বর্ষার ঘনঘন বৃষ্টিভেজা গা নিয়ে ছুটে যেতাম প্রবীণ রেললাইনে। কখনো শিমুল,পলাশের বাগানে।
কখনো বা ছুটে যেতাম বায়স্কোপ দেখবো বলে। অপেক্ষায় বসে থাকতাম এ বাড়ি ও বাড়ি হতে কুড়িয়ে পাওয়া দু-একটা টিনের টুকরো দিয়ে হাওয়ার মিঠাই খাওয়ার আশায়।
এক ফালি রৌদ্রের আমেজ পেলে ছুটে যেতাম মাঠে সাতরঙা ঘুড়ি উড়াবো বলে।
রোজ স্থলপদ্মের গন্ধ গায়ে মাখব বলে ছুটে যেতাম এক পাড়া থেকে অন্যপাড়ায়।
তখন আমরা দুজনি ছিলাম শৈশবের পদাবলিতে।
বর্ষার দুপুরে পোকা আম খেয়ে পুকুরপাড়ের সাঁতার কাটতে কাটতে,একসময় বেরিয়ে পড়তাম মাছরাঙার খুঁজে। কখনো অজানার তরুলতা বেয়ে অপরাজিতার গায়ে গোধূলি আসতো।
ভালোবেসে তার নাম দিয়েছিলাম ছাতিম।
যবে থেকে যৌবনের পদাবলি গায়ে মাখতে শুরু করেছি তখন থেকে শৈশবের কাটানো দিনগুলো হারিয়ে ফেলতে বসেছি।
ধূসর দর্পণে স্মৃতিগুলো যখন নিয়ম করে চোখের সামনে আজও ভাসে। ইচ্ছে করে ফিরে যেতে কিন্তু তা যে আর হয় না।
নদীদের দুঃখ নেই বলে নিরুদ্দেশে ছুটে বেড়ায় অজানা থেকে অজানায়। ঝর্ণারা পিয়ানো বাজাতে জানেই বলে ভরদুপুরে নিঝুম শব্দে মন মাতিয়ে তুলে।
পাহাড় যখন ঘুমঘোরে আচ্ছন্ন তখন সুনীল আকাশে শতশত বিহঙ্গম উড়ে।
একসময় সন্ধ্যা নেমে আসে।
আসে বৃষ্টি তখন ঝর্ণা আপন অভিলাষে আপন ছন্দে মেতে উঠে। দুঃখ নেই বলেই প্রকৃতিকে ঘিরে তাদের মুঠো ভর্তি প্রেম।
ওরা আপন ছন্দে তাল লয় ঠিক রেখে মানুষকে অনুভব করতে শেখায়। যেমন নদী শেখায় বয়ে চলার গতি। প্রকৃতি জাগিয়ে তুলে মানুষের সুপ্ত প্রতিভাকে।
আর ঝর্ণা তো আপন ছন্দে মানুষকে মোহিত করে তুলে রোজ। তাদের কাছে ভালোবাসা অমরত্ব লাভ করে।
গোধূলি পেরিয়ে সেই কবে সন্ধ্যা এসেছে।
আকাশে জুড়ে বর্ষার আনাগোনা।
গাছের ডালে ডালে জারুল ফুলের তারুণ্য। আর অপরাজিতার বুকে ভূগোলের মানচিত্র।
এতসবের মাঝে ইদানিং আমাদের এক হয়ে আর বসা হয় না। তুমি শিখিয়েছিলে প্রকৃতির বুকে কান পেতে কিভাবে সাগরের গভীরতা অনুভব করতে হয়।
যে অনুভবে ভেজা বর্ষাকে নিয়ে আবার গৌরি বসন্তে চিঠি লিখতে বসবো দুজন।
তোমার দেওয়া সেই কবেকার রজনীগন্ধা খোঁপায় পরে আজও কালবৈশাখীর সন্ধ্যাতারা গুণি।
যদিও পাপড়িরা ঝরে পড়ে ছিন্ন তোমার অদেখায়। তোমার স্মৃতিটুকু ধরে রাখতে চাই।
নিয়ম করে রোজই তোমার প্রেমে পড়তাম।
বর্ষায় একসাথে লোকগীতি গাইবো বলে। কখনো একসাথে বৃষ্টিতে ভিজবো বলে।
আমাদের শৈশবের স্মৃতি গুলো হারিয়ে যাচ্ছে একে একে। বরং পরজন্মে তুমি আমাদের সম্পর্কের নাম রেখো বৃষ্টি। আর স্নিগ্ধতায় থাকুক অপরাজিতার স্মৃতি। আসুক আবার বসুমতীভেদ করে আমাদের শৈশব।
বিলুপ্তির ইতিহাসে তোমার কপালে চুম্বনের দিব্যি খেয়ে আজন্ম ভালোবেসে যেতে চাই।
দক্ষিণের জানালা অপেক্ষা করছে ডারউইনের বিবর্তন শেষে আমাদের শৈশব আবার ফিরে আসবে।
মানচিত্রের মতো করে লেখা থাকবে ঈশ্বরের বুকে আমাদের স্মৃতি!

0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ