৭-এ গল্প শেষ।

আর্বনীল ১৮ জুলাই ২০১৪, শুক্রবার, ১২:০৫:০৯পূর্বাহ্ন গল্প, রম্য ২২ মন্তব্য

১)

অর্ক’র বিয়ের জন্য পাত্রী দেখা হচ্ছে। তার বাবা-মা প্রায়ই এদিক ওদিক মেয়ে দেখে বেড়াচ্ছেন। কোন মেয়ের নাক মোটা। কারো মাথায় চুল নেই। কেউ আবার সুন্দর করে কথাই বলতে পারেনা। এরকম আরো কত কি সমস্যা। মোট কথা কোন মেয়ে-ই অর্কর বাবা-মায়ের পছন্দ হচ্ছে না। সেদিন একজন পরিচিত ঘটক আপা এসে একটা মেয়ের ছবি দিয়ে গেছে। ছবিতে মেয়েটার নাক মুখ চোখ সব মোটামুটি ঠিকই আছে দেখে মেয়েটাকে প্রাথমিক ভাবে বাছাই করা হয়েছিল। আজ উনাকে দেখতে যাওয়ার জন্যই এত আয়োজন চলছে। মেয়ে পছন্দ হলে দু একদিনের মধ্যেই বিয়ের কাজটা ধরে ফেলবেন। মনে মনে এমনই প্রস্তুতি নিয়ে উনারা বের হলেন। সাথে শার্ট-প্যান্ট টাই পরে অর্কও।

 

২)

অর্কর বাবা-মায়ের মেয়ে পছন্দ হয়েছে। মেয়ে দেখতে সুন্দর। নম্র ভদ্র শিক্ষিতাও। উনাদের সামনে এসেই মেয়ে সালাম দিল। অর্কর মা জিজ্ঞেস করলেন, তা তোমার নাম কি মা?

সাদিয়া আফরিন অথৈ। আপনি অথৈ বলেই ডাকতে পারেন। তবে বাবা আমাকে টুনটুনি বলে ডাকে। আর মা ডাকে টুকি।

বাহ! সুন্দর নাম। আচ্ছা অথৈ তোমার কি কিছু জানার আছে?

মেয়ের মা বললেন, আপা মেয়ে আমার খুবই লাজুক। ও একটু লজ্জা পাচ্ছে। আমি বলছিলাম কি! ওরা বরং ছাদে গিয়ে নিজেদের মধ্য কথাবার্তা বলুক।

ছেলের মা বললেন, ঠিক আছে। এ যুগের ছেলে মেয়ে। যাক। অর্ক ওর সাথে যাও তুমি। অর্ক লক্ষি ছেলের মত উঠে মেয়ের পিছনে পিছনে চলে গেল। এদিকে অর্কর বাবা অর্কর মায়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে কি যেন একটা বললেন। বোধহয় ছেলের চলে যাওয়াটা উনি ভালো চোখে নেন নি।

 

৩)

অর্ক আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে সে। এমনিতেও অর্ক খুবই লাজুক টাইপের একটা ছেলে। এই মুহুর্তে তার মনে হচ্ছে - একটা অপরিচিত মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে এটম বোমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক সহজ কাজ।

আপনি এত ঘামছেন কেন? পা দুটোও কাঁপছে দেখি।

অর্ক কি বলবে বুঝতে পারছে না। না মানে... মানে... ইয়ে...

হুম। বুঝতে পারছি। আজই প্রথম?

মা...মানে বুঝতে পারলাম না।

উফ! বলছি আজই কোন মেয়ের সামনে প্রথম এসেছেন?

না। না। তা হবে কেন? আমিতো মায়ের সামনে যাই। ছোট বোন আছে ওর সামনেও যাই। খালা ফুফু এদের সামনেও গেছি।

ইস্টুপিড!

জি কিছু বললেন?

হ্যা। বলেছি আপনি এত বোকা কেন? হুহ?

ইয়ে মানে... বো... বো...বো...কা?

চুপ! একদম চুপ!

অর্ক মুখে হাত দিয়ে একদম চুপ হয়ে গেল।

 

৪)

কিছুক্ষন চুপচাপ থাকার পর। অথৈ দুকাপ কফি এনে এক কাপ অর্কর হাতে দিল। কফি পছন্দ করেন তো?

অর্ক বোকার মত হাসি দিয়ে বলল, হ্যা পছন্দ করি। সকালে এক কাপ আর বিকেলে এক কাপ কফি আমার লাগেই।

গুড! ভেরী গুড।

তা কি করেন আপনি? মানে আমি চাকরি-বাকরি ব্যাবসার কথা বলছি।

একটা প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করছি।

হুম। তা বেতন কত পান?

৩০ হাজার টাকা।

হুম। আপাদত চলবে। আপনি বই পড়েন তো? মানে অভ্যাস আছে?

জি আছে। (এই মুহুর্তে ভাইয়ার মোবাইলে একটা ম্যাসেজ আসল)

কোন টাইপের বই বেশী পড়েন?

কম বেশ সবই পড়া হয়। তবে বিজ্ঞান বিষয়ে আমার অন্যরকর একটু আগ্রহ আছে।

রোমান্টিক ব্যাপারে নেই? এই ধরুন আমি এখন আপনার হাত ধরলাম। তখন আপনার অনুভুতি কেমন হবে?

জি আপনি এটা করলে আমি খুবই লজ্জা পাব।

ইডিয়েট একটা। এর সাথে কি করে সংসার করব?

অর্ক বলল, কিছু বললেন?

নাহ! তবে এই মুহুর্তে আমি খুব রেগে গেছি। যান আপনি ঐদিকে গিয়ে এস এম এস পড়ে আসুন। এর ভেতর আমার রাগ কমে যাবে। তখন আবার কথা হবে। যান।

 

৫)

অর্ক পকেটে হাত দিয়ে মোবাইল বের করল। নিচ থেকে উনার বাবা এস এম এস করেছে – ‘এই গর্দভ! এতক্ষন ধরে কি এত কথা বলছিস? লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে ফেলেছিস নাকি? তারাতারি নিচে নেমে আয়’। এস এম এস পড়ে অর্কর মুখ কেমন শুকিয়ে গেছে। সে বাবাকে এত ভয় পায় কেন কে জানে?

অথৈ এসে বলল, কি ব্যাপার কোন সমস্যা?

নাহ! কোন সমস্যা নেই।

না থাকলেই ভালো। যাগ গে, আমরা মুল কথায় আসি। আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে?

অর্ক উপর নিচ মাথা নাড়ল। তারমানে তার মেয়ে পছন্দ হয়েছে।

বুঝেছি। আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে। আসলে আমি মেয়েটাই এমন যে কেউ দেখলেই পছন্দ করে ফেলে। এই আপনার গার্লফ্রন্ড আছে?

ছিঃ ছিঃ এসব কি বলছেন? গার্লফ্রেন্ড থাকলে আপনাকে বিয়ে করতে আসব কেন?

অথৈ চোখ কপালে তুলে ফেলল। আরেহ বাহ! আপনাকে যতটা বোকা ভেবেছিলাম। আপনি ততটা বোকা না। আপনি জানেন? আপনার এই এক কথাতেই আপনাকে আমার কিঞ্চিত পছন্দ হয়েছে। আশা করি শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি হয়ে যাবে। আরেক কাপ কফি খাবেন? আপনি একটু ওয়েট করুন। আমি নিয়ে আসছি।

 

৬)

অর্ক কফির কাপে চুমুক দিল। এটা বোধহয় আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। এমনও হতে পারে যে, মেয়েটার সামনে নিজেকে এখন আর ততটা নার্ভাস লাগছে না। তাই কফিটা খেতে ভালো লাগছে।

কফিটা ভালো হয়েছে না?

হ্যা খুব ভালো। আগের চেয়েও ভালো হয়েছে।

হুম। আসুন আমরা মুল গল্পে ফিরে যাই। আচ্ছা বলুনতো আপনি আমার জন্য কি করতে পারবেন?

অর্ক বোকার মত হাসি দিয়ে বলল, আপনি যা বলবেন তাই পারব।

তাই?

জি।

গুড। তাহলে পরিক্ষা হয়ে যাক। অথৈ ডাকল কাকলি... এদিকে একটু শুনে যাতো। (কাকলি এ বাড়ির কাজের মেয়ে)

কাকলি এসে বলল, যে আফা। কিছু লাগব?

না কিছু লাগবে না। তুই এখানে চুপচাপ পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে থাক। কোন কথা বলবি না। ঠিক আছে?

যে আফা।

অথৈ বলল, নিন আপনি এবার পরিক্ষা শুরু করুন।

কি পরিক্ষা?

আপনি পাঁচ মিনিট কাকলির দিকে তাকিয়ে থাকবেন। চোখের পলক যেন না পরে। পরিক্ষায় পাশ করলে আপনাকে আমার ৭৫% পছন্দ হয়ে যাবে। আর ফেল করলে এটা ৭০% থেকে কমে ৫০% এ নেমে যাবে। নিন এবার শুরু করুন।

একটা কথা ছিল।

উফ! আবার কি কথা?

না মানে আমাকে আপনার অলরেডি ৭০% পছন্দ হয়ে গেছে?

হ্যা। তবে ১০০% হবে বলে মনে হয়না। যাইহোক, আপনি ভাববেন না। আপনাকে আমার ৯০% পছন্দ হলেই কবুল বলে দেব। নিন এবার কথা না বাড়িয়ে কাজ শুরু করুন।

অর্ক কাকলির দিকে নজর দিলেন। এত বীভৎস চেহারা মানুষের হয়? উফ! কি করে যে পাঁচ মিনিট পার হবে। আল্লাহই জানে।

 

৭)

পাঁচ মিনিট পর......

অথৈ বলল, ছি অর্ক সাহেব। আপনাকে আমি ভালো ভেবেছিলাম। কিন্তু আপনার চরিত্র যে এতটা খারাপ তা জানতাম না।

অর্ক এমন কথা শুনে পুরাই হতভম্ভ! বলে কি মেয়ে! এসব কি বলছেন আপনি? আমার চরিত্র খারাপ মানে? (কাকলি একটা রহস্যময়ী হাসি দিয়ে চলে গেল। এই কর্ম বোধহয় এর আগেও কয়েকবার হয়েছে।)

এহ! ঢং! এখন আমার কথা বুঝতে পারছ না। তাই না? তুমি আমার মত সুন্দরি একটা মেয়ের সামনে কাকলির দিকে এতক্ষন এভাবে তাকিয়ে ছিলে কেন? দেখে মনে হচ্ছিল যেন এত রূপবতী মেয়ে এর আগে তুমি দেখেন-ই নি। তোমার চরিত্র খারাপ না হলে এই কাজ তুমি করতেই পারতে না। হুহ!

কি আশ্চর্য! এতে আমার কি দোষ? আপনি বলেছেন বলেইতো আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে হল। তা না হলে আমি কখনোই তাকাতাম না।

চুপ! একদম চুপ! এখন সাধু সাজা হচ্ছে! আমি বললেই তুমি তাকিয়ে থাকবে কেন? তুমি বলতে পারতে না। অথৈ আমি তোমাকে ছাড়া আর কারো দিকেই এভাবে তাকিয়ে থাকতে পারব না। আমাকে ক্ষমা কর প্লিজ!

অর্ক কি বলবে কিছু খুঁজে না পেয়ে বলল, প্লিজ আমাকে ক্ষমা করুন।

ওকে! ওকে! ফার্ষ্ট টাইম বলে ক্ষমা করে দিলাম। এর পর থেকে কাকলীর দিকে আর তাকাবে না।

থ্যাঙ্ক ইয়্যু। আচ্ছা আমি কি তবে পরিক্ষায় ফেল করেছি?

হ্যা ফেল করেছো। আমি তোমাকে তুমি করে বলছি। তুমি আমাকে আপনি করে বলছো কেন? গর্দভ একটা।

আমার বাবাও তাই বলে। একটু আগে ম্যাসেজ দিয়েও তাই বলল।

মানে?

অর্ক তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, না মানে বলছি আপনার নামটা খুব সুন্দর। অথৈ।

হয়েছে। হয়েছে। নামের আর গুনগান গাইতে হবে না। তুমি স্টার প্লাস দেখো?

অর্ক না সূচক মাথা নাড়ল। আমি আসলে হিন্দি তেমন একটা বুঝিনা।

পুরাই আন-স্মার্ট একটা। জি বাংলা দেখোতো?

না তাও দেখিনা।

ওহ! তাহলে বুঝেছি তুমি নিশ্চয় স্টার জলসা দেখো। এটাও আমার খুব পছন্দের একটা চ্যানেল। সন্ধ্যা হলেই রিমোট নিয়ে আমি আর মা বসে পরি। তারপর শুরু হয় কি দারুন দারুন সব সিরিয়াল। ঐ সিরিয়ালটা দেখো তো “বোঝেনা সে বোঝেনা”? এটাতে পাখি আর অরণ্যর অভিনয়টা যা জোশ লাগে না। উফ! অরণ্যর মুখেতো হাসি একেবারে আসেই না। আর পাখি সারাক্ষনই দুষ্টুমি করে। মামির ক্যারেক্টারও ভালোই লাগে। হ্যালো হাই বাই বাই। আচ্ছা! এই সিরিয়ালে তোমার কাকে সব চেয়ে বেশী ভাল্লাগে? হুহ?

ইয়ে মানে... আমি স্টার জলসাও দেখিনা। আসলে আমাদের বাসায় ডিশ নেই। বাবা এসব পছন্দ করে না।

হোয়াট? তোমাদের বাসায় ডিশ নেই। তুমি এক্ষুনি বেরিয়ে যাও। তোমাকে আমি বিয়ের আগেই ডিভোর্স দিলাম। বেরিয়ে যাও বলছি।

তুমি কি বলছো আমি কিছু বুঝতে পারছিনা।

ব্যাটা তুই যাবি? নাকি ঝাড়ুটা নিয়ে আসব? কাকলি ঝাড়ুটা নিয়ে আয়তো...... ব্যাটা ফাজিল। বাড়িতে ডিশ নেই। স্টার প্লাস দেখে না। জলসা দেখেনা। আবার আসছে আমাকে বিয়ে করতে। হুহ।

 

গল্প এখানেই শেষ। তবে একটা কথা। বিয়ে উপযুক্ত পাত্রের গুনগান করার সময় ‘বাসায় ডিশ আছে এবং স্টার জলসা খুব আগ্রহ নিয়ে গিলে’ এই কথা বলতে ভুলবেন না যেন। 

 

"কেউ কি আমায় দিতে পারে

এমন কোন নিশ্চয়তা?

পাঁচ-সাত বছর পর

সিরিয়াল দেখেনা ছেলেকেই বিবাহ

করিতে চাই!

বলিবে কোন মেয়ে এমন কথা ??

 

:p :p :p :p

 

বিঃদ্রঃ এটা নিতান্তই মজা করে লিখেছি। এটা পড়ে কেউ মনঃকষ্ট পেলে আমি দায়ী নই।

 

#১৩

0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ