তিনি এলাকার মাতব্বর, মান্যগণ্য। সম্প্রতি হজ্জব্রত পালন করে এখন হাজী সাহেবও। সবাই তাকে মানে।আবার  তিনি মসজিদ কমিটির একজন সদস্য। গ্রামের অধিকাংশ বিচার সালিশ তাকে ছাড়া হয়না। এরকম ফেরেশতার মত একজন মানুষ, সাতসকালে তার বাড়িতে কেন লোকসমাগম? কি হয়েছে? জানা গেল কেউ গলায় দড়ি দিয়ে আত্যহত্যা করেছে। সবাই বলাবলি করছে কেন এ কাজ করল বা কি হয়েছিল এসব!
হাজী সাহেবের দুই স্ত্রী। কালই তিনি অতি গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। একদম বিপদে পড়েই বলা চলে। একজনের বিপদে এগিয়ে যাওয়ার সাজা তাকে ভোগ করতে হচ্ছে।

করিম মিয়া সাদাসিধে গ্রামের নিম্ন গৃহস্থ। দুই বাচ্চা আর অতি সুন্দরী বউ নিয়ে অভাবের সংসার। রাস্তার পাশেই দোচালা টিনের বাড়ি। স্বামী স্ত্রীর অভাবের সংসারে ভালোবাসার কমতি যেমন নেই; তেমনি অভাব আর চাহিদার কমা বাড়ায় সারাক্ষন দুজনের খুটখাট ঝগড়া লেগেই থাকে। কোন কোনদিন সেটা অনেক বেশি বলে মনে হয়। এর কারন হল করিম মিয়া একটু বেশি চিল্লায়। অন্যেরা শুনলে ভাবতে পারে এই বুঝি শেষ। করিম মিয়া গজর গজর করতে করতে বেরিয়ে যায়" ফিরে এসে যেন তোর মুখ না দেখি, সোজা বাপের বাড়ি যাবি"।

দোকানে গিয়ে চায়ের অর্ডার দেয় কিন্তু ক‘চুমক খেয়ে মনে হয় পাছে বউ বাপের বাড়ি চলে যায়। বউ ছাড়া সে একমুহুর্ত থাকতে পারেনা। একমুঠো চকলেট নিয়ে ফেরত আসে বউ,বউ ডাকতে ডাকতে। অতঃপর দুজনে কুটুর মুটুর করে চকলেট খায় আর হাসে। পাশের বুড়ো খালা,মামীরাও হাঁসে করিমটা বউ পাগলা। শুধু একজনের হাসির বদলে লালা ঝরে, ওত পেতে থাকে সুযোগের। কবে সেই দিন আসবে?

আজকেও ঝগড়া চলছে, খুব তুঙ্গে একেবারে। গন্যমান্য হাজী সাহেব রাস্তা দিয়ে যাবার সময় অন্যদিনের মত আজও তাদের ঝগড়া শুনেছেন। হঠাৎ তিনি আঁতকে উঠলেন। নাউযুবিল্লাহ এ কি হল?

যেনতেন ঝগড়া হলে কথা ছিলনা। করিম মিয়া ঝগড়ার এক পর্যায়ে চরম রেগে গিয়ে স্ত্রীকে একতালাক, দুইতালাক, তিনতালাক বলে ফেলেছে। শেষ বারে যদিও তার বউ মুখ চেপে ধরেছিল তারপরও তো হয়েছে।

এটা নিয়ে যোহরের নামাজের পর মসজিদে মাতব্বর সাহেব কথা তুললেন। করিম মিয়াকে সন্ধ্যায় ডেকে পাঠানো হল। অন্যান্য মান্যগন্য মানুষজনও উপস্থিত। দুচারজন মওলানাও আছেন। সবার উপস্থিতিতে মাতব্বর সাহেব আবার বললেন সকালে করিম রাগের মাথায় তার বউকে তিনতালাক দিয়েছে। এটার সঠিক সুরাহা প্রয়োজন। কারণ শান্তিপূর্ণ এলাকায় কোন অনাচার হতে দেয়া যাবেনা।

উপস্থিত গন্যমান্য সিদ্ধান্ত ও ফতোয়া দিলেন করিম মিয়ার স্ত্রী তালাক হয়েছে। করিম মিয়া যেহেতু তার স্ত্রী তালাক বলেছে তিনবার তাই সে তালাক হয়ে গেছে।

করিম মিয়া সবার হাতে পায়ে ধরল। ক্ষমা চাইল আর কখনো এমন করবেনা। এবং বললো সেও জানে রাগের মাথায় সে বলেছে। আর রাগের মাথায় তালাক বললে তালাক হয়না। স্ত্রীর দোষ ত্রুটি হলে তিন স্টেপে তালাক দিতে হয় এবং ঠান্ডা মাথায় দিতে হয়। প্রথমে হালকা শাসন, তারপর বিছানা আলাদা, শেষ পর্যন্ত অসহনীয় হলে কিছু উপস্থিতির সামনে দেনাপাওনা মিটিয়ে দিলেই তবে তালাক হয়।

করিম মিয়ার কোন কথাই টিকলনা। সিদ্ধান্ত হল,করিম মিয়া এই বউ নিয়ে সংসার করতে চাইলে হিল্লে বিয়ে করাতে হবে। করিম মিয়া অগত্যা রাজী হয়ে গেল। এবার হিল্লে বিয়ের পাত্র খোঁজা শুরু হল। উপস্থিত সবার মাঝেই আলোচনা হল হিল্লেবিয়ে হবে কার সাথে। সবাই মাতব্বর সাহেবকে দেখিয়ে দিলেন।অগত্যা মাতব্বর সাহেবকেই বিয়েতে রাজী হতে হল।

করিম মিয়ার বউ-বাচ্চা সবাই কাঁদছে। কিছুক্ষন পরে করিমের বউয়ের বিয়ে। খুব গোপনে মাতব্বরের সাথে হিল্লে বিয়ে হল। কানের পানি কান দিয়ে যাওয়াই ভালো। হিল্লে বিয়ের পরবর্তী  নিয়ম হল শারিরীক সম্পর্ক অবশ্যই হতে হবে। পরদিন তালাক হবার পর ইদ্দত শেষ হলে পুনরায় করিম মিয়া বিয়ে করবে। তা না হলে স্ত্রী জায়েজ হবে না। বাসর ঘরে মাতব্বর সাহেব ঢুকলেন। অগত্যা এসব না করলে তো হচ্ছেই না। অনেক জোর জবরদস্তির পর করিম মিয়ার বউ পরাস্ত হল। মাতব্বরের অনেকদিনের জমানো, অভুক্ত খায়েশ পুরন করল। দাতাল শুয়োরের মত শরীরের যেখানে সেখানে কামড় বসিয়ে পুরুষ হবার প্রমাণ রেখে দিল। প্রায় সারারাতই এমন চলল। বাকিরাত করিম মিয়ার বউ কেঁদে কাটাল।

করিম মিয়ারও দুচোখে ঘুম নেই, কখন সকাল হবে। পরদিন সে আবার বউ আনবে। বউ করিম মিয়ার হবে। কারন মাতব্বর তাকে কাল তালাক দেবে। কিছুদিন অপেক্ষা করার পর করিম মিয়ার সাথে আবার বিয়ে হবে। আবার তারা একসাথে খুটখাট ঝগড়া করবে। কখন আবার মিটিং বসবে স্বনামধন্য তার বউকে তালাক দেবে এ ভেবে বাচ্চাদের বুকে জডিয়ে নিল।

তাদের সুখের সংসার। চৌদ্দ বছরের মেয়েটিকে সে এনেছিল বিয়ে করে। গরীব ঘরে আল্লাহ পরী দিয়েছে। করিম মিয়াকে সবাই এজন্য একটু হিংসা করে। করিম মিয়া বউকে দেখে আর মনে মনে খুশিই হয়। বাজার থেকে স্নো,আলতা,পাউডার নিয়ে আসে বউ কাজল বানায়। চোখে পড়লে চোখজোড়া কি সুন্দর হয়। সব ছেড়ে দেখে থাকতে ইচ্ছে করে। এবার এলে আর কোনদিন রাগ করবে না। আর ওসব বাজে কথা তো মুখেই আনবে না। যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে। মাতব্বর তাদের ভালোবাসা দেখে হিংসায় এমন করল। সে তিনতালাক বলেনি ঠিক মনে আছে।

মাতব্বরের বাড়িতে এত লোক কেন? কি হয়েছে? ভীড় ঠেলে করিম মিয়া ভেতরে ঢুকল। তার বউ চৌকির উপর শোয়া। কেন কি হয়েছে? সে আর নাই মারা গেছে। একবার মুখটা দেখল কি মায়াবী অভিমান সে মুখে। যেন বলছে-"করিম তুমি আমার প্রথম ও শেষ প্রেম। আজ তুমি আমায় একটা জানোয়ারের হাতে তুলে দিতে সাহায্য করলে। কতবার বলেছি সড়ক দিয়ে লোকজন যায়। আস্তে কথা বল। নাই কথাতেই চিল্লাও। সারারাত শুয়োরটা আমাকে খুবলে খুবলে খেয়েছে। তাই এ শরীর আর আমি কাউকে দেখাতে চাইনা। তুমি ভালো থেকো।"

প্যান্ট-শার্ট-গেঞ্জি পরিহিত লোকজন ভালো; কিংবা ভালো না। দাঁড়ি- টুপি পান্জাবী পরিহিত মানুষ ভালো না আবার পুত পবিত্র এমনটা নয়। সমস্যা পোশাক বা ধর্মে নয়। আবার কাবা, মসজিদ, মন্দির, গীর্জাও সমস্যা নয়। সমস্যা মানসিকতায়। যারা পোশাকী নয় কিন্তু মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষ। বরং আমরা সেই সব মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষকে মানুষ মনে করি। তার পোষাক কিংবা স্ট্যাটাস যেটাই হোক না কেন?  সারাজীবন অপকর্ম করে তা ঢাকতে পোশাক ব্যবহার করব। আবার ধর্ম, ধর্মীয় বিধান মান্যকারী হব কিন্তু সেটা ব্যবহার করে লেবাস ধারন করে নিজের স্বার্থ হাসিল করব। এটা যেন কখনোই হাসিল না করি সেটা নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই। সবাইকে শুভ রাত্রি🌹🌹

0 Shares

৩৪টি মন্তব্য

  • সাবিনা ইয়াসমিন

    ধর্মীয় রীতি যদি স্বার্থপরের অস্ত্রে পরিনত হয় তবে রেহাই পাওয়ার পথ থাকে না। যে জাতি ধর্মকে মানবিকতার উপরে স্থান দেয় তারা ধার্মিক হতে পারবে কিন্তু প্রকৃত মনুষ্যজাতিতে পরিনত হতে পারে না। প্রতিকী গল্পটি পড়ে ভালো লেগেছে।
    শুভ কামনা 🌹🌹

  • মোঃ মজিবর রহমান

    ধর্মীয় রীতি যদি স্বার্থপরের অস্ত্রে পরিনত করে কুস্বভাবের মানুষ। তাই ধর্মের রীতি কোন সমস্যা নয়। সমস্যা নেতার বা চালকের।
    তিন তালাকের নিয়ম কেউ জানেনা বা জোর করে সমাজপতিরা চাপিয়ে দেয়, যাহা ধর্মীয় নিয়ম নয়।

    নিম্নে তিন তালাকের ইসলামের নিয়ম।
    মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ “হে নবী! তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও তখন তাদেরকে তালাক দাও তাদের ‘ইদ্দাতের প্রতি লক্ষ্য রেখে, আর ‘ইদ্দাতের হিসাব সঠিকভাবে গণনা করবে।” (সূরাহ আত্‌-ত্বলাক ৬৫/১)

    [২৪] হালাল জিনিসের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট জিনিস হচ্ছে ত্বলাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ। যদিও এটি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত তবুও স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রাখতে না পারলে ইসলামে এ ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের বিচ্ছেদ ঘটানোর সুযোগ করে দেয়া হয়েছে ত্বলাকের মাধ্যমে। এখানে ত্বলাক সংক্রান্ত কয়েকটি নিয়ম উধৃত করা হলো।
    ১। কোন স্ত্রীর মধ্যে স্বামীর প্রতি অবাধ্যতার লক্ষন দেখা দিলে স্ত্রীকে সদুপদেশ দিতে হবে। প্রয়োজনে তার শয্যা ত্যাগ করতে হবে, শিক্ষামূলক প্রহার করতে হবে। (এ মর্মে সূরা আন-নিসাঃ ৩৪ আয়াত দেখুন)
    ২। যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদের আশঙ্কা দেখা দেয় তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন ও স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিশ নিযুক্ত করতে হবে। “তারা দু’জন সংশোধনের ইচ্ছে করলে আল্লাহ্‌ তাদের উভয়ের মাঝে সামঞ্জস্য করে দেবেন।” (সূরা আন-নিসাঃ ৩৫)
    ৩। যদি তালাক দেয়া একান্তই অপরিহার্য হয়, তাহলে নারী যে সময়ে ঋতুমুক্তা ও পরিচ্ছন্না হবে, সে সময় যৌন মিলনের পূর্বেই স্বামী তাকে এক তালাক দিবে আর স্ত্রী তালাকের ইদ্দত তথা তিন ঋতু বা ঋতুমুক্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করবে- বাকারাঃ ২৮। এ ইদ্দতের মধ্যে যাতে পুনর্মিলন ও সন্ধির সুযোগ থেকে যায় সে জন্য স্বামী স্ত্রীকে তার গৃহ থেকে বহিষ্কৃত করবে না, আর স্ত্রীও গৃহ থেকে বের হয়ে যাবে না। অবশ্য স্ত্রী যদি খোলাখুলি ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাহলে স্বতন্ত্র কথা। (সূরা আত-ত্বলাক-১)
    ৪। স্বামী যদি স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে চায় [এক তালাক অথবা দু’তালাকের পরে] তাহলে তাকে ইদ্দতের মধ্যে স্বাচ্ছন্দে ফিরিয়ে নিতে পারবে। এ শারঈ রীতির আরেকটি বড় সুবিধা এই যে, এক তালাক অথবা দু’তালাকের পরে ইদ্দতের সীমা শেষ হয়ে গেলেও স্বামী তার তালাকদত্তা স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করতে পারবে নতুনভাবে মাহর নির্ধারণ ও সাক্ষীর মাধ্যমে। অন্য পুরষের সাথে স্ত্রীটির বিবাহিতা হওয়ার কোন প্রয়োজন হবে না। এ অবস্থায় পূর্ব স্বামী তাকে বিবাহ করতে না চাইলে স্ত্রী যে কোন স্বামীর সঙ্গে বিবাহিতা হতে পারবে।
    ৫। আবদুল্লাহ বিন উমার বর্ণিত আবূ দাঊদের হাদীস হতে জানা যায়, কেউ ঋতু অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দিলে সে তালাককে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তালাক হিসেবে গণ্য করেননি। কাজেই কেউ তালাক দিতে চাইলে স্ত্রীর পবিত্রাবস্থায় তালাক দিতে হবে।
    ৬। কেউ স্ত্রীকে এক তালাক দিয়ে ইদ্দতের মধ্যে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিলে একটি তালাক বলবৎ থাকবে। স্ত্রীর ঋতুমুক্ত অবস্থায় স্বামী দ্বিতীয় তালাক দিয়ে স্ত্রীকে ইদ্দতের মধ্যে আবার ফিরিয়ে নিতে পারবে। এক তালাক বা দু’ তালাক দিয়ে স্ত্রীকে ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে নিলে তাদের মধ্যে বিয়ে পড়ানোর প্রয়োজন হয় না।
    ৭। এক তালাক অথবা দ্বিতীয় তালাক দেয়ার পর ইদ্দত শেষ হয়ে গেলে স্বামী ইচ্ছে করলে তার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করতে পারবে। এতে যেন স্ত্রীর অভিভাবকেরা বাধা সৃষ্টি না করে- (সূরা আল-বাকারাহঃ ২৩২)
    ৮। স্বামী তার স্ত্রীকে পরপর ৩টি তুহুরে বা ঋতুমুক্ত অবস্থায় তিন তালাক না দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তিন তুহুরে তিন তালাক দিলেও বিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এ অবস্থায় ঐ স্বামী স্ত্রী আবার সরাসরি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে না। তারা পুনরায় কেবল তখনই বিয়ে করতে পারবে যদি স্ত্রীটি স্বাভাবিকভাবে অন্য স্বামী গ্রহণ করে এবং তার সঙ্গে মিলিত হয় অতঃপর ঐ স্বামী মারা যায় বা স্ত্রীটিকে তালাক দেয়- বাকারাঃ ২৩০। উল্লেখ্য তিন তালাক হয়ে গেলে প্রথম স্বামীর সাথে বিয়ের জন্য অন্য পুরুষের সাথে মহিলাকে বিয়ে করে তার সাথে মিলন ঘটতে হবে এবং সে [দ্বিতীয় স্বামী] যদি কোন সময় স্বেচ্ছায় তাকে তালাক দেয় তাহলে প্রথম স্বামী পুনরায় বিয়ে করতে পারবে।
    একত্রিত তিন তালাক প্রসঙ্গঃ
    ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থে আব্দুর রাযযাকের প্রমুখাৎ, তিনি তাউসের পুত্রের বাচনিক এবং তিনি স্বীয় পিতার নিকট হতে আব্দুল্লাহ বিন ‘আব্বাস (রাঃ) এর সাক্ষ্য উদ্ধৃত করেছেন যে, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পবিত্র যুগে আর আবূ বাকরের (রাঃ) সময়ে আর উমার (রাঃ) এর খিলাফাতের দু’বৎসর কাল পর্যন্ত একত্রিতভাবে তিন তালাক এক তালাক বলে গণ্য হত। অতঃপর উমার (রাঃ) বললেন, যে বিষয়ে জনগণকে অবকাশ দেয়া হয়েছিল, তারা সেটাকে তরান্বিত করেছে। এমন অবস্থায় যদি আমরা তাদের উপর তিন তালাকের বিধান জারী করে দেই, তাহলে উত্তম হয়। অতঃপর তিনি সেই ব্যবস্থাই প্রবর্তিত করলেন।
    একত্রে তিন তালাক দেয়া হলে এক তালাক বলে গণ্য হবে। এর প্রমাণঃ (আবূ রুকানার স্বিতীয় স্ত্রী আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট তার শারীরিক অক্ষমতার কথা প্রকাশ করলে) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবদ ইয়াযীদকে (আবূ রুকানাকে) বললেন, তুমি তাকে ত্বালাক দাও। তখন সে ত্বলাক দিল। অতঃপর তাকে বললেন, তুমি তোমার (পূর্ব স্ত্রী) উম্মু রাকানা ও রুকানার ভাইদেরকে ফিরিয়ে নাও। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমিতো তাকে তিন ত্বলাক দিয়ে ফেলেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি তা জানি। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করলেন, “হে নবী! যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে ত্বলাক দিবে তখন তাদেরকে ইদ্দাতের উপর ত্বলাক দিবে”। (আত-ত্বলাক ৬৫:১) (সহীহ আবু দাউদ হাদীস নং ২১৯৬)
    উপরোক্ত হাদীসে বোঝা যাচ্ছে যে, উপরোক্ত হাদীসে তিন ত্বলাক দেয়া বলতে বিখ্যাত ভাষ্য গ্রন্থ ‘আউনুল মা’বুদ ৬ষ্ঠ খণ্ড ১৯০ পৃষ্ঠায় (আরবী) ব্যাখ্যায় (আরবী) উল্লেখ করেছেন। যার অর্থ আবূ রুকানা তার স্ত্রীকে এক সাথেই তিন ত্বলাক প্রদান করেছিলো।
    এখন প্রশ্ন, উমার (রাঃ) এ নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তন করলেন কেন? প্রকাশ থাকে যে, ইসলামী বিধানগুলো মোটামুটি দু’ভাবে বিভক্ত। প্রথম শ্রেণীর আইনগুলো স্থান, কাল ও পাত্র ভেদে এবং ইজতিহাদের পরিবর্তনে কোন অবস্থানেই কোনক্রমে এক চুল পরিমাণও বর্ধিত, হ্রাসপ্রাপ্ত ও পরিবর্তিত হতে পারে না। যেমন ওয়াজিব আহকাম, হারাম বস্তুসমূহের নিষিদ্ধতা, যাকাত ইত্যাদিন পরিমাণ ও নির্ধারিত দণ্ডবিধি। স্থান, কাল পাত্রভেদে অথবা ইজতিহাদের দরুণে উল্লিখিত আইনগুলো পরিবর্তন সাধন করা অথবা তাদের উদ্দেশ্যের বিপরীত ইজতিহাদ করা সম্পূর্ণ অবৈধ।
    দ্বিতীয় শ্রেণীর আইনগুলো জনকল্যাণের খাতিরে এবং স্থান-কাল-পাত্রভেদে এবং অবস্থাগত হেতুবাদে সাময়িকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। যথা শাস্তির পরিমাণ ও রকমারিত্ব। জন্যকল্যণের পরিপ্রেক্ষিতে স্বয়ং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও একই ব্যাপারে বিভিন্নরূপ নির্দেশ প্রদান করেছেন, যেমনঃ
    ক) মদ্যপায়ীকে চতুর্থবার ধরা পড়ার পর হত্যা করার দণ্ড- আহমাদ, আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ।
    খ) যাকাত পরিশোধ না করার জন্য তার অর্ধেক মাল জরিমানাস্বরূপ আদায় করা- আহমাদ, নাসায়ী, আবূ দাউদ।
    গ) অত্যাচারীর কবল হতে ক্রীতদাসকে মুক্ত করে স্বাধীনতা প্রদান করা- আহমাদ, আবূ দাউদ, ইবনু মাজা।
    ঘ) যে সকল বস্তুর চুরিতে হস্তকর্তনের দণ্ড প্রযোজ্য নয়, সেগুলোর চুরিরর জন্য মূল্যের দ্বিগুণ জরিমানা আদায় করা- নাসায়ী ও আবূ দাউদ।
    ঙ) হারানো জিনিস গোপন করার জন্য দ্বিগুণ মূল্য আদায় করা- নাসায়ী, আবূ দাউদ।
    চ) হিলাল বিন উমাইয়াকে স্ত্রী সহবাস বন্ধ রাখার আদেশ দেয়া- বুখারী, মুসলিম।
    ছ) কারাদণ্ড, কশাঘাত বা দুররা মারা ইত্যাদি শাস্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রদান করেননি। অবশ্য অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তিনি সাময়িকভাবে আটক করার আদেশ দিয়েছিলেন- আবূ দাউদ, নাসায়ী ও তিরমিযী।
    রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইন্তিকালের পর খুলাফায়ে রাশেদীনও বিভিন্ন প্রকারের শাস্তি ও দণ্ড প্রদান করতেন। উমার ফারূক (রাঃ) মাথা মুড়ানোর ও দুররা মারার শাস্তি দিয়েছেন। পানশালা আর যে সব দোকানে মদের ক্রয় বিক্রয় হত, সেগুলো পুড়িয়ে দিয়েছেন।
    রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পবিত্র যুগে মদের ব্যবহার ক্বচিৎ হত। উমার (রাঃ) এর যুগে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি ঘটায় তিনি এ অপরাধের শাস্তি ৮০ দুররা আঘাত নির্দিষ্ট করে দেন আর মদ্যপায়ীকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেন। উমার (রাঃ) কশাঘাত করতেন, তিনি জেলখানা নির্মাণ করান, যারা মৃত ব্যক্তিদের জন্য মাতম ও কান্নাকাটি করার পেশা অবলম্বন করত, স্ত্রী পুরুষ নির্বিশেষে তাদেরকে পিটানোর আদেশ দিতেন। এর রকমই তালাক সম্বন্ধেও যখন লোকেরা বাড়াবাড়ি করতে লাগল আর যে বিষয়ে তাদেরকে অবসর ও প্রতীক্ষার সুযোগ দেয়া হয়েছিল তারা সে বিষয়ে বিলম্ব না করে শারী’আতের উদ্দেশ্যের বিপরীত সাময়িক উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে ক্ষিপ্রগতিতে তালাক দেয়ার কাজে বাহাদুর হয়ে উঠল, তখন দ্বিতীয় খালীফা উমার (রাঃ)’র ধারণা হল যে, শাস্তির ব্যবস্থা না করলে জনসাধারণ এ বদভ্যাস পরিত্যাগ করবে না, তখন তিনি শাস্তি ও দণ্ডস্বরূপ এক সঙ্গে প্রদত্ত তিন তালাকের জন্য তিন তালাকের হুকুম প্রদান করলেন। যেমন তিনি মদ্যপায়ীর ৮০ দুররা আর দেশ বিতাড়িত করার আদেশ ইতোপূর্বে প্রদান করেছিলেন, ঠিক সেরূপ তাঁর এ আদশেও প্রযোজ্য হল। তাঁর দুররা মারা আর মাথা মুড়াবার আদেশ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং প্রথম খালীফা আবূ বাকর (রাঃ) এর সাথে সুসমঞ্জস না হলেও যুগের অবস্থা আর জাতির স্বার্থের জন্য আমীরুল মু’মিনীনরূপে তাঁর এরূপ করার অধিকার ছিল, সুতরাং তিনি তাই করলেন। অতএবং তাঁর এ শাসন ব্যবস্থার জন্য কুরআন ও সুন্নাতের নির্দেশ প্রত্যঅখ্যান করার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে টিকতে পারে না। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও সুস্পষ্ট যে, খালীফা ও শাসনকর্তাদের উপরোক্ত ধরনের যে ব্যবস্থা আল্লাহর গ্রস্থ ও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতে বর্ণিত ও উক্ত দু’বস্তু হতে গৃহীত, কেবল সেগুলোই আসল ও স্থায়ী এবং ব্যাপক আইনের মর্যাদা লাভ করার অধিকারী। সুতরাং উমার ফারূকের শাসনমূলক অস্থায়ী ব্যবস্থাগুলোকে স্থায়ী আইনের মর্যাদা দান করা আদৌ আবশ্যক নয়। পক্ষান্তরে যদি বুঝা যায় যে,তাঁর শাসনমূলক ব্যবস্থা জাতির পক্ষে সঙ্কট ও অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং দণ্ডবিধির যে ধারার সাহায্যে তিনি সমষ্টিগত তিন তালাকের বিদ’আত রুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন, তাঁর সেই শাসনবিধিই উক্ত বিদ’আতের ছড়াছড়ি ও বহুবিস্তৃতির কারণে পরিণত হয়ে চলেছে- যেরূপ ইদানীং তিন তালাকের ব্যাপারে পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, হাজারে ও লাখেও কেউ কুরআন ও সুন্নাহর বিধানমত স্ত্রীকে তিন তালাক প্রদান করে কিনা সন্দেহ- এরূপ অবস্থায় উমার (রাঃ) এর শাসনমূলক অস্থায়ী নির্দেশ অবশ্যই পরিত্যাক্ত হবে এবং প্রাথমিক যুগীয় ব্যবস্থায় পুনঃ প্রবর্তন করতে হবে। আমাদের যুগের বিদ্বানগণের কর্তব্য প্রত্যেক যুগের উম্মাতের বৃহত্তর কল্যাণের প্রতি দৃষ্টি রাখা এবং জাতীয় সঙ্কট দূর করতে সচেষ্ট হওয়া। একটি প্রশাসনিক নির্দেশকে আঁকড়ে রেখে মুসলমানদেরকে বিপন্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেয়া উলামায়ে ইসলামের উচিত নয়।
    সর্বশেষ কথা এই যে, হাফিয আবূ বাকর ইসমাঈলী সমষ্টিগতভাবে প্রদত্ত তিন তালাকের শারঈ তিন তালাকরূপে গণ্য করার জন্য উমার (রাঃ) এর পরিতাপ ও অনুশোচনা সনদসহ রেওয়ায়াত করেছেন। তিনি মুসনাদে উমারে লিখেছেন- হাফিয আবূ ই’য়ালা আমাদের কাছে রেওয়ায়াত করেছেন, তিনি বলেন সালিহ বিনে মালেক আমাদের কাছে রেওয়ায়াত করেছেন, তিনি বলে, খালেদ বিনে ইয়াযীদ আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি স্বীয় পিতা ইয়াযীদ বিন মালিকের নিকট হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব বললেন- তিনটি বিষয়ের জন্য আমি যেরূপ অনুতপ্ত, এরূপ অন্য কোন কাজের জন্য আমি অনুতপ্ত নই, প্রথমতঃ আমি তিন তালাককে তিন তালাক গণ্য করা কেন নিষিদ্ধ করলাম না। দ্বিতীয়তঃ কেন আমি মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাসদেরকে বিবাহিত করলাম না, তৃতীয়তঃ অগ্নিপতঙ্গ কেন হত্যা করলাম না। ইগাসার নতুন সংস্করণে আছে, কেন আমি ব্যাবসাদার ক্রন্দনকারীদের হত্যা করলাম না।
    কোন দেশে যদি বিদ’আতী পন্থায় তালাক দেয়ার প্রবণতা প্রকট আকার ধারণ কের যেরূপ উমার এর যুগে ঘটেছিল তাহলে শুধুমাত্র ইসলামী রাষ্ট্রের শাসক যদি মনে করেন যে, এক সাথে তিন তালাকতে তিন তালাক হিসেবেই গণ্য করা হবে, তাহলে তিনি এরূপ ঘোষণা শাস্তিমূলকভাবে দিতে পারেন। কিন্তু বর্তমান যুগে সে যুগের ন্যায় অবস্থা সৃষ্টি হয়নি এবং নেই।
    আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছেন- দেখো, মাত্র দু’বার তালাক দিলেই স্ত্রীর ইদ্দতের মধ্যে পুরুষ তাকে বিনা বিবাহে ফিরিয়ে নিতে পারে। অতঃপর হয় উক্ত নারীর সাথে উত্তমরূপে সংসার নির্বাহ অথবা উত্তম রূপে বিচ্ছেদ। আর যে মাহর তোমরা নারীদের দিয়েছ তার কিছুই গ্রহণ করা তোমাদের জন্য হালাল নয়… (সূরা আল-বাকারাহঃ ২২৯) নেট থেকে কপি করলাম।

    আল্লাহ মহাজ্ঞ্যানী, মহান তিনিই সর্বত্র। তিনিই সর্বাজ্ঞে।

    • রোকসানা খন্দকার রুকু

      আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছেন- দেখো, মাত্র দু’বার তালাক দিলেই স্ত্রীর ইদ্দতের মধ্যে পুরুষ তাকে বিনা বিবাহে ফিরিয়ে নিতে পারে। অতঃপর হয় উক্ত নারীর সাথে উত্তমরূপে সংসার নির্বাহ অথবা উত্তম রূপে বিচ্ছেদ।****
      ভাইয়া এটাই বোঝাতে চেয়েছি। আপনার মত পাঠক পাওয়া বিরাট ভাগ্য। আমি ভীষন খুশি। রাগের মাথায় তালাক কোন তালাক নয় ইসলামী আইন তাই বলে! কিন্তু গ্রামে এখনও সমাজপতিদের সুবিধার জন্য আমরা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আমি একজন সুশিক্ষিত চাকুরীজীবি মেয়ে হয়েও এটার বাইরে না। কিন্তু কেন? ধর্মীয় ভীতিকে নিজের মত ব্যবহার, পোশাককে নিজের মত ব্যবহার আর কতকাল। ওয়াজের নামে মেয়েদের কুটনামি আর কতকাল? এসব বন্ধ করতে হবে মেয়েদের প্রতিবাদী হয়ে।
      শুভ কামনা ভাই। সামনে আরও লিখব। পাশে থাকবেন আমাদের। আপনাদের খুব দরকার।🥰🥰🥰

      • মোঃ মজিবর রহমান

        বোন দুই একজন শিক্ষিত হয়েও কিছু করার নায়। কারণ সমাজপতিদের যতক্ষন না গলা টিপে ধরা যাবে। তবে এখন অনেক যায়গায় এইরকম হতে পারেনা। কারণ কিছুটা হলেও যুবসমাজ অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে আরও যাবে ইন শাল্লাহ।

  • সুপর্ণা ফাল্গুনী

    লেখাটি পড়ে চোখে পানি চলে আসলো। নারীর শরীরকে কোন সুস্থ মানুষ এভাবে ভোগ করে ?? হায়রে হিল্লা বিয়ে! পোশাক দিয়ে, ধর্ম দিয়ে কখনো মানুষকে ভালো-মন্দের বিচার করতে নেই, বিচার করা যায় না। মানবতা ই আসল ধর্ম বলে মনে করি কারন ধর্ম সৃষ্টি ই হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য, পরিচ্ছন্ন, সুস্থ জীবন যাপনের জন্য।
    একরাশ শুভেচ্ছা ও শুভকামনা

  • তৌহিদ

    এদেশের সমাজপতিরা হিল্লে বিয়ের নামে নারীর উপরে যা অন্যায় চাপিয়ে দেয় এর বিচার কে করবে? গল্পে গল্পে সত্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন। এ অবস্থার উত্তরণ চাই।

    শুভকামনা আপু।

  • মোঃ খুরশীদ আলম

    হিল্লে বিয়ের যে রীতি বক্ষমান আলোচনায় উঠে এসেছে তা শরিয়তের বিধান নয়। তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করার যে রীতি তার একটা নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। আলোচনায় যে পথ পদ্ধতি আমরা দেখি সেটার সাথে বিজ্ঞ আলেম ওলামাদের সম্পর্ক কখনোই ছিল না। একসময় গ্রামের মৌড়ল শ্রেনীর অল্প শিক্ষিত কিংবা প্রভাবশালী অশিক্ষিত লোকেরা এই ধরণের কাজের সাথে স্পপৃক্ত ছিল। এই ধরণের নাটকের সাথে শরিয়াতের কোন সামঞ্জস্যতা নাই।

    • রোকসানা খন্দকার রুকু

      ফতোয়া জারির ব্যাপারে কি বলবেন ভাই। আলেমরাই সবসময় ওয়াজ করে মেয়েদের বিরুদ্ধে। যৌতুক নারী অধিকার দেনমোহর এগুলো নিয়ে মুখ খোলে না। ওয়াজের শিরোনাম “কুরআন ও সুন্নাহ” কিন্তু আলোচনা অবলা নারী। কি করে তাদের আরও নিষ্পেষিত করা যায়। গ্রামে যে হিল্লে বিয়ে এখনও স্টাবলিস্ট এ শ্রেনীর জন্য। সবাইকে নিজের মত বাঁচতে দেয়া উচিত। শুভ কামনা। শুভ সকাল।

      • মোঃ খুরশীদ আলম

        আলেম সমাজ সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্টতই নেতিবাচক বলে মনে হচ্ছে। কোন সভ্য সমাজে কোন দিন কোন আলেম তথাকথিত হিল্লা বিয়ের (যেরুপটা আপনি লেখায় উল্লেখ করেছেন) ব্যাপারে উৎসাহ দিয়ে কথা বলেননি। যৌতুক, দেনমোহার, তালাকের সহিহ পদ্ধতির প্যাকটিস ও এর ইতিবাচক বা নেতিবাচক দিকে নিয়ে বরং আলেমসমাজই সবচেয়ে বেশী কথা বলেন, মানুষকে সতর্ক করে থাকেন। সমস্যাগুলো নিয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি স্পষ্ট। পশ্চিমা ধাচের মিডিয়া এবং এক শ্রেণীর তথাকথিত নারী স্বাধীনতার ধ্বজাধারিরা আমাদেরকে ইসলামী সাহিত্য ও ইসলামের ইতিহাস এর গ্রহণযোগ্যতা অনুসন্ধান থেকে বিরত রেখেছে। বেশী করে পড়ুন, বেশী করে ইসলাম ও তুলনামূলক ধর্মতত্ব নিয়ে গবেষণা অব্যাহত রাখুন। ইসলামের সৈন্দর্যের বিপরীতে আর কাউকে পাবেন না।
        ধন্যাবাদ আপা, সুস্থতা কাম্য।

    • রোকসানা খন্দকার রুকু

      আমার প্রিয় ভাই তালাক শব্দ উচ্চারণ করেন পুরুষেরা আর তার শিকার হয় নারী কেন? জ্ঞান আমার অতি অল্প কিন্তু এটা ভালো লাগেনি বা লাগবে না তাই লিখেছি। শুভ কামনা।

      • মোঃ খুরশীদ আলম

        আজ কাল পুরুষের সাথে সাথে নারীরাও সমান তালে তালাক দিচেছ।
        তালাক শরিয়াতে একটি নিকৃষ্ট জায়েজ কাজ।
        সংসার করার মতো কোন অবস্থা যখন বিদ্যমান থাকেনা তখন বাধ্য হয়ে এপথ বেছে নিতে হয়।
        জীবন বাঁচানোর জন্য, সংসারের সুখের জন্য এর কোন বিকল্প যখন থাকে না তখন এই পথ বেছে নেয়া ছাড়া আর গত্যান্তর কি?
        অন্য ধর্মে যেখানে তালাক দেয়ার রীতির প্রচলন নাই সেই সংসারগুলোতে নারীরা জীনন্ত লাশের মতো সংসার করে আর পুরুষেরাও ব্যতিক্রম নয়। সুস্থ থাকুন অবিরাম। ধন্যবাদ।

  • ইসিয়াক

    এই সুযোগ সন্ধানী সমাজপতিদের জন্য আমাদের সমাজে নারীদের এতো দুঃখ যন্ত্রণা। ধর্মকে এরা ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে আসছে যুগ যুগ ধরে। লেখাটিতে নিমর্ম বাস্তব সত্য তুলে ধরেছেন। এই সব জঘণ্য মন মানসিকতার লোকজনদের আইনের আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি।
    ধন্যবাদ।

  • খাদিজাতুল কুবরা

    রুকু, তোমার এ যাবৎ লেখার মধ্যে এই লেখাটি সেরা।
    ইসলামে, স্ত্রী তালাক দেওয়া এবং ভিক্ষাবৃত্তি হচ্ছে নিকৃষ্টতম হালাল। তালাক বিষয়টি নিয়ে পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট নীতিমালা বর্ণনা আছে, এবং সহীহ হাদীসেও পুরো একটি অধ্যায় আছে। সমস্যা হচ্ছে অপব্যাখ্যা। ইসলামে হিল্লা বিয়ের রীতি আছে, কিন্তু এটি সর্বশেষ উপায়। তাও আবার মহিলার সম্মতি সাপেক্ষে এবং পরিপূর্ণভাবে তালাক সম্পাদনের পর।
    তাই ধর্মকে পুঁজি করে মূর্খ সমাজপতির দল পাতি আলেমদের সহযোগিতায় জঘন্য নৃশংসতা ঘটায়। এদের প্রত্যেককেই পরকালে শাস্তি ভোগ করতে হবে।
    আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে সহীহ জ্ঞান দান করুন এবং এসব দানবদের হাত থেকে রক্ষা করুন।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ