
চাটি না মাটি।
ফুটলে ঘটি।
ফুটলে দিবি।
না ফুটলে নিবি।
আমাদের ছোট বেলার কাদামাটি দিয়ে খেলা। খেলার সঠিক নাম আজ আর মনে নেই। আঠালো মাটি সংগ্রহ করে তা দিয়ে ঘটির মতো বানিয়ে ফুটানো হতো।কি অপরূপ খেলা। এখনকার ছেলেমেয়েরা চিন্তা করতে পারবেনা কাদামাটি দিয়ে খেলা যায়।
বন্ধু মুক্তার টাইম লাইনে মাটি দিয়ে তৈরি খেলনা হাড়ি পাতিলের ছবি দেখে হারিয়ে গেলাম শৈশবের সেই সোনা ঝরা দিনগুলোতে। মাটি দিয়ে হাড়ি পাতিল সহ নানা তৈজসপত্র বানাতাম। মিছিমিছি রান্না করে তাতে আবার খাওয়া হত। শুধু কাদামাটি দিয়ে নয়, নানা রকম খেলা ছিল আমাদের সময়।
চুড়ি ভাঙ্গা দিয়ে খেলতাম। মা, চাচি, খালাদের চুড়ি ভেঙ্গে গেলে তা সংগ্রহ করে রাখতাম। চুড়ি ভাঙ্গা গুলো কয়েকটি মাটির টিবির মতো বানিয়ে, কোন একটির মধ্যে লুকিয়ে রাখা হতো। অপর পক্ষ বলতে পারলে চুড়ি ভাঙ্গা নিয়ে নিবে। না বলতে পারলে সম পরিমাণে চুড়ি ভাঙ্গা দিয়ে দিবে।
খুব জনপ্রিয় ছিল পুতুল খেলা। কনে পুতুল, বর পুতুল বানিয়ে বিয়ের আয়োজন করা হতো। সেই বিয়ের আয়োজন কিন্তু কম ছিল না। হাতে লেখা নিমন্ত্রণ পত্র। অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য ব্যবস্থা করা হতো। কোথায় হারিয়ে গেল মধুর সেই দিনগুলো।
মাটিতে দাগ কেটে খেলা হতো কুতকুত। ছিল রশি লাফ। গোল করে বসে রুমাল চোর খেলা হতো। আয় রে আমার বেলি। বেলি বলে ডাকতেই অপর পক্ষে একজন যার ছদ্মনাম বেলি চোখ বাঁধা কপালে টোকা দিয়ে যেত। খেলাটির নাম ছিল ফুলটোকা। খেজুর দানা দিয়ে খেলা হতো চার গুটি। পাথর সংগ্রহ করে খেলা হতে পাঁচ পাথরের খেলা।
আমাদের সবাই খেলাগুলো ছিল প্রকৃতি ঘেঁষা। প্রকৃতির ধুলো মাটির সাথে জড়িয়ে ছিল আমাদের শৈশব। জীবন ছিল প্রকৃতির মত উজ্জ্বল উচ্ছল। বর্তমান সময়ই শিশুরা প্রকৃতি থেকে অনেক দূরে। খেলার সময় কোথায় তাদের। সারাদিন পড়াশোনা আর পড়াশোনা। জীবন যেন যন্ত্রের মত চলছে। যেটুকু খেলাধুলা করে সেটাও যন্ত্র নির্ভর।
সময়ের সাথে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে এবং পরিবর্তন হবে। এই পরিবর্তনকে সাথে নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা দল বেঁধে খেলা করতাম। সমবয়সীরা দলবেঁধে গল্প করতাম। এতে করে পারস্পরিক বোঝাপড়া ছিল চমৎকার। খেলার সাথীদের সাথে আত্মার সম্পর্ক গড়ে উঠতো। কোথায় হারিয়ে গেল সেই দিন গুলো। মনের অজান্তেই বেজে ওঠে – তোমরা ভুলেই গেছ মল্লিকাদের নাম।
ছবি সংগ্রহ- নেট থেকে।
২০টি মন্তব্য
ফারজানা তৈয়ূব
অসাধারণ দোস্ত, পুরায় নস্টালজিক করে দিলি।
হালিমা আক্তার
স্মৃতি মানেই নস্টালজিয়া।
ফারজানা তৈয়ূব
অসাধারন,নস্টালজিক
হালিমা আক্তার
ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
আলমগীর সরকার লিটন
আমরা এই খেলাকে বলতাম খুটিবাসুন খেলা খুব মজা ত
মেয়ে ছেলে মিলে খেলা কোন মেয়ের সাথে রাগারাগি হলে
খেলাতে নিত না–খুবি মনে পরছে সেই সব স্মৃতির কথা-
কবি আপু ভাল থাকবেন————-
হালিমা আক্তার
চমৎকার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কুতকুত খেলায় আমি সবসময় হেরে যেতাম। আমার কাছে ভীষণ কঠিন মনে হয়। মাটির হাড়ি পাতিলে রান্না, পরশী দাওয়াত, তারা আবার কাদার দুধ/ দই পিঠা পায়েশ নিয়ে আসতো। আসলেই মনোমুগ্ধকর ছিল।
হালিমা আক্তার
সত্যি অসাধারণ ছিল আমাদের শৈশব। ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
রেজওয়ানা কবির
ছোটবেলায় আমিও এই খেলা খেলতাম যার নাম দিয়েছিলাম খেলা বাটি। তখনতো বুঝতাম না এখন বুঝি এইসব মাটির খেলনায় ও রান্না সংসার সংসার খেলা খেলতাম!!! খুব সুন্দর ছিল সেই দিনগুলিন।শুভকামনা আপু।
নিতাই বাবু
এই খেলার কোনও নাম নেই। নদীতে স্নান করতে গেলেই নদীর পাড়ে আঠালো মাটি দিয়ে বাটির মতো করে বানিয়ে ধাম করে আছাড় মারতাম। আর ঠুস করে ফুটতো। এটাই ছিলো একরকম ছেলেখেলা।
হালিমা আক্তার
একদম সত্যি বলেছেন। কার টা কতো জোরে ফুটে তাই নিয়ে ছিল প্রতিযোগিতা। ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
শৈশবের সোনায় মোড়ানো স্মৃতি! এখনো মাটির দলা হাতে পেলে বানাই।
শুভ কামনা 🌹🌹
হালিমা আক্তার
ঢাকা শহরে মাটি পাই না, তাই বানানো হয় না। আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
সব আজ হারিয়ে গেছে
নেই সেই খেলা
নেই আত্মিক সম্পর্ক!
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানবেন সতত।
হালিমা আক্তার
চমৎকার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
ছাইরাছ হেলাল
সত্যি ই আমরা অনেক অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলেছি।
ইচ্ছে হলেও সেই সোনালী স্বপ্ন স্বপ্ন অতীতে ফিরে যেতে পারছি না।
হালিমা আক্তার
সোনালী স্বপ্ন গুলো স্বপ্নই থেকে যায়। যা যায় তা কি আর ফেরানো যায়। চমৎকার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। শুভকামনা রইলো।
হালিমা আক্তার
আন্তরিক ধন্যবাদ রেজোওয়ানা আপু। চমৎকার মন্তব্যের জন্য। শুভ কামনা রইলো।
নার্গিস রশিদ
ঠিক এই ভাবেই মাটি দিয়ে কত কিছু যে বানাতাম! মাটির চুলো, হাঁড়ি, পাতিল। তখন ছিলনা কিছু চিন্তা ভাবনা। শুধু খেলা আর খেলা। কোথায় হাঁড়িয়ে গেল সেই সব দিন গুলো। অনেক ভালো লাগলো পড়তে। ধন্যবাদ।
হালিমা আক্তার
সত্যি বলেছেন। চিন্তা ভাবনা হীন দিন ছিল। মাঝে মাঝে মনে হয় কেন বড় হলাম। অশেষ ধন্যবাদ। শুভ কামনা অবিরাম।