হয়তো এটাই তোকে লেখা শেষ চিঠি

সুরাইয়া পারভীন ১ জুলাই ২০২০, বুধবার, ১১:১২:৫৭পূর্বাহ্ন চিঠি ৩১ মন্তব্য

প্রিয়,

পত্রের শুরুতেই তোকে জানাতে চাই একগুচ্ছ তীব্র সু-ঘ্রাণ যুক্ত শুভ্র দোলনচাঁপার শুভেচ্ছা। আশা নয় বিশ্বাস করতে চাই তুই ভালো আছিস। তুই ভালো থাকবি এর চেয়ে বেশি কিছু চাইবার নেই আমার জীবনে। তোর ভালো থাকায় একমাত্র কাম্য আমার কাছে। হয়তো তুই ভাবছিস এটা নেহাতই আমার কথার কথা। নয়তো আমি কি করে তোকে এতো আঘাত দিতে পারি, কষ্ট দিতে পারি! কিন্তু কী করবো বল? মাঝে মাঝে আমি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি,ডেস্পারেট হয়ে যাই আর তখনই তোকে আঘাত করে বসি, কটুক্তি করে ক্ষতবিক্ষত করি । কিন্তু তুই কী এটা জানিস, আমি তোকে একবার আঘাত করলে শত সহস্র বার নিজেই যন্ত্রণায় বিদগ্ধ হই। তোকে একবার কটুক্তি করলে অজস্র বার ধিক্কার দেই নিজেকে। আর আমি যা কিছুই করি না কেন সবটাই অভিমান থেকে।

 

হয়তো তুই ভাবছিস কিসের এতো অভিমান আমার তোর উপর! বিশ্বাস কর আমি নিজেও জানি না, কেনো তোর প্রতি আমার এতো অভিমান, এতো অধিকার বোধ? আমি জানি আমার তোর প্রতি এমন কোনো শব্দ উচ্চারণ করা উচিত নয় যাতে তোর অমঙ্গল হয় তুই কষ্ট পাস। তবুও করে ফেলি আর তারপরেও কতশত বার যে তওবা করি, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি তোর যেন কোনো ক্ষতি নয় হয়। তিঁনি যেনো তোকে সবসময় ভালো রাখেন। বিশ্বাস কর তোর প্রতি রাগ অভিমান কোনোটাই আমার মন থেকে নয়। থাক সে সব কথা

 

জানিস আমার নতুন বন্ধু জুটেছে। বন্ধু ঠিক নয় শুভাকাঙ্ক্ষী। যেমনটা আমি তোর। দূরের কেউ নয় ছেলেটি আমার অফিস কলিগ। আমার থেকে প্রায় ৩/৪ বছরের ছোট। সেদিন হাসপাতাল থেকে ফিরার পর প্রায় ২৪ ঘন্টায় আমার খোঁজ খবর নিচ্ছে। কোনো অবস্থাতেই আমাকে একা থাকতে দিচ্ছে না। সে নাকি নিজেকে কথা দিয়েছে বন্ধ ঘরে আবদ্ধ থেকে গুমড়ে গুমড়ে মরতে দেবে না আমাকে। আমি নাকি এটা ডির্জাব করি না। ছেলেটির ভাষ্যমতে তুই মরীচিকা আর আমি মরীচিকা মানে তোর পিছনে ছুটছি। ওর মতে 'সে আপনাকে ছাড়া ভালো আছে তবে আপনি কেনো তার জন্য এমন পাগলামী করছেন। আপনি যে সমাজে বসবাস করেন তাতে এমন কিছু করা ঠিক নয় যাতে আপনার দিকে সবাই বিচ্ছি বিভৎস দৃষ্টি দিয়ে তাকায়। ছোট মানুষ তাই হয়তো বুঝতেও পারছে না তুই আমার কী, তুই আমার কতোটা! সমাজ সংসার এক পাশে আর তুই আরেক পাশে। কারণ এই এক জীবনে পাওয়া সমস্ত কিছুর চেয়ে দামী তুই আমার কাছে।

 

আজ নিশ্চয়ই অবাক হয়েছিস তাই না! যে মেয়েটা তোকে একদম তুই বলতে চাইতো না। তুই বলা নিয়ে প্রচণ্ড ঝামেলা করত, গাল ফুলিয়ে থাকতো। সে আজ কত অবলীলায় তুই বলে সম্বোধন করছে! ভাবছিস হয়তো বদলে গেছি। তোর অনুপস্থিতিতে ভুলে গেছি,বদলে গেছি। না একদমই না। বরং তুই আর তুমি পার্থক্য করতে শিখে গেছি। তুমিতে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে যা ডিঙিয়ে মনের কথা গুলো বলা যায় না। তুইতে কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। তোকে বলার অনেক কথা থাকলেও সবটা বলতে পারি না। বলা ঠিকও নয়।

 

সে যা হোক পরিশেষে তোকে একটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, তুই আমাকে কথা দিয়েছিলিস তোর অন্তিম সময় আমি তোর পাশে থাকবো, তোর সেবা করবো। যদি তোর আগে আমার অন্তিম যাত্রা সম্পূর্ণ হয় তবে ঠিক আছে। কিন্তু সেটা যদি না হয় আশা করছি তুই তোর কথা রাখবি। আমার কাছে আমার কথার মূল্য আমার জীবনের চেয়েও বেশি দামী। তোর কাছেও নিশ্চয়ই তাই। তুই আমাকে ভুলে যেতে চাইলে যেতে পারিস শুধু আমাকে দেওয়া সেই কথাটা ভুলিস না কখনো যে তুই আমার কোলে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চেয়েছিস। আমি অপেক্ষা করবো সেদিনের। খুব ভালো থাকিস আর সুখে শান্তিতে থাকিস। অনেক অনেক দোয়া ও শুভকামনা রইল তোর/তোদের জন্য।

ইতি

তোর আজীবনের শুভাকাঙ্ক্ষী

0 Shares

৩১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ