#স্বপ্ন পর্ব ৭

মমি ভাইয়ের আনা চাপাইনবাগঞ্জের রসালো আম বলে কথা। আর প্রতিযোগিতা করে খেতে হলে তো কথাই নেই। সেই যে খাওয়া শুরু করলাম আর থামছেই না। সবাই খাওয়া শেষ করে যখন আমার দিকে তাকিয়ে আছে লজ্জায় খাওয়াটা বন্ধ করলাম। শরীরটা কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে এলো। হাত মুখ ধুয়ে একটু ফ্রেস হয়ে মাথাটা রাখলেই ভাল লাগবে। যেই ভাবা সেই কাজ।

হটাৎ ফোনটা বড়ই কর্কশ করে বেজে যাচ্ছে। জানিনা রিং টোনটা কে বদলে দিল আর আমি তো সাইলেন্ট করে রাখছিলাম। পাশ ফিরে কানে বালিস দিয়ে ও রক্ষা নাই। বেজেই যাচ্ছে আমার মামুনি এসে বলে বাবা এইভাবে দিনের বেলায় কেউ ঘুমায় ? ফোনটা বাজছে একটু ধরো। মামুনিকে বললাম একটু বলার জন্য বাবা ঘুমাচ্ছে। মামুনি ফোন ধরে আংকেল আংকেল করছে আর আমাকে ঘুম থেকে তুলেই ছাড়লো।

ফোন ধরেই বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠলাম। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বলে এ ভাবে দিনের বেলা আম খেয়ে ঘুমালে চলবে ?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার সাথে কথা বলবে ৪ টার দিকে বলেই লাইনটা কেটে দিল। আমিতো অস্থির হয়ে পায়চারি করছি। আমার উনি ওদিকে ঘর ফাটাইয়া ফেলতেছে। কতবার বলছি হাবিজাবি লেখাবাদ দিতে। সোনেলা সোনেলা করে দেশ উদ্ধার করবে। নাও এখন ঠেলা সামলাও, ১৪ শিকের ভাত খাওয়াবে। দেশ আর আপা আপা করে জীবনটাই শেষ করলা। এখন বড় ডেকের ভাত খাওয়াবে। উনি বারবার জানালা দিকে উকি মারছে আর আমাকে শাষাচ্ছে। আমি ও মনে মনে ভয়ে চতুর্দিকে তাকাই পুলিশ আসছে কিনা আর অভয় দিচ্ছি আমার আপা এরকম হতেই পারে না। আর ঘামাতে ঘামাতে ভিজে ভাবছি আর উনি প্রেশার মাপার যন্ত্র নিয়ে পিছে পিছে ঘুরছে।

ঘড়ির কাটাটা বন্ধ করেই দিলাম ব্যাটারীটা খুলে। কিন্তু ঠিক ৪ টায় ফোন বেজে উঠলো। ভয়ে গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছে। ফোনটা ধরতেই বলে উঠে ঈদ মোবারক ! আমি হাসিনা বলছি। আমি তো আপা আপা করেই অস্থির। উনি আমাকে বলেন ভয় পাচ্ছো কেনো ? অপরাধতো করো নি তো ?
আমি সোনেলা পরিবারের সাথে এবারের ঈদটা পালন করতে চাই। তোমরা সবাই আগামীকাল সপরিবারে আসবে। কয়জন আসবে বিপ্লব বড়ুয়াকে জানাবে ঈদ মোবারক বলেই রেখে দিলেন।

আমিতো আকাশ থেকে পড়লাম। প্রথমে জিসান ভাই কে জানালাম। তারপর গ্রুপে জানালাম তারপর একে একে ছাইরাছ হেলাল, নাসির সারওয়ার, ইঞ্জা, মনির হোসেন মমি, নিতাই বাবু, বন্যা লিপি, সাবিনা ইয়াসমিন, মাহবুবুল আলম, সিকদার সাদ রহমান, রেহানা বীথি, জাকিয়া জেসমিন যূথী, সুপর্ণা ফাল্গুনী , মোহাম্মদ মজিবর রহমান, শামীম চৌধুরী, হালিম নজরুল প্রমুখ সবার ফোন আসতেই থাকলো। নি:শ্বাস ফলার সময় পাচ্ছিনা ফোন কলের কারণে।

একঘন্টা পরে বিপ্লবদা আবার ফোন দিয়ে খুশীর খবর টা দিলেন আপা আমাদের জন্য হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করলেন।

কামাল ভাইকে এই দায়িত্বটা দিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। । দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে সবাইকে একত্রিত করা কতটা কঠিন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রিমি রুম্মন, মারজানা ফেরদৌস রুবা, শাহরিন, ইকবাল কবীর, রেজওয়ান, আরজু মুক্তা, নীরা সাদিয়া,সুরাইয়া পারভীন, সুরাইয়া নার্গিস, শবনম মোস্তারী,রুমন আশরাফ, মুক্তা মৃণালিনী, মনি কাশফিতা,শিরিন হক, সাদিয়া শারমিন, রেজোয়ানা কবীর, মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী,খাদিজাতুল কুবরা, রোকসানা খন্দকার রুকু, সাজেদুল হক, সঞ্জয় মালাকর, নৃ- মাসুদ রানা, আলমগীর সরকার লিটন, ফয়জুল মহী, ইসিয়াক, দালান জাহান, ফজলে রাব্বী সোয়েব, আকবর হোসেন রবিন, মাছুম হাবিবী, নিরব সাগর , উর্বশী,পর্তুলিকা সবাইকে পরিবার সহ নিয়ে এসেছে। রিমি রুম্মন, রেজওয়ান কিভাবে আসলো এখানে বিদেশ থেকে?

ঘড়ির কাঁটা ৪ টা ছুই ছুঁই। আমার আপা গণভবন থেকে বের হয়ে আসলেন অর্ভথ্যনা জানাতে। দুই হাত বাড়িয়ে দিলেন গলায় আনন্দ বার্তা।
আজি এ প্রভাতে রবির কর,
কেমনে পশিল প্রাণের পর।
কেমনে পশিল গুয়ার আঁধারে
প্রভাত পাখির গান।
না জানি কেন রে এতদিন পরে
জাগিয়া উঠিল প্রাণ বলেই সাবিনা আপুকে জড়িয়ে ধরলেন। সবাইকে ঈদ মোবারক বলে সাদরে গ্রহণ করে নিলেন।

সবাইকে নিয়ে বিশাল প্যান্ডেলে বসালেন একপাশে খাবার দাবারের আয়োজন। সামনে বিশাল সাজানো মঞ্চ। আমার আপা সাথে রেহানা আপাকে নিয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময়ে ব্যস্ত। জিসান , হেলাল, ইঞ্জা, তৌহিদ ভাই আর সাবিনা আপু সহযোগীতা করছে। আপা সবার হাতে একটি চিরকুট আর বাচ্চাদের ক্যাডবেরী চকলেট দিচ্ছে।
চিরকুটের রহস্যটা খুলে দেখলেও কিছুই দেখা যাচ্ছে না। অনুষ্ঠানের পরে দেখা যাবে। সবার মুখে হাসির রোল পড়ে গেল। আমি কি কি খাবার আয়োজন করলেন সেটা দেখতেই ব্যস্ত।

বাসমতি চালের পোলাও, রুটি, নান , গরু, খাশী, মুরগী, সরিষা ইলিশ, চিতল মাছের পেটি। মলা মাছ শাক সব্জী। চাপাই আম, কুমিল্লার রসমলাই আর বগুড়ার দই।

হঠাৎ করে দেখলাম সামনের পর্দাটা আস্তে আস্তে উঠছে। পিছনে জ্বল জ্বল করে ভাসছে সোনেলা পরিবারের স্বর্ণালী সন্ধ্যা ২০২০ ! আমার আপা আস্তে আস্তে মঞ্চে এলেন মাইক্রোফোন হাতে সাথে রেহানা আপা, পুতুল, জয় আর টিউলিপ।

টিউলিপকে দেখেই মনটা ভারী হয়ে গেল। আমাদের যুবরাজ খ্যাত তারেক দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে যুক্তরাজ্যে একযুগের ও অধিক ফেরারী আসামী হয়ে আলিসান বাড়ি নিয়ে আছে। আর সেদেশেরই আইন প্রণেতা রেহেনা আপার মেয়ে টিউলিপ।

আমার আপা সবাইকে অবাক করে দিয়ে। বলে আমি সোনেলা পরিবারকে সাথে নিয়ে ঈদ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আজ গণভবন আলোকিত হলো এতগুলি জ্ঞানী- গুণী,লেখক ও তাদের পরিবারকে সাথে পেয়ে। আমি সোনেলা পরিবারের জন্য একটি কল্যাণ ট্রাস্ট, একটি অন লাইন পত্রিকা ও একটি ছাপাখানা উপহার দিতে চাই সাথে আমার একটা ছোট্ট অনুরোধ। আজকে এই মঞ্চে সোনেলা পরিবারের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে আমরা সবাই একসাথে খাব। সবাই ঈদের সময় টিভিতে অনুষ্টান দেখি। আজকে সরাসরি অনুষ্টান দেখবো।

সবাই আনন্দে আত্নহারা কিন্তু আমরা পড়লাম বিপদে প্রস্তুতি ছাড়া অনুষ্ঠান কেমনে করি। এডমিনদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম আমাদের নববর্ষের প্রোগ্রামটা করবো।
আমার কাছে সব স্ক্রীপ্ট আছে মোবাইলে। আপা যন্ত্রী নিয়ে এলেন।

জিসান ভাই আর সাবিনা আপু অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করলেন। সোনেলার স্বর্ণালী সন্ধ্যা ! পিছনে ভেসে আসছে যুথী আপুর কারুকার্য। আমি আর সুপর্না দিদি ধারাবর্ণনায় শুরু করলাম।

আনন্দ লোকে মঙ্গলালোকে গান দিয়ে পিছনে শিল্পীরা আর সামনে নাচছে সুরাইয়া নার্গিস . পারভীন , বন্যা, আরজু মুক্তা আর নীরা সাদিয়া আপুরা। মনে হচ্ছে ডানা কাটা পরীরা নাচছে।
তারপর একে একে

ধন ধান্যে পুস্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা
তীর হারায়ে ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবরে
সব শেষে রাত পোহালে যদি শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই দিয়ে।

গানটা করার পর সবাই অশ্রু সিক্ত হলো। আমার আপা আবার চোখ মুছতে মুছতে মঞ্চে এলেন। আমাদের অনুষ্ঠানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বলেন আমি আজ নিজ হাতে রান্না করেছি নিজ হাতে খাবার ও পরিবেশন করবো। কিন্তু এখানে এমন একজনকে জানি যিনি নিজে লিখে আবার আবৃতি ও করে। আমি তার কবিতা আবৃতি শুনে তারপর খাবার পরিবেশন করবো। সবাই একে অন্যের মুখ দেখাদেখি শুরু করলেন। একজন ডানা কাটা পরী মঞ্চের দিকে দৌঁড়ে এলেন। সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। দেখি আমার এক কলিগ ব্লগার প্রিয় শাহরিন আপু এসে বলে দাদা আপনার কথাই বলছেন আপা। সেই কবিতাটা করেন যেটা C&A এতে করেছিলেন।

আপাতো মাইক ছাড়েই না। তার সাথে আমার পরিচয় সুত্র বলা শুরু করলেন। চট্টগ্রাম হত্যাকান্ডের সময় রাজপথ কাঁপানো তরতাজা তরুণ। আর ৯০ র অভ্যুত্থানে রাজপথ কাঁপানো ছাত্রনেতা যে স্বরচিত কবিতা আবৃতি করে জনগনকে জাগিয়ে তুলতো। সবাই একে অন্যের মুখ দেখা দেখি করছে। কেউ নাম বলতে পারছে না আমার আপা বললো মঞ্চেই আছে প্রিয় ভাইটি আমার সুপায়ন বড়ুয়া।

সবাই করতালি দিচ্ছে আর আমার বেড়ে যাচ্ছে হার্টবিট। শাহরিন আপু আমাকে অভয় দিয়ে বলে বাংলার নববর্ষ কবিতাটা আবৃতি করেন দাদা। সেই একমাত্র আগে শুনেছিল আমাদের অফিসের অনুষ্ঠানের। আমি ও একটু সাহস পেলাম। যেটা এর আগে ৫ টি অনুষ্টানে করে বাজিমাৎ করেছিলাম।

কবিতাটা ৫ মিনিটের ছিল। যন্ত্রীদের বললাম তৈরী হতে।

“কাক ডাকা ভোড়ে শিশিরের দুর্বাদল ঘাসে
অনাবিল আনন্দে ছুটে চলা কিশোরের দল
ডাক দিয়ে যায় আজ নববর্ষ
প্রণমি তোমায় ধরনীতল
মুক্ত চিন্তার একটি দেশ
শুভ কামনায় বাংলাদেশ।
.............
.........,,...

মিলনের পূত পবিত্র, তারুন্যের উন্মাদনা
অপরুপ সাজে সজ্জিত সোনেলায় গনভবনের আঙিনা
দীপ্ত শপথে বলীয়ান হয়ে
এঁকে যায় দেয়াল, লিখে যায় পঙতিমালা নববর্ষ !
উচ্ছাসে ভরা প্রাণ , গেয়ে যাই সোনেলার জয়গান।
আজ নববর্ষ , প্রাণপ্রিয় একটি দেশ
প্রাণচ্ছোল বাংলাদেশ !
আজ নববর্ষ , প্রাণ প্রাচুর্যে ভরা একটি দেশ
Long Live Bangladesh
Long live সোনেলা।
Long Live শেখ হাসিনা।

জয় বাংলা !
আপা বলেন,
জয় সোনেলা !
লোকে লোকারন্য। লাখ মানুষের পদ চারনায় মুখরিত রাজপথ গনবভন থেকে সংসদ চত্বর থেকে শাহবাগ এভিন্যু হয়ে শহীদ মিনার।
মিছিল দুলছে ,
আমি বলি জয় বাংলা !
সবাই বলে জয় সোনেলা।
হঠাৎ আমার ওনি চীৎকার করে !
নাক ডাক হাত পা ছুড়ে !
ঘুমাও তুমি দিন দুপুরে ?
নাও চীরকুটটা নিয়ে ৩ টা গাছ লাগিয়ে আস
বনজ , ঔষধি আর ফলজ।
আর আমি বাসমতি চালের পোলাও খুঁজছি
খাবার টেবিলে দেখি ২টা শুকনো রুটি যত্ন করে ঢাকা
আর এক বাটি ঠান্ডা সব্জী পড়ে আছে।

(সাথে একটি খামে পেন ড্রাইভ যেটা ইঞ্জা ভাই পুরো অনুষ্টানের ভিডিও করেছেন )

স্বপ্ন || ৬ ( ব্লগারদের সম্মিলিত গল্প )

0 Shares

৬৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ