তবুও মহাকাব্য সাধারনজনের আশ্রয়। বহু গাথা ,অতিকথা ইত্যাদির অন্যতম আশ্রয় রামায়ণ-মহাভারত। মহাভারত আমার অন্যতম প্রিয় গ্রন্থ। মহাভারতের অনন্য কাহিনী ও অজস্র চরিত্রের মাঝে একলব্য সুতপুত্র কর্ণের মত এক অনিন্দ্যসুন্দর ট্রাজিক হিরো। বহুদিন ধরে তাকে নিয়ে মহাকাব্যানুসারী লেখার সাধ আমার । বছর কুড়ি আগে এই লেখা শুরু করেছিলাম, নানান ব্যস্ততায় সেই লেখা শেষ করা যায়নি । কিছুদিন আগে একলব্য কেন্দ্রিক একটি প্রশ্নের উত্তরে শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি নাড়া দিলেন। নতুন করে লিখতে বসলাম। পুরানো সেই খেরোর খাতা বার করে নতুন ভাবে লেখা শুরু করলাম। মূল সংস্কৃতে মহাভারত আমার পড়া নেই। বাংলাতেই পড়েছি । গদ্যে পদ্যে দুইই । একলব্যকে নিয়ে অনবদ্য ও সরল গদ্যে এক অসাধারণ কাহিনী পড়েছিলাম অধ্যাপক সুখময় মুখোপাধ্যায়ের ‘একলব্যের স্বপ্ন ‘ লেখায় । বইটি ইদানিং অমিল। কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরি থেকে শুরু করে বিশ্বভারতীর সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতেও বইটির সন্ধান মিলল না । অথচ একসময়ে বর্ধমানে আমাদের অতি সাধারণ গ্রামীণ পাঠাগারেও বইটি ছিল | ছাত্র বেলায় সেখান থেকেই এই বইটি পড়েছিলাম।বহুকাল সেখানে নিয়মিত যাওয়া হয়ে ওঠেনা কিন্তু সম্প্রতি সেই পল্লী উন্নয়ন পাঠাগারের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব পালিত হওয়ায় উৎসব কমিটির দুই-একজন সদস্য যোগাযোগ করেছিলেন। তাঁদের বিষয়টি বললাম। ওনারাও বইটি নতুন করে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করলেন। সদর্থক কিছু হলনা। ব্যর্থ হয়ে যখন আশা ছেড়ে দিয়েছি তেমন সময় বদলির চাকরির সূত্রে আমার ভ্রাম্যমান ছোটখাট লাইব্রেরির বাতিল কাগজ পত্রের দঙ্গলে খুঁজে পেলাম ওই বইটির একটি জেরক্স কপি । সঙ্গে সঙ্গে সেটিকে স্ক্যান করলাম। সেটাই এই লেখার অন্যতম আধার। এছাড়া অতি সম্প্রতি পেয়েছি অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হরিশংকর জলদাসের একটি এপিকধর্মী উপন্যাস ‘একলব্য’। বইটি চমৎকার। তাঁর কিছু উপাদান ও তথ্য আমার এই কাব্য রচনায় সহায়তা নিয়েছি । হরিশংকরবাবুকে এজন্য আলাদা করে কৃতজ্ঞতা জানাই।
আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি যে অতিআধুনিক বাংলা ভাষায় মহাকাব্যধর্মী ‘কাব্য’ লেখা এখন প্রায় অসম্ভব তাই আশ্রয় করছি শ্রী মধুসূদনে এবং অবশ্যই ক্রিষ্টফার মার্লোকে অর্থাৎ ব্ল্যাঙ্ক ভার্স বা ফ্রি ভার্স, বাংলাভাষায় যতখানি আয়ত্ব করতে পেরেছি ঠিক ততটাই করেছি । ছোটবেলায় পাঠ্যবইতে মেঘনাদ বধ কাব্যের নির্বাচিত অংশ পাঠের পরে পুরো কাব্য পড়ে ভীষণ আনন্দ পেয়েছিলাম। বিপরীতমুখী ধারার ভাবনা অতুলনীয় মনে হয়েছিল। এই বিপরীতমুখী ধারায় সম্পৃক্ত আনন্দ নীলকান্তনের দুই অনবদ্য উপন্যাস অসুর (Asura) এবং বানর (Vanara) সম্প্রতি আমাকে আলোড়িত করল। টাইমস লিট ফেস্টে নীলকান্তনের সাক্ষাৎও পেয়েছি।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী বন্ধু হার্দিকব্রতর সঙ্গে একাডেমিতে দেখা মেঘনাদবধ কাব্য ভীষণভাবে প্রাণিত করেছিল। গৌতম হালদারের অনবদ্য উপস্থাপনায় মুগ্ধ হয়েছিলাম। সম্প্রতি ন’য়ে নাটুয়ার ইউটিউব চ্যানেলে আবার সেই মনমাতানো অভিনয় ও উপস্থাপনা দেখলাম। আবারো আপ্লুত হলাম। নতুন করে আবার মাইকেলের কাব্য ভাষায় আকৃষ্ট হয়েছি। মাইকেলের অমিত্রাক্ষরের এমন সার্থক প্রয়োগ গৌতমবাবুই করে দেখালেন। মাইকেল মধুসূদনের অমিত্রাক্ষরে আকৃষ্ট হলেও আমি মুখ্যতঃ দ্বিপদী পয়ার বা কাপলেট ব্যবহার করেছি । তবে তা কাশীরাম দাস কিংবা কৃত্তিবাস ওঝার মত একেবারেই নয়। একটু আধটু ব্যতিক্রম ঘটেনি এমনটাও অবশ্য নয় (যতই হোক না কেন তাঁর নামাঙ্কিত উচ্চবিদ্যালয়ে পড়েছি এবং একই এলাকার বাসিন্দা,তাই তাঁর প্রভাব থাকবে না এমন কথা হলফ করে বলা শক্ত বৈকি )। এপিকধর্মী লেখা লিখতে বসে অবশ্যই আমার অন্যতম প্রিয় মহাকাব্য ঈনীড-এর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। ভার্জিল সহায় থাকুন, সহায় থাকুন দান্তে আলিঘিয়েরি বিশেষত তাঁর বিয়াত্রিচের জন্য । বিউলফ থেকে শুরু করে দিভিন্না কম্মেদিয়া ইত্যাদি অনুবাদে পড়লেও সেগুলির অনুরণন ভুলি কেমনে ? তাই ভুলিনা রামায়ণের দস্যু রত্নাকরকে যিনি স্বীয় মেধা ও সৃজনীশক্তিতে হলেন আদিকবি বাল্মীকি। তিনি যেন রূপান্তরের এক স্বয়ম্ভূ প্রতীক । তবে বাল্মীকিকে আমি কম জানি বরং কবি কৃত্তিবাসের বাসভূমি আর সাধনপীঠ দেখে এসেছি।
সকলকে শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই।
আমার এই রচনা এখন সকল শুভানুধ্যায়ীদের গঠনমূলক সমালোচনা মাথা পেতে নেওয়ার জন্যে সম্পূর্ণভাবে তৈরী । প্রণতি জানাই ।
না দিদিভাই, এই লেখাটি দীর্ঘ কবিতার ভূমিকা। দীর্ঘ কবিতাটির পোস্ট আপাতত মুছে দেওয়া হয়েছে। আগামীতে “স্বপ্ন একলব্য কথা” আসছে। অপেক্ষা করুন। একান্ত অনুভূতি হিসাবে প্রকাশ করলে কাব্যটির সঙ্গে এই লেখার সম্পর্কচ্যুতি ঘটবে। এবার আপনারাই বিবেচনা করে দেখুন।
ধন্যবাদ দিদিভাই।
একটু কঠিন নিশ্চয়ই। সংস্কৃত ঘেঁষা তৎসম ও তদ্ভব শব্দ ব্যবহার করেছি বিস্তর। অনেক নতুন শব্দের অবতারণা করেছি। আসলে এখন কেউ এই ভাষায় আর কথা বলেন না। এপিকধর্মী লেখা তাই archaic শব্দমালা ব্যবহার করেছি ও এইভাবে পরিস্থিতির বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি। অনেকেই ফোন করেছেন। হোয়াটস্যাপ ,ফেসবুকেও মন্তব্য করেছেন বা করছেন। আসলে ইচ্ছাকৃত ভাবেই এই মাধ্যমটিকে আমি গ্রহণ করেছি। জানি অনেকেই ঠিক এই কারণেই আমাকে বা লেখাকে বর্জন করবেন। কিন্তু যিনি একবার এর মজা পেতে শুরু করবেন তিনি শেষ পর্যন্ত পড়বেন ও মজা নেবেন এইটুকু আশা করছি।
৬টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপনার জন্য অফুরন্ত শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো। প্রণাম নিবেন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
নবকুমার দাস
দিদিভাই ভালো থাকবেন। আজকের এই বিশেষ দিনে ও পরিবর্তিত জরুরীকালে সকলের জন্য শুভকামনা। আমরা আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে চাই।
আরজু মুক্তা
বিষয় কবিতা না হয়ে একান্ত অনুভূতি হবে। দয়া করে সম্পাদন করুন
নবকুমার দাস
না দিদিভাই, এই লেখাটি দীর্ঘ কবিতার ভূমিকা। দীর্ঘ কবিতাটির পোস্ট আপাতত মুছে দেওয়া হয়েছে। আগামীতে “স্বপ্ন একলব্য কথা” আসছে। অপেক্ষা করুন। একান্ত অনুভূতি হিসাবে প্রকাশ করলে কাব্যটির সঙ্গে এই লেখার সম্পর্কচ্যুতি ঘটবে। এবার আপনারাই বিবেচনা করে দেখুন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
দুবার পড়লাম। আমার কাছে একটু কঠিনই লাগলো।
শুভ কামনা রইলো । ভালো থাকুন।
নবকুমার দাস
ধন্যবাদ দিদিভাই।
একটু কঠিন নিশ্চয়ই। সংস্কৃত ঘেঁষা তৎসম ও তদ্ভব শব্দ ব্যবহার করেছি বিস্তর। অনেক নতুন শব্দের অবতারণা করেছি। আসলে এখন কেউ এই ভাষায় আর কথা বলেন না। এপিকধর্মী লেখা তাই archaic শব্দমালা ব্যবহার করেছি ও এইভাবে পরিস্থিতির বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি। অনেকেই ফোন করেছেন। হোয়াটস্যাপ ,ফেসবুকেও মন্তব্য করেছেন বা করছেন। আসলে ইচ্ছাকৃত ভাবেই এই মাধ্যমটিকে আমি গ্রহণ করেছি। জানি অনেকেই ঠিক এই কারণেই আমাকে বা লেখাকে বর্জন করবেন। কিন্তু যিনি একবার এর মজা পেতে শুরু করবেন তিনি শেষ পর্যন্ত পড়বেন ও মজা নেবেন এইটুকু আশা করছি।