স্বপ্নের দিন

মুহাম্মদ শামসুল ইকরাম পিরু ২০ ডিসেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ১০:১৫:১১অপরাহ্ন গল্প ৪৮ মন্তব্য

শান্তাঃ আজ সকাল নয়টায় পল্টন এসে দুটো টিকিট কাটবে গ্রীন ঢাকা বাসের, উত্তরার শেষ স্টপেজ আবদুল্লাহপুর এর।
প্রবালঃ আচ্ছা ঠিকাছে।
পরদিন সকালে প্রবালকে দেখা গেলো পল্টন এর প্রিতম হোটেলের সামনে দাঁড়ানো দেখা গেলো গ্রীন ঢাকা বাস কাউন্টারে। এসি বাস, রামপুরা হয়ে আবদুল্লাহপুর যায়। ঠিক নয়টায় শান্তা এসে জিজ্ঞেস করলো টিকেট কাটা হয়েছে কিনা? জবাবে হ্যা সূচক মাথা কাত করলো প্রবাল। লাইন দিয়ে যাত্রী দাঁড়ানো আছে। আগত বাসটিতে সিট পেয়ে উঠে গেলো দুজনেই। তবে সিট খালি আছে একদম পিছনের সারিতে। উজ্জ্বল হয়ে উঠলো শান্তার চোখ মুখ। সিটে বসল দুজন,
শান্তাঃ জানো গত পরশু রাতে কি স্বপ্ন দেখেছি?
প্রবালঃ হ্যা জানি তো, আজ সারাদিন বাসে চরে দিন কাটাবো আমরা 🙂
শান্তাঃ কিভাবে জানলে? আমি তো বলিনি তোমাকে এটা !
প্রবালঃ আমি বুঝতে পাড়ি।
শান্তাঃ স্বপ্নে যে আমরা সব শেষের সারির সিটে বসেছি তা কি জানো তুমি?
প্রবালঃ না তা জানিনা, তবে তোমার চোখ মুখের ঝিলিক দেখে অনুভব করতে পেরেছি।
শান্তাঃ হ্যা তা তো জানবেই, তুমি তো পণ্ডিত হয়েছো। স্বপ্ন দেখলে তার বাস্তবায়ন করতে হয় 🙂
প্রবালঃ তাই তো করছি এখন।
বাস চলছে, দুজনে পাশাপাশি হাতে ধরে বসে আছে। বাসে তেমন একটি কথা বলতে তাদের দেখলো না কেহ, যেন হাতে হাতেই কথা হচ্ছে দুজনের। দুজনে একই সাথে মুচকি হাসি দিচ্ছে। একই সাথে দুজনের মুখ উজ্জ্বলতায় উছলে উঠছে। কথা না বলায় তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।
আবদুল্লাহপুর গিয়ে তারা আবার বাস চেঞ্জ করলো। বিআরটিসির এসি বাস এর টিকিট কেটে মতিঝিলে যাচ্ছে এবার তারা। এবার ইচ্ছে করেই পিছনের সিটে বসল। মতিঝিল নেমে একটি রেস্টুরেন্টে খেলো দুজনে।
শান্তাঃ চলো হাঁটি কিছুক্ষণ।
বেশ কিছুটা হেঁটে গুলিস্তান গিয়ে এবার মোহাম্মদপুরের বাসে উঠলো। সারাদিন এভাবেই বিভিন্ন রুটের বাসে ঘুরলো তারা। সন্ধ্যে ছয়টায় আসলো নীলক্ষেত, নীলক্ষেত থেকে রিক্সায় টিএসসি। দুজনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাপা পিঠে খেলো, প্রবাল অতিরিক্ত খেলো ছোলা বুট। শান্তা পাশে থাকায় সব খাবারই যেন অমৃত। চা খোর প্রবালের চা এর তৃষ্ণা লাগায় টিএসসির সামনেই ফুটপাথে থাকা চা এর দোকানে চা এর অর্ডার করলো। বিভিন্ন ধরনের চা বিক্রী হয় দোকানে। কাঁচা মরিচের চা দেখে অবাক হলো দুজনেই। শান্তা খাবে কাঁচা মরিচের চা। কতগুলো কাঁচা মরিচের টুকরো একটা কাঁপে নিয়ে তার মধ্যে লিকার চা আর আচারের মত কি একটা দিলো, আর দিলো বিট লবণ। এমন চা এই প্রথম দেখছে দুজনে, তাই মজা করে খেলো শান্তা। কখন রাত আটটা বেজে গেলো দুজনের কেহই খেয়াল করল না।

শীতের রাত আটটা অনেকটাই রাত এখন। তখন শান্তাকে বাসায় পৌছানোর জন্য প্রবাল শান্তাকে জোর করছে, একা শান্তাকে বাসায় যেতে দেবে না। টিএসসি থেকে হেঁটে শাহবাগে গেলো দুজনে। পথে আর্ট কলেজের সামনে ফুটপাথের বইর দোকানের একটি বইতে চোখ আটকে গেলো বই পাগলী শান্তার। বইটি অনেক খুঁজেছে শান্তা, পায়নি কোথাও, একথা শান্তা বলায় প্রবাল বইটি কিনে দিলো শান্তাকে। এই প্রথম কোনো বই গিফট করল শান্তাকে প্রবাল।

শাহবাগে  অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থেকেও খালি কোন বাস পেলো না। অতঃপর এলো বিআরটিসির দোতলা মহিলা বাস। বাসটি প্রায় খালিই। শান্তা উঠতে পারবে কিন্তু প্রবাল উঠবে কিভাবে মহিলা বাসে? দাঁড়িয়ে আছে বাস, কন্ট্রাকটর হঠাৎই  বললো, ভাই আপনি সামনে ড্রাইভারের পাশে বসেন, বলেই দরজা খুলে দিলো, শান্তার দিকে তাকিয়ে বলল - আফা আপনে ওঠেন। শান্তা হাসছে মুখটিপে।
মোহাম্মদপুরে নেমে-
শান্তাঃ আজ এক অন্যরকম দিন, তুমি মহিলা বাসে চড়লে পুরুষ হয়ে 🙂

দুইদিন পরে--
শান্তাঃ আজ কি স্বপ্ন দেখেছি জানো?
প্রবালঃ হ্যা জানি, বিকেল চারটায় মোহাম্মদপুর আসতেছি, নিয়ে যাবো তোমাকে স্বপ্নের ঠিকানায়।
শান্তাঃ সত্যি? 🙂
প্রবালঃ হ্যা।
বিকেল চারটায় প্রবাল গেল শান্তার বাসার কাছে। একটি সিএনজি ডেকে চললো তামান্না ফ্যামিলি পার্কের দিকে। প্রবেশ পথের বাম দিকেই নদী।
প্রবালঃ দেখো তোমার স্বপ্নকে।
শান্তা চোখে মহা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে নদীর দিকে, ঠিক যেভাবে স্বপ্নে দেখেছিল, নদীটা তেমন। অস্তগামী সূর্যের সোনালী আলোয় একটি নৌকা চলে যাচ্ছে নদীর বুকে। সোনালী আলোয় নৌকো এবং নদীর পানিকে সোনালী মনে হচ্ছে। কিভাবে জানল প্রবাল এই স্বপ্নের কথা? চোখে আনন্দাশ্রু।
শান্তাঃ আই লাভ ইউ প্রবাল,

হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে দুজন নদীর দিকে,  

=================================
প্রবালের গল্প - ৩ 
প্রবালের গল্প- ২  
প্রবালের গল্প- ১

0 Shares

৪৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ