ওরা আলোতে সন্ধ্যা মেখেছিল খানিকটা বেনিয়ার মতো। একটু আর্দ্র উষ্ণ লেলিহান বিষাদিনীর মতো।
ওরা শেষ বিকেলে বাতাবিলেবুর গন্ধ মাখতে গিয়ে মেখেছে সর্বাঙ্গে ফাল্গুনের বিকশিত কাঞ্চন ফুলের মুহুর্মুহু গন্ধ।
তখন গোটা শহর জুড়ে চলছে বসন্তের মরসুম।
স্তব্ধ মাঠে সোনালি বিকেলের শেষ রোদ্দুরে মুঠো শূন্যতা আর পাখিরা ঝাঁক বেঁধে ফিরছে আপন নীড়ে।
অনাদি কাল হতে নদীরা বয়ে চলছে পাহাড়ের ধার বেয়ে। বসন্ত সেই কবে থেকে হিমঘুমে আচ্ছন্ন ছিলো শীতকে উপেক্ষা করে।
আমাদের আর একসাথে কোথাও বসা হয় না।
আমরা দুজন মিলে আজও বসন্তবরণে আচ্ছাদিত হতে পারিনা।
বসন্তের কাকডাকা ভোরকে সাথে করে বৃষ্টি সহস্রবার পতিত হয়েছে। কিন্তু আমরা বসন্তকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে পারিনি।
রাস্তার পাশ ধরে ঝলসে ওঠা ল্যাম্পপোস্ট গুলো প্রতিনিয়ত ভেজে থাকে গাত্র অনয়াসে।
সে আলোয় আমরা কত রাত্রি যে আল্পনা এঁকেছি তার হিসাব আজও কষতে পারিনি চিত্রাঙ্গদা।
আমরা আকন্দ আঠা দিয়ে যে কত ঘুড়ি আকাশপানে উড়িয়েছি কেয়াপাতার ঝোপে বসে। এসবের সাক্ষী বরং উদ্ধাস্তু পাহাড় আর বসন্তবৌরি।
আর্দ্রতা যখন ঘরবন্দি করতে চায় তখন কুটুম পাখি নিয়ে আসে ভরদুপুরে বৈশাখের ভ্যাপসা গরম।
এখনো যে বৈশাখ আসতে ঢের দেরি।
শহরের অলিগলি জুড়ে সেই কবে থেকে আম্রমকুল আর কাঞ্চনফুলে ভরপুর হয়ে আছে। সেথায় মৌমাছি আর ভ্রমরের আনাগোনা বড্ড শূন্য। শূন্যতার মাঝেও একটা তৃপ্তি ছিলো বরং সেটা আজ আর খুঁজে পাওয়া যায়না।
এতসব ফুলের আভিজাত গন্ধবকুলের মোহনীয় গন্ধে তোমার চুলের গন্ধ বেশ অমায়িক।
সেটার প্রশংসা আমি বেশ করি।
তবে মাঝেমধ্যে তোমার কথা রাখতে পারিনা এ যে আমার বড্ড দুর্বলতা। ইদানিং এলোমেলো হয়ে যাচ্ছি তোমাতে। কখনো কখনো তোমাতে হারিয়ে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলি।
আমাদের আর নির্দিষ্ট সময় নেই যেথায় একসাথে দেখা হবে,প্রাণখুলে কথা হবে কথার ফাঁকে ফাঁকে সাগরের বিশালতাকে ধারণ করে রাখবো।
সে দিন আর নেই চিত্রাঙ্গদা।
সবকিছুতে আজকাল দূরত্ব বাসা বেঁধেছে।
চিত্রা হরিণী শাবক শতদলে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর থেকে সবুজাভ দ্বীপ নির্জনে শোকাগ্রস্ত হয়ে আছে।
অন্ধকার পথ ধরে ছুটে চললে আমি অনেকটা শূন্যতার বাক্সবন্দি কান্না শুনতে পাই।
পুরো পাহাড় পিপাসায় শোকাগ্রস্ত হয়ে আছে।
সহস্র রাত পেরিয়ে যখন আলোর দেখা নিমজ্জিত শিশিরজলে পদ্ম পত্র তখন গঙ্গার বুকে অনুভবের স্পর্শতা খুঁজে।
চিত্রাঙ্গদা বরং তুমি হিমঘুমে পিপাসিত পাহাড়ের ধারিত ঝর্ণা হও। কথা দিলাম আমি ঐ পাহাড়ের সবুজাভ দ্বীপ হবো। প্রকৃতির বুকে আমাদের আবাসন হোক জন্মজন্মান্তর ভরে।
২৩টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চিত্রাঙ্গদা বরং তুমি হিমঘুমে পিপাসিত পাহাড়ের ধারিত ঝর্ণা হও। কথা দিলাম আমি ঐ পাহাড়ের সবুজাভ দ্বীপ হবো। প্রকৃতির বুকে আমাদের আবাসন হোক জন্মজন্মান্তর ভরে। -হৃদয় ছুঁয়ে গেল। ধন্যবাদ দাদা ভালোবাসা এমন করেই বেঁচে থাকুক । ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা রইলো
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দিদি।
মনির হোসেন মমি
চিত্রা হরিণী শাবক শতদলে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর থেকে সবুজাভ দ্বীপ নির্জনে শোকাগ্রস্ত হয়ে আছে।
অন্ধকার পথ ধরে ছুটে চললে আমি অনেকটা শূন্যতার বাক্সবন্দী কান্না শুনতে পাই।
পুরো পাহাড় পিপাসায় শোকাগ্রস্ত হয়ে আছে।
শব্দ ব্যাবহারে মুগ্ধ দাদা ভাই।চমৎকার।
প্রদীপ চক্রবর্তী
প্রাপ্তি।
সাধুবাদ দাদা।
সাবিনা ইয়াসমিন
পাহাড়ের ধার ঘেসে বয়ে চলে নদী, তবুও পাহাড় পিপাসার্ত হয়ে রয়। নদী তবে ঝর্ণার রুপ নিক। শোক ভুলে পিপাসিত পাহাড় উর্বর হয়ে জেগে উঠুক সবুজ-সজীবতায়।
শুভ কামনা 🌹🌹
প্রদীপ চক্রবর্তী
বাহ্!
অনেক অনেক ধন্যবাদ দিদি।
হালিম নজরুল
আমরা আকন্দ আঠা দিয়ে যে কত ঘুড়ি আকাশপানে উড়িয়েছি কেয়াপাতার ঝোপে বসে। এসবের সাক্ষী বরং উদ্ধাস্তু পাহাড় আর বসন্তবৌরি।
————-চমৎকার লেখা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দাদা।
ফয়জুল মহী
অসামান্য ভাবনায় নান্দনিক লেখনী ।
প্রদীপ চক্রবর্তী
প্রাপ্তি,
ধন্যযোগ দাদা।
সুপায়ন বড়ুয়া
“চিত্রাঙ্গদা বরং তুমি হিমঘুমে পিপাসিত পাহাড়ের ধারিত ঝর্ণা হও। কথা দিলাম আমি ঐ পাহাড়ের সবুজাভ দ্বীপ হবো। প্রকৃতির বুকে আমাদের আবাসন হোক জন্মজন্মান্তর ভরে। “
ভালবাসার চীরন্তন রূপ অপরুপ কামনায়
সার্থক হোক মলোবাসনা।
শুভ কামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দাদা।
আরজু মুক্তা
কঠিন পাহাড়ের বিক চিরে একটা ঝর্ণা হলে সেখানে চির বসন্ত থাকবে
প্রদীপ চক্রবর্তী
একদম,
ধন্যযোগ দিদি।
ইঞ্জা
আমাদের আর নির্দিষ্ট সময় নেই যেথায় একসাথে দেখা হবে,প্রাণখুলে কথা হবে কথার ফাঁকে ফাঁকে সাগরের বিশালতাকে ধারণ করে রাখবো।
সে দিন আর নেই চিত্রাঙ্গদা।
সবকিছুতে আজকাল দূরত্ব বাসা বেঁধেছে।
হেরিলাম মন।
দাদা গল্প শুরু করুন, আরও পড়তে চাই।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দাদা।
ইঞ্জা
শুভকামনা জানবেন দাদা।
জিসান শা ইকরাম
অনেক অনেক ভাল লেগেছে লেখাটি।
শুভ কামনা প্রদীপ,
প্রদীপ চক্রবর্তী
প্রাপ্তি,
সাধুবাদ দাদা।
ছাইরাছ হেলাল
চিত্রাঙ্গদা তো চাইলেই কিছু হতে পারেনা,
শুধু অর্জুনকে দেখে-ই জেগে উঠেছিল তার নারীসত্ত্বা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
একদম,
সাধুবাদ দাদা।
সিকদার সাদ রহমান
সম্পূর্নরুপে বিরহে গাঁথা চিত্রাংগদা চরিত্র আর কল্পনার রসায়ন অসাধারন লেগেছে ভাই।
প্রদীপ চক্রবর্তী
একদম,
সাধুবাদ দাদা।