স্বপ্ন

মুহাম্মদ শামসুল ইকরাম পিরু ২৪ নভেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার, ১১:৫২:৪৩অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩২ মন্তব্য

বিদ্যালয় জীবনের নবম শ্রেনীতে ইতিহাস পড়াতেন বড় হুজুর। অনেক বড় দাড়ি, বেশ স্বাস্থ্যবান হুজুর ক্লাসে নিয়ে আসতেন জোড়া বেত। তবে সেই বেত দিয়ে কখনো তিনি কোনো ছাত্রকে পিটিয়েছেন কিনা তার ইতিহাস অজানাই থেকে গিয়েছে সবার কাছে।

ক্লাসে একদিন তিনি ইবনে বতুতার কথা জানালেন। এমন সুন্দর বর্ণনায় তিনি ইবনে বতুতার কথা বললেন যে ইবনে বতুতার ইতিহাস জানার আগ্রহে হুজুরকে প্রশ্ন করলাম যে তার সম্পর্কে আরো বিস্তারিত কিভাবে জানবো? হুজুর কোনো উত্তর দিলেন না আমার প্রশ্নের। তবে  একমাত্র প্রশ্নকর্তা আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। পরের দিন ইতিহাস ক্লাসে এসে আমাকে একটি বই পড়ার জন্য দিলেন। আমি অবাক হয়ে বইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ইবনে বতুতার ভ্রমন নিয়ে লেখা বেশ মোটা একটি বই। আমাকে হুজুর বললেন যতদিন লাগে বইটি পড়তে রেখে দিস তোর কাছে।

বাসায় এসে ক্লাসের বিভিন্ন পড়ার ফাঁকেফাঁকে ইবনে বতুতাও পড়া চললো। যতই পড়ছি ততই এক তীব্র আকর্ষন অনুভব করছি বিভিন্ন দেশ ভ্রমন কাহিনী পড়ে। কত কষ্ট করে জাহাজে করে উত্তাল সমুদ্র উপেক্ষা করে ভ্রমন করেছেন একদেশ থেকে অন্য দেশে। মাসের পর মাস ছুটেছেন একদেশ থেকে অন্য দেশে। কিসের আশায় এমন কষ্টকর ভ্রমণকে বেঁছে নিয়েছিলেন তিনি? পায়ে হেটে, উট, ঘোড়ায় চরে দেখেছেন এই জগতকে। সেই তখন থেকেই ভ্রমণের ইচ্ছে মাথায় চেপে বসেছিল। একদিন আমিও বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করবো, এই স্বপ্নের বীজ মনের মাঝে বপন করেছিলাম। শুধু অপেক্ষায় ছিলাম সেই স্বপ্ন বীজের অঙ্কুরোদগম এর, ডাল পালা, শাখা প্রশাখার বিস্তারের।

কলেজ জীবন শেষের পর প্রথম বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ এলো। ১৯৮০ সনে ছোট বেলার বন্ধু দুলাল দত্তের সাথে ভারত গেলাম। কলকাতা গিয়ে থাকলাম দশ দিন। এলাকার পরিচিত অনেক বন্ধু এবং বড় ভাইদের বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছিল সেবার, যারা ১৯৭৫ এর পটপরিবর্তনের পরে দেশে টিকতে না পেরে ওপার বাংলায় চলে গিয়েছিল। পরিচিত সবার সাথে দেখা সাক্ষাত, এবং কলকাতা বাংলা ভাষাভাষী হওয়ায় ওই ভ্রমণকে বিদেশ ভ্রমন মনে হয়নি। দ্বিতীয়বার বার ভারত ভ্রমণে গেলাম  জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার পরে। তাও সিলেটের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং। শিলং  ভ্রমণকেও বিদেশ ভ্রমন মনে হয়নি। বাংলা ভাষাভাষী সেখানেও প্রচুর।

দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ভ্রমণ করলাম থাইল্যান্ড ২০০৩ সনে। কয়েকবার থাইল্যান্ড যাবার পরে ভ্রমণের নেশায় পেয়ে গেলো। স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম একদিন হিমালয়কে স্পর্শ করবো, রাতে কোনো সমুদ্র সৈকতে গিয়ে সারারাত সমুদ্রের পানিতে পা ভিজিয়ে ঘুমিয়ে থাকবো। চীনের গ্রেট ওয়াল, ফরবিডেন সিটি দেখবো, দেখবো নায়াগ্রার জলপ্রপাত। ইউরোপের কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করার স্বপ্ন আছে, গতবছর জার্মান ভিসা হবার পরেও যাইনি অল্প সময়ের ভিসা হয়েছিল, তাও আবার ঈদ এর সময়। ছোট ভাই ফিনল্যান্ড এ সপরিবারে থাকে। ওর ওখানে গিয়ে আসে পাশের দেশ সমূহ দেখব ওকে সাথে নিয়েই। দরকার কমপক্ষে একমাসের অবসর। স্বপ্ন তৈরী হয়েছিল কমুনিষ্ট দেশ রাশিয়া ভ্রমণ করার। যুগোস্লাভিয়া ভ্রমনের ইচ্ছেও ছিলো, ছবির মত সুন্দর একটি দেশ। যুদ্ধ বিধ্বস্ত হয়ে যাবার পরে সে ইচ্ছে এখন আর নেই। জীবনের শেষ ভ্রমনে যাবো মিশর, পিরামিড দেখে ভ্রমন জীবনের ইতি ঘটাবো। কিছু স্বপ্ন বাস্তব করেছি। মিশর গিয়ে পিরামিড দেখার স্বপ্ন অপূর্ণ রয়ে গিয়েছে এখনো।

থাইল্যান্ডের পরে আমার ভ্রমন স্বপ্ন ডালপালা মেলতে আরম্ভ করলো। একে একে ভ্রমণ করলাম অনেক দেশ। পাসপোর্টে দেখে ক্রম অনুসারে সাজাতে হবে তালিকা। আপাতত লিখে যাচ্ছি যেটা মনে আসে সেভাবে।
ভারত, থাইল্যান্ড, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম , চীন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, দক্ষিন কোরিয়া এবং বর্তমান বিশ্বের একমাত্র কম্যুনিস্ট দেশ উত্তর কোরিয়া
এই দেশ সমূহের মধ্যে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া একাধিকবার গিয়েছি।

প্রতিটি ভ্রমণ কাহিনীর সাথে বিভিন্ন মজার ঘটনা জড়িয়ে আছে। ভ্রমন শুরুর আগে ভিসার আবেদন করার সময়ের কিছু মজার ঘটনা আছে আমার। ইচ্ছে আছে প্রতিটি দেশের ভ্রমণ পূর্ব এবং ভ্রমন কালীন মজার ঘটনা সমূহ লেখার।

দেশ ভ্রমণ একটি নেশার মত। করোনার কারণে দেশ ভ্রমণ থমকে গিয়েছে। থমকে গিয়েছে আমার স্বপ্ন। গত বছর কানাডা যাবার পরিকল্পনা ছিলো, ২০২২ পর্যন্ত ভিসা আছে। এরমধ্যে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে যাওয়া হবে না হয়ত আর কানাডা। কবে আবার হাতে ট্রলি নিয়ে আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে বের হবো তার অপেক্ষায় আছি,

ভালো থাকুন আমার প্রিয় সোনেলার ব্লগার গন,
শুভ কামনা।

0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ