দিয়ে ঘুম আর কি!

এই নির্জনতায় হুজুর আসেন আমার কাছে। নানাবিধ সমাধান দিয়ে যান স্বপ্নে। গতকালও এসেছিলেন তিনি তবে তার মন খারাপ। আমাকে বলেছে- ওহে গন্ড মূর্খ! তুই কি কিছুই দেখিস না? তোর কি বিবেক মরে গিয়েছে?

বললাম, হুজুর চ্যাতিচ্চেন ক্যা?

হুজুর বললেন- বেধর্মী যদি রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বাদ দিতে আদালতে যাইতে পারে তুই কি করিস?

হুজুর, মাইন্ড খাইয়েন না। প্যাচতো লাগাইছে এরশাদ মামু। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম বানায় এই দেশে বেধর্মীগোরে আশ্রয় দিয়া নিজে এখন বেহেশতে হুরপরি দেখিচ্ছে। আর আমরা বাংলাদেশের ইসলামপন্থিরা জাইগা জাইগা যাও বা এক আধটু দেখার চেষ্টায় আছিলাম আমাগোরে কিনা হাইকোর্ট দেখাইলো!

তা এখন কি করবি?

বললাম, হুজুর আমি দেশ ফেশ এতো ছোটখাটো বিষয় নিয়ে চিন্তা করিনা। আমার চিন্তা পুরা পৃথিবীক নিয়া। আল্লাহ্‌ কি শুধু বাংলাদেশের? আল্লাহ্‌ পুরা পৃথিবীর।

হুজুর কয় তারমানে?

মানে হুজুর, আমি পুরা পৃথিবীতে ইসলাম ধর্ম চাই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, মানুষের জন্য ধর্ম নয়, ধর্ম হচ্ছে দেশের জন্য। মানুষ নয়, দেশ মসজিদে যায়। মানুষ নয়, দেশ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। তাই আমি বৈশ্বিক আদালতে পৃথিবীর ধর্ম ইসলাম চাই মর্মে রিট করার চিন্তায় আছি। মানুষ গোল্লায় যাক আমার কি? হুজুর, আমারে সেই আদালতের রাস্তা দেহান।

আমার কথা শুনে হুজুরে সেই যে আদালতের রাস্তার খোঁজে গেলো আর এলোনা। প্রসঙ্গত উপরের কথাগুলো সবই রুপক অর্থে বলা।

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কোন নির্দিষ্ট ধর্ম থাকতে পারেনা। কারন সব ধর্মের সব মতাবলম্বীদের স্বাধীন বিচরণই হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল উপজীব্য বিষয়। তাই যদি হয় তাহলে রাষ্ট্রে সব ধর্মকেই প্রধান ধর্ম হিসেবে ঘোষণা দেয়া উচিত।

যেখানে বেশিরভাগ মানুষ একটি মূলধর্মের অনুসারী আর বাকীরা সংখ্যালঘু হিসেবে স্বীকৃত সেখানে মূলধর্মের স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষ ধর্মকে পুঁজি করে ব্যবসা করবে, সমাজে বিদ্বেষ ছড়াবে এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদের দাবিয়ে রাখার হীন প্রচেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। ফলে সেই ধর্মটি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের চোখে অশান্তির ধর্ম হয়ে ধরা দিচ্ছে যা মোটেই কাম্য নয়।

বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি লক্ষ্য করার মত। দু'একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এদেশের সকল ধর্মের মানুষ একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল। একজন মুসলিম যেমন হিন্দু বন্ধুর বাসায় যাতায়াত করেন, খাওয়াদাওয়া করেন তেমনি অন্যরাও তাই করে সৌহার্দ, সম্প্রতি বজায় রাখেন।

এদেশের যে কোন রাষ্ট্রীয় উৎসবে পহেলা বৈশাখ, পুজা, ঈদে এখন সবাই আনন্দের ভাগীদার হয়। এটাই হওয়া উচিত। তাহলে ধর্ম নিয়ে এত বাড়াবাড়ি কেন? কারা করছে? এই উষ্কানীমূলক অশান্তি অন্যকোনো উদ্দেশ্যে কারো প্ররোচনায় সংঘটিত হচ্ছে কিনা সেটাও অবশ্য লক্ষণীয়।

যার যার ধর্ম তিনি পালন করবেন আর তা স্বাধীনভাবেই। যদিও এক্ষেত্রে কেউ কোন হস্তক্ষেপ করেনা তবুও অন্য ধর্মাবলম্বীদের যাতে হেয় করা না হয় এটাই একমাত্র চাওয়া। গণতান্ত্রিক দেশে ধর্মের গণতান্ত্রিকতা রক্ষা করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

[লেখার ছবি সংগৃহীত]

0 Shares

৩৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ