হ্যালুসিনেশন

আকবর হোসেন রবিন ১ ডিসেম্বর ২০১৯, রবিবার, ০৫:৩২:১৮অপরাহ্ন রম্য ১৫ মন্তব্য

সন্দ্বীপে সাগড় পাড়ে গেলে দেখতাম, ছোট ছোট পোলাপান চুম্বকের মাঝখানে রশি বেঁধে টেনে টেনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। লোহা লক্করের সন্ধানে। চুম্বকের গায়ে যেগুলো আটকে যায় কিছুক্ষণ পর পর সেগুলো হাতের থলেতে রাখে।পরে একদিন আম্মার কাছে শুনলাম, এইভাবে সাগরের কূলে হাঁটতে গিয়ে একসময় অনেকে নাকি স্বর্ণ-রোপ্যও পেত। কথাটা শুনার পর, আমার শিশু মনে লোভ বেড়ে গেল। তখন থেকে রাস্তায় হাঁটার সময় আমি নিচের দিকে সামনে-ডানে-বামে খুব সজাগ দৃষ্টি রেখে হাঁটি। যদি মূল্যবান কিছু পেয়ে যায়!

এইভাবে কতো দিন-মাস-বছর চলে গেলো, অথচ কখনও কোন কিছুই পেলাম না। বরঞ্চ অনেকদিন হাঁটার সময় দেখেশুনেও গোবরে পা দিয়ে দিছি। কারণ, আমার লোভী চোখ গোবর দেখেও সেই সংকেত মস্তিষ্কে পাঠাত না।

তো, হতাশায় হোক কিংবা অভ্যাস মুছে, ধীরে ধীরে আমার দেহ থেকে সব লোভ-লালসা মুছে গেলো।আমি স্বাভাবিকভাবেই হাটাঁচলা করতে শুরু করলাম।আমার চোখও গোবর-কাদা দেখে মস্তিষ্কে সঠিক সংকেত দিতে শুরু করলো। কিন্তু………..

সেদিন সকালে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ দেখি ৫০০ টাকার একটা ও ১০০ টাকার বেশ কয়েকটা চকচকে নোট রাস্তায় পড়ে আছে। হঠাৎ দেখায় আমি থতমত খেয়ে গেলাম। কিছুক্ষণের জন্য হিতাহিত বুদ্ধি হারিয়ে হা করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। সামনের দিক থেকে স্কুল ড্রেস পরিহিত দুটো মেয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। পিছনে মধ্যবয়স্ক একজন লোক দাঁড়িয়ে মনে খুব সুখ নিয়ে সিগারেট ফুঁকছে। তার চেহারায় ভদ্র ভদ্র টাইপের একটা ভাব আছে। আমার তখন ঠিক কি করা উচিত তা ভাবার আগেই, আমি পিছনের লোকটাকে ডেকে টাকার দিকে আঙ্গুল রেখে বলি, দেখেন আংকেল এখানে কিছু টাকা পড়ে আছে। আর এটা বলেই আমি বোকার মতো হাঁটতে শুরু করি। কিছুদূর গিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি লোকটা টাকা গুলো শার্টের পকেটে নিয়ে উল্টো দিকে হাঁটা দিছে।

পথের মধ্যে হঠাৎ কিছু টাকা পড়ে থাকতে দেখলাম। তা নিজে না নিয়ে অন্য আরেকজনরে দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলাম। এই বিষয়টা এখানে খতম হলেই পারতো। কিন্তু না! ব্যাপারটা সেদিনের পর থেকে আমার মাথার মধ্যে এমনভাবে গেঁথে গেছে যে, আমি এখন প্রতিনিয়ত হ্যালুসিনেশনে ভুগছি।রাস্তায় নিচের দিকে তাকালেই শুধু টাকা দেখি! রাস্তায় পড়ে থাকা সব কাগজ এখন আমার চোখের সামনে টাকা হয়ে ভাসে!

 

 

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ