
মানুষ আত্নহত্যা করে কেন? জীবনের উপর বিতৃষ্ণা থেকে। বিতৃষ্ণা কেন আসে? মানুষ কি নিজে নিজে নিজের জীবনে নিয়ে আসে, নাকি কেউ আনতে সাহায্য করে? আমি বলবো কেউ আনতে সাহায্য করে।
আমরা এমন এক সমাজে বাস করি, যেখানে সূখ চাওয়ারও নানা ট্রাইটেরিয়া পূরন করতে হয়। সূখী হতে চাওয়া যেন মহা-অপরাধ। রক্ষা হয়না শেষপর্যন্ত। রক্ষা করতে দেয় না ছদ্মবেশী কলিগ, সমাজ, বন্ধু- বান্ধব এমনকি পরিবার পরিজনও। শেষ পর্যন্ত – ‘ মন্তব্যই গন্তব্যে এসে ঠেকলো’।
নাটোরের সেই শিক্ষিকা আত্মহত্যা করেছেন। কাল রাতে তার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে। স্বামী প্রতিবেশীদের রাত তিনটায় ডেকে জানিয়েছেন। এখন তিনি পুলিশ হেফাজতে আছেন। পুলিশ তাকে সন্দেহ করে গ্রেফতার করেছে।
” এদিকে ভাড়া বাসার দারোয়ান নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘রাত ১১টায় বাসায় ঢোকেন মামুন। আবার আড়াইটার দিকে বের হন। এ সময় কেন বের হচ্ছে জানতে চাইলে মামুন বলেন, ওষুধ কিনতে যাচ্ছেন। পরে সকাল ৬টায় মামুন আবার ফিরে আসেন। এরপর তিনি আমাকে ডাকেন। আমি চার তলায় গিয়ে দেখি লাশ সিলিং ফ্যান থেকে নামানো।”
আপনি দুর্দিনে না খেয়ে আছেন, নির্ঘুম আছেন, মানষিক ডিপ্রেশনে আছেন। কেউ আপনার খোঁজ নেয়নি, নেবেও না। অথচ কোথায় আপনার জীবনের ঘাটতি সেটা নিয়ে আলোচনা, খোঁচা দিতেই লোকজন সবসময় ব্যস্ত।
সামাজিক হিসেবে আমরা এতোটা নিতে পারি না। সাংবাদিকদের আজকাল যেন কোন কাজ নেই। দেশে এতো এতো সমস্যা তা নিয়ে আলোচনা নেই, উঠে পড়ে লাগা নেই। কোনদেশ থেকে কে, কাকে নিয়ে এলো, বিয়ে করলো তা নিয়ে আলোচনায় ব্যতিব্যস্ত। শুধু ব্যতিব্যস্ত না, রীতিমতো তাকে নিয়ে ট্রল করেই তবে ছাড়ে। ডিজিটালাইজেশানের এই দিকগুলোর সঠিক বিচার হওয়া উচিত।
একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ হিসেবে কে, কেমন করে বাঁচবে সেটা তার নিজস্বতা হওয়া উচিত। আর যেটাকে আমরা কিছুটা অড হিসেবে দেখি সেটা স্বাভাবিকভাবে নিলেও পারি। কিন্তু পরিবার, সমাজ কেউ মেনে নেয় না। তাদেরই পাশে থেকে সাহস যোগানো দরকার অথচ তারা নির্যাতন করে। নানা ব্যঙ্গ, হাসি- ঠাট্টায় ব্যস্ত থাকে। তখন মন- মর্জি বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পাশের মানুষটির সাথে নিভৃতে গড়া সম্পর্কে আলস্য আসে, বিরক্তি আসে। বেরিয়ে আসতে চায় মন। বারবার মনে হয় এ বুঝি ভূলই ছিল। প্রতিনিয়ত নিজের সাথে সংগ্রাম করা মানুষটি একসময় হাফিয়ে ওঠে। সামাজিক মর্যাদার কাছে পরাজিত হয়। অন্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে লজ্জা হয়, কুণ্ঠাবোধ করে। মুক্তির পথ হিসেবে অবশেষে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়। লোকের রক্তচক্ষু তাকে প্রতিনিয়ত যে রক্তাক্ত করে সেখান থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে আত্নহত্যাকে খুঁজে নেয়।
বিশ্বাস, ভালোবাসার জায়গা যদি নড়বড়ে হয় তাহলে মন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। তবুও আশায় বাঁচে মন! আমরা কাউকে না কাউকে বিশ্বাস করি, ভালোবাসি। আবার প্রতারিতও হই।
মরে যাবার আগে ভাবিও না ক্ষতি কার! কাল থেকে মনোমুগ্ধকর সকালটা তাকে খুঁজে মরবে, চায়ের কাপ নিঃসঙ্গ হবে; একাকিত্বতাও একা হয়ে যাবে। সন্ধ্যার আকাশ ঘনকালো মেঘে ঢেকে গেলেও কেউ দেখবে না। এতোকিছু ফেলে চলে যাই দুর অজানায়!
“আশার ছলনে ভুলি কী ফল লভিনু,হায়,
তাই ভাবী মনে?
জীবন-প্রবাহ বহি কাল-সিন্ধু পানে যায়,
ফিরাব কেমনে?
দিন দিন আয়ুহীন হীনবল দিন দিন ,—
তবু এ আশার নেশা ছুটিল না? এ কি দায়।
——মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
ছবি- নেটের।
১৯টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
চমৎকার লেখেছেন তবে সংসার ধর্ম এমন একটা জায়গা সহজেই কেউ মেনেনিতে চায় না
সেটা মেয়ে কিংবা ছেলে;
জ্ঞানহীনতার অনেক পরিচিয় পাওয়া যায়
আমাদের সমাজ এই জ্ঞানহীনতার মধ্যে পরে———-
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ লিটন ভাই।।
নাজমুল আহসান
আপনি পোস্টের সাথে যে ছবি দিয়েছেন, সেটা কি লাশের?
রোকসানা খন্দকার রুকু
জী, চাইলে চেঞ্জ করে দিতে পারেন।
নাজমুল আহসান
আমি কীভাবে আর কেন ছবি চেঞ্জ করব? 🙄
ছবিটা দেখে নিশ্চিত হতে পারিনি বলে জিজ্ঞেস করলাম। মৃতের ছবি প্রকাশ না করাই উত্তম।
হালিমা আক্তার
এটা আমাদের দেশের এক সামাজিক ব্যধি। কে কি করলো। তা নিয়ে গবেষণা করা। আমার খুব কাছ থেকে দেখা কিছু ঘটনা নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে। সামাজিক চাপ সবাই সহ্য করতে পারে না। মেয়েরা সব শুধু স্যাকরিফাইস করে যাবে। তাদের নিজের মতো করে কিছু পেতে চাইলে সমাজের অন্ত জ্বালা শুরু হয়ে যায়। যাই হোক আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়। শুভ কামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
নিজের পাছায় গু রেখে অন্যকে নিয়ে পরা আমাদের স্বভাব।
নার্গিস রশিদ
আমার মনে হয় হত্যা করা হয়েছে। ছেলে লোভী ছিল।
রোকসানা খন্দকার রুকু
বলা যায় না।।হতেও পারে।।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
বিপর্যস্ত সভ্যতা আপু!
মানবিকতার চরম অবক্ষয়!
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানবেন সতত।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কৃতজ্ঞতা ভাই।
জিসান শা ইকরাম
কে কিভাবে বাঁচতে চায়, বাঁচবে এটি তার একান্তই নিজস্ব বিষয়। স্বামী / স্ত্রী বয়েসে বড় বা ছোটো কোনো ব্যাপার না।
দেশে একটি ফেসবুক প্রজন্ম তৈরী হয়েছে। এদের কোনো সৃষ্টি শীলতা নেই। যে কোনো বিষয়কে সাইকো দৃষ্টিতে দেখে তা ধ্বংস করার উন্মাদনায় রত এরা। এসব দেখে ফেসবুক ছেড়ে দিয়েছি। যতটুকু ফেসবুকে যাই, তা সোনেলা ব্লগের জন্য।
এই মহিলাকে নিয়ে যে ধরনের ঘৃণ্য বর্বর প্রচারণা চালিয়েছে তারা যা কোনো সভ্য সমাজে বিরল। এই আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে, এটি হত্যা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
এখনকার সাংবাদিকদের আর কাজ নেই। এসবেরও আইন হওয়া দরকার। তা না হলে এরকম হাজারো ঘটনা ঘটবে।
মোঃ মজিবর রহমান
আমরা এমন সামাজিক জিব যেখানে কে কি করল এইটা নিয়া সমালোচনাই বেশি হই। আর আমাদের দেশে ফেসবুক নামক যন্ত্রটা খুব বেশি ক্ষতি করেছে। যা করি , যা বলি, যা যেভাবে বলি তার উল্ট প্রচারে আমরা ব্যাস্ত।
বিয়ের পুর্বে প্রেম, আর বিয়ের পর সংসার ব্যাপক পার্থক্য। মতের মিল বেমিল থাকবে যেটা দুইজন একেওপরকে কন্সিডার করে নিতে পারলেই অনেক সমাধান। আর যদি কেউ ইগো দেখায় সব শেষ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আসলেই তাই ভাই। কি যে হবে বুঝতে পারছি না। কাল সারাদিন কেমন ঘোরের মধ্যে ছিলাম।
ছাইরাছ হেলাল
অন্যকে নিয়ে বিশ্রি ভাবাই যেন এখন স্বাভাবিক কালচার।
এ সময়টুকু নিজেকে দিলে অনেক কিছুই ভাল হতে পারতো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সময়টাই কেমন যেন!!
নিতাই বাবু
জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা এমনিতেই হয়ে ওঠে না। কোনো-না-কোনো কারণেই জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা আর ঘৃণা জন্ম নেই। জন্ম নেয়া সেই ঘৃণা থেকে রেহাই পেতেই মানুষ স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা বা আত্মত্যাগের মতো পথ বেছে নেয়। হয়তো নিজের একমাত্র ছেলেটার জীবনেও বিতৃষ্ণা আর ঘৃণার জন্ম হয়েছিল।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ব্যথিত হলাম দাদা। প্রায়ই দেখি পা পঁচে গেছে এক মহিলার সে ওভাবেই চলছে অথচ কেউ কেউ পারেনা প্রিয় মানুষের আঘাত নিতে।