বলা হয়ে থাকে ২১ শে অগাস্টের বোমা হামলা বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্থায়ী অবিশ্বাস এনে দিয়েছে। কথাটা আসলে মিথ্যা না।

আমি অবশ্য দু কাঠি বাড়িয়ে মনে করি অবিশ্বাসের সাথে সাথে অসংখ্য ক্রান্তিকাল পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক রাজনীতিবিদ আরেক রাজনীতিবিদকে কিছুটা হলেও যে সম্মান করতো, সেটিতেও ২১ শে অগাস্ট এক ধরনের প্রভাব বিস্তার করেছে।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে সাধারণ জনতার কাছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া কিংবা মিশ্র রেটিংসের শিকার হতে পারেন। মানে দাঁড়ায় ভালো কিংবা মন্দ।

কিন্তু একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে অন্য দলের প্রধানকে গ্রেনেড মেরে মেরে ফেলবার কলঙ্ক কিংবা পরিবারসুদ্ধ বা দলসুদ্ধ একেবারে চিরতরে শেষ করে দেবার মত কলঙ্ক বোধকরি বাংলাদেশের এই প্রাচীন দলটির কাঁধে আজ পর্যন্ত নেই।

জানিনা, নেই বলেই কি এই দলটিকে বরণ করতে হয়েছে ১৫-ই অগাস্ট কিংবা ২১ শে অগাস্টের মত এমন বেদনাবিধুর ষড়যন্ত্রের বিষ?

২১ শে অগাস্ট বোমা হামলার নিম্ন আদালতের রায়ের পরে অনেকের কাছেই অনেক কিছু অবিশ্বাস্য লেগেছে। কিন্তু রায়ের আগে বেশী অবিশ্বাস্য লেগেছিলো জাতীয়তাবাদী দলের নিষ্ঠুর তত্বটি। শেখ হাসিনা নাকি নিজের ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড এনে নিজেই নিজের দিকে ছুঁড়ে মেরেছিলেন।

এমন একটি ঘটনার পর আপনি যতই খারাপ এবং অস্বাভাবিক মানুষ হন না কেন, আপনার প্রাথমিক ভূমিকা বোধকরি হবে চুপ করে থাকা।

আপনার আমলে এমন একটি লজ্জাজনক ও ভয়াবহ অপরাধ সংগঠিত হয়েছে, কোথায় আপনি অবনত মাথায় দ্রুত তদন্তের পথে বা বিচারের পথে হাঁটবেন, সেটি না করে আপনি অতি দ্রুততার সাথে বের করে ফেলেছেন এই আক্রমণ আওয়ামীলীগ নিজেই করেছে।

৩০ মে ১৯৮১ সালে স্বৈরশাসক জিয়ার হত্যাকান্ডের পর অনেকেই ভেবেছিলো বি এন পি কিংবা খালেদার পরিবার অন্তত এইটুকু বুঝেছে যে ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটলে কিংবা ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত হলে ফলাফলটা হয় এমন তীব্র মৃত্যু।

কিন্তু দেখা গেলো ব্যাপারটা আসলে তা নয়। বাপ যেমন গাল শেইভ করতে করতে বলেছিলো 'প্রেসিডেন্ট মরে গিয়েছে তো কি হয়েছে? ভাইস প্রেসিডেন্ট তো রয়েছে'।

ঠিক বড় অদ্ভুত ভাবে তারেক যেন বাপের পুরো চরিত্রটিকে এত কুৎসিতভাবে হৃদয়াঙ্গম করেছে যেখানে আর ষড়যন্ত্রের সাথে পেছন থেকে কলকাঠি নয়, একেবারে হাওয়া ভবন কার্যালয়ে খুনীদের নিয়ে প্রথম সভাটি-ই করেছে সে। এবার শুধু শেখ হাসিনা-ই নয়, পুরো দলকে শেষ করে দিতে হবে তার।

এতিমের টাকা মেরে দেবার মামলায় খালেদার শাস্তি হবার পর পর  জাতীয়তাবাদী দলের সমর্থকেরা প্রথমে বড় হই হই করে ওঠে। তাঁরা বলে ওঠেন, "ধুর এই টাকা খালেদা মেরে দেয়নি"।

কিন্তু বছর না যেতেই আমি নিজে সাক্ষী হিসেবে শুনেছি জাতীয়তাবাদী দলের নেতা-কর্মীরা বলছেন অন্য কথা। তাঁরা বলছেন, কত মানুষ হাজার কোটি টাকা মারে, আর খালেদাকে মাত্র তিন কোটি টাকার জন্য ধরে রেখেছে, এটা অন্যায়। এত কম টাকার জন্য কাউকে শাস্তি দেয়া অন্যায়।

মানে দাঁড়ায়, আপনি আস্তে আস্তে বুঝে ফেলেছেন টাকাটা সে মেরেছে কিন্তু এটি ভেবে নিয়েও আপনি নিজেকে শান্তনা দিচ্ছেন, যে টাকার অংক তো আসলে অনেক কম। এত কম টাকার এত বড় শাস্তি অনুচিৎ।

ঠিক একই ভাবে ২১ শে অগাস্টের বোমা হামলায় তারেকের যাবজ্জীবন হওয়ার প্রাথমিক জোশের জজবায় জাতীয়তাবাদী মুরিদেরা ব্যাপারটিকে মেনে নিতে না পারবার মত হালুম-হুলুম করেছিলো। এই যেমন ধরেন, "এই বিচার মানিনা-মানবো না", 'তারেকের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে"-এমন।

কিন্তু বছর না যেতেই আড়ালে আবডালে বি এনপির চাচা জাতীয় নেতারা বা যুবক জাতীয় মুরিদেরা বলছেন, "এই হারা**দাটার জন্যই আজ দলের এই অবস্থা'।

আমি এমন কথা বি এন পি'র অসংখ্য নেতা ও কর্মীদের মুখে শুনেছি। কিন্তু প্রকাশ্যে তারা এসব বলার সাহস রাখেন না।

তবে তারেকের জাফরুল্লাহ চাচা বেশ কিছুদিন আগে তারেককে লন্ডনে আইন পড়বার পরামর্শ দিয়েছেন ও বাংলাদেশের রাজনীতিতে আপাতত নাক না গলাবার পরামর্শ দিয়েছেন। এই থেকেও তারেকের প্রতি তাদেরই নিজস্ব মুরুব্বি চাচাদের মনোভাবের কিছুটা অন্তত টের পাওয়া যায়।

আমি অবাক হই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সৌহার্দ্যময় নানাবিধ ভূমিকায়।

নির্বাচনের আগে খালেদার সাথে সংলাপের চেষ্টা, কোকো মারা যাবার পর খালেদার বাড়ীতে যাবার ঘটনা কিংবা খালেদাকে প্যারোলে মুক্ত করবার এই ঘটনাগুলো আমি সমর্থন করতেই পারিনা। উনি অপাত্রে উনার বড় মনের পরিচয় দিয়েছিলেন।

এই রাজনৈতিক সৌহার্দ্য অনেক হয়েছে। অনেক ভদ্রতা দেখানো হয়েছে এই দলটির প্রতি। আর নয়।

আপনার কি ধারনা আজকে ১৪ বছর লন্ডনে থেকে তারেক ষড়যন্ত্রের রাস্তায় হাঁটা বন্ধ করেছে? আপনার কি মনে হয় ডি জি এফ আই এর আচ্ছা পিটুনী সে ভুলে গেছে?

ভারতের একটি উইং এর সাথে তারেক বহু চেষ্টা করেছে গত ইলেকশনের আগে। সি আই এর কাছে পাত্তা পাচ্ছে না। চীন কিংবা পাকিস্তানেও হচ্ছে না তারেকের। গত ১৪ টি বছর ধরে এই যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত চরিত্রটি একটুও থামেনি।

কিশোরদের নিরাপদ সড়ক আন্দলোনে কিভাবে সে মদদ দিতে চেয়েছে সেটি পরিষ্কারভাবে একটি টেলিফোন কনভার্সেশনে ফুটে উঠেছে।

জামাত শিবিরের প্রাক্তন কর্মী তথাকথিত ভিপি নুরুকে টাকা পয়সা দিয়ে তারেকের-ই একটি উইং চালায় এই লন্ডন থেকে।

আমার কথা হচ্ছে, এই দেশে আর যেই রাজনীতি করুক বা করতে পারুক কিন্তু জিয়ার ফ্যামিলির কেউ যেন না হয়। এই পরিবারটিকে অসংখ্যবার সুযোগ দেয়া হয়েছে কিন্তু ষড়যন্ত্রের রাস্তা থেকে তারা সরে আসেনি।

ইদানীং প্রায়-ই শুনি তারেকের স্ত্রী জোবায়দা কিংবা তারেকের মেয়ে যাইমা জাতীয়তাবাদী দলের হাল ধরবে লন্ডন থেকে এসে কিংবা তাদের পরিবারের কেউ। তেলাপিয়া পাছ যেভাবে পুকুরে মাঝরাতে ঘাই মারে, এইসব খবরও কালে ভদ্রে রাজনীতিতে ঘাই মারে।

আমি বলি, নো। জিয়ার পরিবারের কেউ তো দূরের কথা, এদের বাসায় বেড়ে ওঠা একটা গাছের পাতাও যেন লোকালয়ে না পড়ে।

চিরজীবনের জন্য এদের রাজনীতি শেষ করে দিতে হবে। জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতি করুক দলের ত্যাগি নেতা কর্মীরা কিংবা এই দলের শিক্ষিত অংশ কিন্তু কোনোভাবেই জিয়ার ফ্যামিলির কেউনা।

১৫ অগাস্টের পর এই সাপেদের ফনায় দেশটা রক্ত ক্ষরণে ক্ষরণে শেষ। এই পরিবারের কেউ রাজনীতিতে থাকা মানেই হচ্ছে ষড়যন্ত্র, গুলি, পেট্রোল বোমা, গ্রেনেড নয়তো রক্ত।

জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতি দলের কর্মিরা-ই করুক। তারা ভাষন দিক। তারা ভোটের কথা বলুক, মানুষের কথা বলুক।

কিন্তু তারেক কিংবা জিয়া পরিবারের কেউ?

নো ওয়ে।

0 Shares

২টি মন্তব্য

  • সাবিনা ইয়াসমিন

    সত্যি বলতে বংশ পরম্পরায় রাজনৈতিক কর্মকান্ডে আমরা সাধারণ মানুষ হাপিয়ে উঠেছি। আমরা এর থেকে নিস্তার চাই। আমরা চাই দেশের নেতৃত্বের হাল যথাযোগ্য মানুষের হাতে থাকুক,,আদিকালের রাজকীয় মুকুটের মতো শুধুমাত্র উত্তরাধিকার সিস্টেমে এর প্রয়োগ না হোক। দেশের ব্যবস্থাপনা যেকোনো বংশ পরম্পরা থেকে মুক্ত হোক।

  • রোকসানা খন্দকার রুকু

    ” আমি বলি, নো। জিয়ার পরিবারের কেউ তো দূরের কথা, এদের বাসায় বেড়ে ওঠা একটা গাছের পাতাও যেন লোকালয়ে না পড়ে। চিরজীবনের জন্য এদের রাজনীতি শেষ করে দিতে হবে। জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতি করুক দলের ত্যাগি নেতা কর্মীরা কিংবা এই দলের শিক্ষিত অংশ কিন্তু কোনোভাবেই জিয়ার ফ্যামিলির কেউনা” যে যতো বড় নেতা বা লীগার হোক না কেন,,,–এটা বলার অধিকার কারুরই নেই। যে কেউ রাজনীতি করার অধিকার রাখে। আর আওয়ামীলীগে োএক মুজিব সাহেব আর হাসিনা খালা ছাড়া আমরা কি নেতা দেখি???
    “নির্বাচনের আগে খালেদার সাথে সংলাপের চেষ্টা, কোকো মারা যাবার পর খালেদার বাড়ীতে যাবার ঘটনা কিংবা খালেদাকে প্যারোলে মুক্ত করবার এই ঘটনাগুলো আমি সমর্থন করতেই পারিনা। উনি অপাত্রে উনার বড় মনের পরিচয় দিয়েছিলেন”,,- এটা হলো কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা কিংবা পায়ে পারা দিয়ে বলা ব্যাথা পাচ্ছে কিনা! আর বাংলাদেশে কি নির্বাচন হয় বা আছে। মিথ্যা আর কতো????
    এক এতিমের টাকার প্যানপ্যানানী সারাবছরই গানের মতো বাজে আর কতো? এখন হাজারো এতিমের টাকা আওয়ামী নেতারা লুটপাট করছে। জনগন সবই বোঝে, কেউ ঘৃনায়, কেউ ভয়ে বলে না।।।।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ