স্মৃতির এলবাম থেকে

হালিমা আক্তার ৬ মে ২০২৩, শনিবার, ১১:২০:৫০অপরাহ্ন বিবিধ মন্তব্য নাই

জীবন সবসময় সামনে চলে। পিছনে যা পড়ে থাকে, সেগুলো স্মৃতি হিসেবে রয়ে যায় মনের মনিকোঠায়। স্মৃতির ঝুড়িতে থাকে চেনা- অচেনা, প্রিয়- অপ্রিয়, সুখ-দুখ, আনন্দ-বেদনার হাজারো নুড়ি পাথর। কিছু স্মৃতি পাথর নয়, ঢেউয়ের ফেনার মতো ভেসে থাকে। হৃদয়ের এপার থেকে ওপারে দোলা দেয়। চলার পথে তেমনি একটি স্মৃতি। যা আজো মনের মধ্যে রঙিন আলোর ছড়িয়ে যায়।

অনেক বছর আগের কথা। তখন এসএসসি পরীক্ষার্থী। আমি ও আমার সহপাঠী বান্ধবী একসাথে যাওয়া আসা করতাম। পরীক্ষার প্রথম দিনগুলোতে অভিভাবক সাথে গেলেও শেষের দিকে আমরা দুজন একা যেতাম। তেমনি পরীক্ষার দিন। কোন বিষয় পরীক্ষা ছিল আজ আর মনে নাই। আমরা রিকশায় করে পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে নেমে রিকশা চালককে দশ টাকার একটি নোট দেই। ভাড়া ছিল সম্ভবত ৬ টাকা। রিকশা চালক ভাংতি দিতে পারলেন না। সম্ভবত এক/ দুই টাকা রয়ে গেল। রিকশাচালক আমাদের জিজ্ঞেস করলেন আমাদের পরীক্ষা কখন শেষ হবে। আমরা সময় বলতেই, বলে গেলেন উনি আবার আসবেন।

পরীক্ষা শেষ হলে, পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে রিকশার খোঁজ করছিলাম। ভুলেই গিয়েছিলাম সেই রিকশা চালকের কথা। বাসায় ফেরার জন্য রিক্সা খোঁজ করতেই। পিছন থেকে কে যেন বলে উঠলো, আপা আমিতো আইছি। পিছনে তাকিয়ে দেখি কয়েকটি রিকশার পর সেই রিকশা চালক দাঁড়িয়ে আছেন। বিস্মিত হয়ে গেলাম। পাওনা টাকা শোধ করার জন্য চলে এসেছেন। উনি না আসলে আমাদের কিছু করার ছিল না। আর আসবেন ভাবতেই পারি নাই। তাই অবাক হওয়ার ই কথা।আমরা সেই রিকশায় করেই বাড়ি ফিরলাম।

জীবন চলার পথে অনেক ঘটনা ঘটে। কিন্তু ফেলে আসা ক্ষনিক স্মৃতির ঘটনা আজও আমায় নাড়া দিয়ে যায়। শ্রদ্ধায় নত হয় অন্তর। সামান্য টাকার জন্য তাঁর ফিরে আসা , আমাদের সভ্য সমাজের জন্য শিক্ষণীয়। যেখানে কোটি টাকার সম্পদের উপর দাঁড়িয়ে। অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করতে কুন্ঠবোধ করি না। হারিয়ে যাওয়া মূল্যবোধের বিস্মৃতির অতলে ওই রিকশা চালক এক টুকরো আলো হয়ে জ্বলে থাকে।জানি না কোথায় আছেন, কেমন আছেন। আদৌ বেঁচে আছেন কিনা। অন্তরের অন্তস্থল থেকে তার প্রতি দোয়া সবসময় ছিল আছে থাকবে।

১১৫জন ৪১জন
0 Shares

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ