মধ্য আগস্টের সেই কালো রাতে অকৃতজ্ঞ মীর জাফরের দল যখন
বিশ্বাস ঘাতকতার ধারালো অস্ত্রে বিদীর্ণ করলো তোমার
পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইল ব্যাপ্ত বুক, অতঃপর বত্রিশ নম্বর থেকে
নেমে আসা অমল রক্তের স্রোত সিক্ত করলে বাংলার দূর্বা
মাটি জল, ততোক্ষণে স্বপ্নের স্বদেশে সেঁটে গেছে তোমার
অমোচনীয় কলংক তিলক, সর্বনাশের আর কিইবা বাদ আছে তখন !
তোমার লাশ নিয়ে এরপর যখন শেয়াল-কুকুরের মত হুল্লোড় জুড়লো
তখন রচিত হলো সবচে জঘন্যতম ইতিহাসের । ঘৃণাভরা চোখে
পৃথিবীও বিস্ময়ে ভাবলো, অকৃতজ্ঞ বাঙালিই কেবল কী করতে পারে !
শুরু হলো যত মচ্ছব এরপর ! ষড়যন্ত্রের ঘৃণ্য রাইফেলের খোঁচায় বদলে
গেলো সংবিধানের শ্বেত শুভ্র পাতা। মুছে গেলো ধর্মনিরপেক্ষতা,
সমাজতন্ত্র, মুছে গেলো তোমার প্রিয় জয় বাংলা ! উদ্যত হলো
অথর্বের দল অতঃপর একুশে ফেব্রুয়ারি ও বাংলা ভাষাকে বিকৃত করতে !
যে তুমি স্বদেশের মানচিত্র ভালোবেসেছিলে সবচে বেশী, নিজের জীবন বিপন্ন
করে সাধের স্বদেশকে নিজের এনে দিয়েছিলে স্বাধীনতা, সে দেশেই
তুমি হত্যার বিচার নিসিদ্ধ করতে জারি হলো, এক নিসিদ্ধ বুনো
দানব আইন, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ । বুঝি, তোমার জীবনেরই দাম নেই শুধু !
ধর্ম ব্যাবসায়ী কতিপয় অসাধুর আলখেল্লার ঝলকে ধর্ম ব্যাবহার হলো অতঃপর
স্বীয় স্বার্থে এবং নরাধম প্রাণীর দল জাহির হলো এদেশের সেবক রূপে !
আর এমন নির্লজ্জ বেহায়াপনার সমার্থকও জুটলো তোমার সস্নেহের এই ভূখণ্ডে ।
তবুও যে দুঃস্থ বাংলাকে তুমি স্বপ্ন দ্যাখিয়েছিলে সোনালী স্বপ্নের, দু মুঠো অন্নের, নিজ
জীবন বিপন্ন করে এনে দিয়েছিলে স্বাধীনতা, সে বাংলায় তোমার অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন
করতে যারা তোমাকে হত্যার পর সংবিধান বদলে জারি করে নিষিদ্ধ
দানব আইন, পাঠ্যপুস্তক থেকে মুছে দ্যায় নাম, সে পিশাচ কাপুরুষদের
পৈশাচিকতা আজো বহমান সত্ত্বেও তোমার সাধের বাংলায় দাঁড়িয়ে এইটুকুন
তবে দৃঢ় চিত্তেই জানাতে পারি হে স্বাপ্নিক, সেদিন তুমি যখন বাংলার ভবিষ্যৎকে
বুকে জড়িয়ে টলতে টলতে পড়ে গেলে সিঁড়ির উপর, নিজের জীবনকে তুচ্ছ
করে স্বদেশের মানচিত্রে ঘুমালে শেষবারের মত, সে থেকে প্রতি আগস্টেই
বাংলাদেশ নীরব নিথর হয়ে যায়। কান্নার অবিশ্রাম কল্লোলে প্রস্ফুটিত হয়
শব্দাবলী, ভুলি নাই তোমাকে পিতা, ভুলবো না কখনোই । চোখে ভাসে রক্তে
ভেজা পাঞ্জাবী, বাতাসে আসে বারুদের গন্ধ, শোকে দ্রোহে অবিরত রক্ত ঝরে হৃদয়ে !
১৮টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
সাবাস , আপনার বোধের জন্য অনেক প্রশংসা ।
মীর জাফরেরা নির্ঘুম এখনও ।
আমাদের ম্রিয়মাণতায় ।
মর্তুজা হাসান সৈকত
যে চেতনাকে সামনে রেখে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিলো সে চেতনাকে নস্যাৎ করার প্রথম পদক্ষেপ ছিলো শেখ মুজিবকে হত্যা করা । পঁচাত্তর পরবর্তী সরকারগুলো পরবর্তীতে এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করে ।
প্রজন্ম ৭১
কি লিখবো বুঝতে পারছি না । পিতা হত্যার বদলা নিতে পারিনি এখনো । যন্ত্রনায় ছটফট করছি প্রতি নিয়ত।
ভালো লিখেছেন । শ্রদ্ধা আপনার প্রতিও – পিতাকে নিয়ে এমন ভাবে লেখার জন্য ।
মর্তুজা হাসান সৈকত
শেখ মুজিব হত্যায় যে বা যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত তাঁদের কেউ কেউ এখনো জাতীয় বীর বলে প্রচারিত, কী ভাগ্য আমাদের !
মিসু
জাতির পিতার জন্য এমন শ্রদ্ধাঞ্জলিই উপযুক্ত । একটি দেশ একটি জাতি পরিচিত হয়েছিল যার মাধ্যমে , যার হাত ধরে সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া একটি জাতি পথ চলা শুরু করেছিল , তাঁকে নির্মম ভাবে হত্যা করলো কতিপয় পিশাচ । হত্যা পরবর্তী স্বাধীন জাতির যাত্রা পরধিনতার পথে । শুভেচ্ছা আপনাকে এমন লেখার জন্য -{@ -{@
মর্তুজা হাসান সৈকত
কিছু কিছু বেজন্মা কিন্তু এখনো রয়ে গেছে যারা কিনা ধর্মের দোহাই তুলে তুলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে । কালিমা লেপন করছে শেখ মুজিবের কৃতিত্বে অথচ এ শেখ মুজিব না আসলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো কিনা সেটাই সন্দেহ ।
জিসান শা ইকরাম
” যে তুমি স্বদেশের মানচিত্র ভালোবেসেছিলে সবচে বেশী, নিজের জীবন বিপন্ন
করে সাধের স্বদেশকে নিজের এনে দিয়েছিলে স্বাধীনতা, সে দেশেই
তুমি হত্যার বিচার নিসিদ্ধ করতে জারি হলো, এক নিসিদ্ধ বুনো
দানব আইন, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ । বুঝি, তোমার জীবনেরই দাম নেই শুধু ! ”
—- বেদনায় নীল হই শুধু কবি।
এ কেমন জাতি আমরা , পিতাকে হত্যা করে উল্লাস করি !!
অসাধারন এক কবিতা ।
মর্তুজা হাসান সৈকত
এমন ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে আমরাই একমাত্র স্থাপন করেছি । শুধুমাত্র হত্যা করেই ক্ষান্ত হইনি ইতিহাস থেকে মুজিবকে মুছে ফেলতে যা যা করা উচিত সবই করেছিলাম তাঁর । কী নিচু মন মানুসিকতা ! যে স্বাধীনতা এনে দিলো তাঁকেই সবচে ব্রাত্য ঘোষণা করা হলো !
শিশির কনা
আমরা আছি জাতির পিতার স্বপ্ন পুরনের সৈনিক হয়ে। যতটা পারি তা অবশ্যই করবো। খুব সুন্দর উপস্থাপনা ।
মর্তুজা হাসান সৈকত
ধন্যবাদ শিশির কনা । সুন্দর কথা বলেছেন আপনি ।
খসড়া
মধ্য আগস্ট বাহ দারুন কথা টা আগে ভাবিনি। চমতকার।
মর্তুজা হাসান সৈকত
বঙ্গবন্ধুকে নিয়েতো অনেক কবিতা তাই খানিকটা আঙ্গিক পরিবর্তন করে লিখতে চেয়েছিলাম কবিতাটা । ধন্যবাদ পাঠ প্রতিক্রিয়ায় ।
আদিব আদ্নান
দায়িত্বহীনতার দায়িত্ব নিয়েছি যে আমরা ।
মর্তুজা হাসান সৈকত
স্বাধীনতার চেতনাকে অপশক্তি অনেকাংশেই ভূলুণ্ঠিত করে ফেলেছে । পারলে শেখ মুজিবকে এরা ইতিহাস থেকেই পুরোপুরি মুছে দিত ।
যাযাবর
দৃঢ় চিত্তেই জানাতে পারি হে স্বাপ্নিক, সেদিন তুমি যখন বাংলার ভবিষ্যৎকে
বুকে জড়িয়ে টলতে টলতে পড়ে গেলে সিঁড়ির উপর, নিজের জীবনকে তুচ্ছ
করে স্বদেশের মানচিত্রে ঘুমালে শেষবারের মত, সে থেকে প্রতি আগস্টেই
বাংলাদেশ নীরব নিথর হয়ে যায়। ………… এখানেই থেমে গিয়েছে স্বপ্ন দেখা এক জাতির স্বপ্ন। (y)
মর্তুজা হাসান সৈকত
খুবই ঠিক কথা ভাই । সোনার বাংলার প্রকৃত স্বপ্ন প্রকৃতই বাস্তবায়িত হবে কিনা সেইতো সংশয়ে !
নীলাঞ্জনা নীলা
এমন লেখায় মন্তব্য করাটা আসলেই কঠিন। খুব ভালো লিখেছেন জাতির পিতাকে নিয়ে।
মর্তুজা হাসান সৈকত
ধন্যবাদ আপি আপনার সুচিন্তিত অভিমতের জন্য । ভালো থাকুন ।