
বিদ্যালয় জীবনের নবম শ্রেনীতে ইতিহাস পড়াতেন বড় হুজুর। অনেক বড় দাড়ি, বেশ স্বাস্থ্যবান হুজুর ক্লাসে নিয়ে আসতেন জোড়া বেত। তবে সেই বেত দিয়ে কখনো তিনি কোনো ছাত্রকে পিটিয়েছেন কিনা তার ইতিহাস অজানাই থেকে গিয়েছে সবার কাছে।
ক্লাসে একদিন তিনি ইবনে বতুতার কথা জানালেন। এমন সুন্দর বর্ণনায় তিনি ইবনে বতুতার কথা বললেন যে ইবনে বতুতার ইতিহাস জানার আগ্রহে হুজুরকে প্রশ্ন করলাম যে তার সম্পর্কে আরো বিস্তারিত কিভাবে জানবো? হুজুর কোনো উত্তর দিলেন না আমার প্রশ্নের। তবে একমাত্র প্রশ্নকর্তা আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। পরের দিন ইতিহাস ক্লাসে এসে আমাকে একটি বই পড়ার জন্য দিলেন। আমি অবাক হয়ে বইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ইবনে বতুতার ভ্রমন নিয়ে লেখা বেশ মোটা একটি বই। আমাকে হুজুর বললেন যতদিন লাগে বইটি পড়তে রেখে দিস তোর কাছে।
বাসায় এসে ক্লাসের বিভিন্ন পড়ার ফাঁকেফাঁকে ইবনে বতুতাও পড়া চললো। যতই পড়ছি ততই এক তীব্র আকর্ষন অনুভব করছি বিভিন্ন দেশ ভ্রমন কাহিনী পড়ে। কত কষ্ট করে জাহাজে করে উত্তাল সমুদ্র উপেক্ষা করে ভ্রমন করেছেন একদেশ থেকে অন্য দেশে। মাসের পর মাস ছুটেছেন একদেশ থেকে অন্য দেশে। কিসের আশায় এমন কষ্টকর ভ্রমণকে বেঁছে নিয়েছিলেন তিনি? পায়ে হেটে, উট, ঘোড়ায় চরে দেখেছেন এই জগতকে। সেই তখন থেকেই ভ্রমণের ইচ্ছে মাথায় চেপে বসেছিল। একদিন আমিও বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করবো, এই স্বপ্নের বীজ মনের মাঝে বপন করেছিলাম। শুধু অপেক্ষায় ছিলাম সেই স্বপ্ন বীজের অঙ্কুরোদগম এর, ডাল পালা, শাখা প্রশাখার বিস্তারের।
কলেজ জীবন শেষের পর প্রথম বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ এলো। ১৯৮০ সনে ছোট বেলার বন্ধু দুলাল দত্তের সাথে ভারত গেলাম। কলকাতা গিয়ে থাকলাম দশ দিন। এলাকার পরিচিত অনেক বন্ধু এবং বড় ভাইদের বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছিল সেবার, যারা ১৯৭৫ এর পটপরিবর্তনের পরে দেশে টিকতে না পেরে ওপার বাংলায় চলে গিয়েছিল। পরিচিত সবার সাথে দেখা সাক্ষাত, এবং কলকাতা বাংলা ভাষাভাষী হওয়ায় ওই ভ্রমণকে বিদেশ ভ্রমন মনে হয়নি। দ্বিতীয়বার বার ভারত ভ্রমণে গেলাম জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার পরে। তাও সিলেটের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং। শিলং ভ্রমণকেও বিদেশ ভ্রমন মনে হয়নি। বাংলা ভাষাভাষী সেখানেও প্রচুর।
দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ভ্রমণ করলাম থাইল্যান্ড ২০০৩ সনে। কয়েকবার থাইল্যান্ড যাবার পরে ভ্রমণের নেশায় পেয়ে গেলো। স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম একদিন হিমালয়কে স্পর্শ করবো, রাতে কোনো সমুদ্র সৈকতে গিয়ে সারারাত সমুদ্রের পানিতে পা ভিজিয়ে ঘুমিয়ে থাকবো। চীনের গ্রেট ওয়াল, ফরবিডেন সিটি দেখবো, দেখবো নায়াগ্রার জলপ্রপাত। ইউরোপের কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করার স্বপ্ন আছে, গতবছর জার্মান ভিসা হবার পরেও যাইনি অল্প সময়ের ভিসা হয়েছিল, তাও আবার ঈদ এর সময়। ছোট ভাই ফিনল্যান্ড এ সপরিবারে থাকে। ওর ওখানে গিয়ে আসে পাশের দেশ সমূহ দেখব ওকে সাথে নিয়েই। দরকার কমপক্ষে একমাসের অবসর। স্বপ্ন তৈরী হয়েছিল কমুনিষ্ট দেশ রাশিয়া ভ্রমণ করার। যুগোস্লাভিয়া ভ্রমনের ইচ্ছেও ছিলো, ছবির মত সুন্দর একটি দেশ। যুদ্ধ বিধ্বস্ত হয়ে যাবার পরে সে ইচ্ছে এখন আর নেই। জীবনের শেষ ভ্রমনে যাবো মিশর, পিরামিড দেখে ভ্রমন জীবনের ইতি ঘটাবো। কিছু স্বপ্ন বাস্তব করেছি। মিশর গিয়ে পিরামিড দেখার স্বপ্ন অপূর্ণ রয়ে গিয়েছে এখনো।
থাইল্যান্ডের পরে আমার ভ্রমন স্বপ্ন ডালপালা মেলতে আরম্ভ করলো। একে একে ভ্রমণ করলাম অনেক দেশ। পাসপোর্টে দেখে ক্রম অনুসারে সাজাতে হবে তালিকা। আপাতত লিখে যাচ্ছি যেটা মনে আসে সেভাবে।
ভারত, থাইল্যান্ড, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম , চীন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, দক্ষিন কোরিয়া এবং বর্তমান বিশ্বের একমাত্র কম্যুনিস্ট দেশ উত্তর কোরিয়া
এই দেশ সমূহের মধ্যে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া একাধিকবার গিয়েছি।
প্রতিটি ভ্রমণ কাহিনীর সাথে বিভিন্ন মজার ঘটনা জড়িয়ে আছে। ভ্রমন শুরুর আগে ভিসার আবেদন করার সময়ের কিছু মজার ঘটনা আছে আমার। ইচ্ছে আছে প্রতিটি দেশের ভ্রমণ পূর্ব এবং ভ্রমন কালীন মজার ঘটনা সমূহ লেখার।
দেশ ভ্রমণ একটি নেশার মত। করোনার কারণে দেশ ভ্রমণ থমকে গিয়েছে। থমকে গিয়েছে আমার স্বপ্ন। গত বছর কানাডা যাবার পরিকল্পনা ছিলো, ২০২২ পর্যন্ত ভিসা আছে। এরমধ্যে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে যাওয়া হবে না হয়ত আর কানাডা। কবে আবার হাতে ট্রলি নিয়ে আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে বের হবো তার অপেক্ষায় আছি,
ভালো থাকুন আমার প্রিয় সোনেলার ব্লগার গন,
শুভ কামনা।
৩২টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
ফাস্টু হতে আসিলাম সবতের আগে। মন্তব্যে আসতাছি পইড়া লই আগে।
জিসান শা ইকরাম
প্রথম হবার জন্য অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা তোমাকে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
করোনায় সব আটকে দিল । ঈশ্বর আপনার স্বপ্ন পূরণ করুন। ভ্রমণের নেশা আমার ও আছে তবে তার জন্য পর্যাপ্ত অর্থের দরকার তাই অন্যেরটা শুনে, দেখেই মনকে ভরিয়ে রাখি। দাদা ভাইয়ের জন্য অফুরন্ত শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো। শুভ সকাল
জিসান শা ইকরাম
করোনা আসলেই সব আটকে দিল। গত মে মাসে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যাবার কথা ছিল। যাওয়া হয়নি করোনার কারনে।
তোমার জন্যও অফুরান শুভ কামনা ছোটদি।
প্রদীপ চক্রবর্তী
আপনি একজন ভ্রমণপিপাসী।
আপনার স্বপ্ন পূরণ হোক এই কামনা করি।
আর প্রতিটি দেশের ভ্রমণ কাহিনী নিয়ে কিছু লিখবেন সে অপেক্ষায় আমরা আছি,দাদা।
শুভ কামনা।
শুভ সকাল,দাদা।
জিসান শা ইকরাম
ভ্রমন আমার নেশা।
লেখার চেস্টা করব অবশ্যই।
শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
করোনার কারনে ভ্রমন পিপাসু মানুষদের খুব কষ্ট হচ্ছে। আপনি অনেক দেশ বেড়িয়েছেন। বাকিগুলোর জন্য তৈরি থাকেন।
আল্লাহ আপনার ইচ্ছা অতি তারাতারি পুরণ করুক। এই কামনা।
জিসান শা ইকরাম
করোনার কারনে ভ্রমন , চিকিৎসা সব থমকে গিয়েছে।
আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করুন, আমীন।
শুভ কামনা।
ছাইরাছ হেলাল
করোনা নিপাত যাক, ভ্রমন চালু থাক।
তবে আমরা অপেক্ষায় থাকি ভ্রমণ বিত্তান্তের।
জিসান শা ইকরাম
করোনা নিপাত যাক।
ভ্রমন পোস্ট দেয়া হবে, কিছু পোস্টে তো আপনিও থাকছেন।
শুভ কামনা।
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
চমৎকার লিখেছেন
শুভকামনা রইল সতত
জিসান শা ইকরাম
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
শুভ কামনা।
আলমগীর সরকার লিটন
আপনার স্বপ্ন সত্যই হোক এই কামনা করি অনেক শুভ কামনা
জিসান শা ইকরাম
স্বপ্ন বাস্তব করার মত যেন সুস্থ থাকতে পারি।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
পারিবারিক ভাবেই ভ্রমণ আমার রক্তে, বাবা চাচারা প্রচুর ভ্রমণ করতো, আমিও করেছি প্রচুর।
আমার প্রথম ভ্রমণ লন্ডন, এরপর থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, চায়না, ভারত, মালয়েশিয়া সহ কত দেশ এবং শহর যে ঘুরেছি তার হিসাব নেই ভাইজান।
জিসান শা ইকরাম
আপনি প্রচুর ভ্রমন করেছেন। ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের দেশও আছে তাতে।
আসুন আমরা ভ্রমন পোস্ট দিয়ে সোনেলাকে রাঙিয়ে দেই।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
আপনার মতো বিদেশ ঘুরিনি তবে দেশের মোটামুটি সবগুলোই দেখেছি। একেক অঞ্চলের ভাষা, ঐতিহ্য, চলাফেরা, খাওয়া, আচরণ আলাদা। ভ্রমণ শুধু আনন্দ দেয় না, মস্তিষ্কের পরিধিও বৃদ্ধি করে।
পরিবেশ ভালো হলে, নিশ্চয় আপনার চোখে দেখবো নতুন কোন দেশ।
শুভকামনা
জিসান শা ইকরাম
” ভ্রমণ শুধু আনন্দ দেয় না, মস্তিষ্কের পরিধিও বৃদ্ধি করে। ” – ভ্রমন সম্পর্কে অত্যন্ত মূল্যবান কথা।
দেশে আমার ভ্রমন খুবই কম।
তুমি তো ভ্রমনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারো। খুব সুন্দর ছবি তুলতে পারো। ছবি সহ ভ্রমন পোস্ট দাও।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
দিবো। একটু গুছিয়ে নিই আগে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
জিসান শা ইকরাম
আচ্ছা, আমি সহ সবাই অপেক্ষায় থাকবে পোস্টের।
তৌহিদ
আপনার স্বপ্নই আপনাকে নিজের লক্ষ্যের কাছে নিয়ে গিয়েছে। স্বপ্ন হতে হয় বাস্তবিক, নিজের সামর্থের মধ্যে। তবেই তা ধরা দেয় যা আপনাকেও দিয়েছে।
দেশভ্রমণের এমন সুযোগ বারেবারে আসুক আপনার কাছে আর আমরাও জানতে পারবো দেশবিদেশের গল্প আপনার লেখায়।
করোনা চলে যাক তাড়াতাড়ি। থমকে যাওয়া সময় আর ভালো লাগছেনা। শুভকামনা জানবেন ভাই।
জিসান শা ইকরাম
করোনা থমকে দিয়েছে আমার স্বপ্নের চাকা, আমার চিকিৎসাও।
স্বপ্ন দেখতে হবে অবশ্যই সাধ্যের মধ্যে।
লেখার ইচ্ছে আছে, কতটা পারি জানিনা।
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়, আসলেই কি হয়!!
জিসান শা ইকরাম
কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই হয়, ইচ্ছেই যদি না থাকে উপায়রা খুঁজবে না তো আমাদের।
শুভ কামনা।
রেজওয়ানা কবির
কাল আপনার ভ্রমনকাহিনী পড়েছি কিন্তু আজ মন্তব্য করতে আসলাম। আপনার এই ভ্রমণ কাহিনী পড়েই আমার আজকের লেখা। তার মানে বুঝে নেন আমার কত ভালো লেগেছে লেখাটি। শুভকামনা ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
আপনার আজকের লেখার উৎস আমার এই লেখা, এটি ভাবতেই ভালো লাগছে।
আপনার লেখার উপস্থাপনা অনেক ভালো। এমন লেখা আরো চাই।
শুভ কামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
ভ্রমণ ব্যাপারটাই বিচিত্র এক নেশা। ভ্রমণে আগ্রহ নেই এমন মানুষ আমি খুবই কম দেখেছি। আপনার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের বিস্তারিত ঘটনা জানার অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
জিসান শা ইকরাম
ভ্রমন আসলেই একটি নেশা। প্রতিবছর একবার ভ্রমনে না গেলে অস্বস্তি হয়।
ভ্রমন অভিজ্ঞতা নিয়ে ধারাবাহিক লেখার চেস্টা করবো।
শুভ কামনা আপনার জন্য।
খাদিজাতুল কুবরা
ভ্রমণ একটি মনোজ্ঞ আনন্দের উৎস। আপনার ভ্রমন পিপাসু মন কিছু স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে। সে হিসেবে আপনি সৌভাগ্যবান। সবার স্বপ্ন পূরণ হয়না। দোয়া করি খুব শীগ্রই আপনার বাকী স্বপ্ন গুলোও পূরণ হউক।
আর ভ্রমণ বৃত্তান্ত পড়ে আমরা সমৃদ্ধ হই।
জিসান শা ইকরাম
স্বপ্ন পুরনের জন্য অপেক্ষা করছি, কবে করোনা কমবে তার প্রতিক্ষা করছি।
তোমার দোয়া যেন আল্লাহ কবুল করেন।
শুভ কামনা।
হালিম নজরুল
ইবনে বতুতার প্রেরণা থমকে গেছে করোনার কাছে। দোয়া করি দ্রুত সুযোগ ফিরে আসুক নতুন ভ্রমণের।
জিসান শা ইকরাম
করোনায় থমকে আছে স্বপ্ন। অপেক্ষায় আছি,
শুভ কামনা।