
বাটার দিয়ে পাউরুটি আর এক কাপ ঘন গাঢ় লিকারের দুধ চা দিয়েই শুরু হয় নিধির এক একটা সকাল।
প্রতিদিনের মত আজও সকালে নিধির চায়ে চুমুক দেয়া মাত্রই কলিংবেলের আওয়াজে দঁড়জা খুলতে নিধি উঠে গেল।
ইক্সকিউজ মি ! এটা কি নিধি সরকারের বাসা?
নিধিঃ জ্বি,আমি নিধি সরকার বলুন।
কুরিয়ার থেকে আপনার নামে একটা চিঠি এসেছে।
নিধিঃ ও আচ্ছা ঠিকআছে দিন তবে, ধন্যবাদ।
ওকে ম্যাম, তবে আসি।
নিধি দঁড়জা লাগিয়ে চিঠিটি উল্টিয়ে পাল্টিয়ে খানিক দেখছিল আর ভাবছিল,কে চিঠি পাঠাতে পারে? ইন্টারনেটের যুগে কে চিঠি লিখবে?
ভাবতেই নিধির অফিস থেকে জরুরী ফোন এলে তাড়াহুড়া করে নিধি চিঠিটি না পড়েই বেড়িয়ে যায়।
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বাসা ফিরে ডিম পোজ আর সুপ বানিয়ে নিধি আবার চিঠিটি হাতে নিয়েই দেখে,, চিঠিতে প্রেরকের নাম দেয়া রাজ সরকার, ভয়ে, আতংকে মুহূর্তেই ম্লান হতে লাগল নিধি। রাজ চিঠি লিখেছে? কেন? হঠাৎ এতদিনপর??
রাজ নামটি এখনো আস্টেপৃষ্টে এমনভাবে মনের অগোচরে জড়িয়ে আছে যে,,,,,,
সেদিন ছিল চৈত্র মাসের শেষদিন। প্রখর খরা রোদে ছাঁতা হাতে রিকশার জন্য নিধি দাঁড়িয়ে আছে। পাশ দিয়ে বাইকে বসে থাকা দুইবন্ধু নিধিকে আঁড়চোখে দেখে কি যেন মনে করে বাইক থামিয়ে দিল।নিধির সেইদিকে কোন ভ্রুক্ষেপই নেই।
এই নিধি তুই এখানে?
রাসেল ভাইয়া! আপনি?
হুম আমার তো এখানেই থাকার কথা । তুই এখানে কেন?
আমি আসলে এবার বিসিএস দিয়ে এখানকার একটা কলেজে জয়েন করেছি।
তাই! ওয়াও কংগ্রেচুলেশন! দারুন খবর তো !
নিধি আর রাসেলের কথোপকথনে বাইকে যিনি বসে আছে তিনি রাসলকে ডাকতেই,,,
নিধির এই প্রথম চোখে পড়ল নীল কালারের টিশার্টে এক যুবককে, গায়ের রং কুচকুচে কালো, চুলগুলো সিল্কি সে-যাইহোক সবচেয়ে বিরক্তিকর বিষয়টি ছিল, ছেলেটি তার টি শার্ট টি পেটের ওপরে তুলে দেধারচে সিগারেটে টাঁন দিচ্ছে আর ধোঁয়াগুলো চরম শান্তিতে উড়িয়ে দিচ্ছে। পাশে যে একজন মেয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে তার খেয়ালই নেই। কি অদ্ভুত রে বাবা!! কান্ডজ্ঞানহীন মানুষ একটা! গরম কি ওর একারই যে রাস্তায় টিশার্ট তুলে পেট দেখাতে হবে?
এই রাজ এই দিকে আয় ! এ হলো নিধি আমার ক্লাসমেটের বোন।
আর নিধি এ হলো রাজ আমার ছোটবেলার বন্ধু বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। এলাকার সবাই রাজের ভয়ে কাঁপে বুঝলি! এলাকায় কোন প্রব্লেমে রাজ কে স্মরন করবি, খুবই ভালো মানুষ। আমি তো ঢাকায় থাকি তাই রাজকেই ডাকবি প্রয়োজন হলে।
সেদিনই নিধির সাথে রাজের চৈত্রের প্রখর রোদের সাথে যেমন হঠাৎ বৃষ্টির দেখা হয় তেমনভাবেই প্রথম পরিচয় ঘটে।
মাঝে প্রায় ৬ মাস কেটে যায়।
নিধির সাথে রাজের কোন এক বিয়ে বাড়ীতে আবার দেখা হয়। কথায় বলে লাভ এট ফার্স্ট সাইট কিন্তু নিধির ক্ষেত্রে একদমই তা না। বিয়ে বাড়ীতে তাদের যাস্ট হায় হ্যালোয় সীমাবদ্ধ থাকে । বিয়ে বাড়ীতে কিছুক্ষনের মাঝেই রাজ উধাও।
নিধি ঐ এলাকায় বাসা ভাড়া নিবে বিধায় রাজ কে খুঁজতে গিয়েই রাজের ভাগনীর সাথে কথা হয়। অনেক গল্পে গল্পে সেদিন নিধি জানতে পারে রাজ ছোটবেলা থেকেই খুব ব্রিলিয়ান্ট একজন স্টুডেন্ট ছিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিটিকাল সাইন্সে সবেমাত্র ভর্তি হয়েছে সেইসময় রাজের বাবা হঠাৎ মারা যাওয়ায় রাজ অনেক ভেঙ্গে পড়ে।
রাজেরা অনেক ভাইবোন হওয়ায় রাজের মা একা হাতে সংসার সামলাতে সামলাতে হিমশিম খেতে লাগে। রাজের মামা রাজের পড়াশুনা বন্ধ হবে ভেবে রাজের ঐ এলাকার কোটিপতির মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করে। রাজের যে মেয়েটির সাথে বিয়ে ঠিক হয় তখনো রাজ সেই মেয়ে দেখতে কেমন? কি পড়ে? এসবের কিচ্ছু জানত না। মায়ের মুখের দিকে তাঁকিয়েই রাজ সেদিন রিনি নামের মেয়েটিকে বিয়ে করার জন্য রাজী হয়ে যায় । মামার চিঠি পেয়ে রাজশাহী থেকে বাড়ী এসে রাজ ডাল ভাত মুখে দিয়েই জানতে পারে আজ তার বিয়ে!!
ভাবুন ব্যাপারটা যার বিয়ে তার পায়ে পুরনো স্যান্ডেল,পরনে হলুদ রঙ্গের টিশার্ট,মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।বিয়েতে সানাই বা মিউজিকের কোন শব্দ কিচ্ছু নেই। বিয়েবাড়ি না শোকের বাড়ী দেখে বোঝার উপায় নেই। মাথায় পাগড়ী তো দুরে থাক, রাজের পরনে নতুন পাঞ্জাবী ও ছিল না। রাজ সব বুঝে ওঠার আগেই কিছুক্ষনের মধ্যেই মাথায় যাস্ট একটা টুপি পরে ১০ লাখ টাকা দেনমোহর দিয়ে কনে না দেখেই বিরক্তিতে টেনশন আর না নিতে পেরে তাড়াহুড়ো করেই তিনটি শব্দ কবুল বলে ফেলে।উফফ! কবুল বলে ফেলে রাজ ভাবে যাক বাবা! বড় ধরনের বাঁচা বেঁচে গেল। এই শব্দ তিনটি না বললে আশেপাশের এইসব মানুষ তাকে ঘিরেই থাকবে আর রাজের সিগারেটে টান দেয়া হবে না। কবুল বলার জন্য মানুষ অন্য কিছু ভাবে,নতুন জীবন, নতুন স্বপ্ন আরও কত কি! অথচ রাজ ভাবছে,,,,এভাবেও বিয়ের পিঁড়িতে বসে মানুষ এইসব কি ভাবে? বিয়ে কি এভাবেই হয়!!!!
অতঃপর সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে হাত তুলে দোয়া করে। যাক অবশেষে বিয়ে সম্পন্ন।
বিয়ে, বাসর রাত প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই কাঙ্খিত একটা রাত।
বিছানায় ঘোমটা দিয়ে একটা মেয়ে বসে আছে। রাজ জানেও না মেয়েটি দেখতে কেমন? রাজের হাতে তখনো বেনসনের প্যাকেট। সোফায় পা তুলে নিশ্চিন্তে রাজ একটার পর একটা সিগারেট ধরাচ্ছে, দেখে বোঝার উপায় নেই যে এখন সে বাসরঘরে। সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে রাত মিলিয়ে গিয়ে ভোরের অপেক্ষায়।
অপরদিকে রিনির পরনে লাল রঙ্গের কাতান, গায়ে সোনার গয়না ভর্তি, হাতে চুর,কোমরে বিছা, বাজু সহ নাকে গরুর নাকোয়ানের মত ইয়া বড় একটা নথ, যার সুরসুরিতে ঘোমটার ভিতরেই রিনি বার বার সেই নাকোয়ান ঠিক করতেই ব্যস্ত।
চলবে,,,,,,,,,,
ছবিঃ নেট থেকে।
৬টি মন্তব্য
মো: মোয়াজ্জেম হোসেন অপু
রাজ রিনির খবর জানার অপেক্ষায় রইলাম।শুভকামনা
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ ভাইয়া পড়ার জন্য। অবশ্যই পরের পর্বে পেয়ে যাবেন। ভালো থাকবেন, শুভকামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হুম পড়লাম। এবার ঠিকঠাক 🥰
নাকোয়ান ঠিক করা মেয়েটির কপালে সিগারেট খোর। মেয়েরা কোন কারন ছাড়াই এদের প্রেমে পরে। যাই হোক টুইষ্টে ছেড়ে দিলেন, এবার ঠিক আছে।
হাত পেকে যাচ্ছে গো এহেড। শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো।
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ আর শুভকামনা সবসময়।
মোঃ মজিবর রহমান
জীবন কেমন জানিনা। হইত এটাই জীবন।
রেজওয়ানা কবির
আমরা যা ভাবি জীবন তার উল্টো ধন্যবাদ ভাইয়া।